জাপানে রবীন্দ্রচিহ্নের খোঁজে by প্রবীর বিকাশ সরকার
১৯৬১
সাল। শতবর্ষ রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী। ভারত ছাড়াও বিশ্বের একাধিক দেশে উদযাপন
করা হবে বিশ্বকবির এই দিবসটি। তাই নানা ধরনের আয়োজন। জাপানও এর ব্যতিক্রম
নয়। প্রধানমন্ত্রী নেহরুর আহ্বানে জাপানি ভক্তরা সাড়া দিয়েছেন।
রবীন্দ্রভবনের অধ্যক্ষ ক্ষিতীশ রায় প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান চিঠিতে লিখে
পাঠালেন জাপানে। অবশ্য এর আগে ১৯৫৭ সালেই কতিপয় প্রবীণ জাপানি ভক্ত
রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে একটি সভা আহ্বান করলেন তাদের
মধ্যে অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছিলেন জাপানের মর্যাদাসম্পন্ন প্রকাশনা সংস্থা
হেইবোনশা পাবলিশারের কর্ণধার এবং শিক্ষাবিদ শিমোনাকা ইয়াসাবুরোও। এই সভায়
সৌভাগ্যক্রমে ইন্দিরা গান্ধী উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি বিশ্বভারতীর
ছাত্রী ছিলেন একদা। ১৯৫৭ সালের সেই সময়ে তিনি পিতা প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল
নেহরুর সঙ্গে জাপান সফর করছিলেন।
পরের বছর ১৮৫৮ সালে টেগোর মেমোরিয়াল অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হল জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে, এর চেয়ারম্যান হলেন বিশিষ্ট কাগজ ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি গবেষক এবং রবীন্দ্রনাথের শেষ জীবনের বন্ধু ড. ওওকুরা কুনিহিকো। ১৯২৯ সালে রবীন্দ্রনাথ শেষবার জাপানে এলে তার বাড়িতে প্রায় তিন সপ্তাহ আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। কুনিহিকো বিশাল পরিকল্পনা করলেন এবং সাড়ে তিন বছর লাগিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১৯৬১ সালে প্রধান অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করলেন ড. কুনিহিকো, ভারতের রাষ্ট্রদূত এবং বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে। এ উপলক্ষে বিস্তর প্রকাশনা এবং পত্রপত্রিকা-সাময়িকীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল শুধু টোকিওতেই নয়, ওসাকা, নাগাসাকি, কোবে প্রভৃতি শহরেও। সংরক্ষণের অভাবে কত যে প্রকাশনা বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার হিসাব নেই। তারপরও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
০১. আপোরোন
তেমনি একটি সাড়া জাগানো ঋতুভিত্তিক ম্যাগাজিন ছিল ‘আপোরোন’ নামে। আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি ও সাহিত্যভিত্তিক এ ম্যাগাজিনটির সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন কাতোও শোওজিরোও। ‘আপোরোন শা’ প্রকাশনা সংস্থা গঠন করে এ ম্যাগাজিনটি প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগও নেন। তিনি নিজেই রবীন্দ্রভক্ত ছিলেন। ১৯৫৮ সালে ম্যাগাজিনটির উদ্বোধনী সংখ্যা প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রসংখ্যা হিসেবে। তাতে জাপানখ্যাত সাহিত্যিক, কবি ও অধ্যাপক-গবেষক রবীন্দ্রভক্ত যেমন কাতায়ামা তোশিহিকো / রবীন্দ্রনাথ টেগোর, নাকামুরা হাজিমে / টেগোর এবং রাধাকৃষ্ণান, ওওতা সাবুরোও / জাপানে টেগোরের গ্রন্থসমূহ, তাছাড়া রোমান রোলান / টেগোর সম্পর্কে, উইরিয়াম বাটলার ইয়েটস / গীতাঞ্জলির ভূমিকা, আঁন্দ্রে জিইদ / গীতাঞ্জলির যৌক্তিক ব্যাখ্যা, জাঁন এরবের / প্রেমের ভবিষ্যবক্তা, বি.