কার্গিল যুদ্ধ: ভারতের সুপারিশে শীর্ষ বীরের সম্মান পেয়েছিলেন যে পাকিস্তানি সৈনিক by রেহান ফজল
ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খান |
এরকম
ঘটনা খুব কমই হয়, যেখানে শত্রু সেনাবাহিনীর কোনো সদস্যকে বাহাদুরি আর
অসীম সাহসের জন্য সম্মান জানাচ্ছেন অন্য দেশের এক সেনা অফিসার, আবার সেই
শত্রু দেশের কাছে সুপারিশও করছেন যাতে ওই সৈনিকের বীরত্বকে সম্মান জানানো
হয়।
১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে এরকমই এক ঘটনা ঘটেছিল।
টাইগার হিলের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন, কর্নেল শের খাঁয়ের বীরের মতো লড়াই দেখে ভারতীয় বাহিনীও মেনে নিয়েছিল যে তিনি সত্যিই এক ‘লৌহপুরুষ’।
সেদিনের ওই যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ব্রিগেডিয়ার এম এস বাজওয়া।
‘সেদিন যখন টাইগার হিলের লড়াই শেষ হয়েছিল, ওই পাকিস্তানি অফিসারের অসীম সাহসকে স্যালুট না করে উপায় ছিল না। আমি ৭১-এর যুদ্ধেও লড়াই করেছি। কিন্তু কখনো পাকিস্তানি বাহিনীর কোনো অফিসারকে একেবারে সামনে থেকে লড়তে দেখিনি।’
‘অন্য পাকিস্তানি সৈনিকরা কুর্তা-পাজামা পরে ছিলেন, কিন্তু এই অফিসার একাই ট্র্যাক-সুট পরে লড়ছিলেন’, স্মৃতিচারণ করছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া।
সম্প্রতি কার্গিল যুদ্ধের ওপরে ‘কার্গিল : আনটোল্ড স্টোরিজ ফ্রম দা ওয়ার’ [কার্গিল : যুদ্ধক্ষেত্রে না বলা কাহিনী] নামের একটি বই লিখেছেন রচনা বিস্ত রাওয়াত।
তিনি জানাচ্ছিলেন, ‘ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ পাকিস্তানি বাহিনীর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির সদস্য ছিলেন।’
‘টাইগার হিলের পাঁচটি জায়গায় তারা নিজেদের চৌকি তৈরি করেছিল। প্রথমে ভারতের ৮ নম্বর শিখ রেজিমেন্টকে ওই পাকিস্তানি চৌকিগুলো দখল করার দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা ব্যর্থ হয়। তারপরে ১৮ নম্বর গ্রেনেডিয়ার্সদেরও শিখ রেজিমেন্টের সাথে পাঠানো হয়।’
‘তারা কোনোরকমে একটি চৌকি দখল করে। কিন্তু ক্যাপ্টেন শের খাঁ পাল্টা হামলা চালান পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে’, জানাচ্ছিলেন মিজ রাওয়াত।
প্রথমবারের জবাবী হামলায় ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি বাহিনী। কিন্তু সেনা সদস্যদের আবারো জড়ো করে দ্বিতীয়বার হামলা চালান তিনি। যারা ওই লড়াইয়ের ওপরে নজর রাখছিলেন, সকলেই বুঝতে পারছিলেন যে এটা আত্মহত্যার সামিল। সবাই বুঝতে পারছিল যে ওই মিশন কিছুতেই সফল হবে না, কারণ ভারতীয় সৈনিকরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল।
লাশের পকেটে চিরকুট
ব্রিগেডিয়ার বাজওয়ার কথায়, ‘ক্যাপ্টেন শের খাঁ বেশ লম্বা-চওড়া চেহারার ছিলেন। অসীম সাহসের সাথে লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। আমাদের এক সৈনিক কৃপাল সিং আহত হয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎই উঠে মাত্র ১০ গজ দূর থেকে একটা বার্স্ট মারেন। শের খাঁ পড়ে যান।’
সেই সাথেই পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার জোর ধীরে ধীরে কমে আসছিল। ব্রিগেডিয়ার বাজওয়ার বলেন, ‘ওই লড়াইয়ের শেষে আমরা ৩০ জন পাকিস্তানি সৈনিককে দাফন করেছিলাম। কিন্তু আমি অসামরিক মালবাহকদের পাঠিয়ে সেখান থেকে ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের লাশ নিচে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করি। ব্রিগেড হেড-কোয়াটারে রাখা হয়েছিল তার দেহ।’
