সিইসি’র কৌশলটা কী?
বাংলাদেশের
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার মন্তব্য একটি কাজ দিয়েছে। আর তা
হলো নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি কিছুটা হলেও উন্নত করেছে। রাজনৈতিক
পরিবেশটা একটু হলেও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। ষোড়শ সংশোধনীর বিতর্কের রেশ না
মিলিয়ে যেতেই রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ শশব্যস্ত হলো। কিন্তু একটি সাধারণ
নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। এখন সবারই নজর থাকার কথা নির্বাচন কমিশনের
দিকে।
উপরন্তু দেশের তাবৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হলো, অথচ নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে অত বেশি হৈচৈ নেই। মাতামাতি নেই। সবটাই যেন কেমন পানসে চলছিল। তাই সিইসি হয়তো ভেবে চিন্তেই বলেছেন, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক। তার এই মন্তব্য রাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আহত করে। কারণ আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে কোনোভাবেই বরদাশত করতে পারছে না। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি বা তাদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন যদিও জিয়ার চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মকভাবে করেছেন জেনারেল এরশাদ। জেনারেল এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রানিংমেট হিসেবে দাঁড় করিয়ে প্রকৃতপক্ষে তাদের জাতীয় রাজনীতির মূল স্রোতধারার অন্যতম কুশলীব হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই অভিযোগ জিয়ার বিরুদ্ধে নেই। কারো কারো মতে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি জানতেন। কিন্তু তা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেননি। ওটাও মূলত বিশ্বাসযোগ্য সন্দেহ। সন্দেহাতীত কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। তবে মিজানুর রহমান চৌধুরীর জবানবন্দি মতে, জিয়া ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। অবশ্য সেটা অনেকের মতে, সেখানে বিশ্বস্ততা ছিল না। ছিল চক্রান্তের অংশ।
তবে এই বিতর্কের বাইরে অনেকের মতে, যদি তদন্ত কমিশন বা একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডং কমিশন হয় যে, আরো কে কে জানতেন, অথচ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেননি, তাহলে হয়তো সন্দেহের তালিকায় এমন কেউ আসতে পারেন, যারা পরে আওয়ামী লীগের ভালো অবস্থানে বা আস্থার একটা জায়গা করে নিতে পেরেছেন। এর সবটিই মূলত সন্দেহ। একজন চৌকস আমলা হিসেবে এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে সিইসি একেবারে কিছুই জানবেন না, সেটা হিসাবের কথা নয়।
এখন প্রশ্ন হলো সিইসির কৌশলটা কী? একটি হিসাব খুব সহজ: তিনি মনেপ্রাণে আশা করেন বিএনপিও সামনের নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু তিনি এমন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখেন বা সামর্থ্য রাখেন কি না, যেখানে বিএনপি বা বিরোধী দল একটু বেশি ভালো করে ফেলল, কিন্তু তিনি তাতে উতলা হলেন না। নিরপেক্ষ সাংবিধানিক সংস্থার প্রধান হিসেবে তিনি সেটা মেনে নিতে প্রস্তুত থাকবেন, সেই রকম একটি ধারণা তিনি দিতে চান কি না। আওয়ামী লীগের নেতারা যেদিন সংলাপে গেলেন সেদিন ভিন্ন এক পরিস্থিতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সংলাপের পরিবেশ দেখে তারা রীতিমতো লজ্জা পেয়েছেন। অভিযোগ আনার সুযোগই পাননি তারা।
সতর্ক বিশ্লেষকরা একমত যে, সিইসির কৌশল হবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। সেটা তিনি নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে আশা করবেন। কিন্তু সেটা আওয়ামী লীগকে স্বস্তি দিতে পারে। অবশ্য এখানে একটি দ্বন্দ্ব বা ধোঁয়াশা একটা বিষয় আছে। সেটা হলো কেয়াটেকার সরকার হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ক্ষমতায় থাকবেন। তারই নিয়োগ দেয়া রিটার্নিং অফিসারগণ নির্বাচন চালাবেন। ভোট গ্রহণ ও গণনা করবেন। কিন্তু তদুপরি আওয়ামী লীগ কি বিএনপির অংশগ্রহণ চাইছে? এর উত্তর পেতে কেউ হয়তো বলবেন জোতিষীর বাড়ি যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায়, সেটা এখনও যথেষ্ট পরিষ্কার তা হলফ করে বলা যাবে না। কারণ, অনেকের ধারণা, সহায়ক সরকার হোক বা না হোক বিএনপি ৩০০ আসনে শক্তিশালী প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়াটাই একটি বিরাট ঘটনা হতে পারে। খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতিমধ্যে ইঙ্গি করেছেন যে, বিএনপি নির্বাচনে এলে অনেক ডাকসাইটে প্রার্থীর ঘাম ঝরতে পারে!