জি. রাই / রবীন্দ্রদর্শনের সামাজিক তাৎপর্য প্রমুখের রচনাও জাপানিতে অনুবাদ করা হয়েছে। গীতাঞ্জলি থেকে কবিতা অনুবাদ করেছেন খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক ও অনুবাদক ইয়ামামুরো শিজুকা।
‘আপোরন’ ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথকে বিস্তৃতাকারে তুলে ধরেছে। রবীন্দ্রনাথের লেখাও অনুবাদ করা হয়েছে ইংরেজি থেকে জাপানিতে। উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মোৎসবে ৮ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলির জাপানি অনুবাদ প্রকাশ করে মাইলফলকের কাজ করেছে, সে সময় পর্যন্ত এ রকম প্রকাশনা বিদেশের অন্য কোনো দেশে হয়েছে বলে জানা নেই। সুতরাং রবীন্দ্রভক্ত কাতোও শোওজিরোওই প্রথম কৃতীত্বের অধিকারী।
০২. টেগোর সেন্টেনারি ফেস্টিভেল
১৯৬১ সালের জন্মজয়ন্তীর প্রধান অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় মে মাসের ৬ তারিখে সদ্য নির্মিত বুনকিয়োও কোওকাইদোও মিলনায়তনে প্রভাবশালী দৈনিক সংবাদপত্র আসাহিশিম্বুনের সহযোগিতায়। এ উপলক্ষে একটি চমৎকার বৃহদাকারে অনুষ্ঠান সূচিপত্র প্রকাশ করা হয়। মোটা আর্ট পেপারে সিলভার কালারের ওপর গাঢ়ো নীল রঙে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি এবং শিরোনাম। ভেতরে অনুষ্ঠান সূচি রয়েছে দুই পর্বে। প্রথম পর্বে প্রথমেই ভারতের জাতীয়সঙ্গীত ‘জনগণমন; ও পরে জাপানের জাতীয়সঙ্গীত ‘কিমিগায়ো’ তামাগাওয়া গাকুয়েন কয়ারের শিল্পীরা গেয়েছেন। এরপর চেয়ারম্যান ওওকুরা কুনিহিকোর শুভেচ্ছা বক্তৃতা। বাণী পড়ে শোনানো হয় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনতারোও কোসাকা, বৌদ্ধপণ্ডিত রেভারেন্ড রোজেন তাকাহিসা, প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও সমালোচক নিয়োজেন হাসেগাওয়া’র। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত লালজি মেহরোত্রা। রেকর্ডকৃত রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠস্বর বাজিয়ে শোনানো হয়। স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা দেন খ্যাতিমান কবি কুসানো শিনপেই। তামাগাওয়া গাকুয়েন কোয়ার ‘গ্লোরিয়া’ নামে সমস্বরে একটি গান পরিবেশ করে।
দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘ভারততীর্থ’ সঙ্গীতের জাপানি ভাষায় কোরাস। এতে কণ্ঠ দেন ৎসুকুজি বৌদ্ধ কোয়ারের শিল্পীরা। অকেস্ট্রা পরিচালনা করেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ রবীন্দ্রভক্ত সাদাও ইতোও। এরপর অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’র একাংশ, নৃত্যাভিনয়ে অংশ নেন সাকাকিবারা নৃত্য দল, পরিচালনা করেন সাকাকিবারা কিইৎসু। সাকাকিবারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি শান্তিনিকেতনে ভারতীয় ধ্র“পদী নৃত্যের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সূচিপত্রের