১৯৯৯ সালে কার্গিল যুদ্ধে এরকমই এক ঘটনা ঘটেছিল।
টাইগার হিলের যুদ্ধে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর এক ক্যাপ্টেন, কর্নেল শের খাঁয়ের বীরের মতো লড়াই দেখে ভারতীয় বাহিনীও মেনে নিয়েছিল যে তিনি সত্যিই এক ‘লৌহপুরুষ’।
সেদিনের ওই যুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন ব্রিগেডিয়ার এম এস বাজওয়া।
‘সেদিন যখন টাইগার হিলের লড়াই শেষ হয়েছিল, ওই পাকিস্তানি অফিসারের অসীম সাহসকে স্যালুট না করে উপায় ছিল না। আমি ৭১-এর যুদ্ধেও লড়াই করেছি। কিন্তু কখনো পাকিস্তানি বাহিনীর কোনো অফিসারকে একেবারে সামনে থেকে লড়তে দেখিনি।’
‘অন্য পাকিস্তানি সৈনিকরা কুর্তা-পাজামা পরে ছিলেন, কিন্তু এই অফিসার একাই ট্র্যাক-সুট পরে লড়ছিলেন’, স্মৃতিচারণ করছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া।
সম্প্রতি কার্গিল যুদ্ধের ওপরে ‘কার্গিল : আনটোল্ড স্টোরিজ ফ্রম দা ওয়ার’ [কার্গিল : যুদ্ধক্ষেত্রে না বলা কাহিনী] নামের একটি বই লিখেছেন রচনা বিস্ত রাওয়াত।
তিনি জানাচ্ছিলেন, ‘ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ পাকিস্তানি বাহিনীর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির সদস্য ছিলেন।’
‘টাইগার হিলের পাঁচটি জায়গায় তারা নিজেদের চৌকি তৈরি করেছিল। প্রথমে ভারতের ৮ নম্বর শিখ রেজিমেন্টকে ওই পাকিস্তানি চৌকিগুলো দখল করার দায়িত্ব দেয়া হয়। তারা ব্যর্থ হয়। তারপরে ১৮ নম্বর গ্রেনেডিয়ার্সদেরও শিখ রেজিমেন্টের সাথে পাঠানো হয়।’
‘তারা কোনোরকমে একটি চৌকি দখল করে। কিন্তু ক্যাপ্টেন শের খাঁ পাল্টা হামলা চালান পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে’, জানাচ্ছিলেন মিজ রাওয়াত।
প্রথমবারের জবাবী হামলায় ব্যর্থ হয় পাকিস্তানি বাহিনী। কিন্তু সেনা সদস্যদের আবারো জড়ো করে দ্বিতীয়বার হামলা চালান তিনি। যারা ওই লড়াইয়ের ওপরে নজর রাখছিলেন, সকলেই বুঝতে পারছিলেন যে এটা আত্মহত্যার সামিল। সবাই বুঝতে পারছিল যে ওই মিশন কিছুতেই সফল হবে না, কারণ ভারতীয় সৈনিকরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল।
লাশের পকেটে চিরকুট
ব্রিগেডিয়ার বাজওয়ার কথায়, ‘ক্যাপ্টেন শের খাঁ বেশ লম্বা-চওড়া চেহারার ছিলেন। অসীম সাহসের সাথে লড়াই চালাচ্ছিলেন তিনি। আমাদের এক সৈনিক কৃপাল সিং আহত হয়ে পড়েছিলেন। হঠাৎই উঠে মাত্র ১০ গজ দূর থেকে একটা বার্স্ট মারেন। শের খাঁ পড়ে যান।’
সেই সাথেই পাকিস্তানি বাহিনীর হামলার জোর ধীরে ধীরে কমে আসছিল। ব্রিগেডিয়ার বাজওয়ার বলেন, ‘ওই লড়াইয়ের শেষে আমরা ৩০ জন পাকিস্তানি সৈনিককে দাফন করেছিলাম। কিন্তু আমি অসামরিক মালবাহকদের পাঠিয়ে সেখান থেকে ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের লাশ নিচে নামিয়ে আনার ব্যবস্থা করি। ব্রিগেড হেড-কোয়াটারে রাখা হয়েছিল তার দেহ।’
পাকিস্তানের সরকার ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের সম্মানে ডিজাইন করা স্মারক ডাক টিকেট। |
ক্যাপ্টেন
শের খাঁয়ের লাশ যখন পাকিস্তানে ফেরত পাঠানো হল, তখন তার জামার পকেটে একটা
ছোট্ট চিরকুট লিখে দিয়েছিলেন ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া। তাতে লেখা ছিল,
‘ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ অফ ১২ এন এল আই হ্যাজ ফট ভেরি ব্রেভলি এন্ড হি
শুড বি গিভেন হিজ ডিউ’ [অর্থাৎ, ১২ নম্বর নর্দার্ন লাইট ইনফ্যান্ট্রির
ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁ অসীম সাহসের সাথে লড়াই করেছেন। তাকে সম্মান
জানানো উচিত]।
কে এই কর্নেল শের খাঁ?
ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের জন্ম হয়েছিল উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের এক গ্রাম নওয়া কিল্লেতে। তার দাদা ১৯৪৮ সালের কাশ্মীর অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
কিন্তু তার পছন্দ ছিল উর্দি পরিহিত সৈনিক। যখন এক নাতি জন্মাল তার, নাম রাখলেন কর্নেল শের খাঁ।
তখন অবশ্য তার ধারণাও ছিল না যে এই নামের জন্যই নাতির কোনো সমস্যা হতে পারে।
কার্গিল যুদ্ধের ওপরে বিখ্যাত বই ‘উইটনেস টু ব্লান্ডার – কার্গিল স্টোরি আনফোল্ডস’-এর লেখক কর্নেল আশফাক হুসেইন বলছেন, ‘কর্নেল শের খাঁ ওই অফিসারের নাম ছিল। এটা নিয়ে তার খুব গর্ব ছিল। তবে বেশ কয়েকবার এই নামের জন্য তাকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’
“অনেক সময়ে ফোন তুলে তিনি বলতেন, ‘লেফটেন্যান্ট কর্নেল শের স্পিকিং’, অন্য প্রান্তে থাকা অফিসারের মনে হতো যে কোনো লেফটেন্যান্ট কর্নেল র্যাঙ্কের অফিসারের সাথে কথা বলছেন তিনি। কমান্ডিং অফিসারকে যেভাবে স্যার সম্বোধন করে, সেইভাবেই কথা বলতে শুরু করতেন টেলিফোনের অন্য প্রান্তে থাকা অফিসার।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শের খাঁ হেসে বলতেন, যে তিনি লেফটেন্যান্ট শের খাঁ। কমান্ডিং অফিসার নন তিনি!” জানাচ্ছিলেন কর্নেল আশফাক।
টাইগার হিলের ‘শেষ যুদ্ধ’
১৯৯২ সালে পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমীতে যোগ দেন কর্নেল শের খাঁ। তার এক বছরের জুনিয়র, ক্যাপ্টেন আলিউল হুসেইন বলছিলেন, ‘পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমীতে সিনিয়ররা র্যাগিং করার সময়ে জুনিয়ারদের গালিগালাজ করতেন। কিন্তু শের খাঁর মুখে কোনোদিন একটাও গালি শুনিনি আমি। তার ইংরেজি খুব ভালো ছিল।’
“অন্য অফিসারদের সাথে নিয়মিত ‘স্ক্র্যাবেল’ খেলতে দেখতাম। সবসময়ে তিনিই জিতে যেতেন। আবার জওয়ানদের সাথেও খুব সহজেই মিশতে পারতেন, ওদের সাথে লুডো খেলতেন তিনি।”
কে এই কর্নেল শের খাঁ?
ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের জন্ম হয়েছিল উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের এক গ্রাম নওয়া কিল্লেতে। তার দাদা ১৯৪৮ সালের কাশ্মীর অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
কিন্তু তার পছন্দ ছিল উর্দি পরিহিত সৈনিক। যখন এক নাতি জন্মাল তার, নাম রাখলেন কর্নেল শের খাঁ।
তখন অবশ্য তার ধারণাও ছিল না যে এই নামের জন্যই নাতির কোনো সমস্যা হতে পারে।
কার্গিল যুদ্ধের ওপরে বিখ্যাত বই ‘উইটনেস টু ব্লান্ডার – কার্গিল স্টোরি আনফোল্ডস’-এর লেখক কর্নেল আশফাক হুসেইন বলছেন, ‘কর্নেল শের খাঁ ওই অফিসারের নাম ছিল। এটা নিয়ে তার খুব গর্ব ছিল। তবে বেশ কয়েকবার এই নামের জন্য তাকে সমস্যায় পড়তে হয়েছে।’
“অনেক সময়ে ফোন তুলে তিনি বলতেন, ‘লেফটেন্যান্ট কর্নেল শের স্পিকিং’, অন্য প্রান্তে থাকা অফিসারের মনে হতো যে কোনো লেফটেন্যান্ট কর্নেল র্যাঙ্কের অফিসারের সাথে কথা বলছেন তিনি। কমান্ডিং অফিসারকে যেভাবে স্যার সম্বোধন করে, সেইভাবেই কথা বলতে শুরু করতেন টেলিফোনের অন্য প্রান্তে থাকা অফিসার।
ব্যাপারটা বুঝতে পেরে শের খাঁ হেসে বলতেন, যে তিনি লেফটেন্যান্ট শের খাঁ। কমান্ডিং অফিসার নন তিনি!” জানাচ্ছিলেন কর্নেল আশফাক।
টাইগার হিলের ‘শেষ যুদ্ধ’
১৯৯২ সালে পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমীতে যোগ দেন কর্নেল শের খাঁ। তার এক বছরের জুনিয়র, ক্যাপ্টেন আলিউল হুসেইন বলছিলেন, ‘পাকিস্তানি মিলিটারি একাডেমীতে সিনিয়ররা র্যাগিং করার সময়ে জুনিয়ারদের গালিগালাজ করতেন। কিন্তু শের খাঁর মুখে কোনোদিন একটাও গালি শুনিনি আমি। তার ইংরেজি খুব ভালো ছিল।’
“অন্য অফিসারদের সাথে নিয়মিত ‘স্ক্র্যাবেল’ খেলতে দেখতাম। সবসময়ে তিনিই জিতে যেতেন। আবার জওয়ানদের সাথেও খুব সহজেই মিশতে পারতেন, ওদের সাথে লুডো খেলতেন তিনি।”
কার্গিল যুদ্ধের ওপর লেখা বই। |
সেনাবাহিনীর
ক্যাপ্টেন শের খাঁকে ১৯৯৯ সালের ৪ জুলাই টাইগার হিলে পাঠানো হয়। সেখানে
পাকিস্তানি বাহিনী ত্রিস্তরীয় রক্ষণব্যবস্থা গড়ে তুলছিলেন। তিনটে স্তরের
সাংকেতিক নাম ছিল ১২৯ এ, বি আর সি।
ভারতীয় সেনাবাহিনী ১২৯ এ আর বি চৌকিগুলোকে তছনছ করে দিতে পেরেছিল। ক্যাপ্টেন শের সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওখানে পৌঁছান। পরিস্থিতিটা বুঝে নিয়ে পরের দিন সকালে ভারতীয় বাহিনীর ওপরে হামলা করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি।
কর্নেল আশফাক হুসেইন লিখছেন, ‘রাতে উনি সব সৈনিককে শহিদ হওয়ার সৌভাগ্য বর্ণনা করেন। ভোর ৫টায় নামাজ পড়েন। তারপরেই ক্যাপ্টেন উমরকে সাথে নিয়ে লড়াইয়ের জন্য রওনা হন। তিনি যখন মেজর হাশিমের সাথে ১২৯ – বি চৌকিতে ছিলেন, তখনই ভারতীয় বাহিনী পাল্টা হামলা চালায়।’
বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে মেজর হাশিম নিজেদের বাহিনীর ওপরেই গোলাবর্ষণের অনুমতি চান। যখন শত্রু সৈনিক একেবারে কাছে চলে আসে, তখন তাদের হাতে যাতে ধরা না পড়তে হয়, সেজন্য এরকম করে থাকে।