সুতরাং একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময়ে সিইসির রাজনৈতিক উক্তির কোনো তাৎপর্য নেই তা মানা সহজ নয়। সিইসি বারংবার বলেছেন, তিনি ভেবেচিন্তে একটি তথ্য হিসেবে বলেছেন। তার যদি: তিনি বলেছেন, জিয়া গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন বলেননি। কারণ তার আগে বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল। অবশ্য সমালোচকরা বলবেন, এই তথ্য আওয়ামী লীগ যুক্তিসঙ্গত মনে করে না। তাদের জোরোলো যুক্তি: বহুদল বিলোপ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম ঠিক কি বেঠিক? সেটা তর্কসাপেক্ষ হলেও সেটা বন্দুকের নলে আসেনি। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা করেছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশের গণতন্ত্রও হত্যা করা হয়। আর এই হত্যাকাণ্ডে জিয়া জড়িত ছিলেন। শুরু হয়েছিল সামরিক শাসন। তাই জিয়া তো পর্দার আড়ালের কুশলীব। তিনি কি করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবতর্কের মর্যাদা পবেন?
বিএনপি জিয়ার সম্পৃক্তার অংশটুকু বাদ দিয়ে তার পক্ষে যুক্তি হলো: জিয়া নিজে সামরিক শাসন জারি করেননি। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে বা ধারাবাহিকতার কারণে ক্ষমতা পেয়েছেন। সেনা প্রধান হিসেবে তার ওপর ক্ষমতা বর্তেছে।
বাকশালের আওতায় যে আওয়ামী লীগ একটি সংগঠন হিসেবে হারিয়ে গিয়েছিল, সেই রাজনৈতিক সত্তা জিয়ার আমলেই জাগ্রত হয়েছে। সিইসি নুরুল হুদা বলেন, জিয়াউর রহমানের সময়ে গণতন্ত্র আবার ফিরে এসেছে। সেই ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগও সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
তবে এখন পর্যবেক্ষরা বলছেন, সব কথা সবসময় বলা হয় না। সিইসি কোনো কারণে নিরীহভাবে একটি তথ্য হিসেবে বললেও এর একটা রাজনৈতিক আবেদন আছে। বিএনপি যেদিন সংলাপে গেল ঠিক সেদিনটিতেই তাকে এই জলবৎতরলং কথাটি আওড়াতে হলো!
