কেমন আছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা? by শাহেদ শফিক
জেহানের (ছদ্মনাম) বয়স ৯ বছর। বলা চলে, রাজধানীর মাতুয়াইল ল্যান্ডফিলে
বর্জ্যের মধ্যেই বেড়ে উঠছে সে। থাকে পাশের একটি ঝুঁপড়ি ঘরে। সারাদিন
ল্যান্ডফিলে আনা বর্জ্যে খোঁজে নানা জিনিসপত্র। সেসব বিক্রি করে যা পাওয়া
যায় তা দিয়েই চলে তাদের সংসার।
জেহান দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্যের মধ্যে বসবাস করায় ভুগছে নানা রোগে। বাংলা ট্রিবিউনকে সে জানায়, একটি প্রাইভেট কোম্পানির ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে সে ময়লা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে নিয়ে যায়। এরপর বাকি সময় সে এই ল্যান্ডফিলেই কাটায়। ল্যান্ডফিলের দুর্গন্ধ এখন সহ্য হয়ে গেছে বলেও জানায় সে।
জেহানের মা জানান, তার ছেলেসহ এ কাজে নিয়োজিতদের অনেকেই চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। অনেকে ওষুধও খেয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। ডাক্তাররা তাদের পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের পরামর্শ দেন।
শুধু জেহান নয়, তার মতো এমন আরও অনেক শিশু নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন সংগঠনকে দায়িত্ব দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এসব সংগঠনের অধিকাংশ ভ্যানে শিশুরা নিয়োজিত থাকে। দৈনিক তাদের ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। বর্জ্যের গন্ধে নিজেদের মানিয়ে নিতে তারা ড্যান্ডিসহ নানা রকম নেশায় জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া, নারীদের জন্য নেই মাতৃত্বকালীন ছুটি। ছুটি নিলেও নিজের বদলি হিসেবে অন্য আরেকজনকে কাজ করতে হয়।
জেহান দীর্ঘদিন ধরে বর্জ্যের মধ্যে বসবাস করায় ভুগছে নানা রোগে। বাংলা ট্রিবিউনকে সে জানায়, একটি প্রাইভেট কোম্পানির ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে সে ময়লা সংগ্রহ করে সিটি করপোরেশনের ডাস্টবিনে নিয়ে যায়। এরপর বাকি সময় সে এই ল্যান্ডফিলেই কাটায়। ল্যান্ডফিলের দুর্গন্ধ এখন সহ্য হয়ে গেছে বলেও জানায় সে।
জেহানের মা জানান, তার ছেলেসহ এ কাজে নিয়োজিতদের অনেকেই চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে ভুগছে। অনেকে ওষুধও খেয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি। ডাক্তাররা তাদের পরিচ্ছন্ন জীবনযাপনের পরামর্শ দেন।
শুধু জেহান নয়, তার মতো এমন আরও অনেক শিশু নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভ্যান সার্ভিসের মাধ্যমে নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন সংগঠনকে দায়িত্ব দিয়েছে সিটি করপোরেশন। এসব সংগঠনের অধিকাংশ ভ্যানে শিশুরা নিয়োজিত থাকে। দৈনিক তাদের ৩০ থেকে ৫০ টাকা করে দেওয়া হয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই শিশুরা মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকে। বর্জ্যের গন্ধে নিজেদের মানিয়ে নিতে তারা ড্যান্ডিসহ নানা রকম নেশায় জড়িয়ে পড়ে। এছাড়া, নারীদের জন্য নেই মাতৃত্বকালীন ছুটি। ছুটি নিলেও নিজের বদলি হিসেবে অন্য আরেকজনকে কাজ করতে হয়।
সরেজমিন
দেখা গেছে, মাতুয়াইল ও আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে রাজধানীর দুই সিটি
করপোরেশনের (ডিএসসিসি ও ডিএনসিসি) নিজস্ব পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের পাশাপাশি
অনেক নারী ও শিশু কাজ করে। বর্জ্য ব্যবস্থার কাজে নিয়োজিত এসব কর্মীর ঈদ বা
বিশেষ দিনগুলোতেও কোনও ছুটি নেই। শারীরিক সুরক্ষার জন্য কোনও ব্যবস্থাপনা
নেই। নেই গ্লাভস, মাস্ক, বুটজুতা বা হেলমেট। এ কারণে তারা হেপাটাইটিস বি
ভাইরাস, টিটেনাস এবং এইচআইভি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে বলে জানান
বিশেষজ্ঞরা। হতে পারে তাদের পানিবাহিত রোগ, চর্মরোগ। এছাড়া নাক-মুখ
সুরক্ষিত না থাকায় নিঃশ্বাসের সঙ্গে দেহের ভেতরে ঢুকছে মারাত্মক সব জীবাণু।
জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দৈনিক মজুরিভিত্তিক তিন হাজার ৯৭৬ জনসহ মোট ৫ হাজার ২৪৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৪৪৮ জন নারী কর্মী। আবাসন সুবিধা পেলেও তারা চিকিৎসাসেবা বলতে কিছুই পান না।
ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটি তাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন সুবিধা দিতে ১৩টি ১০ তলা ও ৯টি ৬ তলা ভবন নির্মাণ করেছে। এরমধ্যে ১০ তলা ৪টি ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। তাদের কেউ মারা গেলে ৫ থেকে ৭ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া তাদের ওয়ারিশদের মেয়রের ঐচ্ছিক তহবিল থেকে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া কেউ চাইলে তার পরিবর্তে পরিবারের সন্তানদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়। কেউ অসুস্থ হলে করপোরেশনের নিজস্ব হাসপাতালগুলোতে দেওয়া হয় ফ্রি চিকিৎসা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রায় ৪ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে। তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে রাজি হননি সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এস এম শফিকুর রহমান। সংস্থাটির মেয়র অতিকুল ইসলামও বিস্তারিত তথ্য না দিতে পারলেও বলেন, ‘আমরা তাদের জন্য কাজ করছি। আগের চেয়ে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দৈনিক মজুরিভিত্তিক তিন হাজার ৯৭৬ জনসহ মোট ৫ হাজার ২৪৫ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে। এরমধ্যে ২ হাজার ৪৪৮ জন নারী কর্মী। আবাসন সুবিধা পেলেও তারা চিকিৎসাসেবা বলতে কিছুই পান না।