কর্নেল আশফাক হুসেইন লিখছেন, ‘পাকিস্তানি আর ভারতীয় বাহিনীর লড়াইটা তখন সম্মুখ সমর। একেবারে হাতাহাতি লড়াই চলছে। তখনই এক ভারতীয় সেনার একটা পুরো বার্স্ট ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের গায়ে এসে পড়ে, তিনি নিচে পড়ে যান। নিজের সঙ্গীদের সাথেই শের খাঁও শহিদ হন।’
অন্য পাকিস্তানি সৈনিকদের তো ভারতীয় বাহিনী দাফন করে দেয়। কিন্তু শের খাঁর লাশ প্রথমে শ্রীনগর, তারপরে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়।
মরণোত্তর সম্মান ‘নিশান-এ-হায়দার’
ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া বলছিলেন, “যদি আমি তার লাশ নিচে না নামিয়ে আনতাম বা জোর করে তার দেশে ফেরত না পাঠাতাম, তাহলে তার নামই হয়তো কোথাও উল্লেখিত হত না। তাকে পাকিস্তানের সব থেকে বড় সম্মান ‘নিশান-এ-হায়দার’ দেয়া হয়েছিল, যেটা ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান পরম বীর চক্রের সমান।”
ভারতীয় সেনাবাহিনী ১২৯ এ আর বি চৌকিগুলোকে তছনছ করে দিতে পেরেছিল। ক্যাপ্টেন শের সন্ধ্যা ৬টা নাগাদ ওখানে পৌঁছান। পরিস্থিতিটা বুঝে নিয়ে পরের দিন সকালে ভারতীয় বাহিনীর ওপরে হামলা করার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তিনি।
কর্নেল আশফাক হুসেইন লিখছেন, ‘রাতে উনি সব সৈনিককে শহিদ হওয়ার সৌভাগ্য বর্ণনা করেন। ভোর ৫টায় নামাজ পড়েন। তারপরেই ক্যাপ্টেন উমরকে সাথে নিয়ে লড়াইয়ের জন্য রওনা হন। তিনি যখন মেজর হাশিমের সাথে ১২৯ – বি চৌকিতে ছিলেন, তখনই ভারতীয় বাহিনী পাল্টা হামলা চালায়।’
বিপজ্জনক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পেতে মেজর হাশিম নিজেদের বাহিনীর ওপরেই গোলাবর্ষণের অনুমতি চান। যখন শত্রু সৈনিক একেবারে কাছে চলে আসে, তখন তাদের হাতে যাতে ধরা না পড়তে হয়, সেজন্য এরকম করে থাকে।
কর্নেল আশফাক হুসেইন লিখছেন, ‘পাকিস্তানি আর ভারতীয় বাহিনীর লড়াইটা তখন সম্মুখ সমর। একেবারে হাতাহাতি লড়াই চলছে। তখনই এক ভারতীয় সেনার একটা পুরো বার্স্ট ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের গায়ে এসে পড়ে, তিনি নিচে পড়ে যান। নিজের সঙ্গীদের সাথেই শের খাঁও শহিদ হন।’
অন্য পাকিস্তানি সৈনিকদের তো ভারতীয় বাহিনী দাফন করে দেয়। কিন্তু শের খাঁর লাশ প্রথমে শ্রীনগর, তারপরে দিল্লি নিয়ে যাওয়া হয়।
মরণোত্তর সম্মান ‘নিশান-এ-হায়দার’
ব্রিগেডিয়ার বাজওয়া বলছিলেন, “যদি আমি তার লাশ নিচে না নামিয়ে আনতাম বা জোর করে তার দেশে ফেরত না পাঠাতাম, তাহলে তার নামই হয়তো কোথাও উল্লেখিত হত না। তাকে পাকিস্তানের সব থেকে বড় সম্মান ‘নিশান-এ-হায়দার’ দেয়া হয়েছিল, যেটা ভারতের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান পরম বীর চক্রের সমান।”
ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের সমাধি। |
পাকিস্তানে
যখন ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের লাশ পৌঁছিয়েছিল, তার পরে তার বড় ভাই আজমল শের
বলেছিলেন, ‘আল্লাহর আশীর্বাদ, যে আমাদের শত্রু দেশেরও দয়া-মায়া আছে। কেউ
যদি বলে তারা দয়া-মায়াহীন, আমার তাতে আপত্তি আছে। কারণ তারা ঘোষণা করেছে
কর্নেল শের একজন হিরো।’
শেষ বিদায়
১৮ জুলাই ১৯৯৯। মাঝ রাতে ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের লাশ গ্রহণ করার জন্য মলির গ্যারিসনের শত শত সৈনিক করাচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন। তার গ্রাম থেকে ওর দুই ভাইও সেখানে ছিলেন।
