আফগানিস্তান হতে যাচ্ছে নাইজেরিয়া by লিন্ডসে জার্মান
ঘটনাটা অবিশ্বাস্য। উত্তর নাইজেরিয়ার একটি বিদ্যালয় থেকে ২০০ ছাত্রীকে
অপহরণ করে নিয়ে গেল সন্ত্রাসী সংগঠন বোকো হারাম। তারপর তারা বিশ্বব্যাপী
প্রচারিত এক ভিডিওবার্তায় হুমকি দিল, এই মেয়েদের দাস হিসেবে বিক্রি করা
হবে। অবিশ্বাসটা আরও জোরদার হলো এর পরের ঘটনায়৷ রাতারাতি উত্তর-পূর্ব
নাইজেরিয়ায় আরও আটজন মেয়েকে অপহরণ করল এই বোকো হারাম। এই ঘটনা সবাইকে বেশ
নাড়া দেয়৷ সবার মনে তা এক জঘন্য ঘৃণার ভাব সৃষ্টি করেছে, শুধু স্বাধীনতা
হারানোর বিপদের কারণে নয়, এই মেয়েগুলোর পরিণতির কথা ভেবে৷ এদের
নিশ্চিতভাবে জোর করে বিয়ে দেওয়া হবে বা দাস্যবৃত্তিতে বাধ্য করা হবে,
শিক্ষা আর তাদের ভাগ্যে জুটবে না।
এই
মেয়েদের খুঁজে বের করতে নাইজেরীয় সরকারের উদ্যোগ নেই বললেই চলে। আর যঁারা
প্রেসিডেন্ট গুডলাক জোনাথনের বিরুদ্ধে দলে দলে মাঠে নেমেছেন, তঁাদের
বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেককেই সাময়িকভাবে
গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিন্তু এখন যেসব গল্প ছড়ানো হচ্ছে সে সম্বন্ধে
আমাদের সতর্ক হওয়া উচিত। যেভাবে এটা করা হচ্ছে তার ধরনটা অনেক পুরোনো,
দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে যেটা আমরা দেখেছি। কিন্তু এখন সেটা ক্রমেই
আফ্রিকায় প্রয়োগ করা হচ্ছে।
আবার সেই পুরোনো ভাঙা রেকর্ড বাজানো শুরু হয়েছে, কিছু একটা করতে হবে আর ‘আমাদের’৷ মানে আলোকিত পশ্চিমাদেরই এটা করতে হবে। মার্কিন সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার এভাবে বলেছেন: ‘এটা এমন এক সময়, যখন আমাদের সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তার ফল শুধু সেই স্কুলবালিকা বা তাদের জন্য উদ্বিগ্ন চিত্তে অপেক্ষমাণ পরিবারের সদস্যরাই টের পাবেন না, সারা দুনিয়ায় আদম পাচারের শিকার ও পাচারকারী উভয়ই তা টের পাবেন। এখন কাজে নামার সময়।’ এই মেয়েদের খুঁজে বের করায় সহযোগিতা করার জন্য পশ্চিমাদের আহ্বান করা হয়েছে, এই অপহরণের পর নাইজেরিয়ায় ‘স্থিতাবস্থা’ও ফিরিয়ে আনতে হবে বলে কথা। ব্রিটিশ সরকার ইতিমধ্যে ‘ব্যবহারিক সাহায্য’র প্রস্তাব দিয়েছে। তবে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ তেমন কাজে লাগেনি। বিশেষত, সমস্যা মোকবিলায় তা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। আরও খারাপ হচ্ছে, পশ্চিমা হস্তক্ষেপের কারণে বেশি হারে মৃত্যু, স্থানচ্যুতি ও নৃশংসতা ঘটেছে, মূল ঘটনার কারণেও এত হারে তা ঘটেনি। প্রায়ই এই বলে এটা জায়েজ করা হয়েছে, আলোকিত সামরিক শক্তি এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, যেখানে নারীরা সহিংসতা ও যৌন নিগ্রহমুক্ত জীবন যাপন করতে পারেন। প্রমাণ হচ্ছে, এর বিপরীতটাই সমাজে ঘটে থাকে।
আফগানিস্তান যুদ্ধের বড় যুক্তি ছিল নারীর অধিকার সুরক্ষা। শেরি ব্লেয়ার ও লরা বুশ ২০০১ সালে তাঁদের স্বামীদের অতি আগ্রহের এই যুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন৷ কারণ, এ যুদ্ধ নািক আফগান নারীদের মুক্ত করবে। আর আজ আফগানিস্তানে কোটি কোটি মানুষ ঘরছাড়া, যুদ্ধে মারা গেছে লাখো মানুষ। নারীদের বসবাসের জন্য আফগানিস্তান আজ দুনিয়ার সবচেয়ে বাজে জায়গা। সেখানে এখন জোরপূর্বক বিয়ে, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণসহ নানা রকম সহিংসতা নারীদের বিরুদ্ধে অবিরাম চলছেই।
