ওবামা, মনমোহন ও শেখ হাসিনা সরকারের এক বছর by আবদুল মান্নান
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে কয়েকটি ঘটনার বর্ষপূর্তি করল। প্রথমে নবম জাতীয় সংসদের ঐতিহাসিক নির্বাচন_ যা এক পর্যায়ে অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল।
শেষ পর্যন্ত এক অনিশ্চিত পরিস্থিতির মুখোমুখি থেকেও নির্বাচন কমিশন ২০০৮-এর ২৯ ডিসেম্বর এক অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও তাক লাগানো নির্বাচন অনুষ্ঠিত করে বাংলাদেশ তো বটেই, সারা বিশ্বকেই অবাক করে দিয়েছিল। এই নির্বাচনের সঙ্গে কিছুটা তুলনা করা চলে ১৯৭০-এর নির্বাচন। তবে ২০০৮-এর নির্বাচনের একটি বড় প্রাপ্তি ছিল ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা। এই নির্বাচনের আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতাও ছিল প্রশ্নাতীত।৫ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকার তাদের প্রথম বর্ষপূর্তি করল। ২৫ জানুয়ারি হলো নবম জাতীয় সংসদের প্রথম বর্ষপূর্তি। এই এক বছরে সংসদে চারটি অধ্যাদেশ পাস হয়েছে। বিগত বছরে সংসদের মোট ৯৭ কার্যদিবসে ৭৪ দিনই বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিএনপি-জামায়াত জোটের সংসদ সদস্যরা সংসদে অনুপস্থিত থেকেছেন। উপনির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ইতোমধ্যে বিএনপির ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার ও ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তাঁদের দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে সংসদে যাওয়া হতে বঞ্চিত হয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র, বাংলাদেশ ও ভারতে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে তিনটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নানা কারণে এই তিনটি নির্বাচনের প্রতি নির্বাচন বিশ্লেষকদের দৃষ্টি নিবন্ধিত ছিল। যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তি। সে দেশের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট পদপ্রাথর্ী হিসাবে বারাক ওবামা ডেমোক্র্যাট দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সারাবিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন। আরও তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন রিপাবলিকান প্রাথর্ী জন ম্যাককেইনকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে। তাঁর অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ছিল বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার_ যা তার পূর্বসূরি জর্জ বুশ জুনিয়রের দু'দফায় আট বছর মেয়াদ কালে তলানিতে ঠেকেছিল। একই সঙ্গে তিনি অঙ্গীকার করেছিলেন ইরাক হতে মার্কিন সেনা দ্রুততম সময়ে প্রত্যাহার করবেন, গুয়ান্তানামো বে বন্দী শিবির বন্ধ করবেন এবং আফগানিস্তানে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমে সহায়তা দিয়ে সেখানে সৈন্য হ্রাস করবেন। তিনি দায়িত্ব নেয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমী দুনিয়ায় আঘাত হানল এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দা_ যার ঢেউ কম-বেশি লাগল সারাবিশ্বে। চাকরি হারিয়ে বেকার হলো লাখ লাখ মানুষ। বড় বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে শুরু করে জেনারেল মোটরসের মতো শতবর্ষ পুরনো কোম্পানি দেউলিয়া হলো। এ সঙ্গে যুক্ত হলো ইরান আর উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের নতুন টানাপোড়েন। দ্রুত পড়তে শুরু করল বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা_ যা বর্তমানে পঞ্চাশের ঘরে এসে ঠেকেছে। নির্বাচনের পূর্বে তা সত্তর পর্যন্ত উঠেছিল। অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা ওবামার প েএখনও সামলে ওঠা সম্ভব হয়নি। ইরাকে এখনও মার্কিন সৈন্য অবস্থান করছে। আগামী আগস্ট মাস নাগাদ তাদের বেশির ভাগকেই দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে ওবামা সম্প্রতি জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রত্যাশা করেছেন। গুয়ান্তানামো বে বন্দী শিবিরে এখনও আল কায়েদা বন্দীরা কারারুদ্ধ আছে। আফগানিস্তানে অদূর ভবিষ্যতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ফিরে আসবে বা যুদ্ধ বন্ধ হবে তার কোন আলামত দেখা যাচ্ছে না। এরই মধ্যে আবার পাকিস্তান এই আল কায়েদা-তালেবানবিরোধী যুদ্ধে আরও বেশি মাত্রায় সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে।