প্রথমেই মুদ্রিত আছে ‘জনগণমন’-এর স্বরলিপি এবং নিচে গানটির জাপানি অনুবাদ, অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক ওওরুই জুন। অন্যান্য পৃষ্ঠাগুলোতে আছে : ‘চিত্রাঙ্গদা’ কাহিনীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, অভিনয়শিল্পীদের নাম। অধ্যাপক ও সমালোচক সাকামোতো তোকুমাৎসুর জন্মোৎসব উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য। অধ্যাপক কাতায়ামা তোশিহিকো কর্তৃক মাকে নিয়ে রচিত রবীন্দ্রনাথের ‘মনেপড়া’ কবিতাটির জাপানি অনুবাদ। ১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথের প্রথম জাপান ভ্রমণের সময়কার একটি ছবি, সংবাদপত্রে সংবাদের টুকরো, ১৯২৪ সালে জাপানে অবস্থানকালে স্বহস্তে লিখিত একটি বাণী ‘এনেছিনু সাথে লয়ে আশা / চলে গেনু রেখে ভালোবাসা’র আলোকচিত্র এবং জাপানি অনুবাদ। রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষরযুক্ত একটি আলোকচিত্র। রবীন্দ্র জীবনের বর্ষপঞ্জি। ‘ভারততীর্থ’ সঙ্গীতের সংক্ষিপ্ত পটভূমি মূল বাংলা থেকে জাপানিতে ভাষান্তর করেছেন স্বনামধন্য বহুভাষাবিদ টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারততত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ওয়াতানাবে শোওকো এবং জাপানি ভাষায় গীত সঙ্গীতটির সুর করেছেন সাদাও ইতোও। শেষদিকে রয়েছে ইয়ামামুরো শিজুকার অনূদিত একটি কবিতা যেটা অনুবাদক বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কানাডার নাগরিকদের উদ্দেশে আবেদনকৃত এবং ১৯৩৮ সালের মে মাসে অটোয়া বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কিন্তু কোন কবিতা বাংলা নাকি ইংরেজি তার হদিস খুঁজে পেলাম না। শেষ প্রচ্ছদে রবীন্দ্রনাথের অংকিত একটি চিত্র মুদ্রিত আছে।
০৩. টেগোর
টোকিওর মতো জাপানের দক্ষিণ অঞ্চলের বাণিজ্য মহানগর ওসাকা প্রিফেকচারেও রবীন্দ্র জন্মোৎসব উদযাপনের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ব্যবসায়ী ও ওসাকা চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান মিচিসুকে সুগি। কবে কমিটিটি গঠিত হয়েছে এবং অনুষ্ঠানাদি কি কি হয়েছে তার তথ্য আপাতত মিলছে না। ওসাকাতে জন্মোৎসবের অনুষ্ঠান হয়েছিল নিশিতেননোওজি কাইকান মিলনায়তনে অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে। এ উপলক্ষে সুশোভন একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে ‘টেগোর’ নামে। তাতে দেখা যায় সভাপতির নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রয়েছে, তিনি রবীন্দ্রনাথকে জানতেন। অনুষ্ঠান সূচিতে ছিল : দু’দেশের জাতীয়সঙ্গীত পরিবেশন। স্লাইডে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি প্রদর্শন ও কণ্ঠস্বরের রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো। কমিটির সভাপতির শুভেচ্ছা বক্তব্য, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত লালজি মেহরোত্রার শুভেচ্ছা বক্তব্য, জাপান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিয়াজন অফিস প্রধান তাৎসুউচি কোওনো এবং দৈনিক আসাহিশিম্বুন পত্রিকার মালিক নাগাতাকা