হানি ট্র্যাপে ফেলে মুক্তিপণ আদায়, নারীসহ গ্রেপ্তার ৫
গত ৪ঠা নভেম্বর এই চক্রটির খপ্পরে পরে সদরপুরের মুজাহিদ মৃধা নামক এক ব্যক্তি। পরবর্তীতে ৭ই নভেম্বর এ ব্যাপারে তিনি বাদী হয়ে সদরপুর থানায় ৯ জনসহ অজ্ঞাতনামা কয়েক জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন।
থানা সূত্রে জানা যায়, হঠাৎ করে মোবাইল ফোনে রং নম্বরে অজ্ঞাতনামা এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয় মুজাহিদের। তাদের মধ্যে কয়েকদিন মোবাইল ফোনে কথাবার্তা চলতে থাকে। একপর্যায়ে অজ্ঞাতনামা মেয়েটি তাকে ফোন দিয়ে বাইশরশি জমিদার বাড়িতে আসতে বলে। তিনি সরল বিশ্বাসে উক্ত স্থানে যাওয়ার পর তাকে ওই মেয়েটি অটোবাইকে উঠতে বলে। অটোযোগে ঘোরাফেরার এক পর্যায়ে ওই মেয়েটি কৌশলে পূর্ব শৌলডুবী এলাকার সাবেক মেম্বার শেখ ফারুকের বাড়িতে একটি টিনের ঘরে নিয়ে মুজাহিদকে আটক করে যেখানে আগে থেকে চক্রের অন্য সদস্যরা উপস্থিত ছিল। এরপর তাকে মারধর করে এবং প্রাণনাশের ভয় দেখিয়ে মুক্তিপণ বাবদ ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা পূর্বক ৪টি সাদা নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে তার স্বাক্ষর নেয়। বিষয়টি তার চাচা জানতে পেরে স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় রাতের বেলা ফারুক মেম্বারের বাড়িতে গিয়ে উক্ত চক্রের সোহরাব খালাসী নামে এক সদস্যকে আটক করে এবং মুজাহিদকে উদ্ধার করে। ওই সময় ওই চক্রের অন্যান্যরা পালিয়ে যায়।
পরে সোহরাব খালাসীকে জিজ্ঞাসাবাদে কয়েকজনের নাম- ঠিকানা জানা যায়। বিষয়টি সদরপুর থানা পুলিশকে জানালে তারা সোহরাবকে গ্রেপ্তার করে।
পরে এ মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি শেখ ফারুক মেম্বারকে গ্রেপ্তার করা না গেলেও তার স্ত্রী রেণু বেগমসহ অজ্ঞাতনামা আরও ২জন লিমা আক্তার এবং রবিন নামের এক যুবকসহ মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে ফরিদপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়।
মুক্তিপণের এমন ঘটনা নিয়ে সমপ্রতি সদরপুর থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন সদরপুর সদর ইউনিয়নের মৌসুমী আক্তার নামে এক ভুক্তভোগী। তিনি তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার স্বামী ইসাহাক বেপারী দীর্ঘদিন ধরে সদরপুর বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করে আসছেন। গত ২রা নভেম্বর তার স্বামী চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ঢাকা রওনা দিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। রাতে তার স্বামী তাকে ফোন দিলে বলে ডাক্তারের সিরিয়াল দেয়া হলে ডাক্তার দেখিয়ে ঢাকার এক হোটেলে অবস্থান করবেন। এর পর তার স্বামীর ফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও নম্বর বন্ধ পাওয়ায় তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি পরিবার।
পরে ৩রা নভেম্বর সকালে তার স্বামী তার মোবাইল নম্বর থেকে তাদের দোকানের কর্মচারী রনিকে ফোন দিয়ে বলে যে তাকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা জিম্মি করেছে। তাদের দেয়া ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বরে ১০ লাখ টাকা পাঠালে তাকে ছেড়ে দিবে। পরে সেই অ্যাকাউন্টে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ পাঠিয়ে ইসাহাককে মুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে ভুক্তভোগীরা উল্লিখিত ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নম্বর তদন্ত করে জানতে পারে যে, উক্ত অ্যাকাউন্টটি ঢেউখালী ইউনিয়নের মৌসুমী নামের এক মেয়ের। পরে মৌসুমীর বিরুদ্ধে সদরপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন ইসহাকের স্ত্রী। এরপর বিভিন্নস্থানে খোঁজাখুঁজি করেও মৌসুমীর সন্ধান পাওয়া যায়নি। একপর্যায় গত ৫ই ডিসেম্বর (বৃহস্পতিবার) পুলিশের হাতে আটক হন মৌসুমী। পরে জানা যায় মৌসুমী হানি ট্র্যাপ চক্রের অন্যতম সদস্য। এই নিয়ে চক্রের মোট ৩ জন নারী ও ২ জন পুরুষ সদস্যকে আটক করে জেলহাজতে পাঠালো সদরপুর থানা পুলিশ।
এই চক্রের বিষয়ে এলাকাবাসী বলেন, এই চক্রের বাকি সদস্যদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় না আনা হয় তবে আরও বহু ব্যক্তি এই চক্রের খপ্পরে পড়ে নিজের সর্বস্ব হারাবেন।
এ ব্যাপারে ওই মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা এসআই তানভীর বলেন, আগের মতো কেউ সোর্স হয়ে আসামিদের খোঁজখবর দিতে চায় না। তাই বাকি আসামিদের গ্রেপ্তার করতে একটু সময় লাগছে।
সদরপুর থানার ওসি মো. আব্দুল মোতালেব হোসেন বলেন, আমরা ৫ জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে প্রেরণ করেছি। শিগগিরই চক্রের সকল সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।
No comments