বারাক ওবামার এক বছরের দায়িত্ব পালনের মাথায় তার জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের একটা সুযোগ এসেছিল সম্প্রতি ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সিনেট প্রতিনিধি উপনির্বাচনে। গত আগস্ট মাসে সিনেটর এডওয়ার্ক কেনেডি মৃতু্যবরণ করলে সিনেটের এই পদটি খালি হয়েছিল। এই আসনে তিনি সাতচলি্লশ বছর যাবত সিনেটর ছিলেন। এই অঙ্গরাজ্যটি ঐতিহাসিকভাবেই ডেমোক্র্যাট। মোট ভোটার সংখ্যা চলি্লশ লাখ। তার মধ্যে পনেরো লাখ ডেমোক্র্যাটরদের সঙ্গে নথিভুক্ত। পাঁচ লাখ আছে রিপাবলিকান তালিকায়। বাকি কুড়ি লাখের কোন স্থায়ী আনুগত্য নেই। এমন একটি অনুকূল পরিস্থিতিতে ডেমোক্র্যাট প্রাথর্ী মার্থা কোক্লি শোচনীয়ভাবে পরাজিত হলেন রিপাবলিকান প্রাথর্ী স্কট ব্রাউনের কাছে। সবাই হতবাক! শেখ হাসিনা গোপালগঞ্জে পরাজিত হলে যা হতো আর কি। সবার প্রশ্ন_ বারাক ওবামার জনপ্রিয়তা এক বছরের মাথায় কি এত নিচে নেমে গেল যে তার দলের প্রাথর্ীকে অনেকটা নিজ গৃহেই পরাজিত হতে হলো। বিশ্লেষকরা বলছেন হয়ত তা নয় কারণ উপনির্বাচনে সাধারণত জাতীয় কোন ইসু্যর পরিবর্তে ভোটাররা ছোটখাটো স্থানীয় ইসু্যকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। মার্থা কোক্লি এবং তার দল ধরে নিয়েছিল এই নির্বাচনে তাদের বিজয় অনেকটা পূর্বনির্ধারিত। তাদের নির্বাচন পরিচালনা ছিল প্রতিপরে চাইতে অনেক বেশি দুর্বল। প্রাথর্ী হিসাবে কোক্লিও খুব যুতসই ছিল না। ম্যাসাচুসেট্স উচ্চ মধ্যবিত্ত আর উচ্চবিত্ত অধু্যষিত এলাকা। তারা করদাতাদের অর্থে গরিব আমেরিকানদের স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত বারাক ওবামার বিল ও চিন্তাধারা পছন্দ করেনি। তাদের মতে, এটি তো এক ধরনের সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারা। এমন চিন্তাধারা তো যুক্তরাষ্ট্রে চলতে পারে না। দেয়া যাক বারাক ওবামাকে একটি সঙ্কেত। এই নির্বাচন ওবামাকে তেমন তিগ্রস্ত না করলেও এমন সঙ্কেতের সংখ্যা বাড়তে থাকলে সামনে বিপদ হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সাবধান না হলে দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হওয়া সহজ নাও হতে পারে।
ভারতের লোকসভা নির্বাচনও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল। পূর্বের নির্বাচনে কংগ্রেসের অন্যতম সহায়ক শক্তি ছিল সিপিএম। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারের (সিপিএমও অন্তভর্ুক্ত) পরমাণু বিষয়ক চুক্তিকে কেন্দ্র করে সিপিএম-ইউপিএ জোট হতে বের হয়ে আসলে সবার ধারণা ছিল কংগ্রেসকে এই নির্বাচনে বিজেপির বিরুদ্ধে নাজুক অবস্থায় পড়তে হবে। কংগ্রেস নতুন জোট বাঁধল মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল কংগ্রেস এবং আরও কিছু ছোটখাটো স্থানীয় দলের সঙ্গে। একঘরে হয়ে গেল সিপিএম এবং পশ্চিম বঙ্গে তাদের নেতৃত্বাধীন বাম ফ্রন্ট। নির্বাচনে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ-এর জয়জয়কার। গত এক বছরে ইউপিএকে কয়েকটি রাজ্যসভা নির্বাচনে হারতে হয়েছে। তবে তা জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে তেমনটা এখনও কেউ মনে করছে না। বলতে গেলে ভারতের কেন্দ্রের মতাবিন্দুতে ইউপিএ সরকারের জন্য এখনও অশনি সঙ্কেত শোনা যায়নি।