কর্নেল আশফাক হুসেইন লিখছেন, ‘ভোর পাঁচটা এক মিনিটি বিমানটা রানওয়ে ছুঁয়েছিল। বিমানের পেছন দিক থেকে দুটো কফিন বের করা হল। একটায় ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের লাশ ছিল আর অন্যটায় যে কার লাশ ছিল, সেই পরিচয় এখনো জানা যায়নি।’
কফিন দুটিকে একটা অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হল যেখানে, সেখানে তখন হাজার হাজার সৈনিক আর সাধারণ মানুষ। বালুচ রেজিমেন্টের সৈনিকরা অ্যাম্বুলেন্স থেকে দুটি কফিন নামিয়ে মানুষের সামনে রাখলেন। এক মৌলবি নামাজ-এ-জানাজা পাঠ করলেন।
তারপরে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটা বিমানে চাপানো হয়। ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের কফিনে কাঁধ দিয়েছিলেন কোর কমান্ডার মুজফফর হুসেইন উসমানী, সিন্ধ প্রদেশের গভর্নর মামুন হুসেইন আর সংসদ সদস্য হালিম সিদ্দিকি।
করাচি থেকে লাশ ইসলামাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরো একবার নামাজ-এ-জানাজা হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি রফিক তারারও হাজির ছিলেন সেখানে।
শেষে, ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের কফিনবন্দী লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বহু সদস্য শেষ বিদায় জানান এই সাহসী সৈনিককে।
শেষ বিদায়
১৮ জুলাই ১৯৯৯। মাঝ রাতে ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের লাশ গ্রহণ করার জন্য মলির গ্যারিসনের শত শত সৈনিক করাচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হাজির ছিলেন। তার গ্রাম থেকে ওর দুই ভাইও সেখানে ছিলেন।
কর্নেল আশফাক হুসেইন লিখছেন, ‘ভোর পাঁচটা এক মিনিটি বিমানটা রানওয়ে ছুঁয়েছিল। বিমানের পেছন দিক থেকে দুটো কফিন বের করা হল। একটায় ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের লাশ ছিল আর অন্যটায় যে কার লাশ ছিল, সেই পরিচয় এখনো জানা যায়নি।’
কফিন দুটিকে একটা অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হল যেখানে, সেখানে তখন হাজার হাজার সৈনিক আর সাধারণ মানুষ। বালুচ রেজিমেন্টের সৈনিকরা অ্যাম্বুলেন্স থেকে দুটি কফিন নামিয়ে মানুষের সামনে রাখলেন। এক মৌলবি নামাজ-এ-জানাজা পাঠ করলেন।
তারপরে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর একটা বিমানে চাপানো হয়। ক্যাপ্টেন কর্নেল শের খাঁয়ের কফিনে কাঁধ দিয়েছিলেন কোর কমান্ডার মুজফফর হুসেইন উসমানী, সিন্ধ প্রদেশের গভর্নর মামুন হুসেইন আর সংসদ সদস্য হালিম সিদ্দিকি।
করাচি থেকে লাশ ইসলামাবাদ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আরো একবার নামাজ-এ-জানাজা হয়। পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি রফিক তারারও হাজির ছিলেন সেখানে।
শেষে, ক্যাপ্টেন শের খাঁয়ের কফিনবন্দী লাশ নিয়ে যাওয়া হয় তার গ্রামে। হাজার হাজার সাধারণ মানুষ আর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বহু সদস্য শেষ বিদায় জানান এই সাহসী সৈনিককে।
কার্গিল যুদ্ধের ওপর লেখা রচনা বিস্ত রাওয়াতের বই। |
No comments