প্রত্যাখ্যানই কি প্রস্তাবের অমোঘ নিয়তি? by অরবিন্দ রায়
আলেকজান্ডার
দ্য গ্রেট প্রথমবার ভারতবর্ষে পা রেখে একই ভুখণ্ডে বহু জাতি ও ভাষার লোক
দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেন। সেনাপতি সেলুকাসকে উদ্দেশ করে বলেন, কী বিচিত্র এ
দেশ সেলুকাস! তার এ উক্তিটি আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে। দ্য গ্রেট যদি
বেঁচে থাকতেন তাহলে বর্তমান রাজনীতির হাল দেখে বিস্ময় লুকাতে পারতেন না।
আবারও হয়তো নতুন কোনো উক্তি রেখে যেতেন আগামী প্রজন্মের জন্য। দেশে এখন
সর্বদলীয় সরকার ও নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে প্রধান দুই দল
মুখোমুখি অবস্থানে। সরকারের তরফ থেকে সর্বদলীয় সরকারের অধীনে দশম জাতীয়
সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তাব এসেছে। বিরোধী দল সরকারের দেয়া এ
প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন
অনুষ্ঠানের দাবি জানিয়েছে। কেবল দাবি জানিয়েই নিশ্চুপ থাকছে না। দাবি
আদায়ের লক্ষ্যে একের পর এক সিরিজ হরতাল দিয়ে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি
ঘটাচ্ছে। সরকারের সর্বদলীয়ের প্রস্তাব দেয়া ও বিরোধী দলের তা
প্রত্যাখ্যানের বিষয়কে পাশাপাশি দাঁড় করালে দ্য গ্রেট বিস্ময় প্রকাশ করে
হয়তো বলতেন, কী বিচিত্র এ প্রত্যাখ্যান সেলুকাস!
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির আগমন ও নির্গমন বিষয়ে পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই। লেখার খাতিরে তত্ত্বাবধায়ক কথাটি যে কয়বার আসে তা বাদে এ নিয়ে কোনো জ্ঞানগর্ভ বয়ানের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কেননা ভাবসাবে বোঝা যাচ্ছে, এ পদ্ধতির সরকার অতীতে দেখা দিলেও বর্তমানে দেখা দেয়ার কোনো লক্ষণ নেই। তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচন সর্বদলীয় সরকারের অধীনে সম্পন্নের যে প্রস্তাব সরকারের তরফ থেকে এসেছে, আমার মনে হয় সরকারি দলের এ প্রস্তাব বিরোধী দল রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূত্র মতে প্রত্যাখ্যান করেছে। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মাস আগেই প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পরও বিরোধী দলের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার বিষয়টি হতাশ না করিয়ে ছাড়ে না। কেবল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়াই নয়। পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার সবুজ সংকেত পাওয়ার পরও পরীক্ষা হলের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টি অনভিপ্রেত। ক্লাসের বর্তমান ফার্স্ট বয় নকল করবে কিংবা করতে পারে এই আশংকায় যদি সেকেন্ড বয় পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়- এ ঘটনা যে কারও মনে বিস্ময় না জাগিয়ে পারে না। কাজেই সরকারি দলের সর্বদলীয়ের এ প্রস্তাব বিরোধী দলের হাতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক সংস্কৃতির ফের না বলে অপসংস্কৃতি বলাই উত্তম। অপসংস্কৃতি বলতে এটাকেই বোঝানো হচ্ছে যে, একদল কোনো প্রস্তাব রাখলে তা যত ভালোই হোক অন্যদল তা অবধারিত প্রত্যাখ্যান করবে। এখানে প্রত্যাখ্যানই যেন কোনো প্রস্তাবের অমোঘ নিয়তি। বলা যায়, উভয়ের কাছে উভয়ের রাখা যে কোনো প্রস্তাব এখন কার্যকরী অর্থে ফুটবলে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ একজন গোল করার জন্য বল একদিকে কিক করার সঙ্গে সঙ্গে অন্য দল ঠিক উল্টো দিকে কিক করবে। অপসংস্কৃতির মাত্রা এখন এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে, একপক্ষ সূর্য পূর্বদিকে ওঠার কথা বললেও অন্য পক্ষ সেটি মানতে নারাজ। যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি মানাতে বাধ্য করানো হয়। তাও সেটি মানানো হয় দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে। জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে। মাত্রাতিরিক্ত