এবার ফিরে দেখি বাংলাদেশের শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের এই সময়টা কেমন কাটল সেই প্রশ্নে। বিএনপি বলেই চলেছে এক শ' ভাগ ব্যর্থ। অবশ্য গত কয়েকদিন ধরে বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন মিডিয়াতে অনেকটা অনুপস্থিত। কিছুটা কমিক্যাল রিলিফ হতে দর্শকরা বঞ্চিত। শেখ হাসিনা বা তাঁর সরকারের দায়িত্বশীল কেউ দাবি করেননি তাঁরা এক শ' ভাগ সফল। কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী তাদের সফলতার কথা যেমন বলেছেন, একই ভাবে কোথায় কোথায় তারা পুরো সফল হতে পারেননি তাও বলতে ভুলেননি। বাংলাদেশের অসুস্থ রাজনীতিতে এটি একটি শুভ লণ। ২৫ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর দলীয় সংসদ সদস্যদের পরিষ্কার ভাষায় তাদের কাজে কর্মে সতর্ক হতে বলেছেন। তিনি মনে করিয়ে দিয়েছেন জামায়াত-বিএনপি জোট ২০০১-এর নির্বাচনে বিরাট বিজয় নিয়ে সরকার গঠন করেছিল। যাওয়ার সময় সকলে দুবর্ৃত্তের বদনাম নিয়ে গেছে। আগামী দিনগুলো সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করলে তাদের অবস্থাও সে রকম হতে পারে। একই কথা তিনি ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দলীয় নির্বাহী কমিটির বর্ধিত সভায় বলেছেন। উল্লেখ্য, এ সভায় সারা বাংলাদেশ থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ উপস্থিতি ছিলেন। বলা যেতে পারে গত এক বছরে এটি ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ দলীয় সভা, যদিও এরই মধ্যে দলীয় কাউন্সিলও অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ধরনের সভা আরও যত বেশি হয় ততই দলের জন্য মঙ্গল।
গত এক বছরে শেখ হাসিনা সুযোগ পেলেই তাঁর দলীয় নেতা-কমর্ীদের নসিহত করেছেন। সতর্কবাণী শুনিয়েছেন। তাতে সকলেই যে নিজেকে শুধরে নিয়েছেন তা বলা যাবে না। যাদের ওপর বিন্দুমাত্র কোন আছর হয়নি তাদের শীর্ষে আছে ছাত্রলীগ_ যার নেতা-কমর্ীরা অনেকাংশে এখন সম্পূর্ণ বেপরোয়া। দেশব্যাপী তাদের দুবর্ৃত্তপনার কারণে এখন অনেক নামী কলেজে ছাত্র ভর্তি কার্যক্রম বন্ধ। শিা প্রতিষ্ঠানে দলীয় কোন্দলের কারণে নিয়মিত রক্তয়ী সংঘাত বা সংঘর্ষ হচ্ছে না এমন একটি দিনও পাওয়া যাবে না। এদের একধাপ নিচে আছে যুবলীগ নামধারী আর এক শ্রেণীর নেতা-কমর্ী, যাদের এখন প্রধান কাজই হচ্ছে টেন্ডারবাজি। এমনটি চলতে থাকলে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষে অর্জনের ঝুলিতে তেমন একটা কিছু থাকবে না।
২০০৮-এর নির্বাচন প্রাক্কালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ঘোষিত ইস্তেহারে যে কয়টি বিষয়কে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল তার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ছিল দুনর্ীতি দমন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, সংসদকে কার্যকরকরণ, জঙ্গীবাদ দমন, সন্ত্রাস চাঁদাবাজি বন্ধ, বিদু্যত সমস্যার দ্রুত সমাধান ইত্যাদি অন্যতম। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত আর বাংলাদেশের বিগত নির্বাচনে বিজয়ী দলগুলোর মধ্যে একটি অভিন্ন স্লোগান ছিল : পরিবর্তন অথবা 'দিন বদল'। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থার তেমন একটা পরিবর্তন হয়েছে বলা যাবে না। ভারতে বিশ্বমন্দার প্রভাব কিছুটা পড়লেও তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল। কেন্দ্রে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় পরিবর্তন। পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীদের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। সামনের রাজ্যসভা নির্বাচনে বাম ফ্রন্ট পুনরায় মতায় ফিরে আসবে তা অনেকেই মনে করছে না। এসব কিছুই ভারতে রাজনীতিতে পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে কিছু পরিবর্তন লণীয়। সংসদের প্রথম অধিবেশনেই সংসদীয় কমিটিগুলো গঠিত হয়েছে এবং কমিটিগুলো কার্যকর আছে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কয়েকটি কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব অন্য দলের সংসদ সদস্যদের দেয়া হয়েছে। