তারুণ্যের ঝলকানি মুহূর্তেই উধাও by মেহনাজ শাহরিন অর্থি
সূত্র মতে, একজন মেয়ে তার প্রেমের সম্পর্ক স্বেচ্ছায় বিচ্ছেদ করেছে। কারণ তার পার্টনার তার ওপর আধিপত্য বিস্তার করে। ফেসবুকের পাসওয়ার্ড পর্যন্ত একে অন্যকে দিয়ে রাখে, তবুও তার পার্টনার তাকে বিশ্বাস করে না। এ ছাড়া সে কোনো ছেলে বন্ধুর সঙ্গে মিশতে পারবে না। কোথাও গেলে তাকে সব বলে যেতে হবে। এই ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হয়ে সে যখন সম্পর্কের ইতি টানে, তখন তার সেই এক্স পার্টনার তাকে বিভিন্নভাবে ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে। এমনকি তাকে মেরে ফেলার হুমকি পর্যন্ত দেয়। এভাবে সে সবসময় এক রকম ভয় নিয়ে চলতে চলতে ডিপ্রেশনে পড়ে যায়। সেইসঙ্গে তার এই সমস্যাগুলো বাবা-মায়ের সঙ্গে শেয়ার পর্যন্ত করে না। একপর্যায়ে সে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
আবার একজন ছেলে বলেছে, সে নিজেই তার প্রেমের সম্পর্ক ভেঙেছে। সম্পর্ক ভাঙার সময়ে তার মনে হয়েছিল সে মুভ অন করতে পারবে। কিন্তু সে মুভ অন করতে পারে না। আবার সম্পর্কটাতে ব্যাক করতেও পারে না। একটা পর্যায়ে যন্ত্রণা ভুলতে বেছে নেয় মাদক। নিয়মিত সে মাদক সেবন করতে থাকে।
একজন মেয়ে বলেছে, স্কুলে পড়া অবস্থায় তার প্রেম। আর এই প্রেম গড়ায় প্রায় ছয় বছর। অবশেষে ভাঙন। কিন্তু বিচ্ছেদ হওয়াটাকে মেনে নিতে পারে না সে। বাবা-মা তাকে বোঝায়, যে জিনিসের শুরু আছে, তার শেষও আছে। সেই সম্পর্কের বিভিন্ন ভালো খারাপ মুহূর্তের কথা মনে করে একপর্যায়ে বিষণ্নতায় পেয়ে বসে। এভাবে চলতে চলতে একদিন নিজের হাত নিজেই কাটে। তার মতে, সে শারীরিক ব্যথা দিয়ে মানসিক ব্যথার উপসম করতে চায়। এক দম্পত্তি জানায় তাদের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়েছে। দু’জনের আগে থেকে পরিচয় ছিল না। পরবর্তীতে দেখা যায়, দু’জনের সঙ্গে দু’জনের মতের কোনো মিল নেই। একটা পর্যায়ে গিয়ে স্বামী তার কর্মস্থল থেকে দেরিতে ফিরে। স্ত্রী তখন তাকে সন্দেহ করতে থাকে। একপর্যায়ে স্ত্রীর সন্দেহই সত্যি হয়। দেখা যায়, স্বামী তার প্রাক্তন প্রেমিকার সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখছে। বিবাহ বিচ্ছেদ না হলেও সম্পর্ক সুন্দরভাবে না চলায় স্ত্রী একটা সময়ে গিয়ে হতাশায় পড়ে যায়।
কথা হয় মানহা ইসলাম নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তিনি মানবজমিনকে বলেন, মানসিক সমস্যা আমার আগে ছিল না। এটা শুরু হয়েছে ২০২০ সালের করোনাকালীন সময় থেকে। যখন সারা দেশে লকডাউন দেয় আর আমরা সবাই একরকম গৃহবন্দি হয়ে গেলাম। তখন আমি উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। হুট করে কলেজ বন্ধ হয়ে গেল। সারাদিন বাসায় বোরিং হয়ে বসে থাকতাম। মা ফোন দেখা পছন্দ করেন না। ফলে ফোন নিয়েও খুব একটা সময় কাটাতে পারতাম না। সারাদিন বাসায় শুয়ে বসে থাকতাম বিধায় রাতে ঘুম হতো না। এভাবে চলতে চলতে একপর্যায়ে চরম হতাশায় পড়লাম। একটা পর্যায়ে আম্মা বিষয়টা লক্ষ্য করলেন আর উনি আমাকে মানসিক সাপোর্ট দিতে লাগলেন। এমতাবস্থায় আমার বাবাও পাশে ছিলেন আমার। আমি মনে করি, বাবা-মা যদি ছেলেমেয়েদের বন্ধু হয়, তাহলে তারা যেকোনো সমস্যা থেকেই উঠে আসতে পারে।
লামিয়া রহমান নামে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অপর এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি যেকোনো বিষয় নিয়ে অনেক বেশি ওভারথিংক করি। ছোটবেলা থেকেই এটা আমার একধরনের সমস্যা। পরিবারের সবাই এ বিষয়টা জানতো। কিন্তু এটা একটা সময়ে গিয়ে বেড়ে যায়। ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পর পড়াশোনার চাপ বেড়ে যাওয়ায় রাতে ঘুমোতেও বেশ দেরি হয়। রাত জেগে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুশ্চিন্তা করার মাত্রাও বেশ বেড়ে যায়। একপর্যায়ে হতাশা, দুশ্চিন্তা আমাকে চরমভাবে গ্রাস করে ফেলে। পরবর্তীতে আব্বু-আম্মু আমাকে ডা. কর্নেল এএসএম কাওসারের কাছে নিয়ে যান। উনি আমাকে কাউন্সিল করার জন্য একজন সাইকোলজিস্টের কাছে পাঠান এবং কিছু ওষুধ দেন। তবে আমার এই সমস্যা নিরাময় হতে অনেক সময় লেগে যায়। অপর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েল এক শিক্ষার্থী জানান, আমার এলাকার একটা ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। সম্পর্কের যখন দেড় বছরের মতো বয়স, তখন আমি আমার এক কাজিনের ফোনে আমার বয়ফ্রেন্ডের ছবি দেখে তাকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে এটা নাকি তার বয়ফ্রেন্ডের ছবি। তাদের মধ্যে নাকি সাত মাস ধরে সম্পর্ক চলছে। তখন বুঝলাম আমি তার জীবনে থাকা অবস্থায় সে আমার কাজিনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছে। এরপর আমি যখন তাকে জিজ্ঞেস করলাম তখন সে আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আবার সবকিছু ঠিক করার কথা বলে। কিন্তু আমি এগুলো মেনে নিতে পারি না। সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেই তার সঙ্গে। তখন সে আমার বিভিন্ন ছবি দিয়ে আমাকে ব্ল্যাকমেইল করা শুরু করে। একপর্যায়ে আমার পরিবারের কাছে চলে যায় বিষয়গুলো। তারাও আমাকে দূরে ঠেলে দেয় তখন। একপর্যায়ে আমি তার নামে থানায় জিডি করি। কিন্তু এত এত ঘটনা মেনে নিতে না পেরে একটা সময়ে গিয়ে চরমভাবে হতাশায় পড়ে যাই। এখন আগের থেকে অনেকটা ভালো থাকলেও মাঝে মাঝে সেই দুঃসময়ের কথাগুলো চোখে ভেসে ওঠে।
No comments