পরমাণু চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্ঘাত আরো বাড়বে?
ইরানের
প্রতি মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য-জোটের বৈরী মনোভাবকে অনেকে
মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার অন্যতম কারণ মনে করতেন। এখন পরমাণু চুক্তি হয়েছে,
পাশ্চাত্যের সাথে দেশটির সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাহলে
কি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সুবাতাস বইবে? কৌশলগত ও গোয়েন্দাবিষয়ক
টেক্সাসভিত্তিক সংস্থা স্ট্র্যাটফোর কিন্তু তা মনে করে না। তাদের মতে,
ইরানি পরমাণু চুক্তি অন্তত স্বল্পমেয়াদে যুদ্ধের আশঙ্কা প্রশমিত তো করেইনি,
বরং আরো বাড়িয়েছে। শিয়া-সুন্নি ছাড়াও তুর্কি, ইরানি, আরব, কুর্দি ইত্যাদি
নানা গ্রুপে সঙ্ঘাত বাড়বে বলেই তাদের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। বিশ্লেষণটি
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ হাসান শরীফ
ইরানের প্রতি মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য-জোটের বৈরী মনোভাবকে অনেকে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার অন্যতম কারণ মনে করতেন। এখন পরমাণু চুক্তি হয়েছে, পাশ্চাত্যের সাথে দেশটির সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাহলে কি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সুবাতাস বইবে? কৌশলগত ও গোয়েন্দাবিষয়ক টেক্সাসভিত্তিক সংস্থা স্ট্র্যাটফোর কিন্তু তা মনে করে না। তাদের মতে, ইরানি পরমাণু চুক্তি অন্তত স্বল্পমেয়াদে যুদ্ধের আশঙ্কা প্রশমিত তো করেইনি, বরং আরো বাড়িয়েছে। শিয়া-সুন্নি ছাড়াও তুর্কি, ইরানি, আরব, কুর্দি ইত্যাদি নানা গ্রুপে সঙ্ঘাত বাড়বে বলেই তাদের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। বিশ্লেষণটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ হাসান শরীফ।
তুরস্ক
স্ট্র্যাটফোর অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটি শেষ পর্যন্ত তুর্কিদের মাথাতেই শোভা পাবে। মনে রাখতে হবে, মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এটা। সেইসাথে কৃষ্ণসাগর ও ভূমধ্যসাগরের মোহনা এবং মারমারা সাগরের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এর অবস্থান। বর্তমানে তুরস্কের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত নগরীটির ১৫০০ বছর (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০ সালে বায়জান্টেনীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ১৯১৮ সালে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত) সাম্রাজ্যগুলোর শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে থাকাটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার ছিল না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো তুরস্কেরও ইরানের সাথে সমভাবাপন্ন স্বার্থ রয়েছে। পূর্ব দিকের প্রতিবেশী ইরানের সাথে তুরস্কের সব বিষয়ে বৈরিতা আছে এমন নয়; বরং এমন অনেক বিষয় আছে, যাতে একে অপরে নির্ভরশীল, পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত। এর একটি হলো, ইরানি তেলের ওপর তুর্কির নির্ভরশীলতা। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তুর্কি তেল আমদানির ২৬ শতাংশ পর্যন্ত হতো ইরান থেকে। ইরানের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার সম্ভাব্য অর্থনৈতিক লাভের জন্য অধীর আগ্রহে থাকা তুর্কি বাণিজ্যিক শ্রেণীর কাছে বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ বিবেচিত হচ্ছে। ইরান ও তুরস্কের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি তেহরান ও আঙ্কারা কিছু অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থও ধারণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উভয়েই সিরিয়ান গৃহযুদ্ধ ও ইরাকি সঙ্ঘাতের ভস্ম থেকে স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্রের উত্থানের বিরোধী। ইরানে ৬০ থেকে ৭০ লাখ কুর্দি জনসংখ্যা রয়েছে। ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অগ্রগতি প্রতিহত করার জন্য তেহরান কুর্দিদের সামরিক সহায়তাও দিয়েছে। আবার তুরস্কের প্রায় ১৫ ভাগ জনসংখ্যা কুর্দি। সেই ১৯৮৪ সাল থেকে আঙ্কারা সশস্ত্র কুর্দি আন্দোলন দমন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অবশ্য আরো বিস্তারিত বললে বলা যায়, তুরস্ক ও ইরান সহজাত প্রতিযোগী। এমনকি কুর্দিদের দমনে অভিন্ন স্বার্থ থাকলেও উভয়েই একে অপরকে চেপে ধরতে তারাই তাদের কার্যকর হাতিয়ার। ফলে কুর্দিস্তান হলো তুরস্ক ও ইরানের প্রাকৃতিক যুদ্ধক্ষেত্র। তাদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা বাড়লে উভয়েই কুর্দি উপদলগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। যদিও তুর্কিরা প্রধানত সুন্নি এবং ইরান প্রধানত শিয়া, কিন্তু এটা উল্লেখ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আঙ্কারা ও তেহরান যে এলাকায় তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেটা আরব প্রাধান্যবিশিষ্ট। অনেক আরবের কাছেই তুর্কি বা পারসিক শাসনের কোনো একটা বেছে নেয়া আসলে পানিতে ডুবে মরা নাকি কুঠারাঘাতে মৃত্যুবরণ করা তা বাছাই করা।
ইসলামিক স্টেটের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক এখনো অস্পষ্ট। কেবল সাম্প্রতিক সময়ে কট্টরপন্থী গ্র“পটির প্রতি তুরস্কের নীতি পরোক্ষ যোগাযোগ থেকে তাদের ধ্বংস করার কাজে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় পর্যবশিত হয়েছে। এটা এ কারণে হতে পারে, আঙ্কারা মনে করছে যে, ইসলামিক স্টেট তুরস্কজুড়ে শাখা প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকলে সেটা তার জন্য অভ্যন্তরীণ হুমকি হতে পারে। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কুর্দিদের সবচেয়ে সক্রিয় শক্তি হিসেবে দেখতে পেয়ে পাশ্চাত্য স্বাধীন কুর্দিস্তানের সম্ভাবনার প্রতি অনেক বেশি অনুকূল ধারণা পোষণ করছে, এমনটা শুনেও তুরস্ক হতাশ ও আতঙ্কিত হতে পারে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতন দেখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকার কারণেই তুরস্ক দামাস্কাসের বিরুদ্ধে লড়াইরত যোদ্ধাদের সক্রিয়ভাবে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। লেভ্যান্টকে (ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল) আঙ্কারা নিজের প্রভাববলয়ের অংশ মনে করে, সেখানে ইরানি প্রভাব বাড়ানোর প্রয়াসকে সে সদয়ভাবে বিবেচনা করবে না। সিরিয়ায় তুরস্ক আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে, এমন সম্ভাবনাও নাকচ করে দেয়া যায় না। বিশেষ করে যখন সম্প্রতি এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে, একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠার জন্য উত্তর সিরিয়ায় সামরিক বাহিনী পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে তুরস্ক। তাদের বিবেচনায় সুন্নি বিদ্রোহীরা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখার জন্য এই স্থানটিকে তাদের শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।
সৌদি আরব
ইরানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হলে সৌদি আরবের সাথে দেশটির বিরোধ তুরস্কের মতো এত বেশি নয়। রাজতান্ত্রিক দেশটি আরব ও সুন্নি শক্তি। বেশির ভাগ সৌদি যে ওহাবি মতবাদ অনুসরণ করে, তা শিয়া মতবাদকে গভীর সন্দেহের চোখে দেখে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ থেকে ১৫ ভাগ শিয়া। ইরাক এখন আর ইরানি উচ্চাভিলাষের বিরুদ্ধে বাফার জোন হিসেবে বিরাজ না করায় সৌদিরা যথার্থভাবেই ইরানের সাথে সঙ্ঘাতে নিজেকে সামনের কাতারে দেখতে পাচ্ছে। সৌদি আরবের বেশির ভাগ শিয়া লোকজন বাস করে সৌদিদের সম্পদ আর ক্ষমতার উৎস দেশটির বিশাল তেলক্ষেত্রগুলোর কাছাকাছি। এটাই ইরানি সম্প্রসারণ-ভীতির ব্যাপারে রিয়াদকে আরো বেশি সতর্ক করে দিচ্ছে। ইরান এই বিক্ষোভকে উপসাগরীয় দেশগুলোতে তার প্রভাব বাড়াতে ব্যবহার করতে পারে, এই আশঙ্কায় এই ২০১১ সালে সৌদি আরব সুন্নি শাসিত, শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ বাহরাইনে বিক্ষোভ দমন করতে সৈন্য পাঠিয়েছে।
তুরস্কের মতো সৌদি আরবও আসাদ সরকারের পতন দেখতে চায়, যা এই অঞ্চলে ইরানি প্রভাব খর্ব করবে। একসময় সৌদিরা ভেবেছিল, ইসলামিক স্টেট ওই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। কিন্তু ওই পরিকল্পনা রিয়াদের জন্য পাল্টা আঘাত হেনেছে। ফলে এখন সৌদিদের ইসলামিক স্টেট ও আলকায়েদা উভয়কেই মোকাবেলা করতে হবে। সৌদি আরব এখনো আসাদবিরোধী সিরিয়ায় সুন্নি জঙ্গিদের সমর্থন দেয়া অব্যাহত রেখেছে। জর্ডানের মতো এই দেশটিও ইরাকের সুন্নি উপজাতীয়দের অস্ত্র দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সৌদি আরবের আবার তুরস্ক ও ইরানের মতো আশু কুর্দি সমস্যা নেই। স্ট্র্যাটফোর ইতোমধ্যে এমন আলামত পেয়েছে যে, সৌদ পরিবার ইরাকে কুর্দি দলগুলোকে সামরিকভাবে সহায়তা করবে। তবে সৌদিরা কত দূর এই কৌশলটি বাস্তবায়ন করবে এবং কুর্দিদের কোন অংশকে সহায়তা করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ইরানিরা এর মধ্যেই সৌদি আরবের সংখ্যালঘু গ্রুপগুলোকে প্ররোচিত করার চেষ্টা শুরু করায় সৌদিরা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলোতে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম এমন একটি শক্তিশালী স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান গঠনের প্রয়াস চালাবে। তবে তা তুরস্কের সাথে সৌদিদের সম্পর্কে অবনতি ঘটাতে পারে। সর্বোপরি উভয়েই সুন্নি হলেও মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হোক, সে ব্যাপারে সৌদি আরবের আগ্রহ নেই বললেই চলে, ঠিক যেমন তারা চায় না ইরানের ব্যাপারে।
সৌদি আরব ২০১৪ সালে ইরানের সাথে কূটনৈতিক সংলাপ শুরুর চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু ইয়েমেন সঙ্ঘাত শুরু হলে সেই অবস্থা আর থাকেনি। রিয়াদ যখন শিয়া এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোযোগী হয়েছিল, তখন ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ব্যাপক অগ্রগতিতে থমকে দাঁড়ায়। হুতিরা একপর্যায়ে রাজধানী সানা পর্যন্ত দখল করে ফেলে। সৌদিরা দেশটিতে বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তি ইরানের পরমাণু চুক্তিকে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে সৌদি-সমর্থিত হুতিবিরোধী বাহিনী ইয়েমেনে ইডেন উপসাগরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জয় পেয়েছে। এ ধরনের যুদ্ধ এই অঞ্চলে সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ইরানের আন্তর্জাতিক ভাবমর্যাদার পুনর্বাসন এবং সেইসাথে তেহরানের আধিপত্য সম্প্রসারণের আকাঙ্ক্ষার ফলে এ ধরনের ঘটনা আরো বাড়তে পারে।
মিসর
