ইংল্যান্ড ২: ১ ব্রাজিল- ওয়েম্বলিতে বিবর্ণ ব্রাজিল

তাঁর জন্য মঞ্চটা প্রস্তুত ছিল। এক বছর পর দলে ফেরাটা উদ্যাপন করতে পারতেন গোল করে। সহজতম সুযোগও পেয়েছিলেন, কিন্তু যে শট নিলেন পেনাল্টিতে, সেটা হয়তো পাড়াতো গোলরক্ষকও ঠেকিয়ে দিত।
এ সময়ের অন্যতম সেরা জো হার্ট রুখে দিলেন সহজেই। রোনালদিনহোর প্রত্যাবর্তন ঢাকা পড়ল হতাশায়। দলে ফেরাটাকেই বরং প্রশ্নবিদ্ধ করে হলুদ জার্সিতে নিজের ক্যারিয়ারের সম্ভাবনাকে আরও ঝাপসা করে তুললেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের প্রীতি ম্যাচটাও হলো রোনালদিনহোর মতোই। ওয়েইন রুনি ও ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের গোলে জিতল ইংল্যান্ড (২-১)। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই হার অচেনা এক স্বাদই দিল ব্রাজিলকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিল যে জিতল ২৩ বছর পর! ফুটবলকে আজকের এই ভুবনজয়ী রূপে তুলে আনতে ইংলিশ ফুটবল সংস্থার (এফএ) অনেক বড় অবদান। সেই এফএরই ১৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ওয়েম্বলিতে এই প্রীতি ম্যাচ। পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিলকে হারিয়েই উপলক্ষটি স্মরণীয় করে রাখল স্টিভেন জেরার্ডের দল।
১৯ মিনিটে রোনালদিনহোর পেনাল্টি মিসের সাত মিনিটের মধ্যেই ইংল্যান্ডকে এগিয়ে দিয়েছিলেন ওয়েইন রুনি। দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটে ফ্রেড সমতা আনেন। দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর এই মিনিট দশেকই ব্রাজিলকে লেগেছিল ব্রাজিলের মতো। এর মধ্যে ফ্রেডেরই আরেকটি শট লেগেছিল পোস্টে। কিন্তু এ ছাড়া বাকি ম্যাচে ব্রাজিল ছিল ছন্নছাড়া, বিবর্ণ। আর তাতে প্রত্যাবর্তনের ম্যাচে লুইস ফেলিপে স্কলারির এই বোধোদয় না হয়ে পারেই না যে সামনে অনেক কাজ করতে হবে তাঁকে।
ল্যাম্পার্ডের গোলে জিতলেও ইংলিশ মিডিয়া ইংল্যান্ডের নায়কের আসনে বসিয়েছে জ্যাক উইলশেয়ারকে। জেরার্ডের সঙ্গে জুটি গড়ে মাঝমাঠে দারুণ খেলেছেন আর্সেনাল মিডফিল্ডার। ভালো অবশ্যই খেলেছেন, তবে ইংলিশ মিডিয়া স্বভাবসুলভ কায়দায় শুরু করেছে তাঁকে নিয়ে মাতামাতি। মিডিয়ার চোখে উইলশেয়ার ‘ব্রাজিলিয়ানদের চেয়েও বেশি ব্রাজিলিয়ান’। ১৯৬৬ সালের পর থেকেই শিরোপা-বুভুক্ষু ইংলিশদের বড় ভরসাও এখন এই ২১ বছর বয়সী!
ইংলিশ মিডিয়ার এই চরিত্রটি ভালো করে জানেন বলেই তরুণ মিডফিল্ডারকে যথাসম্ভব আড়ালে রাখার চেষ্টা করেছেন রয় হজসন। তবে ইংল্যান্ড কোচ ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমি ওকে চাপ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি। তবে এখন মনে হচ্ছে, তার আর দরকার নেই। আপনারা সাংবাদিকেরা যত খুশি ওর ওপর চাপের পাহাড় চাপিয়ে দিন। মনে হচ্ছে না এতে ওর কোনো সমস্যা হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এ নিয়ে ওর কোনো আপত্তি নেই, আমিই-বা উদ্বিগ্ন হব কেন?’
ব্রাজিলিয়ান মিডিয়া রোনালদিনহোর পেনাল্টি মিসের চেয়েও বিস্মিত তাঁকে দলে নেওয়ায়। তাদের প্রশ্ন, এই ‘বুড়ো ঘোড়া’কে কেন পেনাল্টি নিতে দেওয়া হলো? বেশ কিছুদিন ধরে নেইমারই পেনাল্টি নেন। পরশু ম্যাচের রিপ্লেও দেখিয়েছে, রোনালদিনহো স্পটে বল বসানোর পর পরই নেইমার এগিয়ে এসে কী যেন বলতে চাইলেন। তবে রোনালদিনহোর মতো সিনিয়র যখন এই দায়িত্ব নিচ্ছেন, নিজের দাবিটা হয়তো আর জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। বিরক্ত হয়ে প্রথমার্ধ শেষেই রোনালদিনহোকে তুলে নেন স্কলারি। পরে বলেছেন, ‘এটাই ঠিক ছিল নেইমার পেনাল্টি নেবে। কিন্তু ওই সময় সে শিন প্যাড পাল্টাচ্ছিল কিংবা কী যেন করছিল। রোনালদিনহো বলটা নিয়ে নিয়েছিল। ওর মতো অভিজ্ঞ এবং ওর মাপের কোনো খেলোয়াড়কে সরিয়ে কেই-বা পেনাল্টি নেবে?’
তবে পরাজয়ে খুব হতাশও নন স্কলারি। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলেছেন, শুরুটা এমন হার দিয়ে করে জয়ে শেষ টানতেই তিনি অভ্যস্ত! এএফপি, রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.