আফ্রিকায় পশ্চিমা হস্তক্ষেপ এখন শিকড় গেড়ে বসেছে। তবে তা আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো নয়, কারণ এ পন্থায় স্বার্থ হাসিল করা কঠিন হয়ে গেছে আগের যুদ্ধগুলোর কারণেই। কিন্তু বারাক ওবামার শিকারি ড্রোনগুলো পশ্চিম আকাশে চক্কর দিচ্ছে, নাইজারে ইতিমধ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনী ঘঁাটি গেড়ে বসেছে। এই ঘঁাটি নাইজেরিয়ার উত্তর সীমান্ত ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। এই ঘঁাটির পাশেই মালির সীমান্ত আছে। সেখানে কিছুদিন আগে ফরাসি ও ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ ঘটেছে। লিবিয়ার সীমান্তও এখানে আছে, ২০১১ সালে এখানে পশ্চিমারা অবিরাম বোমাবর্ষণ করে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়, ফলে তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। আফ্রিকার জিবুতি, ইথিওপিয়া ও লোহিতসাগরের অপর পারে ইয়েমেনের আকাশেও মার্কিন ড্রোন বিমান চক্কর দেয়। আর সাম্প্রতিক সময়ে সোমালিয়াতেও পশ্চিমা বিশ্ব প্রক্সি যুদ্ধে নেমেছে।
আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান হারে ছড়িয়ে পড়া ইসলামপন্থা যদি পশ্চিমাদের জন্য হুমকি হয়ে দঁাড়ায়, তাহলে সেটা সৃষ্টিতে পশ্চিমই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আফ্রিকায় আরেকটি যুদ্ধও চলছে, সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। এই মহাদেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও এর জনগণের বড় অংশই চরম দুরবস্থায় দিনাতিপাত করছে। প্রেসিডেন্ট জোনাথনের নাইজেরিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল চুয়ে চুয়ে পড়ে জনগণ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা অনেক মানুষেরই নাগালের বাইরে। দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। তার পরও শেলের মতো বিদেশি ও ধনী কোম্পািনগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী পোষা হচ্ছে। অস্ত্র কেনা হচ্ছে। এই কোম্পািনগুলো নাইজেরিয়ার সম্পদে হাত দিতে চায়, বিশেষত তেলভান্ডারে অবাধ প্রবেশাধিকার চায় তারা। সমাজে বিরাজমান এই দুর্নীতি এবং অসমতার পেছনেও পশ্চিমাদের হাত আছে। এটা সেখানকার ব্যবস্থারই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই ব্যবস্থায় তেল ও গ্যাসের জন্য সবাই যুদ্ধে নামতে রািজ আছে, কিন্তু দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণে কেউ যুদ্ধে নামতে চায় না।
নাইজেরিয়ায় এই অপহৃত মেয়েদের করুণ আর্তির এই হচ্ছে পরিপ্রেক্ষিত। ভূমিতে বা আকাশে পশ্চিমা সেনাসংখ্যা বাড়িয়ে বা অস্ত্র আমদানি করে এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো যাবে না।
লন্ডনের গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত৷
লিন্ডসে জার্মান: ব্রিটিশ যুদ্ধবিরোধী সংগঠন ‘স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশন’-এর আহ্বায়ক৷
আবার সেই পুরোনো ভাঙা রেকর্ড বাজানো শুরু হয়েছে, কিছু একটা করতে হবে আর ‘আমাদের’৷ মানে আলোকিত পশ্চিমাদেরই এটা করতে হবে। মার্কিন সিনেটর অ্যামি ক্লোবুচার এভাবে বলেছেন: ‘এটা এমন এক সময়, যখন আমাদের সক্রিয়তা বা নিষ্ক্রিয়তার ফল শুধু সেই স্কুলবালিকা বা তাদের জন্য উদ্বিগ্ন চিত্তে অপেক্ষমাণ পরিবারের সদস্যরাই টের পাবেন না, সারা দুনিয়ায় আদম পাচারের শিকার ও পাচারকারী উভয়ই তা টের পাবেন। এখন কাজে নামার সময়।’ এই মেয়েদের খুঁজে বের করায় সহযোগিতা করার জন্য পশ্চিমাদের আহ্বান করা হয়েছে, এই অপহরণের পর নাইজেরিয়ায় ‘স্থিতাবস্থা’ও ফিরিয়ে আনতে হবে বলে কথা। ব্রিটিশ সরকার ইতিমধ্যে ‘ব্যবহারিক সাহায্য’র প্রস্তাব দিয়েছে। তবে পশ্চিমা হস্তক্ষেপ তেমন কাজে লাগেনি। বিশেষত, সমস্যা মোকবিলায় তা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। আরও খারাপ হচ্ছে, পশ্চিমা হস্তক্ষেপের কারণে বেশি হারে মৃত্যু, স্থানচ্যুতি ও নৃশংসতা ঘটেছে, মূল ঘটনার কারণেও এত হারে তা ঘটেনি। প্রায়ই এই বলে এটা জায়েজ করা হয়েছে, আলোকিত সামরিক শক্তি এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেছে, যেখানে নারীরা সহিংসতা ও যৌন নিগ্রহমুক্ত জীবন যাপন করতে পারেন। প্রমাণ হচ্ছে, এর বিপরীতটাই সমাজে ঘটে থাকে।
