ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে জবানবন্দি নিয়েছিল সিআইডি -আদালতকে জজ মিয়া
‘ক্রসফায়ারে’ হত্যার হুমকি দিয়ে জজ মিয়ার কাছ থেকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় সাজানো জবানবন্দি আদায় করেছিল সিআইডি।
গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১-এ দেওয়া সাক্ষ্যে জজ
মিয়া এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়ে
তিনি কিছুই জানতেন না। নিজের জীবন ও মা-বোনকে বাঁচাতে তখন আদালতে মিথ্যা
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে জজ মিয়া
আদালতে সাক্ষ্য দিতে হাজির হন। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মৌখিক আপত্তি
জানান। আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের আদেশ দেন।
>>২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গতকাল আদালতে সাক্ষ্য দেন জজ মিয়া (ডান থেকে তৃতীয়)। ছবিটি আদালত প্রাঙ্গণ থেকে বের হওয়ার সময় পুলিশ ভ্যান থেকে তোলা l প্রথম আলো
জজ
মিয়া সাক্ষ্যে বলেন, তিনি ঢাকার সূত্রাপুর এলাকায় একটি মেসে থাকাকালে
ফিরোজ নামের এক ব্যক্তিসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দুই বছর পর জামিন পান। এরপর
ভিডিও ক্যাসেটের ব্যবসা শুরু করেন। পরে একপর্যায়ে তাঁর মা-বাবা গ্রামের
বাড়ি নোয়াখালী সেনবাগ থানার বীরকোর্টে চলে যান। বাবা মারা যাওয়ার পর
তিনিও গ্রামে চলে যান। গ্রামের বাড়ি থেকে ২০০৫ সালে সেনবাগ থানার পুলিশ
তাঁকে আটক করে। তখন পুলিশ জানায়, তাঁর বিরুদ্ধে চোরাচালানের মামলায়
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। তিনি পুলিশকে বলেন যে তিনি চোরাচালানের ব্যবসা
করেন না। তখন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ওপরের নির্দেশে তাঁকে
ধরা হয়েছে। পরে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা
সিআইডির সহাকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রশিদ গিয়ে মাইক্রোবাসে করে
তাঁকে ঢাকায় নিয়ে আসেন।
জজ মিয়া বলেন, ‘সিআইডির রশিদ স্যার আমাকে বলেন যে “তুই ২১ আগস্ট হাসিনার মিটিংয়ে বোমা মেরেছিস।” আমি বলি, “আমি কোনো বোমা মারি নাই, আমি কিছু জানি না।” তখন রশিদ স্যার বলেন, “আমাদের কথামতো কাজ করবি, তা না হলে তোকে ক্রসফায়ারে দেব।”’ জজ মিয়া আরও বলেন, সেনবাগ থানা থেকে তাঁকে ঢাকার মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আনা হয়। তাঁকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিনের কাছে নেওয়া হয়।
জজ মিয়া বলেন, ‘রুহুল আমিন সাহেব আমাকে বলেন, “তোর নামে ঢাকায় অনেক মামলা আছে। উপরের নির্দেশ আছে, আমাদের কথামতো কাজ করলে তোর লাভ হবে। আর আমরাও বেঁচে যাব।” আমি বলি, আমাকে কী করতে হবে? রহুল আমিন সাহেব বলেন, “আমরা যেভাবে শেখাব ও বলব, তুই সেভাবে মুখস্থ করবি। পরে আমাদের কাছে হুবুহু বলবি।” এরপর আমি তাদের শেখানো বক্তব্য মুখস্থ করে প্রতিদিন তিন বেলা তাদের শোনাই। সাত দিন পর আমাকে আদালতে পাঠায়।’
এরপর জজ মিয়াকে বিভিন্ন সময়ে রিমান্ডে নিয়ে সিআইডি জিজ্ঞাসবাদ করে এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভিডিওচিত্র ও কিছু লোকের ছবি দেখায়। পরে সিআইডির কর্মকর্তাদের শেখানো মতে আদালতে জবানবন্দি দেন বলে তিনি সাক্ষ্যে বলেন।
জজ মিয়া বলেন, তাঁকে বলা হয়েছিল, তাঁকে আসামি নয়, রাজসাক্ষী করা হবে। কিন্তু পরে তাঁকে বিভিন্ন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে থাকা মামলায়ও আসামি করা হয়। তিনি এর কারণ জানতে চাইলে সিআইডির কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এসব মামলায় জড়ানো না হলে জবানবন্দিতে তিনি যাদের নাম বলেছেন, তাদের সঙ্গে যে তাঁর সম্পর্ক আছে, সেটা মানুষ বিশ্বাস করবে না।
