যশোরের জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ান
দেশের অন্য এলাকায় বন্যা আসে-যায়, কিন্তু যশোরের বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষের দুঃখ সীমাহীন। তারা ভুগছে জলাবদ্ধতায়। একদিকে অতিরিক্ত বৃষ্টি, অন্যদিকে ভবদহ স্লুইসগেট অকার্যকর হওয়ায় পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। ফলে যশোরের কেশবপুর, মনিরামপুর, অভয়নগর ও যশোর সদরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষ ভাসমান জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্মিত ভবদহ স্লুইসগেট ও জোয়ারাধার আশীর্বাদের বদলে হয়েছে অভিশাপ। প্রতিবছরই এই অঞ্চলের মানুষকে এর কারণে করুণ পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়; নষ্ট হয় কৃষি ও মাছের চাষ। এবার বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় ভবদহের জলাবদ্ধতাও মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। সরকারের এ মুহূর্তে কিছু না করলেই নয়। যশোর জেলার তিনটি উপজেলা এবং ২৭টি বিলের পানিনিষ্কাশনের একমাত্র পথ ভবদহ স্লুইসগেট। কিন্তু এর কারণেই নদীর বুকে পলি জমে পানিনিষ্কাশন বন্ধ রয়েছে। দুই দশক ধরে এই স্লুইসগেট ও জোয়ারাধার প্রকল্প এই এলাকার লাখ লাখ মানুষের জীবনে অভিশাপের কাজ করছে।
মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়েছে নদী ও বিলে চিংড়িঘের ব্যবসায়ীদের বাঁধ। এবারও একটানা ভারী বৃষ্টির কারণে বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে গেছে। মানুষ ও গবাদিপশুর জীবনধারণ কঠিন হয়ে গেছে। একবিংশ শতাব্দীর ডিজিটাল বাংলাদেশে কয়েক লাখ মানুষ আদিম অমানবিক বাস্তবতার মধ্যে হঠাৎ পতিত হয়েছে। এটা বন্যার পানি নয় যে কয়েক দিনের মধ্যে সরে যাবে। ভবদহ জলাবদ্ধতা দীর্ঘ সময়ের ব্যাপার। এ মুহূর্তে মানুষজনের ত্রাণ দরকার, খাদ্য, রান্না করার ব্যবস্থা ও পরিষ্কার পানি এবং জ্বর ও ডায়রিয়ার ওষুধ দরকার। কিন্তু একই সঙ্গে পানি নামানোর ব্যবস্থা না করলে জীবনযাপন অসম্ভব হয়ে পড়বে। পানি ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞদের নিয়ে এ মুহূর্তেই জরুরি টাস্কফোর্স গঠন করে কাজে নেমে পড়া উচিত। ভবদহ সমস্যা নতুন নয়। বছর যায়, কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্ষমাহীন ঔদাসীন্যের কারণে মানুষ ভুগতে থাকবে, এটা মানা যায় না।
No comments