পুলিশের গুণ্ডামি তদন্তের নির্দেশ
ভারতের গুজরাটে কোটার দাবিতে প্যাটেল সম্প্রদায়ের আন্দোলন রুখতে পুলিশের অতিসক্রিয়তাই আন্দোলনকারীদের ক্ষিপ্ত করেছিল বলে অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভকারীদের সহিংস হওয়ার পেছনে পুলিশের ‘গুণ্ডামি’ই দায়ী। প্যাটেলদের পক্ষ থেকে এ অভিযোগ আগেই করা হয়েছিল। এবার আহমেদাবাদের শাহীবাগের একটি বহুতলের পার্কিং লটের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেল পুলিশ অকারণেই দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ির কাচ ভাঙছে! এই রকমই একটি ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ির মালিক, আইনজীবী বিরাট পোপটাল আহমেদাবাদ হাইকোর্টে পুলিশের বিরুদ্ধে হাঙ্গামা বাধানো এবং সম্পত্তি নষ্টের একটি অভিযোগ দায়ের করেন। আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করেন, নোটিশ পাঠিয়েছেন আহমেদাবাদের পুলিশ কমিশনারকে। হাঙ্গামা এবং ভাংচুরের ঘটনায় কোন পুলিশ কর্মীরা জড়িত, আসল ঘটনাই বা কী, সব বিশদে তদন্ত করতে পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দু’সপ্তাহের মধ্যে আহমেদাবাদ পুলিশকে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। মামলার ভারপ্রাপ্ত বিচারপতি পরদিওয়ালা এ নির্দেশ দেয়ার সময় বিরক্তি প্রকাশ করেছেন, যদি পুলিশই এ কাজ করে, তবে দাঙ্গাবাজ আর রক্ষকের মধে পার্থক কোথায়! প্যাটেলদের আন্দোলনের নেতা হারদিক প্যাটেল বলেছেন, ‘আমরা শন্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু পুলিশ আমাদের ওপর এমনভাবে পেটানো শুরু করেছে যেন আমরা সন্ত্রাসী। পুলিশ নারীদেরও নির্বিচারে পিটিয়েছে।’ এদিকে, বৃহস্পতিবার সারাদিন শান্তই ছিল গুজরাট। বুধবার রাত থেকে নতুন করে কোনো গণ্ডগোলের খবর না এলেও, আহত এক পুলিশ কর্মীর মৃত্যুর খবর মিলেছে।
এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১১-তে। রাজ্যের কিছু জায়গায় কারফিউ উঠেছে, কোথাও এখনও বহাল। বন্ধ বেশকিছু স্কুল-কলেজ। গুজব ছড়ানোর ভয়ে এদিনও নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে ইন্টারনেটের ব্যবহার। মোট ৫৩ কোম্পানি আধাসামরিক বাহিনী এবং ১১ কলাম সেনা মোতায়েন করেছে গুজরাট প্রশাসন। তবে চিন্তা বাড়িয়ে নতুন কর্মসূচির ঘোষণা করেছেন হারদিক প্যাটেল। রাজ্যের বিভিন্ন গ্রামে থাকা কৃষক এবং গোয়ালাদের কাছে তিনি আবেদন করেছেন পুলিশি জুলুমের প্রতিবাদে শহরে দুধ ও শাক-সবজি না পাঠাতে। পাশাপাশি হারদিকের দাবি, সেসব বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে, তাদের পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ৩০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। গুজরাট পরিস্থিতির জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদিকেই এদিন দায়ী করেছেন রাহুল গান্ধী। তিনি বলেছেন, মোদি সরকারের ক্রোধের রাজনীতি গুজরাট অস্থিরতার জন্য দায়ী। মোদির রাজনীতি তার বা তার দলের স্বার্থ মেটাতে পারে, দেশের সাধারণ মানুষের নয়। মোদি চতুর্দিকে প্যাকেজের কথা বলে বেড়াচ্ছেন, আসলে ওসব নিছক প্যাকেজিং! তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে গুজরাটে। মঙ্গলবার প্যাটেল সম্প্রদায়ের কয়েক লাখ সদস্য চাকরিতে কোটার দাবিতে গুজরাটের রাজ্যের প্রধান শহর আহমেদাবাদে জড়ো হয়। সেখানে হারদিক প্যাটেল অনশনে বসেন। রাতে তাকে অনশন মঞ্চ থেকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। বিক্ষোভকারীদের ওপর চলে পুলিশের নির্বিচার লাঠিপেটা। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। চলে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ। পরে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিলেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি।
No comments