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এ কমিটিগুলো পঠন করতে দু' বছরের বেশি সময় লেগেছিল। সংসদ যে একেবারে সম্পূর্ণ কার্যকর তা বলা যাবে না। বিরোধী দল ঠুনকো অজুহাতে সংসদ বর্জন অব্যাহত রেখেছে। সংসদে তাদের আসন রা করার জন্য তারা হয়ত সংসদে ফিরবে। তবে দীর্ঘ সময়ের জন্য তারা সংসদে থাকবে তা মনে হয় না। সংসদকে অকার্যকর করে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি করতে চাইবে_ এমনটি ভাবা স্বাভাবিক। দেশের সর্বোচ্চ আদালত পঞ্চম সংশোধনী সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল আবেদন খারিজ করে দিয়েছে। এতে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকার ঘোষণা করেছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার অচিরেই শুরু হবে। এ সবের প্রোপটে বিরোধী দল পানি ঘোলা করতে ওভারটাইম কাজ করবে বলে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার কৌশল সরকারী দলকেই খুঁজে নিতে হবে।
সরকারী মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে ঘুষ-দুনর্ীতির অভিযোগ এখনও ঢালাওভাবে উত্থাপিত না হলেও তা যে একেবারে বিলুপ্ত হয়েছে এমন কথা বলা যাবে না। ইতোমধ্যে রাজউকের প্লট বরাদ্দ নিয়ে কিছু কেলেঙ্কারির কথা গণমাধ্যমে প্রচারিত হয়েছে। এ ধরনের অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা অবশ্যই প্রয়োজন। গ্রীষ্মকাল এখনও আসেনি। ইতোমধ্যে লোডশেডিং শুরু হয়ে গেছে। এর জন্য সরকার আপৎকালীন কী ব্যবস্থা নিয়েছে তা দেখার জন্য জনগণ অপো করবে। দীর্ঘ মেয়াদী সময়ে দেশের বিদু্যত সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার নীতিগতভাবে আণবিক শক্তি কেন্দ্র স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সরকারের আমলেই মানুষ এই কেন্দ্র স্থাপনে অগ্রগতি দেখতে চায়।
চট্টগ্রাম গভীর সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতু, ঢাকা-চট্টগ্রামের মধ্যে চলাচলের জন্য চার লেনের মহাসড়ক ইত্যাদি উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে বাংলাদেশের সম্পূর্ণ চেহারা পাল্টে যাবে। এসব প্রকল্প বর্তমান সরকারের পইে শুরু করা সম্ভব। সব কাজ এ মেয়াদে শেষ হবে তা কেউ বিশ্বাস করে না। তবে শুরু যদি সঠিকভাবে হয় তাহলে আগামীতে অন্য কেউ এসে ফিতা কাটবে না। জনগণের আস্থা ধরে রাখতে পারলে যারা শুরু করবেন তারাই ফিতা কেটে উদ্বোধন করতে পারবেন। সাথে উপরওয়ালার ইচ্ছা থাকতে হবে।
এ মুহূর্তে যদি বর্তমান সরকারের একটি বড় ব্যর্থতার কথা বলতে হয় তা হবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকারগুলোকে অকার্যকর করে রাখা। এটি হতে পারে আগামী দিনে সরকারের জন্য একটা বড় খেসারতের কারণ। এ সমস্যার সমাধান এখনও কেন হবে না তা কারও কাছে বোধগম্য নয়।
এক বছরের সালতামামি করতে গিয়ে সকলে কম-বেশি পরিমিতি বোধের পরিচয় দিয়েছেন। অবশ্য একান্ত জামায়াত-বিএনপি ঘরানার বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, বিশ্লেষকদের কথা আলাদা। তারা সব সময় পানির গ্লাস অর্ধেক খালি দেখতে অভ্যস্থ। তবে সরকার বা সংসদের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে পরিস্থিতি এত অনুকূলে নাও থাকতে পারে। তা রাখার একমাত্র উপায় জনগণের প্রত্যাশা পূরণের দিকে এগিয়ে যাওয়া। জনগণ এও বিশ্বাস করে তা সম্ভব শেখ হাসিনা ও তাঁর সরকারের নেতৃত্বে যার ওপর সাধারণ জনগণ অগাধ আস্থা স্থাপন করেছে। মানুষ তাদের আস্থাকে যথেষ্ট মূল্য দেয়। সরকারের নীতি নির্ধারকরা তা স্মরণে রাখলে মঙ্গল।
বারাক ওবামা, মনমোহন সিং আর শেখ হাসিনা সকলের েেত্র একই কথা প্রযোজ্য।
সামনে ঢাকা আর চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। সম্ভবত এ নির্বাচন হতে পারে বর্তমান সরকারের জনপ্রিয়তা ওঠা-নামা পরিমাপের একটা মাপকাঠি। জনগণ আশা করে শেখ হাসিনা এ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়ার সময় যথেষ্ট সতর্ক থাকবেন, যাতে বিতর্কিত কেউ মনোনয়ন না পান।
লেখক : শিাবিদ
No comments