মুরায়ামা’র বাণী। উল্লেখ্য, নাগাতাকা মুরায়ামার পিতা আসাহিশিম্বুন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা রিউহেই মুরায়ামার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল ১৯১৬ সালে জাপানে। মুরায়ামা রবীন্দ্রনাথের সম্মানার্থে একটি জাঁকজমকপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী চা-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক মোরিমোতো তাৎসুও এবং অধ্যাপক মিয়ামোতো মাসাকিয়ো।
এ অনুষ্ঠানের দুটি বড় আকর্ষণ ছিল ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত ‘রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ তথ্যচলচ্চিত্র এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তোকু গোতা রচিত ও পরিচালিত ভগবান বুদ্ধের জীবনীভিত্তিক নাটক ‘বসন্তের প্রাণ’। রবীন্দ্রনাথের একটি দুর্লভ ছবি মুদ্রিত হয়েছে তার স্বাক্ষরসহ সুজুকি নামক একজন রবীন্দ্রভক্তের সংগ্রহ থেকে। এরপর রবীন্দ্র জীবনের বর্ষপঞ্জি। নাতিদীর্ঘ নিবন্ধ লিখেছেন ওসাকা শিরিৎসু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসাও মিয়ামোতো ‘রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে’। রবীন্দ্রনাথের কর্মকাণ্ডে গভীর আধ্যাত্মিকতা কাজ করেছে বলে তিনি মনে করেন। কৃষি নিয়ে যে কাজ তিনি করেছেন সেটা সেই সময়কার জন্য এক বিপ্লব এবং অগ্রণী এক উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন। এ রচনার পাশেই মুদ্রিত হয়েছে ইংরেজিতে লেখক, সমালোচক, সাহিত্য বিশেষজ্ঞ দার্শনিক এবং ভারতীয় লেখক সমিতির কর্মসচিব মুলক রাজ আনন্দের একটি বাণী। আরও একটি প্রবন্ধ লিখেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিহারা তোকুও ‘এখনো প্রাণবন্ত চিন্তা’ নামে। লেখক এক স্থানে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের চিন্তাদর্শন কোনোভাবেই পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট স্থানের পুরনো ঐতিহ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ব্যাপকভাবে সমগ্র মানব জাতির স্বাভাবিক অনুরাগ হিসেবে যথার্থ আধুনিকত্বে নির্ভর করা যায়, আবার রবীন্দ্রনাথের চারিত্রিক স্বাতন্ত্র্য যুগের ভিন্ন চিন্তা নয়, বরং আধুনিক মানব হিসেবে বিপুল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিষয়কেই নির্দেশ করে। এর পাশে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার অনুবাদ, করেছেন মিয়ামোতো মাসাকিয়ো। তারপর রবীন্দ্রনাথের তথ্যচলচ্চিত্রটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা লিখেছেন অধ্যাপক ওওরুই জুন। আছে ‘বসন্তের প্রাণ’ নাটকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। টোকিওতে রবীন্দ্র জন্মোৎসবকে কেন্দ্র করে বিগত সাড়ে তিন বছরের সব কর্মকাণ্ডের দলিলপত্রের প্রদর্শনীর বিবরণ। রবীন্দ্রনাথের কবিতার অনুবাদ, করেছেন অধ্যাপক মিয়ামোতো মাসাকিয়ো। আপোরোন শা প্রকাশনা সংস্থার রবীন্দ্রনাথবিষয়ক বিজ্ঞাপন। শেষে ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ কবিতাটির জাপানি অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক কাতায়ামা তোশিহিকো। রবীন্দ্রনাথের দুটি চিত্রকর্মও মুদ্রিত আছে।