জজ মিয়া বলেন, সিআইডি কার্যালয়ে থাকাকালে তাঁকে খাবার ও টাকা দিতেন ২১ আগস্ট মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা রুহুল আমিন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁকে প্রথমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ও পরে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে সিআইডি আবদুর রশিদ, রুহল আমিন ও মুন্সী আতিকুর রহমান প্রতি মাসেই দেখা করতে যেতেন। তখন তাঁকে কাপড়, খাবার ও টাকা-পয়সা দিয়ে আসতেন। তিনি বলেন, কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে তাঁর মা জানান যে সিআইডি তাঁকে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা দেয়।
জজ মিয়া সাক্ষ্যে বলেন, ‘২০০৭ সালে কাশিমপুর কারাগারে জেলার সাহেবের কক্ষে আমাকে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে র্যাবের কর্মকর্তা, মুন্সী আতিকুর রহমানসহ অনেককে দেখতে পাই। তাঁরা আমার ছবি তোলেন। আমি পরিচয় জানতে চাই, তখন একজন বড় অফিসার বলেন, আমি কর্নেল গুলজার। তিনি মুন্সী আতিককে বলেন, “এভাবে আর কত নিরীহ মানুষের জীবন নষ্ট করবেন।” কর্নেল গুলজার আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে আমি কেন মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছি। তখন তাঁকে আমি সব কথা বলি। এরপর তাঁরা চলে যান।’
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জজ মিয়া সিআইডির ওই তিন কর্মকর্তা আবদুর রশিদ, রুহুল আমিন ও মুন্সি আতিককে শনাক্ত করেন। গতকাল তাঁদের অন্যান্য আসামির সঙ্গে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
পরে আসামি উজ্জ্বলের পক্ষে তাঁর আইনজীবী মোহাম্মদ আলী আদালতে দরখাস্ত দিয়ে জজ মিয়ার সাক্ষ্য প্রত্যাহারের আবেদন জানান। তিনি বলেন, এই মামলায় জজ মিয়ার সাক্ষ্য দেওয়ার আইনগত বৈধতা নেই। কারণ এই মামলায় জজ মিয়া এর আগে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ওই জবানবন্দিকে সমর্থন করে শফিকুল ইসলাম ও আবুল হাসেম নামে আরও দুজন জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এখনো সেগুলো বিদ্যমান আছে। জজ মিয়া যেহেতু আগে আসামি ছিলেন, তাই তিনি সাক্ষী হতে পারেন না। তিনি রাজসাক্ষী হতে পারেন।
এই যুক্তি খণ্ডন করে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, জজ মিয়াকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে ওই জবানবন্দি নেওয়া হয়েছিল। জজ মিয়া এখন আর এ মামলার কোনো আসামি নন। ২০০৮ সালের ৯ জুন সিআইডির এএসপি ফজলুল কবির তদন্ত করে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। জজ মিয়াসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
রেজাউর রহমান আরও বলেন, ২০০৯ সালে মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহ্হার আকন্দের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেন জজ মিয়া। তাই আসামিপক্ষের দরখাস্তের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।
শুনানি শেষে আদালত ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর টানা তিন দিন জজ মিয়াকে আসামিপক্ষের জেরার জন্য দিন ধার্য করেন। তবে তারেক রহমানসহ পলাতক ১৯ আসামির পক্ষে সরকার নিযুক্ত তাঁদের আইনজীবীরা জেরা করতে গতকালই অস্বীকৃতি (ডিক্লাইন) জানান।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জজ মিয়ার বোন খোরশেদা আকতারের সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়।
জজ মিয়া বলেন, ‘সিআইডির রশিদ স্যার আমাকে বলেন যে “তুই ২১ আগস্ট হাসিনার মিটিংয়ে বোমা মেরেছিস।” আমি বলি, “আমি কোনো বোমা মারি নাই, আমি কিছু জানি না।” তখন রশিদ স্যার বলেন, “আমাদের কথামতো কাজ করবি, তা না হলে তোকে ক্রসফায়ারে দেব।”’ জজ মিয়া আরও বলেন, সেনবাগ থানা থেকে তাঁকে ঢাকার মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আনা হয়। তাঁকে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিনের কাছে নেওয়া হয়।
জজ মিয়া বলেন, ‘রুহুল আমিন সাহেব আমাকে বলেন, “তোর নামে ঢাকায় অনেক মামলা আছে। উপরের নির্দেশ আছে, আমাদের কথামতো কাজ করলে তোর লাভ হবে। আর আমরাও বেঁচে যাব।” আমি বলি, আমাকে কী করতে হবে? রহুল আমিন সাহেব বলেন, “আমরা যেভাবে শেখাব ও বলব, তুই সেভাবে মুখস্থ করবি। পরে আমাদের কাছে হুবুহু বলবি।” এরপর আমি তাদের শেখানো বক্তব্য মুখস্থ করে প্রতিদিন তিন বেলা তাদের শোনাই। সাত দিন পর আমাকে আদালতে পাঠায়।’
