আসাদের পতনের পর কোন ব্যক্তি সিরিয়া শাসন করবে?

রবিবার সকালে, সাদা সবুজ সামরিক ইউনিফর্ম পরা দাড়িওয়ালা একজন ৪২বছর বয়সী ব্যক্তি দামাস্কাসের উমাইয়া মসজিদে প্রবেশ করেন এবং উপস্থিত  জনতা, সিরিয়ান জাতি এবং বিশ্বের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। গোটা মসজিদ সেজে উঠেছিল জমকালো সাজে। তার সামনে দাঁড়িয়ে  আহমেদ আল-শারা প্রেসিডেন্ট আসাদের পতনকে ‘ইসলামী জাতির জন্য একটি বিজয়’ হিসাবে বর্ণনা করেন এবং প্রার্থনার আহ্বান জানান। আহমেদ আল-শারা বলেন, ‘আমি ২০ বছরেরও বেশি আগে এই দেশ ছেড়েছি, আমার হৃদয় এই মুহূর্তের অপেক্ষায় ছিল। আমার ভাইয়েরা এখন  সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করো।’

গত দুই দশকের বেশির ভাগ সময় ধরেই সিরিয়ার বেশিরভাগ ডি ফ্যাক্টো শাসক তার আসল নামটি ব্যবহার করেননি। আহমেদ আল-শারা, যিনি দামাস্কাসের একটি সমৃদ্ধ পাড়ায় এক প্রগতিশীল পরিবারে বেড়ে উঠেছিলেন এবং চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করার পর হঠাৎ সম্পূর্ণরূপে অদৃশ্য হয়ে যান।

তার জায়গায় মুসলিম গৌরবকে পুনরুজ্জীবিত  করতে এগিয়ে আসেন আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। এই জোলানিই ২০০৩ থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে বিদ্রোহীদের সঙ্গে নিয়ে  ইরাকে মার্কিন সৈন্যদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন এবং তারপর তাকে পাঁচ বছর ধরে বন্দী শিবিরে রাখা হয়েছিল। জোলানিও ২০১১ সালে সিরিয়ায় ফিরে এসে ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং তারপর আল-কায়েদা উভয়ের প্রচারণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

জোলানিই ইসলামপন্থি গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) এর নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নেন এবং ২০১৭ থেকে ইদলিবের উত্তর-পশ্চিম সিরিয়ান ছিটমহলের ২ মিলিয়ন মানুষের উপর তার শাসন কায়েম করেন। জোলানি  রবিবার  দামাস্কাসে শেষ হওয়া ১২ দিনের প্রচারাভিযানে এইচটিএস দ্বারা নিয়ন্ত্রিত  বিদ্রোহী জোটের সূচনা করেছিলেন।

এখন প্রশ্ন হলো কোন ব্যক্তি সিরিয়া শাসন করবে? জোলানি, যাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যরা সন্ত্রাসী হিসাবে মনোনীত করেছে এবং তার মাথার মূল্য ১০ মিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে।

নাকি শারা, যিনি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তার সংগঠন পশ্চিম আক্রমণ করবে না এমন ইঙ্গিত দিতে সরে গেছেন? অনেক বিশ্লেষক বলেছেন যে শারা   জিহাদি চরমপন্থা থেকে মধ্যপন্থি পথ নিতে পারেন।

আলেপ্পো, প্রথম শহর যা বিদ্রোহী জোটের দ্বারা দখল করা হয়েছিল। শারা নিজেই ইসমাইলি শিয়া নেতাদের উপর জয়লাভ করতে এবং বিদ্রোহীদের কোনো  ক্ষতি ছাড়াই গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলিকে সুরক্ষিত করার জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কিংস কলেজ লন্ডনের চরমপন্থি ইসলামের বিশেষজ্ঞ শিরাজ মাহের বলেন, 'শারা একজন সত্যিকারের পরিবর্তিত ব্যক্তি। তিনি  ইদলিবে একটি বাস্তববাদী ধর্মতত্ত্ব গড়ে তুলেছিলেন। এই পরিবর্তন হঠাৎ হয়নি। শারা  এমনকি তার প্রাক্তন অবতারেও, আল-কায়েদা এবং আইএস উভয়ের বিরুদ্ধে লড়েছিলেন এবং দ্বৈত আনুগত্যের জন্য  তার নিজের গোষ্ঠীর সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেন। 'যদিও শারা  সম্প্রতি বলেছিলেন যে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের আল-কায়েদার আক্রমণ উদযাপন করার জন্য অনুশোচনা করেননি, তবে খুব কমই সন্দেহ করে যে সিরিয়ার নতুন নেতা পশ্চিমা শক্তি বা অন্যান্য সদস্যদের বিরুদ্ধে  কট্টরপন্থিদের দৃষ্টিভঙ্গি  প্রত্যাখ্যান করেছেন।

কিছু বিশেষজ্ঞ উল্লেখ করেছেন যে জোলানি ইসরায়েলের দখলদারিত্বের অবসান ঘটানোর জন্য একজন দৃঢ় ব্যক্তিত্ব হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন। এটাও স্পষ্ট যে শারার ফোকাস স্থানীয় এবং তার স্বার্থ জাতীয়তাবাদী: সিরিয়ার বৃহত্তর কল্যাণ এবং এর ক্ষতিগ্রস্ত, আঘাতপ্রাপ্ত, ভুক্তভোগী মানুষদের জন্য । বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে এইচটিএস-এর কিছু সিনিয়র নেতা এবং গ্রুপের সবচেয়ে কার্যকর যোদ্ধা, যাদের মধ্যে মধ্য এশীয় প্রবীণ চরমপন্থি রয়েছে, তারা   "জিহাদি মূল আদর্শে" প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।  

ওয়াশিংটন ভিত্তিক ফাউন্ডেশন ফর দ্য ডিফেন্স অফ ডেমোক্রেসির বিশেষজ্ঞ হুসেইন আবদুল-হুসেন, গত সপ্তাহে সিএনএন-এর সাথে একটি সাক্ষাৎকারের সময় শারার পিছনে সিরিয়ার বিপ্লবের পতাকাকে  "জিহাদি পতাকা" হিসাবে চিহ্নিত করেছেন।

কিন্তু সিরিয়া  এখন লন্ডভন্ড। দেশে অর্থ নেই। আছে অপরাধ , দারিদ্র , লাখ লাখ উদ্বাস্তু যারা ফিরে আসতে চায়। এখন সবাই খুশি, কিন্তু শীঘ্রই মানুষ বাস্তবটা বুঝতে পারবে। তাই শারা হোক বা জোলানি দুজনকেই  কথা দিয়ে নয়, কাজের মাধ্যমে বিচার করতে হবে।

সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান

mzamin


No comments

Powered by Blogger.