০৪. কুরিয়ে
ঋতু এবং কর্মজীবনভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘কুরিয়ে’ ১৯৫৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ম্যাগাজিনটি ১৯৬১ সালের আগস্ট সংখ্যায় খ্যাতিমান ভারত গবেষক, ভারতীয় ধ্র“পদী সাহিত্য বিশ্লেষক তানাকা ওতোয়া একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেন ‘টেগোর এবং জাপান’ শিরোনামে। তিনি প্রবন্ধের শেষ অনুচ্ছেদে লিখেছেন, সুপুরুষ, সুকণ্ঠের অধিকারী রবীন্দ্রনাথকে তার তরুণকালে গান্ধী প্লেবয় বলে প্রশংসা করেছিলেন এমন কথা শুনেছি। সেটা সত্যি না মিথ্যে জানা নেই, কিন্তু ঋষিকবি রবীন্দ্রনাথ একজন মানুষ ছিলেন। মানব রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আরও গবেষণা করা আবশ্যক বলে মনে হয়। লেখাটির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ছবি ও চিত্রকর্ম মুদ্রণ করেছে।
পরের বছর ১৮৫৮ সালে টেগোর মেমোরিয়াল অ্যাসোসিয়েশন গঠিত হল জন্মজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে, এর চেয়ারম্যান হলেন বিশিষ্ট কাগজ ব্যবসায়ী, শিক্ষাবিদ, আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি গবেষক এবং রবীন্দ্রনাথের শেষ জীবনের বন্ধু ড. ওওকুরা কুনিহিকো। ১৯২৯ সালে রবীন্দ্রনাথ শেষবার জাপানে এলে তার বাড়িতে প্রায় তিন সপ্তাহ আতিথ্য গ্রহণ করেছিলেন। কুনিহিকো বিশাল পরিকল্পনা করলেন এবং সাড়ে তিন বছর লাগিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ১৯৬১ সালে প্রধান অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করলেন ড. কুনিহিকো, ভারতের রাষ্ট্রদূত এবং বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে। এ উপলক্ষে বিস্তর প্রকাশনা এবং পত্রপত্রিকা-সাময়িকীর বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল শুধু টোকিওতেই নয়, ওসাকা, নাগাসাকি, কোবে প্রভৃতি শহরেও। সংরক্ষণের অভাবে কত যে প্রকাশনা বিলুপ্ত হয়ে গেছে তার হিসাব নেই। তারপরও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।
০১. আপোরোন
তেমনি একটি সাড়া জাগানো ঋতুভিত্তিক ম্যাগাজিন ছিল ‘আপোরোন’ নামে। আধ্যাত্মিক সংস্কৃতি ও সাহিত্যভিত্তিক এ ম্যাগাজিনটির সম্পাদক ও প্রকাশক ছিলেন কাতোও শোওজিরোও। ‘আপোরোন শা’ প্রকাশনা সংস্থা গঠন করে এ ম্যাগাজিনটি প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে গ্রন্থ প্রকাশের উদ্যোগও নেন। তিনি নিজেই রবীন্দ্রভক্ত ছিলেন। ১৯৫৮ সালে ম্যাগাজিনটির উদ্বোধনী সংখ্যা প্রকাশিত হয় রবীন্দ্রসংখ্যা হিসেবে। তাতে জাপানখ্যাত সাহিত্যিক, কবি ও অধ্যাপক-গবেষক রবীন্দ্রভক্ত যেমন কাতায়ামা তোশিহিকো / রবীন্দ্রনাথ টেগোর, নাকামুরা হাজিমে / টেগোর এবং রাধাকৃষ্ণান, ওওতা সাবুরোও / জাপানে টেগোরের গ্রন্থসমূহ, তাছাড়া রোমান রোলান / টেগোর সম্পর্কে, উইরিয়াম বাটলার ইয়েটস / গীতাঞ্জলির ভূমিকা, আঁন্দ্রে জিইদ / গীতাঞ্জলির যৌক্তিক ব্যাখ্যা, জাঁন এরবের / প্রেমের ভবিষ্যবক্তা, বি.জি. রাই / রবীন্দ্রদর্শনের সামাজিক তাৎপর্য প্রমুখের রচনাও জাপানিতে অনুবাদ করা হয়েছে। গীতাঞ্জলি থেকে কবিতা অনুবাদ করেছেন খ্যাতিমান শিশুসাহিত্যিক ও অনুবাদক ইয়ামামুরো শিজুকা।
