২৫ সালের ভেতরেই নির্বাচন দিতে হবে: মানবজমিনকে ডা. তাহের by কিরণ শেখ

দ্রুত সংস্কার শেষে ২০২৫ সালের ভেতরেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। নির্বাচনে জামায়াত এককভাবে  অংশগ্রহণ করবে কিনা তা চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর পরিস্থিতি দেখে সিদ্ধান্ত হবে। নির্বাচন ও সংস্কার এবং ৭১ প্রশ্নে বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের কোনো দ্বন্দ্ব নেই বলে দাবি করেন তিনি। মানবজমিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে নানা ইস্যুতে কথা বলেন সাবেক এই ছাত্রনেতা। তিনি বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচন কীভাবে হচ্ছে, কতো তারিখে হচ্ছে- এ ব্যাপারে একটা অনিশ্চয়তা আছে। কিন্তু নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচিত সরকারের হাতেই ক্ষমতা যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই। কিন্তু কখন এবং কীভাবে- এ ব্যাপারটা এখনো অস্পষ্ট। তাই এ ব্যাপারে আমরা এখনো কোনো চিন্তা করছি না। জাতীয় স্বার্থে একটা ব্যাপারে চিন্তা করছি, সেটা হচ্ছে- জাতীয় ঐকমত্য।

দ্রুত নির্বাচন নিয়ে বিএনপি’র সঙ্গে জামায়াতের মতবিরোধ নেই বলে জানিয়েছেন সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। বলেন, বিএনপি কখনো বলে নাই যে, সংস্কার প্রয়োজন নেই। আপনারা (অন্তর্বর্তী সরকার) নির্বাচন দিয়ে দেন। আর আমরাও কখনো বলি নাই, সব সংস্কার শেষে নির্বাচন দেন। তারা বলছে, সংস্কার করেন জরুরিগুলো। আমাদের কথা হচ্ছে, প্রয়োজনীয় সংস্কার করে নির্বাচন দেন। আগে সংস্কার না কী নির্বাচন প্রয়োজন, এ নিয়ে কিছুটা প্রার্থক্য রয়েছে। আর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তাদের তো ক্ষমতায় থাকার কোনো এজেন্ডা থাকা উচিত না। আমরা খুব পরিষ্কার বলেছি, ২০২৫ সালের ভেতরেই নির্বাচন দিতে হবে।

জামায়াতও আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এরপরে স্থানীয় সর্‌কার নির্বাচন চায় বলে জানিয়েছেন তিনি। বলেন, নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। কোনটা আগে, কোনটা পরে- এটা তারা স্পষ্ট করেন নাই। আমি মনে করি, জাতীয় সংসদ নির্বাচনটাই অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। আমার মত হচ্ছে, যতদ্রুত সম্ভব আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে। তারপরে স্থানীয় নির্বাচন।
বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব তৈরী হয়নি বলে দাবি করেন মোহাম্মদ তাহের। তিনি বলেন, আগে আমরা (বিএনপি-জামায়াত) জোটবদ্ধ ছিলাম। সে কারণে যেকোনো ইস্যুতে জোট থেকে একই ধরনের বক্তব্য দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন আর জোট নাই। না থাকার কারণে প্রত্যেকে বিভিন্ন ইস্যুতে নিজস্ব কথা বলছে। এক্ষেত্রে কিছুটা মতানৈক্য থাকতেই পারে। এটা স্বাভাবিক। আমি মনে করি, এটা মতবিরোধে পরিণত হয় নাই। মতবিরোধ হবে বলেও আমি মনে করি না।

বিএনপি চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে একথা জামায়াত বলেনি বলে দাবি করেন তিনি। বলেন, জামায়াত কখনই বলে নাই যে, বিএনপি চাঁদাবাজিতে লিপ্ত হয়েছে। আমরা যেটা বলেছি, এখনো চাঁদাবাজি ও জুলুম চলছে। মানুষ যদি বলে চাঁদাবাজি ও জুলুম নাই তাহলে আমরা খুশি। আমরা তো এমনই একটি দেশ চাই। আর যদি চাঁদাবাজি চলে তাহলে তো এ ব্যাপারে কথা হওয়া উচিত এবং তা বন্ধ হওয়া উচিত।

একাত্তরের জামায়াতের ভূমিকার বিষয়ে বিএনপি’র দুই-একজন নেতার বক্তব্যকে তাদের ব্যক্তিগত বলে মনে করছেন মোহাম্মদ তাহের। বলেন, বিএনপি ও জামায়াত দীর্ঘদিন এদেশের রাজনীতিতে পরস্পর সম্পর্ক বজায় রেখে কাজ করেছে। ৫ই আগস্টের পরবর্তী সময় দেশে একটি গুণগত পরবির্তনের যে সুযোগ এসেছে, এটা সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গেই ভূমিকা পালন করতে হবে। সেজন্য প্রয়োজন কতিপয় বিষয়ে একটি জাতীয় ঐক্য। যেমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ, একটি স্থায়ী গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচন। এসব বিষয়ে সকলকেই ঐকমত্য পোষণ করা উচিত। ঐক্যবদ্ধতা এদেশকে রক্ষা করতে পারবে। সে কারণে কারও এমন কোনো বক্তব্যে ও মন্তব্য করা উচিত নয়, যেটা জাতীয় ঐক্য তৈরীর ক্ষেত্রে সংশয় ও বাধা হতে পারে। বিএনপির দুই-একজন নেতা যে সমস্ত কথা বলছেন, আমি মনে করি, এটা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত নয়। এটা তাদের ব্যক্তিগত মন্তব্য। এজন্য আমরা বিএনপি’র সঙ্গে কোনো তর্ক-বিতর্কে জড়িত হতে চাই না।

৭১ এখন জামায়াতের নেতাকর্মীদের কাছে খুব প্রাসঙ্গিক না বলে জানান তিনি। বলেন, আমরা এখন যারা জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বে আছি এবং যারা জামায়াতে ইসলামী করছি, এরা প্রায় সকলেই বাংলাদেশের প্রোডাক্ট। সুতরাং একাত্তর সালটা এখন আমাদের দলীয় লোকদের কাছে খুব প্রাসঙ্গিক না। যেহেতু আমরা বাংলাদেশ দিয়েই শুরু করেছি। আমার ছেলে ব্যারিস্টার, ও জন্মগ্রহণ করেছে ১৯৯৩ সালে। সে তো বাংলাদেশি। সুতরাং তার কাছে তো পাকিস্তান ঠিক সৌদি আরবের মতো। সেই কারণে বলছি, আমরা এখন পুরোপুরি বাংলাদেশর প্রোডাক্ট। বাংলাদেশ আমার দেশ, দেশকে স্বাধীন রাখাই এখন আমার কর্তব্য এবং বাংলাদেশের ওপর যদি কোনো স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের আঘাত হানে, সেটা মোকাবিলা করার জন্য সবচেয়ে প্রথম যে দলটি এগিয়ে আসবে, সেটা জামায়াতে ইসলামী। কারণ দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ, এটি আমাদের বিশ্বাসের একটি অংশ।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.