শুধু ঘর পোড়েনি, পুড়েছে স্বপ্নও by একরামুল হুদা
আগামী
মাসের ৩ তারিখ মেয়ে কল্পনার বিয়ে। তাই দিনমজুর দানা মিয়া কষ্টের জমানো
টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য সোনার গয়না কিনেছেন। করে রেখেছিলেন আনুষঙ্গিক আরও
বাজার সদাইও। প্রথম মেয়ের বিয়ে, তাই সাধ্যের মধ্যে যতটুকু সম্ভব ধুমধাম
করেই বিয়ে দেবেন বলে ঠিক করে রেখেছিলেন। কিন্তু সব স্বপ্ন, সব আশা নিমেষেই
পুড়ে গেল আগুনে। বাড়ির অন্য সব জিনিসের সঙ্গে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মেয়ের
বিয়ের জন্য করা সব বাজার। দানা মিয়া বলেন, ‘আগুন লাগছে শুইনা নিচে নামছি,
আর উঠতে পারি নাই। আমার সব শেষ হইয়া গেছে।’
রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় আজ সোমবার আগুনে পুড়ে যাওয়া টিনশেড ঘরগুলোর একটিতে থাকতেন দানা মিয়া। দানা মিয়ার মতো পুড়েছে আরও অনেকের সংসার। অনেকের স্বপ্ন। আজ বেলা পৌনে একটার দিকে প্রগতি সরণির ডিআইটির উল্টোদিকে ওসমান গণির বস্তি নামে পরিচিত ওই বস্তিতে আগুন লাগে। ওসমান গণির ছোট ভাই বাড্ডা আলাতুন্নেসা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক। তিনি বলেন, তাঁদের পাঁচ ভাইয়ের মোট ১০টি টিনশেড বাড়ি ছিল। বাঁশ, কাঠ ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি প্রতিটি বাড়িই দুই থেকে তিন তলা। বাড়ি ১০টিতে মোট ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবার বাস করত। আজকের আগুনে ১০টি টিনশেডের ছয়টিই ছাই হয়ে গেছে। বাকিগুলোও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সৌভাগ্যক্রমে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
বস্তির বাসিন্দা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী মাজেদা বেগম কয়েক দিন আগে ২৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ফ্রিজ কিনেছিলেন। স্বামী রুহুল আমিন ভ্যান চালান। এক সন্তান তাঁদের। আগুন লাগার কথা শুনে ঘরের বাইরে বের হন। তখনো জানতেন না তাঁদের ওখানেই আগুন লেগেছে। পরে আর ঘরে ঢুকতে পারেননি। আগুনে পুড়ে গেছে সব। তিনি বলেন, ‘মাত্রই সংসারডা গুছাইয়া আনছিলাম। এখন সব শেষ হয়ে গেল। সবাই ঈদে দেশে গেছে গা। আমরা খালি দুই ঘর ছিলাম। দেশে গেলে টাকা পয়সা নিতাম। এখন সেগুলোও পুইড়া গেছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুচকা তৈরির একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। প্রথমে হালকা আগুন লাগলেও হঠাৎ করেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের ছুটিতে অনেকেই বাড়িতে চলে যাওয়ায় প্রায় সব ঘরই তালাবদ্ধ ছিল। তবে নুরজাহান, সুফিয়া, শিউলি, ফাতেমা বেগম, আজাদসহ অনেকেই প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা বাসায় থাকলেও ঘরের কোনো জিনিস বের করে আনতে পারেননি।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে। সোয়া দুইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বিকেল পাঁচটার সময় আগুন নেভানোর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা এবং আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কাজ করছিল রেড ক্রিসেন্টের ২৫ সদস্যের একটি দল। রেড ক্রিসেন্টের ডেপুটি ইয়ুথ চিফ আনিসুর রহমান বলেন, বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁরা কমপক্ষে ৩০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকের শরীরের বিভিন্ন জায়গা আগুনের আঁচে পুড়ে গেছে আবার টিনে আঘাতে কোথাও কোথাও কেটে গেছে।
আগুনে যাঁদের ঘর পুড়েছে ক্ষতি শুধু তাঁদেরই হয়েছে তা নয়। যাদের ঘর পোড়েনি, ক্ষতি হয়েছে তাঁদেরও। তেমনই একজন মরিয়ম। মরিয়মের বাড়ি নান্দাইলে। ঈদের বন্ধে বাড়িতে গিয়েছেন তিনি। পারভিন নামের এক নারীর বাড়িতে কাজ করেন মরিয়ম। আগুন লাগার খবর শুনে পারভিন মরিয়মের ঘরের খবর নিতে এসে দেখেন মরিয়মের ঘরের দরজা জানালা ভাঙা। ঘরের ভেতর কোনো মালামাল নেই। পরে ফোনে মরিয়মের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন মরিয়মের ঘরে প্রায় সাত হাজারের মতো টাকা ও স্বর্ণের কানের দুল ছিল। এখন নেই এর কিছুই। পারভিন বলেন, ‘শুনলাম, প্রত্যেক ঘরেই চুরি হইছে। কেউ আগুন নেভাতে ব্যস্ত ছিল, আর কেউ মালামাল লুটে।’
রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় আজ সোমবার আগুনে পুড়ে যাওয়া টিনশেড ঘরগুলোর একটিতে থাকতেন দানা মিয়া। দানা মিয়ার মতো পুড়েছে আরও অনেকের সংসার। অনেকের স্বপ্ন। আজ বেলা পৌনে একটার দিকে প্রগতি সরণির ডিআইটির উল্টোদিকে ওসমান গণির বস্তি নামে পরিচিত ওই বস্তিতে আগুন লাগে। ওসমান গণির ছোট ভাই বাড্ডা আলাতুন্নেসা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও কলেজের সহকারী প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক। তিনি বলেন, তাঁদের পাঁচ ভাইয়ের মোট ১০টি টিনশেড বাড়ি ছিল। বাঁশ, কাঠ ও সিমেন্ট দিয়ে তৈরি প্রতিটি বাড়িই দুই থেকে তিন তলা। বাড়ি ১০টিতে মোট ৭০০ থেকে ৮০০ পরিবার বাস করত। আজকের আগুনে ১০টি টিনশেডের ছয়টিই ছাই হয়ে গেছে। বাকিগুলোও আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে সৌভাগ্যক্রমে কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি।
বস্তির বাসিন্দা একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মচারী মাজেদা বেগম কয়েক দিন আগে ২৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ফ্রিজ কিনেছিলেন। স্বামী রুহুল আমিন ভ্যান চালান। এক সন্তান তাঁদের। আগুন লাগার কথা শুনে ঘরের বাইরে বের হন। তখনো জানতেন না তাঁদের ওখানেই আগুন লেগেছে। পরে আর ঘরে ঢুকতে পারেননি। আগুনে পুড়ে গেছে সব। তিনি বলেন, ‘মাত্রই সংসারডা গুছাইয়া আনছিলাম। এখন সব শেষ হয়ে গেল। সবাই ঈদে দেশে গেছে গা। আমরা খালি দুই ঘর ছিলাম। দেশে গেলে টাকা পয়সা নিতাম। এখন সেগুলোও পুইড়া গেছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফুচকা তৈরির একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। প্রথমে হালকা আগুন লাগলেও হঠাৎ করেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের ছুটিতে অনেকেই বাড়িতে চলে যাওয়ায় প্রায় সব ঘরই তালাবদ্ধ ছিল। তবে নুরজাহান, সুফিয়া, শিউলি, ফাতেমা বেগম, আজাদসহ অনেকেই প্রথম আলোকে বলেছেন, তাঁরা বাসায় থাকলেও ঘরের কোনো জিনিস বের করে আনতে পারেননি।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজ করে। সোয়া দুইটার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বিকেল পাঁচটার সময় আগুন নেভানোর কাজ পুরোপুরি শেষ হয়। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ এবং আগুন লাগার কারণ সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিস কোনো তথ্য দিতে পারেনি।
ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে আগুন নেভানোর কাজে সহায়তা এবং আহতদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার কাজ করছিল রেড ক্রিসেন্টের ২৫ সদস্যের একটি দল। রেড ক্রিসেন্টের ডেপুটি ইয়ুথ চিফ আনিসুর রহমান বলেন, বিকেল চারটা পর্যন্ত তাঁরা কমপক্ষে ৩০ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছেন। এর মধ্যে অনেকের শরীরের বিভিন্ন জায়গা আগুনের আঁচে পুড়ে গেছে আবার টিনে আঘাতে কোথাও কোথাও কেটে গেছে।
আগুনে যাঁদের ঘর পুড়েছে ক্ষতি শুধু তাঁদেরই হয়েছে তা নয়। যাদের ঘর পোড়েনি, ক্ষতি হয়েছে তাঁদেরও। তেমনই একজন মরিয়ম। মরিয়মের বাড়ি নান্দাইলে। ঈদের বন্ধে বাড়িতে গিয়েছেন তিনি। পারভিন নামের এক নারীর বাড়িতে কাজ করেন মরিয়ম। আগুন লাগার খবর শুনে পারভিন মরিয়মের ঘরের খবর নিতে এসে দেখেন মরিয়মের ঘরের দরজা জানালা ভাঙা। ঘরের ভেতর কোনো মালামাল নেই। পরে ফোনে মরিয়মের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারেন মরিয়মের ঘরে প্রায় সাত হাজারের মতো টাকা ও স্বর্ণের কানের দুল ছিল। এখন নেই এর কিছুই। পারভিন বলেন, ‘শুনলাম, প্রত্যেক ঘরেই চুরি হইছে। কেউ আগুন নেভাতে ব্যস্ত ছিল, আর কেউ মালামাল লুটে।’
No comments