‘আপোরন’ ১৯৬১ সাল পর্যন্ত বেশ কয়েকটি সংখ্যায় রবীন্দ্রনাথকে বিস্তৃতাকারে তুলে ধরেছে। রবীন্দ্রনাথের লেখাও অনুবাদ করা হয়েছে ইংরেজি থেকে জাপানিতে। উল্লেখ্য, ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মোৎসবে ৮ খণ্ডে রবীন্দ্র রচনাবলির জাপানি অনুবাদ প্রকাশ করে মাইলফলকের কাজ করেছে, সে সময় পর্যন্ত এ রকম প্রকাশনা বিদেশের অন্য কোনো দেশে হয়েছে বলে জানা নেই। সুতরাং রবীন্দ্রভক্ত কাতোও শোওজিরোওই প্রথম কৃতীত্বের অধিকারী।
০২. টেগোর সেন্টেনারি ফেস্টিভেল
১৯৬১ সালের জন্মজয়ন্তীর প্রধান অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হয় মে মাসের ৬ তারিখে সদ্য নির্মিত বুনকিয়োও কোওকাইদোও মিলনায়তনে প্রভাবশালী দৈনিক সংবাদপত্র আসাহিশিম্বুনের সহযোগিতায়। এ উপলক্ষে একটি চমৎকার বৃহদাকারে অনুষ্ঠান সূচিপত্র প্রকাশ করা হয়। মোটা আর্ট পেপারে সিলভার কালারের ওপর গাঢ়ো নীল রঙে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি এবং শিরোনাম। ভেতরে অনুষ্ঠান সূচি রয়েছে দুই পর্বে। প্রথম পর্বে প্রথমেই ভারতের জাতীয়সঙ্গীত ‘জনগণমন; ও পরে জাপানের জাতীয়সঙ্গীত ‘কিমিগায়ো’ তামাগাওয়া গাকুয়েন কয়ারের শিল্পীরা গেয়েছেন। এরপর চেয়ারম্যান ওওকুরা কুনিহিকোর শুভেচ্ছা বক্তৃতা। বাণী পড়ে শোনানো হয় জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেনতারোও কোসাকা, বৌদ্ধপণ্ডিত রেভারেন্ড রোজেন তাকাহিসা, প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও সমালোচক নিয়োজেন হাসেগাওয়া’র। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত লালজি মেহরোত্রা। রেকর্ডকৃত রবীন্দ্রনাথের কণ্ঠস্বর বাজিয়ে শোনানো হয়। স্মৃতিচারণমূলক বক্তৃতা দেন খ্যাতিমান কবি কুসানো শিনপেই। তামাগাওয়া গাকুয়েন কোয়ার ‘গ্লোরিয়া’ নামে সমস্বরে একটি গান পরিবেশ করে।
দ্বিতীয় পর্বে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের ‘ভারততীর্থ’ সঙ্গীতের জাপানি ভাষায় কোরাস। এতে কণ্ঠ দেন ৎসুকুজি বৌদ্ধ কোয়ারের শিল্পীরা। অকেস্ট্রা পরিচালনা করেন বিশিষ্ট সঙ্গীতজ্ঞ রবীন্দ্রভক্ত সাদাও ইতোও। এরপর অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রনাথের গীতিনাট্য ‘চিত্রাঙ্গদা’র একাংশ, নৃত্যাভিনয়ে অংশ নেন সাকাকিবারা নৃত্য দল, পরিচালনা করেন সাকাকিবারা কিইৎসু। সাকাকিবারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি শান্তিনিকেতনে ভারতীয় ধ্র“পদী নৃত্যের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। সূচিপত্রের প্রথমেই মুদ্রিত আছে ‘জনগণমন’-এর স্বরলিপি এবং নিচে গানটির জাপানি অনুবাদ, অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক ওওরুই জুন। অন্যান্য পৃষ্ঠাগুলোতে আছে : ‘চিত্রাঙ্গদা’ কাহিনীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি, অভিনয়শিল্পীদের নাম। অধ্যাপক ও সমালোচক সাকামোতো তোকুমাৎসুর জন্মোৎসব উপলক্ষে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য। অধ্যাপক কাতায়ামা তোশিহিকো