এটাও দেখার বিষয় যে, কাদের সিদ্দিকী খুব সবিতা করতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন, তিনি একটি ঝড়ো বিতর্কের নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু সেটা ঘটেনি, অবশ্য সময় এখনই সরে গেছে তা-ও বলার উপায় কম।
অবশ্য বহু বিশ্লেষক মনে করেন বা ভাবতে পছন্দ করেন যে, বিএনপির নির্বাচনে আসাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আগামী ১১ বা ১২ মাসের আগে বা পরে যখনই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে, তখনই তাদের নির্বাচনী মাঠে দেখা যাবে। এছাড়া এ বিষয়ে ভিন্নমত খুবই কম যে, বিএনপির নির্বাচনে আসাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান। সুতরাং রাষ্ট্রের দিক থেকে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির দিক রয়েছে। তবে সেটা খোদ ক্ষমতাসীন দলের তরফে সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখাটা বেশি স্পর্শকাতরতা লাভ করতে পারে। সেদিক থেকে এই অপ্রিয় কাজটি সিইসি করে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের তাতে খুব ক্ষতির কারণ মনে করার সুযোগ সীমিত। তারা বলেন, সিইসি যদি বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কাজটি সুচারু রূপে সম্পন্ন করতে পারেন, তাহলে ক্ষমতাসীন দলের ঝুঁকি বাড়ে না কমে। অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করারও লোকের অভাব হবে না।
বাংলাদেশের রাজনীতির সুবিধা হলো এখানে দুয়ে দুয়ে চার মেলানো হয়। যারা এটা করেন তারা কিন্তু জানেন যে, দুয়ে দুয়ে চার এখানে কালেভদ্রে হয়, কিংবা কষ্মিনকালেও হয় না। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা নিরুত্তাপ রাজনীতিতে বলা চলে একটি আকস্মিক বোমা বা পটকা ফুটিয়েছেন। চাঞ্চল্য যদি বেশি হয়, তাহলে এটা হবে বোমা, কিন্তু কম চাঞ্চল্য হলে এটা হবে পটকা বা নির্বাচনী উৎসবের আতশবাজি।
তবে এটা এমন একটি সময় যখন দেশের আরেকটি সাংবিধানিক স্তম্ভের প্রধান ‘অসুস্থতাজনিত ছুটিতে’ বিদেশে রয়েছেন।
উপরন্তু দেশের তাবৎ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হলো, অথচ নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে অত বেশি হৈচৈ নেই। মাতামাতি নেই। সবটাই যেন কেমন পানসে চলছিল। তাই সিইসি হয়তো ভেবে চিন্তেই বলেছেন, জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক। তার এই মন্তব্য রাজনৈতিক দিক থেকে দেখলে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে আহত করে। কারণ আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানকে কোনোভাবেই বরদাশত করতে পারছে না। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাকরি বা তাদের রাজনৈতিক পুনর্বাসন যদিও জিয়ার চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মকভাবে করেছেন জেনারেল এরশাদ। জেনারেল এরশাদ বঙ্গবন্ধুর খুনিদের রানিংমেট হিসেবে দাঁড় করিয়ে প্রকৃতপক্ষে তাদের জাতীয় রাজনীতির মূল স্রোতধারার অন্যতম কুশলীব হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। এই অভিযোগ জিয়ার বিরুদ্ধে নেই। কারো কারো মতে, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি জানতেন। কিন্তু তা প্রতিরোধে পদক্ষেপ নেননি। ওটাও মূলত বিশ্বাসযোগ্য সন্দেহ। সন্দেহাতীত কোনো দালিলিক প্রমাণ নেই। তবে মিজানুর রহমান চৌধুরীর জবানবন্দি মতে, জিয়া ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের সঙ্গে সখ্য গড়ার চেষ্টা করেছিলেন। অবশ্য সেটা অনেকের মতে, সেখানে বিশ্বস্ততা ছিল না। ছিল চক্রান্তের অংশ।