সৌদি আরবের মতো মিসরও সুন্নি শক্তি। তবে তুরস্ক ও সৌদি আরবের তুলনায় তার কিছু করার সামর্থ্য অনেক কম। কিন্তু তবুও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে, তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কায়রো। এর প্রমাণ পাওয়া যায় মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট (মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য) মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়টি অতি দ্রুত বিস্মৃতি হওয়ার ঘটনায়। অধিকন্তু মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে ১৯৭৯ সালের মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তিটি এখনো এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মিসরের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকলেও সে কল্যাণমূলক সরকারে ফেরা, পার্লামেন্ট নির্বাচন, সামাজিক অস্থিরতা দমন এবং দেশের নানা ধরনের জিহাদি হুমকি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসবের মধ্যে মিসরীয় বাহিনী ইয়েমেনেও সক্রিয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনার জন্য রাশিয়া সফর করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মিসর ও সৌদি আরবের মধ্যকার সহযোগিতা আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে, দেশ দু’টি মধ্যপ্রাচ্যের আরব পশ্চাৎভূমি রক্ষার জন্য তাদের সম্পদ জড়ো করতে পারে। যৌথ আরব প্রতিরক্ষা বাহিনী এই পরিকল্পনার অংশ হতে পারে। আর সেটা আঞ্চলিক জোটটিতে প্রধান ভূমিকা পালনে কায়রোর চেষ্টা সফল হওয়ার অন্যতম পথ হতে পারে।
অর্থাৎ ইরানের পরমাণু চুক্তিটি সহিংসতা বা যুদ্ধের ডামাডোল কোনোভাবেই কমাচ্ছে না; বরং তা আরো উসকে দিতে পারে। ২০১১ সালের আরব বসন্ত এই অঞ্চলজুড়ে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি করেছে; স্থানীয় মিলিশিয়া ও গ্র“পগুলোর পাশাপাশি শিখণ্ডীদের বাইরের শক্তিগুলো সমর্থন দিচ্ছে, নতুন সুযোগ সন্ধানীদের সামনে মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এই অঞ্চলে সক্রিয় গ্র“পগুলো নিজেরা ছোট ছোট ভূখণ্ডে নিজেদের অধিকারে নিয়ে শাসন পরিচালনার চেয়ে তুরস্ক, ইরান, সৌদি আরব ও মিসরের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকবে। ফলে সঙ্ঘাতে এসব দেশের ভূমিকা থাকবে।
(স্ট্র্যাটফোরের পুরো নাম স্ট্র্যাটেজিক ফোরকাস্টিং, ইন্ক। এটি আমেরিকান পাবলিশার এবং বৈশ্বিক গোয়েন্দা কোম্পানি। এটি ১৯৯৬ সালে জর্জ ফ্রিডম্যান টেক্সাসে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বর্তমানে সংস্থাটির চেয়ারম্যান। এর সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন শিয়া মরেনজ)।
ইরানের প্রতি মার্কিন নেতৃত্বাধীন পাশ্চাত্য-জোটের বৈরী মনোভাবকে অনেকে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতার অন্যতম কারণ মনে করতেন। এখন পরমাণু চুক্তি হয়েছে, পাশ্চাত্যের সাথে দেশটির সম্পর্ক স্বাভাবিক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তাহলে কি মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির সুবাতাস বইবে? কৌশলগত ও গোয়েন্দাবিষয়ক টেক্সাসভিত্তিক সংস্থা স্ট্র্যাটফোর কিন্তু তা মনে করে না। তাদের মতে, ইরানি পরমাণু চুক্তি অন্তত স্বল্পমেয়াদে যুদ্ধের আশঙ্কা প্রশমিত তো করেইনি, বরং আরো বাড়িয়েছে। শিয়া-সুন্নি ছাড়াও তুর্কি, ইরানি, আরব, কুর্দি ইত্যাদি নানা গ্রুপে সঙ্ঘাত বাড়বে বলেই তাদের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। বিশ্লেষণটি অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ হাসান শরীফ।
তুরস্ক