কর্তৃক মাকে নিয়ে রচিত রবীন্দ্রনাথের ‘মনেপড়া’ কবিতাটির জাপানি অনুবাদ। ১৯১৬ সালে রবীন্দ্রনাথের প্রথম জাপান ভ্রমণের সময়কার একটি ছবি, সংবাদপত্রে সংবাদের টুকরো, ১৯২৪ সালে জাপানে অবস্থানকালে স্বহস্তে লিখিত একটি বাণী ‘এনেছিনু সাথে লয়ে আশা / চলে গেনু রেখে ভালোবাসা’র আলোকচিত্র এবং জাপানি অনুবাদ। রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষরযুক্ত একটি আলোকচিত্র। রবীন্দ্র জীবনের বর্ষপঞ্জি। ‘ভারততীর্থ’ সঙ্গীতের সংক্ষিপ্ত পটভূমি মূল বাংলা থেকে জাপানিতে ভাষান্তর করেছেন স্বনামধন্য বহুভাষাবিদ টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারততত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক ওয়াতানাবে শোওকো এবং জাপানি ভাষায় গীত সঙ্গীতটির সুর করেছেন সাদাও ইতোও। শেষদিকে রয়েছে ইয়ামামুরো শিজুকার অনূদিত একটি কবিতা যেটা অনুবাদক বলছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে কানাডার নাগরিকদের উদ্দেশে আবেদনকৃত এবং ১৯৩৮ সালের মে মাসে অটোয়া বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত কিন্তু কোন কবিতা বাংলা নাকি ইংরেজি তার হদিস খুঁজে পেলাম না। শেষ প্রচ্ছদে রবীন্দ্রনাথের অংকিত একটি চিত্র মুদ্রিত আছে।
০৩. টেগোর
টোকিওর মতো জাপানের দক্ষিণ অঞ্চলের বাণিজ্য মহানগর ওসাকা প্রিফেকচারেও রবীন্দ্র জন্মোৎসব উদযাপনের জন্য আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে গঠিত কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন ব্যবসায়ী ও ওসাকা চেম্বার অব কমার্সের চেয়ারম্যান মিচিসুকে সুগি। কবে কমিটিটি গঠিত হয়েছে এবং অনুষ্ঠানাদি কি কি হয়েছে তার তথ্য আপাতত মিলছে না। ওসাকাতে জন্মোৎসবের অনুষ্ঠান হয়েছিল নিশিতেননোওজি কাইকান মিলনায়তনে অক্টোবর মাসের ৭ তারিখে। এ উপলক্ষে সুশোভন একটি স্মরণিকা প্রকাশিত হয়েছে ‘টেগোর’ নামে। তাতে দেখা যায় সভাপতির নাতিদীর্ঘ বক্তব্য রয়েছে, তিনি রবীন্দ্রনাথকে জানতেন। অনুষ্ঠান সূচিতে ছিল : দু’দেশের জাতীয়সঙ্গীত পরিবেশন। স্লাইডে রবীন্দ্রনাথের প্রতিকৃতি প্রদর্শন ও কণ্ঠস্বরের রেকর্ড বাজিয়ে শোনানো। কমিটির সভাপতির শুভেচ্ছা বক্তব্য, ভারতীয় রাষ্ট্রদূত লালজি মেহরোত্রার শুভেচ্ছা বক্তব্য, জাপান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের লিয়াজন অফিস প্রধান তাৎসুউচি কোওনো এবং দৈনিক আসাহিশিম্বুন পত্রিকার মালিক নাগাতাকা মুরায়ামা’র বাণী। উল্লেখ্য, নাগাতাকা মুরায়ামার পিতা আসাহিশিম্বুন পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা রিউহেই মুরায়ামার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ঘনিষ্ঠতা হয়েছিল ১৯১৬ সালে জাপানে। মুরায়ামা রবীন্দ্রনাথের সম্মানার্থে একটি জাঁকজমকপূর্ণ ঐতিহ্যবাহী চা-অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক মোরিমোতো তাৎসুও এবং অধ্যাপক মিয়ামোতো মাসাকিয়ো।