ডিএসসিসি সূত্র জানিয়েছে, সংস্থাটি তাদের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের আবাসন সুবিধা দিতে ১৩টি ১০ তলা ও ৯টি ৬ তলা ভবন নির্মাণ করেছে। এরমধ্যে ১০ তলা ৪টি ভবন উদ্বোধন করা হয়েছে। তাদের কেউ মারা গেলে ৫ থেকে ৭ হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া তাদের ওয়ারিশদের মেয়রের ঐচ্ছিক তহবিল থেকে দেওয়া হয় ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া কেউ চাইলে তার পরিবর্তে পরিবারের সন্তানদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়। কেউ অসুস্থ হলে করপোরেশনের নিজস্ব হাসপাতালগুলোতে দেওয়া হয় ফ্রি চিকিৎসা।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রায় ৪ হাজার পরিচ্ছন্নতাকর্মী রয়েছে। তাদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে কোনও তথ্য দিতে রাজি হননি সংস্থার নির্বাহী প্রকৌশলী ও অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) এস এম শফিকুর রহমান। সংস্থাটির মেয়র অতিকুল ইসলামও বিস্তারিত তথ্য না দিতে পারলেও বলেন, ‘আমরা তাদের জন্য কাজ করছি। আগের চেয়ে পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কয়েকটি হাসপাতালের মাধ্যমে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
১৫
বছর ধরে ডিএনসিসির আমিনবাজার ল্যান্ডফিলে কাজ করেন আমির মিয়া। তিনি বলেন,
‘আগের চেয়ে একটু সুযোগ-সুবিধা বাড়লেও আমরা তা নিতে পারি না। সারাক্ষণ কাজের
মধ্যে থাকতে হয়। গ্লাভস, বুটজুতা ও মাস্ক পাই না। পায়ের হাঁটু পর্যন্ত
অংশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়ে গেছে। গন্ধে থাকা যায় না। এ কারণে নিয়মিত
খাওয়ার চাহিদাও থাকে না।’
ডিএনসিসির একজন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক বলেন, ‘এখানে কোনও মানুষ আসে না। শাস্তিস্বরূপ এখানে (ল্যান্ডফিলে) বদলি করা হয়। আমাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধার কথা মুখে বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি তা পাই?’
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু ১ হাজার ২৬৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী স্কেলভুক্ত। বাকিরা দৈনিক বেতন ছাড়া আর কিছুই পান না। ঈদের সময়ও আমাদের বর্জ্যের সঙ্গে কাটাতে হয়।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা তাদের দাবিদাওয়া জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলা ট্রবিউনকে বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। তাদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। থাকার জন্য অত্যাধুনিক ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কর্মীরা নিয়ম অনুযায়ী সব সুযোগ পাচ্ছেন। যারা দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন তারা এসব পাচ্ছেন না।’
তিনি জানান, গ্লাভস, মাস্ক, বুট ও হেলমেটসহ অন্যান্য জিনিস জাইকার অর্থায়নে তাদের দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে কয়েকটি এনজিও তাদের দায়িত্ব নিতে চায় বলেও জানান তিনি।
ডিএনসিসির একজন পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক বলেন, ‘এখানে কোনও মানুষ আসে না। শাস্তিস্বরূপ এখানে (ল্যান্ডফিলে) বদলি করা হয়। আমাদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধার কথা মুখে বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে আমরা কি তা পাই?’
পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সংগঠন স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘শুধু ১ হাজার ২৬৭ জন পরিচ্ছন্নতাকর্মী স্কেলভুক্ত। বাকিরা দৈনিক বেতন ছাড়া আর কিছুই পান না। ঈদের সময়ও আমাদের বর্জ্যের সঙ্গে কাটাতে হয়।’ প্রধানমন্ত্রীর কাছে তারা তাদের দাবিদাওয়া জানিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
ডিএসসিসির অতিরিক্ত প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বাংলা ট্রবিউনকে বলেন, ‘পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সুযোগ-সুবিধা আগের চেয়ে অনেক উন্নত হয়েছে। তাদের বেতন দ্বিগুণ হয়েছে। থাকার জন্য অত্যাধুনিক ভবনে ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। স্থায়ী কর্মীরা নিয়ম অনুযায়ী সব সুযোগ পাচ্ছেন। যারা দৈনিক মজুরিতে কাজ করেন তারা এসব পাচ্ছেন না।’
তিনি জানান, গ্লাভস, মাস্ক, বুট ও হেলমেটসহ অন্যান্য জিনিস জাইকার অর্থায়নে তাদের দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে কয়েকটি এনজিও তাদের দায়িত্ব নিতে চায় বলেও জানান তিনি।
No comments