স্ট্র্যাটফোর অনেক আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে, আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্বের মুকুটটি শেষ পর্যন্ত তুর্কিদের মাথাতেই শোভা পাবে। মনে রাখতে হবে, মধ্যপ্রাচ্যের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ এটা। সেইসাথে কৃষ্ণসাগর ও ভূমধ্যসাগরের মোহনা এবং মারমারা সাগরের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এর অবস্থান। বর্তমানে তুরস্কের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে পরিচিত নগরীটির ১৫০০ বছর (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৩০ সালে বায়জান্টেনীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার সময় থেকে ১৯১৮ সালে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত) সাম্রাজ্যগুলোর শক্তিশালী কেন্দ্র হিসেবে থাকাটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার ছিল না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো তুরস্কেরও ইরানের সাথে সমভাবাপন্ন স্বার্থ রয়েছে। পূর্ব দিকের প্রতিবেশী ইরানের সাথে তুরস্কের সব বিষয়ে বৈরিতা আছে এমন নয়; বরং এমন অনেক বিষয় আছে, যাতে একে অপরে নির্ভরশীল, পরস্পর পরস্পরকে সহযোগিতা করতেও প্রস্তুত। এর একটি হলো, ইরানি তেলের ওপর তুর্কির নির্ভরশীলতা। ২০১৪ সাল পর্যন্ত তুর্কি তেল আমদানির ২৬ শতাংশ পর্যন্ত হতো ইরান থেকে। ইরানের ওপর থেকে অবরোধ প্রত্যাহার সম্ভাব্য অর্থনৈতিক লাভের জন্য অধীর আগ্রহে থাকা তুর্কি বাণিজ্যিক শ্রেণীর কাছে বিনিয়োগের বিপুল সুযোগ বিবেচিত হচ্ছে। ইরান ও তুরস্কের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্কের পাশাপাশি তেহরান ও আঙ্কারা কিছু অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থও ধারণ করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উভয়েই সিরিয়ান গৃহযুদ্ধ ও ইরাকি সঙ্ঘাতের ভস্ম থেকে স্বাধীন কুর্দি রাষ্ট্রের উত্থানের বিরোধী। ইরানে ৬০ থেকে ৭০ লাখ কুর্দি জনসংখ্যা রয়েছে। ইরাকে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) অগ্রগতি প্রতিহত করার জন্য তেহরান কুর্দিদের সামরিক সহায়তাও দিয়েছে। আবার তুরস্কের প্রায় ১৫ ভাগ জনসংখ্যা কুর্দি। সেই ১৯৮৪ সাল থেকে আঙ্কারা সশস্ত্র কুর্দি আন্দোলন দমন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অবশ্য আরো বিস্তারিত বললে বলা যায়, তুরস্ক ও ইরান সহজাত প্রতিযোগী। এমনকি কুর্দিদের দমনে অভিন্ন স্বার্থ থাকলেও উভয়েই একে অপরকে চেপে ধরতে তারাই তাদের কার্যকর হাতিয়ার। ফলে কুর্দিস্তান হলো তুরস্ক ও ইরানের প্রাকৃতিক যুদ্ধক্ষেত্র। তাদের মধ্যকার প্রতিযোগিতা বাড়লে উভয়েই কুর্দি উপদলগুলোকে একে অপরের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবে। যদিও তুর্কিরা প্রধানত সুন্নি এবং ইরান প্রধানত শিয়া, কিন্তু এটা উল্লেখ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, আঙ্কারা ও তেহরান যে এলাকায় তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চায়, সেটা আরব প্রাধান্যবিশিষ্ট। অনেক আরবের কাছেই তুর্কি বা পারসিক শাসনের কোনো একটা বেছে নেয়া আসলে পানিতে ডুবে মরা নাকি কুঠারাঘাতে মৃত্যুবরণ করা তা বাছাই করা।
ইসলামিক স্টেটের সাথে তুরস্কের সম্পর্ক এখনো অস্পষ্ট। কেবল সাম্প্রতিক সময়ে কট্টরপন্থী গ্র“পটির প্রতি তুরস্কের নীতি পরোক্ষ যোগাযোগ থেকে তাদের ধ্বংস করার কাজে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় পর্যবশিত হয়েছে। এটা এ কারণে হতে পারে, আঙ্কারা মনে করছে যে, ইসলামিক স্টেট তুরস্কজুড়ে শাখা প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকলে সেটা তার জন্য অভ্যন্তরীণ হুমকি হতে পারে। ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কুর্দিদের সবচেয়ে সক্রিয় শক্তি হিসেবে দেখতে পেয়ে পাশ্চাত্য স্বাধীন কুর্দিস্তানের সম্ভাবনার প্রতি অনেক বেশি অনুকূল ধারণা পোষণ করছে, এমনটা শুনেও তুরস্ক হতাশ ও আতঙ্কিত হতে পারে।
সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদের পতন দেখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকার কারণেই তুরস্ক দামাস্কাসের বিরুদ্ধে লড়াইরত যোদ্ধাদের সক্রিয়ভাবে সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। লেভ্যান্টকে (ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল) আঙ্কারা নিজের প্রভাববলয়ের অংশ মনে করে, সেখানে ইরানি প্রভাব বাড়ানোর প্রয়াসকে সে সদয়ভাবে বিবেচনা করবে না। সিরিয়ায় তুরস্ক আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে পারে, এমন সম্ভাবনাও নাকচ করে দেয়া যায় না। বিশেষ করে যখন সম্প্রতি এই তথ্য পাওয়া যাচ্ছে যে, একটি বাফার জোন প্রতিষ্ঠার জন্য উত্তর সিরিয়ায় সামরিক বাহিনী পাঠানোর বিষয়টি বিবেচনা করছে তুরস্ক। তাদের বিবেচনায় সুন্নি বিদ্রোহীরা আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ অব্যাহত রাখার জন্য এই স্থানটিকে তাদের শক্তি সঞ্চয়ের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে।
সৌদি আরব
ইরানের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হলে সৌদি আরবের সাথে দেশটির বিরোধ তুরস্কের মতো এত বেশি নয়। রাজতান্ত্রিক দেশটি আরব ও সুন্নি শক্তি। বেশির ভাগ সৌদি যে ওহাবি মতবাদ অনুসরণ করে, তা শিয়া মতবাদকে গভীর সন্দেহের চোখে দেখে। দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ থেকে ১৫ ভাগ শিয়া। ইরাক এখন আর ইরানি উচ্চাভিলাষের বিরুদ্ধে বাফার জোন হিসেবে বিরাজ না করায় সৌদিরা যথার্থভাবেই ইরানের সাথে সঙ্ঘাতে নিজেকে সামনের কাতারে দেখতে পাচ্ছে। সৌদি আরবের বেশির ভাগ শিয়া লোকজন বাস করে সৌদিদের সম্পদ আর ক্ষমতার উৎস দেশটির বিশাল তেলক্ষেত্রগুলোর কাছাকাছি। এটাই ইরানি সম্প্রসারণ-ভীতির ব্যাপারে রিয়াদকে আরো বেশি সতর্ক করে দিচ্ছে। ইরান এই বিক্ষোভকে উপসাগরীয় দেশগুলোতে তার প্রভাব বাড়াতে ব্যবহার করতে পারে, এই আশঙ্কায় এই ২০১১ সালে সৌদি আরব সুন্নি শাসিত, শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ বাহরাইনে বিক্ষোভ দমন করতে সৈন্য পাঠিয়েছে।
তুরস্কের মতো সৌদি আরবও আসাদ সরকারের পতন দেখতে চায়, যা এই অঞ্চলে ইরানি প্রভাব খর্ব করবে। একসময় সৌদিরা ভেবেছিল, ইসলামিক স্টেট ওই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক হবে। কিন্তু ওই পরিকল্পনা রিয়াদের জন্য পাল্টা আঘাত হেনেছে। ফলে এখন সৌদিদের ইসলামিক স্টেট ও আলকায়েদা উভয়কেই মোকাবেলা করতে হবে। সৌদি আরব এখনো আসাদবিরোধী সিরিয়ায় সুন্নি জঙ্গিদের সমর্থন দেয়া অব্যাহত রেখেছে। জর্ডানের মতো এই দেশটিও ইরাকের সুন্নি উপজাতীয়দের অস্ত্র দিচ্ছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
সৌদি আরবের আবার তুরস্ক ও ইরানের মতো আশু কুর্দি সমস্যা নেই। স্ট্র্যাটফোর ইতোমধ্যে এমন আলামত পেয়েছে যে, সৌদ পরিবার ইরাকে কুর্দি দলগুলোকে সামরিকভাবে সহায়তা করবে। তবে সৌদিরা কত দূর এই কৌশলটি বাস্তবায়ন করবে এবং কুর্দিদের কোন অংশকে সহায়তা করবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে ইরানিরা এর মধ্যেই সৌদি আরবের সংখ্যালঘু গ্রুপগুলোকে প্ররোচিত করার চেষ্টা শুরু করায় সৌদিরা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ও নিরাপত্তা ইস্যুগুলোতে প্রভাব বিস্তারে সক্ষম এমন একটি শক্তিশালী স্বায়ত্তশাসিত কুর্দিস্তান গঠনের প্রয়াস চালাবে। তবে তা তুরস্কের সাথে সৌদিদের সম্পর্কে অবনতি ঘটাতে পারে। সর্বোপরি উভয়েই সুন্নি হলেও মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হোক, সে ব্যাপারে সৌদি আরবের আগ্রহ নেই বললেই চলে, ঠিক যেমন তারা চায় না ইরানের ব্যাপারে।