তবে এই বিতর্কের বাইরে অনেকের মতে, যদি তদন্ত কমিশন বা একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডং কমিশন হয় যে, আরো কে কে জানতেন, অথচ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেননি, তাহলে হয়তো সন্দেহের তালিকায় এমন কেউ আসতে পারেন, যারা পরে আওয়ামী লীগের ভালো অবস্থানে বা আস্থার একটা জায়গা করে নিতে পেরেছেন। এর সবটিই মূলত সন্দেহ। একজন চৌকস আমলা হিসেবে এই ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা হিসাব-নিকাশ সম্পর্কে সিইসি একেবারে কিছুই জানবেন না, সেটা হিসাবের কথা নয়।
এখন প্রশ্ন হলো সিইসির কৌশলটা কী? একটি হিসাব খুব সহজ: তিনি মনেপ্রাণে আশা করেন বিএনপিও সামনের নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু তিনি এমন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার স্বপ্ন দেখেন বা সামর্থ্য রাখেন কি না, যেখানে বিএনপি বা বিরোধী দল একটু বেশি ভালো করে ফেলল, কিন্তু তিনি তাতে উতলা হলেন না। নিরপেক্ষ সাংবিধানিক সংস্থার প্রধান হিসেবে তিনি সেটা মেনে নিতে প্রস্তুত থাকবেন, সেই রকম একটি ধারণা তিনি দিতে চান কি না। আওয়ামী লীগের নেতারা যেদিন সংলাপে গেলেন সেদিন ভিন্ন এক পরিস্থিতি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, সংলাপের পরিবেশ দেখে তারা রীতিমতো লজ্জা পেয়েছেন। অভিযোগ আনার সুযোগই পাননি তারা।
সতর্ক বিশ্লেষকরা একমত যে, সিইসির কৌশল হবে বিএনপিকে নির্বাচনে আনা। সেটা তিনি নিরপেক্ষ সাংবিধানিক প্রধান হিসেবে আশা করবেন। কিন্তু সেটা আওয়ামী লীগকে স্বস্তি দিতে পারে। অবশ্য এখানে একটি দ্বন্দ্ব বা ধোঁয়াশা একটা বিষয় আছে। সেটা হলো কেয়াটেকার সরকার হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ক্ষমতায় থাকবেন। তারই নিয়োগ দেয়া রিটার্নিং অফিসারগণ নির্বাচন চালাবেন। ভোট গ্রহণ ও গণনা করবেন। কিন্তু তদুপরি আওয়ামী লীগ কি বিএনপির অংশগ্রহণ চাইছে? এর উত্তর পেতে কেউ হয়তো বলবেন জোতিষীর বাড়ি যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, আওয়ামী লীগ বিএনপিকে নিয়ে নির্বাচন করতে চায়, সেটা এখনও যথেষ্ট পরিষ্কার তা হলফ করে বলা যাবে না। কারণ, অনেকের ধারণা, সহায়ক সরকার হোক বা না হোক বিএনপি ৩০০ আসনে শক্তিশালী প্রার্থীর মনোনয়ন দেওয়াটাই একটি বিরাট ঘটনা হতে পারে। খোদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ইতিমধ্যে ইঙ্গি করেছেন যে, বিএনপি নির্বাচনে এলে অনেক ডাকসাইটে প্রার্থীর ঘাম ঝরতে পারে!
সুতরাং একটি তাৎপর্যপূর্ণ সময়ে সিইসির রাজনৈতিক উক্তির কোনো তাৎপর্য নেই তা মানা সহজ নয়। সিইসি বারংবার বলেছেন, তিনি ভেবেচিন্তে একটি তথ্য হিসেবে বলেছেন। তার যদি: তিনি বলেছেন, জিয়া গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রতিষ্ঠা করেছেন বলেননি। কারণ তার আগে বহুদলীয় গণতন্ত্র ছিল। অবশ্য সমালোচকরা বলবেন, এই তথ্য আওয়ামী লীগ যুক্তিসঙ্গত মনে করে না। তাদের জোরোলো যুক্তি: বহুদল বিলোপ করে একদলীয় বাকশাল কায়েম ঠিক কি বেঠিক? সেটা তর্কসাপেক্ষ হলেও সেটা বন্দুকের নলে আসেনি। নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা করেছেন। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্যদিয়ে দেশের গণতন্ত্রও হত্যা করা হয়। আর এই হত্যাকাণ্ডে জিয়া জড়িত ছিলেন। শুরু হয়েছিল সামরিক শাসন। তাই জিয়া তো পর্দার আড়ালের কুশলীব। তিনি কি করে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবতর্কের মর্যাদা পবেন?