এ অনুষ্ঠানের দুটি বড় আকর্ষণ ছিল ১৯৬১ সালে সত্যজিৎ রায়ের নির্মিত ‘রবীন্দ্রনাথ টেগোর’ তথ্যচলচ্চিত্র এবং সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব তোকু গোতা রচিত ও পরিচালিত ভগবান বুদ্ধের জীবনীভিত্তিক নাটক ‘বসন্তের প্রাণ’। রবীন্দ্রনাথের একটি দুর্লভ ছবি মুদ্রিত হয়েছে তার স্বাক্ষরসহ সুজুকি নামক একজন রবীন্দ্রভক্তের সংগ্রহ থেকে। এরপর রবীন্দ্র জীবনের বর্ষপঞ্জি। নাতিদীর্ঘ নিবন্ধ লিখেছেন ওসাকা শিরিৎসু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাসাও মিয়ামোতো ‘রবীন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে’। রবীন্দ্রনাথের কর্মকাণ্ডে গভীর আধ্যাত্মিকতা কাজ করেছে বলে তিনি মনে করেন। কৃষি নিয়ে যে কাজ তিনি করেছেন সেটা সেই সময়কার জন্য এক বিপ্লব এবং অগ্রণী এক উদ্যোগ বলে অভিহিত করেছেন। এ রচনার পাশেই মুদ্রিত হয়েছে ইংরেজিতে লেখক, সমালোচক, সাহিত্য বিশেষজ্ঞ দার্শনিক এবং ভারতীয় লেখক সমিতির কর্মসচিব মুলক রাজ আনন্দের একটি বাণী। আরও একটি প্রবন্ধ লিখেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবিহারা তোকুও ‘এখনো প্রাণবন্ত চিন্তা’ নামে। লেখক এক স্থানে বলেছেন, রবীন্দ্রনাথের চিন্তাদর্শন কোনোভাবেই পৃথিবীর একটি নির্দিষ্ট স্থানের পুরনো ঐতিহ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, ব্যাপকভাবে সমগ্র মানব জাতির স্বাভাবিক অনুরাগ হিসেবে যথার্থ আধুনিকত্বে নির্ভর করা যায়, আবার রবীন্দ্রনাথের চারিত্রিক স্বাতন্ত্র্য যুগের ভিন্ন চিন্তা নয়, বরং আধুনিক মানব হিসেবে বিপুল বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিষয়কেই নির্দেশ করে। এর পাশে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতার অনুবাদ, করেছেন মিয়ামোতো মাসাকিয়ো। তারপর রবীন্দ্রনাথের তথ্যচলচ্চিত্রটি সম্পর্কে ব্যাখ্যা লিখেছেন অধ্যাপক ওওরুই জুন। আছে ‘বসন্তের প্রাণ’ নাটকের সংক্ষিপ্ত বিবরণ। টোকিওতে রবীন্দ্র জন্মোৎসবকে কেন্দ্র করে বিগত সাড়ে তিন বছরের সব কর্মকাণ্ডের দলিলপত্রের প্রদর্শনীর বিবরণ। রবীন্দ্রনাথের কবিতার অনুবাদ, করেছেন অধ্যাপক মিয়ামোতো মাসাকিয়ো। আপোরোন শা প্রকাশনা সংস্থার রবীন্দ্রনাথবিষয়ক বিজ্ঞাপন। শেষে ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ কবিতাটির জাপানি অনুবাদ করেছেন রবীন্দ্র গবেষক অধ্যাপক কাতায়ামা তোশিহিকো। রবীন্দ্রনাথের দুটি চিত্রকর্মও মুদ্রিত আছে।
০৪. কুরিয়ে
ঋতু এবং কর্মজীবনভিত্তিক ম্যাগাজিন ‘কুরিয়ে’ ১৯৫৯ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়। রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ম্যাগাজিনটি ১৯৬১ সালের আগস্ট সংখ্যায় খ্যাতিমান ভারত গবেষক, ভারতীয় ধ্র“পদী সাহিত্য বিশ্লেষক তানাকা ওতোয়া একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ লিখেন ‘টেগোর এবং জাপান’ শিরোনামে। তিনি প্রবন্ধের শেষ অনুচ্ছেদে লিখেছেন, সুপুরুষ, সুকণ্ঠের অধিকারী রবীন্দ্রনাথকে তার তরুণকালে গান্ধী প্লেবয় বলে প্রশংসা করেছিলেন এমন কথা শুনেছি। সেটা সত্যি না মিথ্যে জানা নেই, কিন্তু ঋষিকবি রবীন্দ্রনাথ একজন মানুষ ছিলেন। মানব রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আরও গবেষণা করা আবশ্যক বলে মনে হয়। লেখাটির সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ছবি ও চিত্রকর্ম মুদ্রণ করেছে।
No comments