সৌদি আরব ২০১৪ সালে ইরানের সাথে কূটনৈতিক সংলাপ শুরুর চেষ্টা চালিয়েছিল। কিন্তু ইয়েমেন সঙ্ঘাত শুরু হলে সেই অবস্থা আর থাকেনি। রিয়াদ যখন শিয়া এবং ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মনোযোগী হয়েছিল, তখন ইয়েমেনে ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের ব্যাপক অগ্রগতিতে থমকে দাঁড়ায়। হুতিরা একপর্যায়ে রাজধানী সানা পর্যন্ত দখল করে ফেলে। সৌদিরা দেশটিতে বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ২০১৫ সালের এপ্রিল থেকে পরিস্থিতি বদলাতে থাকে। বিশ্বের ছয়টি পরাশক্তি ইরানের পরমাণু চুক্তিকে স্বীকৃতি দেয়ার পর থেকে সৌদি-সমর্থিত হুতিবিরোধী বাহিনী ইয়েমেনে ইডেন উপসাগরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জয় পেয়েছে। এ ধরনের যুদ্ধ এই অঞ্চলে সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ইরানের আন্তর্জাতিক ভাবমর্যাদার পুনর্বাসন এবং সেইসাথে তেহরানের আধিপত্য সম্প্রসারণের আকাঙ্ক্ষার ফলে এ ধরনের ঘটনা আরো বাড়তে পারে।
মিসর
সৌদি আরবের মতো মিসরও সুন্নি শক্তি। তবে তুরস্ক ও সৌদি আরবের তুলনায় তার কিছু করার সামর্থ্য অনেক কম। কিন্তু তবুও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করছে, তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে কায়রো। এর প্রমাণ পাওয়া যায় মিসরের প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট (মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য) মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করার সামরিক অভ্যুত্থানের বিষয়টি অতি দ্রুত বিস্মৃতি হওয়ার ঘটনায়। অধিকন্তু মার্কিন দৃষ্টিকোণ থেকে ১৯৭৯ সালের মিসর-ইসরাইল শান্তিচুক্তিটি এখনো এই অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মিসরের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকলেও সে কল্যাণমূলক সরকারে ফেরা, পার্লামেন্ট নির্বাচন, সামাজিক অস্থিরতা দমন এবং দেশের নানা ধরনের জিহাদি হুমকি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে যাচ্ছে। এসবের মধ্যে মিসরীয় বাহিনী ইয়েমেনেও সক্রিয়, দেশটির প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং সিরিয়া পরিস্থিতি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে আলোচনার জন্য রাশিয়া সফর করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে মিসর ও সৌদি আরবের মধ্যকার সহযোগিতা আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে, দেশ দু’টি মধ্যপ্রাচ্যের আরব পশ্চাৎভূমি রক্ষার জন্য তাদের সম্পদ জড়ো করতে পারে। যৌথ আরব প্রতিরক্ষা বাহিনী এই পরিকল্পনার অংশ হতে পারে। আর সেটা আঞ্চলিক জোটটিতে প্রধান ভূমিকা পালনে কায়রোর চেষ্টা সফল হওয়ার অন্যতম পথ হতে পারে।
অর্থাৎ ইরানের পরমাণু চুক্তিটি সহিংসতা বা যুদ্ধের ডামাডোল কোনোভাবেই কমাচ্ছে না; বরং তা আরো উসকে দিতে পারে। ২০১১ সালের আরব বসন্ত এই অঞ্চলজুড়ে ক্ষমতার শূন্যতা সৃষ্টি করেছে; স্থানীয় মিলিশিয়া ও গ্র“পগুলোর পাশাপাশি শিখণ্ডীদের বাইরের শক্তিগুলো সমর্থন দিচ্ছে, নতুন সুযোগ সন্ধানীদের সামনে মুলা ঝুলিয়ে দিয়েছে। এই অঞ্চলে সক্রিয় গ্র“পগুলো নিজেরা ছোট ছোট ভূখণ্ডে নিজেদের অধিকারে নিয়ে শাসন পরিচালনার চেয়ে তুরস্ক, ইরান, সৌদি আরব ও মিসরের দাবার ঘুঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকবে। ফলে সঙ্ঘাতে এসব দেশের ভূমিকা থাকবে।
(স্ট্র্যাটফোরের পুরো নাম স্ট্র্যাটেজিক ফোরকাস্টিং, ইন্ক। এটি আমেরিকান পাবলিশার এবং বৈশ্বিক গোয়েন্দা কোম্পানি। এটি ১৯৯৬ সালে জর্জ ফ্রিডম্যান টেক্সাসে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বর্তমানে সংস্থাটির চেয়ারম্যান। এর সভাপতি এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন শিয়া মরেনজ)।
No comments