এরপর জজ মিয়াকে বিভিন্ন সময়ে রিমান্ডে নিয়ে সিআইডি জিজ্ঞাসবাদ করে এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভিডিওচিত্র ও কিছু লোকের ছবি দেখায়। পরে সিআইডির কর্মকর্তাদের শেখানো মতে আদালতে জবানবন্দি দেন বলে তিনি সাক্ষ্যে বলেন।
জজ মিয়া বলেন, তাঁকে বলা হয়েছিল, তাঁকে আসামি নয়, রাজসাক্ষী করা হবে। কিন্তু পরে তাঁকে বিভিন্ন সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে থাকা মামলায়ও আসামি করা হয়। তিনি এর কারণ জানতে চাইলে সিআইডির কর্মকর্তারা বলেছিলেন, এসব মামলায় জড়ানো না হলে জবানবন্দিতে তিনি যাদের নাম বলেছেন, তাদের সঙ্গে যে তাঁর সম্পর্ক আছে, সেটা মানুষ বিশ্বাস করবে না।
জজ মিয়া বলেন, সিআইডি কার্যালয়ে থাকাকালে তাঁকে খাবার ও টাকা দিতেন ২১ আগস্ট মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা রুহুল আমিন। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দেওয়ার পর তাঁকে প্রথমে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ও পরে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। সেখানে সিআইডি আবদুর রশিদ, রুহল আমিন ও মুন্সী আতিকুর রহমান প্রতি মাসেই দেখা করতে যেতেন। তখন তাঁকে কাপড়, খাবার ও টাকা-পয়সা দিয়ে আসতেন। তিনি বলেন, কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে তাঁর মা জানান যে সিআইডি তাঁকে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা দেয়।
জজ মিয়া সাক্ষ্যে বলেন, ‘২০০৭ সালে কাশিমপুর কারাগারে জেলার সাহেবের কক্ষে আমাকে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে র্যাবের কর্মকর্তা, মুন্সী আতিকুর রহমানসহ অনেককে দেখতে পাই। তাঁরা আমার ছবি তোলেন। আমি পরিচয় জানতে চাই, তখন একজন বড় অফিসার বলেন, আমি কর্নেল গুলজার। তিনি মুন্সী আতিককে বলেন, “এভাবে আর কত নিরীহ মানুষের জীবন নষ্ট করবেন।” কর্নেল গুলজার আমাকে জিজ্ঞাসা করেন যে আমি কেন মিথ্যা জবানবন্দি দিয়েছি। তখন তাঁকে আমি সব কথা বলি। এরপর তাঁরা চলে যান।’
সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জজ মিয়া সিআইডির ওই তিন কর্মকর্তা আবদুর রশিদ, রুহুল আমিন ও মুন্সি আতিককে শনাক্ত করেন। গতকাল তাঁদের অন্যান্য আসামির সঙ্গে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়।
পরে আসামি উজ্জ্বলের পক্ষে তাঁর আইনজীবী মোহাম্মদ আলী আদালতে দরখাস্ত দিয়ে জজ মিয়ার সাক্ষ্য প্রত্যাহারের আবেদন জানান। তিনি বলেন, এই মামলায় জজ মিয়ার সাক্ষ্য দেওয়ার আইনগত বৈধতা নেই। কারণ এই মামলায় জজ মিয়া এর আগে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছিলেন। ওই জবানবন্দিকে সমর্থন করে শফিকুল ইসলাম ও আবুল হাসেম নামে আরও দুজন জবানবন্দি দিয়েছিলেন। এখনো সেগুলো বিদ্যমান আছে। জজ মিয়া যেহেতু আগে আসামি ছিলেন, তাই তিনি সাক্ষী হতে পারেন না। তিনি রাজসাক্ষী হতে পারেন।
এই যুক্তি খণ্ডন করে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, জজ মিয়াকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নিতে ওই জবানবন্দি নেওয়া হয়েছিল। জজ মিয়া এখন আর এ মামলার কোনো আসামি নন। ২০০৮ সালের ৯ জুন সিআইডির এএসপি ফজলুল কবির তদন্ত করে ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। জজ মিয়াসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে কোনো সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।
রেজাউর রহমান আরও বলেন, ২০০৯ সালে মামলার অধিকতর তদন্ত শুরু হয়। এরপর ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল কাহ্হার আকন্দের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারায় জবানবন্দি দেন জজ মিয়া। তাই আসামিপক্ষের দরখাস্তের আইনগত কোনো ভিত্তি নেই।
শুনানি শেষে আদালত ১৩ থেকে ১৫ অক্টোবর টানা তিন দিন জজ মিয়াকে আসামিপক্ষের জেরার জন্য দিন ধার্য করেন। তবে তারেক রহমানসহ পলাতক ১৯ আসামির পক্ষে সরকার নিযুক্ত তাঁদের আইনজীবীরা জেরা করতে গতকালই অস্বীকৃতি (ডিক্লাইন) জানান।
এর আগে দুপুর ১২টার দিকে জজ মিয়ার বোন খোরশেদা আকতারের সাক্ষ্য-জেরা শেষ হয়।
No comments