ঘূর্ণিঝড় মহাসেন
ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের এখন পর্যন্ত যে
গতিপ্রকৃতি জানা যাচ্ছে, তাতে বাংলাদেশের উপকূল ভাগে আঘাত হানার আশঙ্কাই
বেশি। মাঝারি মাত্রার ঘূর্ণিঝড়টি শক্তি অর্জন করে যেমন ধ্বংসাত্মক ও
বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে, তেমনি দুর্বল হয়ে যাওয়া বা গতিপথও পরিবর্তন
করতে পারে। এমন একটি পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় হচ্ছে, এর গতিপ্রকৃতির দিকে
গভীর মনোযোগ রাখা এবং পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
গ্রহণের সব প্রস্তুতি রাখা। ঘূর্ণিঝড়ের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশের জন্য নতুন
নয়। অতীতে এ দেশটি এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ শিকার হয়েছে।
ব্যাপক প্রাণহানিসহ ধ্বসংসযজ্ঞ ও সম্পদহানির ঘটনা ঘটেছে। ’৭০ ও ’৯১ সালের
ঘূর্ণিঝড় দুটি শুধু এ অঞ্চল নয়, প্রাণহানি ও সম্পদ ক্ষয়ের দিক দিয়ে
বৈশ্বিকভাবেও শোচনীয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে বিবেচিত। ২০০৭ সালে ভয়াবহ
ঘূর্ণিঝড় সিডরের আঘাতের দুই বছরের মাথায় ২০০৯ সালে আঘাত হেনেছিল আইলা। এই
দুটি ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষত উপকূলীয় অঞ্চল ও সেখানকার অনেক মানুষকে এখনো বয়ে
বেড়াতে হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন
হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের ওপর মানুষের হাত নেই।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের গতিপ্রকৃতিও হয়তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। তবে
প্রয়োজনীয় ও যথাযথ আগাম প্রস্তুতি এ ধরনের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে
পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে যেসব মানুষ বসবাস করে, তাদের জন্য নিরাপদ
আশ্রয়ের বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রে যেসব জেলে মাছ ধরতে যান,
তাঁদের জন্য সতর্কতা ও নিরাপদে ফিরে আসার জন্য আগাম ঘোষণা, বন্দরসহ বিভিন্ন
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও সম্পদ রক্ষার যথাযথ উদ্যোগ নিলে জান ও মাল—দুই
ক্ষেত্রেই ক্ষয়ক্ষতি কমানো সম্ভব। এ ছাড়া এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার
পর চিকিৎসাসেবা বা খাদ্য ও পানীয় জোগান দেওয়াসহ যেসব জরুরি করণীয় থাকে,
সে ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি থাকলে সঙ্গে সঙ্গেই উদ্ধার অভিযান ও
ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় নেমে পড়া যায়। প্রয়োজনে উপকূলীয় এলাকার
লোকজনকে যাতে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া যায়, সে জন্যও প্রশাসনকে
প্রস্তুত থাকতে হবে। দুর্যোগ মোকাবিলা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের
দক্ষতার সুনাম রয়েছে। আশা করব, এ ক্ষেত্রেও তা বজায় থাকবে।
No comments