আফগানিস্তান যুদ্ধের বড় যুক্তি ছিল নারীর অধিকার সুরক্ষা। শেরি ব্লেয়ার ও লরা বুশ ২০০১ সালে তাঁদের স্বামীদের অতি আগ্রহের এই যুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন৷ কারণ, এ যুদ্ধ নািক আফগান নারীদের মুক্ত করবে। আর আজ আফগানিস্তানে কোটি কোটি মানুষ ঘরছাড়া, যুদ্ধে মারা গেছে লাখো মানুষ। নারীদের বসবাসের জন্য আফগানিস্তান আজ দুনিয়ার সবচেয়ে বাজে জায়গা। সেখানে এখন জোরপূর্বক বিয়ে, বাল্যবিবাহ, ধর্ষণসহ নানা রকম সহিংসতা নারীদের বিরুদ্ধে অবিরাম চলছেই।
আফ্রিকায় পশ্চিমা হস্তক্ষেপ এখন শিকড় গেড়ে বসেছে। তবে তা আফগানিস্তান ও ইরাকের মতো নয়, কারণ এ পন্থায় স্বার্থ হাসিল করা কঠিন হয়ে গেছে আগের যুদ্ধগুলোর কারণেই। কিন্তু বারাক ওবামার শিকারি ড্রোনগুলো পশ্চিম আকাশে চক্কর দিচ্ছে, নাইজারে ইতিমধ্যে মার্কিন সামরিক বাহিনী ঘঁাটি গেড়ে বসেছে। এই ঘঁাটি নাইজেরিয়ার উত্তর সীমান্ত ঘেঁষে গড়ে উঠেছে। এই ঘঁাটির পাশেই মালির সীমান্ত আছে। সেখানে কিছুদিন আগে ফরাসি ও ব্রিটিশ হস্তক্ষেপ ঘটেছে। লিবিয়ার সীমান্তও এখানে আছে, ২০১১ সালে এখানে পশ্চিমারা অবিরাম বোমাবর্ষণ করে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়, ফলে তা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে যায়। আফ্রিকার জিবুতি, ইথিওপিয়া ও লোহিতসাগরের অপর পারে ইয়েমেনের আকাশেও মার্কিন ড্রোন বিমান চক্কর দেয়। আর সাম্প্রতিক সময়ে সোমালিয়াতেও পশ্চিমা বিশ্ব প্রক্সি যুদ্ধে নেমেছে।
আফ্রিকায় ক্রমবর্ধমান হারে ছড়িয়ে পড়া ইসলামপন্থা যদি পশ্চিমাদের জন্য হুমকি হয়ে দঁাড়ায়, তাহলে সেটা সৃষ্টিতে পশ্চিমই মুখ্য ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু আফ্রিকায় আরেকটি যুদ্ধও চলছে, সেটা হচ্ছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। এই মহাদেশটি প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হলেও এর জনগণের বড় অংশই চরম দুরবস্থায় দিনাতিপাত করছে। প্রেসিডেন্ট জোনাথনের নাইজেরিয়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল চুয়ে চুয়ে পড়ে জনগণ পর্যন্ত পৌঁছায়নি। স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা অনেক মানুষেরই নাগালের বাইরে। দুর্নীতি রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। তার পরও শেলের মতো বিদেশি ও ধনী কোম্পািনগুলোকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য সেনাবাহিনী পোষা হচ্ছে। অস্ত্র কেনা হচ্ছে। এই কোম্পািনগুলো নাইজেরিয়ার সম্পদে হাত দিতে চায়, বিশেষত তেলভান্ডারে অবাধ প্রবেশাধিকার চায় তারা। সমাজে বিরাজমান এই দুর্নীতি এবং অসমতার পেছনেও পশ্চিমাদের হাত আছে। এটা সেখানকার ব্যবস্থারই অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। এই ব্যবস্থায় তেল ও গ্যাসের জন্য সবাই যুদ্ধে নামতে রািজ আছে, কিন্তু দারিদ্র্য দূরীকরণ ও সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতকরণে কেউ যুদ্ধে নামতে চায় না।
নাইজেরিয়ায় এই অপহৃত মেয়েদের করুণ আর্তির এই হচ্ছে পরিপ্রেক্ষিত। ভূমিতে বা আকাশে পশ্চিমা সেনাসংখ্যা বাড়িয়ে বা অস্ত্র আমদানি করে এই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো যাবে না।
লন্ডনের গার্ডিয়ান থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত৷
লিন্ডসে জার্মান: ব্রিটিশ যুদ্ধবিরোধী সংগঠন ‘স্টপ দ্য ওয়ার কোয়ালিশন’-এর আহ্বায়ক৷
No comments