বিএনপি জিয়ার সম্পৃক্তার অংশটুকু বাদ দিয়ে তার পক্ষে যুক্তি হলো: জিয়া নিজে সামরিক শাসন জারি করেননি। তিনি উত্তরাধিকার সূত্রে বা ধারাবাহিকতার কারণে ক্ষমতা পেয়েছেন। সেনা প্রধান হিসেবে তার ওপর ক্ষমতা বর্তেছে।
বাকশালের আওতায় যে আওয়ামী লীগ একটি সংগঠন হিসেবে হারিয়ে গিয়েছিল, সেই রাজনৈতিক সত্তা জিয়ার আমলেই জাগ্রত হয়েছে। সিইসি নুরুল হুদা বলেন, জিয়াউর রহমানের সময়ে গণতন্ত্র আবার ফিরে এসেছে। সেই ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালে বহুদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আওয়ামী লীগও সেই নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
তবে এখন পর্যবেক্ষরা বলছেন, সব কথা সবসময় বলা হয় না। সিইসি কোনো কারণে নিরীহভাবে একটি তথ্য হিসেবে বললেও এর একটা রাজনৈতিক আবেদন আছে। বিএনপি যেদিন সংলাপে গেল ঠিক সেদিনটিতেই তাকে এই জলবৎতরলং কথাটি আওড়াতে হলো!
এটাও দেখার বিষয় যে, কাদের সিদ্দিকী খুব সবিতা করতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন, তিনি একটি ঝড়ো বিতর্কের নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু সেটা ঘটেনি, অবশ্য সময় এখনই সরে গেছে তা-ও বলার উপায় কম।
অবশ্য বহু বিশ্লেষক মনে করেন বা ভাবতে পছন্দ করেন যে, বিএনপির নির্বাচনে আসাটা সময়ের ব্যাপার মাত্র। আগামী ১১ বা ১২ মাসের আগে বা পরে যখনই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হবে, তখনই তাদের নির্বাচনী মাঠে দেখা যাবে। এছাড়া এ বিষয়ে ভিন্নমত খুবই কম যে, বিএনপির নির্বাচনে আসাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চান। সুতরাং রাষ্ট্রের দিক থেকে একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরির দিক রয়েছে। তবে সেটা খোদ ক্ষমতাসীন দলের তরফে সরাসরি কোনো ভূমিকা রাখাটা বেশি স্পর্শকাতরতা লাভ করতে পারে। সেদিক থেকে এই অপ্রিয় কাজটি সিইসি করে দেওয়ায় আওয়ামী লীগের তাতে খুব ক্ষতির কারণ মনে করার সুযোগ সীমিত। তারা বলেন, সিইসি যদি বিএনপিকে নির্বাচনে আনার কাজটি সুচারু রূপে সম্পন্ন করতে পারেন, তাহলে ক্ষমতাসীন দলের ঝুঁকি বাড়ে না কমে। অবশ্য এ বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করারও লোকের অভাব হবে না।
বাংলাদেশের রাজনীতির সুবিধা হলো এখানে দুয়ে দুয়ে চার মেলানো হয়। যারা এটা করেন তারা কিন্তু জানেন যে, দুয়ে দুয়ে চার এখানে কালেভদ্রে হয়, কিংবা কষ্মিনকালেও হয় না। তবে কোনো সন্দেহ নেই যে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা নিরুত্তাপ রাজনীতিতে বলা চলে একটি আকস্মিক বোমা বা পটকা ফুটিয়েছেন। চাঞ্চল্য যদি বেশি হয়, তাহলে এটা হবে বোমা, কিন্তু কম চাঞ্চল্য হলে এটা হবে পটকা বা নির্বাচনী উৎসবের আতশবাজি।
তবে এটা এমন একটি সময় যখন দেশের আরেকটি সাংবিধানিক স্তম্ভের প্রধান ‘অসুস্থতাজনিত ছুটিতে’ বিদেশে রয়েছেন।
No comments