চোরাই লাইন নিয়ে সিলেটে উত্তেজনা by ওয়েছ খছরু
প্রশাসন মুখে বলছে চোরাচালান নিয়ন্ত্রণের কথা। কিন্তু বাস্তবে এর কোনো সত্যতা মিলছে না। সাম্প্রতিক সময়ে হরিপুর ও ডৌবাড়ি ইউনিয়নবাসী মুখোমুখি অবস্থানে। ডিবি’র লাইনের নামে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে গত এক সপ্তাহ ধরে উত্তেজনা। এখন উত্তেজনা চরমে। চোরাই পণ্য বিক্রির হেডকোয়ার্টার বলে পরিচিত হরিপুরবাজারে শনিবার রাতে যে বৈঠক হয়েছে সেখান থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছে; আজ হরিপুরের লোকজন ডৌবাড়িতে যাবেন। এর আগেও একাধিকবার নানা ইস্যুতে হরিপুরের লোকজন বিভিন্ন এলাকায় গিয়েছিলেন। এতে তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছিল। এবারের ঘটনার সূত্রপাত সিলেটের গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি’র নামে চাঁদাবাজিকে কেন্দ্র করে। ৫ই আগস্টের প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের পর নীরবে চিনি, গরু সহ নানা পণ্যের চোরাকারবার করতে হরিপুর এলাকার ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা বেছে নেন ডৌবাড়ি হাকুর বাজার সড়ককে। গ্রামের ভেতর দিয়ে এই সড়ক হয়ে সহজেই চোরাচালানের চালান হরিপুর বাজারে এসে পৌঁছতে পারে। দুই মাস ধরে এই সড়কে চোরাচালানের গাড়ি বেশি আসছে। ডৌবাড়ি এলাকার মানুষের মতে; প্রতিদিন আসছে দেড়শ’ থেকে দু’শ ডিআই সহ ছোটো ট্রাক। এতে করে গ্রামের ভেতরের ওই সড়ক দিয়ে লোকজন চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। ঘটেছে কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনাও। এ কারণে তারা সড়ক দিয়ে চোরাচালানের পণ্যবাহী গাড়ি বন্ধ করে দিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এই সড়ক দিয়ে গোয়াইনঘাটের মাতুরতল, হাজীপুর, প্রতাপপুর, রাধানগর এলাকার চোরাচালানের পণ্য আসে। হরিপুরের বাসিন্দা মাসুক আহমদ চোরাচালানের গাড়ি থেকে ডিবি’র লাইনম্যান হিসেবে টাকা তুলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। সাম্প্রতিক সময়ে মাসুক আহমদ ও তার লোকজন পার্শ্ববর্তী উপজেলা গোয়াইনঘাটের ডৌবাড়ি হাকুর বাজারে অবস্থান নিয়ে ডিবি’র লাইনের কথা বলে টাকা তুলতে যান। এতে বাধা দেন ডৌবাড়ি এলাকার নিজাম মেম্বার ও মোহাম্মদ আলী সহ কয়েকজন। তবে এর আগে থেকে ডৌবাড়ি দিয়ে আসা চোরাই পণ্যের গাড়ি থেকে চাঁদা তুলছিলেন মোহাম্মদ আলী ও তার লোকজন। ফলে একই স্থানে চাঁদাবাজি নিয়ে দু’গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরবর্তীতে বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেন জৈন্তাপুরের ফতেহপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও হরিপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ। মঙ্গলবার বিষয়টির সুরাহা করতে তিনি ফতেহবাজার বাজারে যান। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন ডৌবাড়ির নিজাম মেম্বার, মোহাম্মদ আলী সহ অন্যরা। এ নিয়ে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ ঘটনার জের ধরে বৃহস্পতিবার রাতে ডৌবাড়ি বাজারে স্থানীয়রা প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে। আর এই প্রতিবাদ সমাবেশ তারা চোরাই পণ্যবাহী গাড়ি বন্ধে ঐকমত্যে পৌঁছেন। একই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে হরিপুর এলাকাবাসীর সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার ঘোষণা দেন। এই সমাবেশে আয়োজক ছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য নিজাম উদ্দিন মেম্বার সহ তার লোকজন। সমাবেশে নিজাম মেম্বার ঘোষণা দেন; ডৌবাড়িতে কাউকে চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন হরিপুর বাজারের ব্যবসায়ী সহ স্থানীয় এলাকাবাসী। তারা ওই প্রতিবাদ সমাবেশে পাল্টা হিসেবে শনিবার রাতে হরিপুর ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে সমাবেশ করেছেন। এ সমাবেশে হরিপুর এলাকার লোকজন ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যানের পক্ষে অবস্থান নেন। একই সঙ্গে ডৌবাড়ি ইউনিয়নের অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ জানানো হয়। একই সঙ্গে ঘোষণা দেয়া হয়; আজ সোমবার দুপুরে হরিপুরের সব গ্রামের লোকজন ইউনিয়ন অফিস মাঠে আসবেন। এজন্য দু’টি গরু জবাই করে শিরনি করার প্রস্তুতি চলছে। এই শিরনি খেয়ে জমায়েত হওয়া লোকজন অন্যায়ের প্রতিবাদ জানাতে ডৌবাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেবেন। এই সিদ্ধান্তের পক্ষে এলাকার লোকজন ঐক্যবদ্ধ। আছে শঙ্কাও। এর আগে ২০১৩ সালে হরিপুরবাসী তাদের নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে পার্শ্ববর্তী চিকনাগুলে গিয়ে বাজার জ্বালিয়ে দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে আমবাড়িতে একই ধরনের ঘটনায় তুমুল সংঘর্ষ হয়েছিল। এদিকে- হরিপুর ও ডৌবাড়ি এলাকার পাল্টাপাল্টি দু’টি সমাবেশের বক্তব্য ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতে দেখা গেছে; উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় রয়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। হরিপুরের এ ঘোষণার প্রেক্ষিতে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ডৌবাড়ি এলাকার লোকজন পাল্টা জবাবের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। তবে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করলেও চোরাই পণ্য গাড়ি আসা বন্ধ হচ্ছে না। ডৌবাড়ির বাধা ডিঙিয়ে হরিপুরের অনেক ব্যবসায়ী বেশি টাকা পরিশোধ করেও পণ্য নিয়ে আসছেন হরিপুর বাজারে। আর এইসব পণ্য ট্রাকে করে রাতের আঁধারে চলে যাচ্ছে ঢাকা সহ গোটা দেশে। এর মধ্যে রয়েছে চিনি, গরু, মহিষ, শাড়ি সহ অন্যান্য পণ্য।
No comments