বৈরী মনোভাবই রাজনৈতিক এ দীনতা সৃষ্টির কারণ বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। তাই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব সরকারের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হওয়া সত্ত্বেও বিরোধী দল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সরকারের অভ্যন্তরে থাকা দলীয় লোকজনকে প্রায় সময়েই একটি কথা বলতে শোনা যায়, তারা কারও হুমকি-ধামকিকে পরোয়া করে না। অথচ নির্বাচনী বৈতরণী পার না করেই দেশের প্রায় অর্ধেক ক্ষমতা বিরোধী দলের হাতে তুলে দেয়ার প্রস্তাবটি তাদের সেই বড় গলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে হয়। সম্পর্ক যেখানে এ রকম, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনি’, সেখানে কোনো রকম সংলাপ-সংঘাত ছাড়াই নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর সময়ে বিরোধী দলকে প্রায় অর্ধেক ক্ষমতার শরিক বানানোর প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি সরকারের নতজানু মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। বিরোধী শিবিরের প্রতি এ নমনীয়তা সময়মতো তাদের ধরাশায়ী করলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার গরজ কেউ দেখাবে না। কারণ সরকারের তরফ থেকে উপহার পাওয়া ক্ষমতার অংশীদারিত্ব এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিপুল জনরায়কে পুঁজি করে নির্বাচনে অংশ নিলে মনে হয় না এ যাত্রায় তাদের কেউ ঠেকাতে পারবে। কাজেই এই সুবর্ণ সুযোগ পাওয়ার পরও নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়টি বিপুল জনরায়কে বিব্রত করার শামিল।
সর্বদলীয় সরকার গঠনে উভয় দলের পাঁচজন করে দশজন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যদি সেই সরকারের প্রধান থাকেনও তারপরও যে নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষুণœ হবে, তা ভাবার অবকাশ নেই। কারণ সর্বদলীয় সরকার গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো প্রশাসন দলীয় সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে পড়বে। অর্থাৎ প্রশাসনিক অবকাঠামো দলকানা রোগ থেকে মুক্তি পাবে। সেই সঙ্গে প্রশাসনে নতুন বলয়ের সৃষ্টি হবে। নতুন বলয়টির কারও অনৈতিক আবদার পূরণ না করার সম্ভাবনাই বেশি। উপরন্তু বর্তমান সরকারের বাধ্যানুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীর চেয়ে ক্ষোভের আগুনে অঙ্গার হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাই বেশি বলে ধারণা। কারণ তাড়িয়ে ফেরা চিতার চেয়ে নিরীহ মেষের সংখ্যা বরাবরই বেশি থাকে। কাজেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের প্রধান থাকলেও পুরনো প্রভাব বলয় কতটা কার্যকর রাখতে পারবেন এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা অমূলক নয়।
বিরোধী দলের পঞ্চশক্তি সরকারি দলের পঞ্চশক্তিকে নিষ্ক্রিয় করলে মাঠে থাকবেন কেবল শেখ হাসিনা। যার শরীরে রাজরক্ত বহমান। একজন রাজরক্তবাহী নারীর পক্ষে প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি কতটা বাস্তবসম্মত তা যথেষ্ট ভাবার বিষয়। বরং নিরপেক্ষতার স্টিকারবাহী একজন অপরীক্ষিত তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে এ ধরনের কুটিল প্রস্তাব আসার আশংকা হেসে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাছাড়া অবাধ মিডিয়ার যুগে একজন নারীর পক্ষে নির্বাচনী ফলাফল উল্টে দেয়ার কাজটি হিমালয় পর্বতকে তর্জনীর ডগায় নিয়ে ঘূর্ণি খেলার মতোই অসম্ভব। কেননা আসন্ন ২০১৪ সালটি ১৯৮৬-এর এক টিভি চ্যানেলীয় সাল নয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী ফলাফলের মতো বিভিন্ন কেন্দ্রের ফলাফল যখন বাঁধভাঙা জোয়ারের পানির মতো এসে পড়া শুরু হবে, তখন প্রশাসনে পুরনো তল্পিবাহী কেউ থাকলেও সে যেদিকে বৃষ্টি সেদিকেই ছাতা ধরা শুরু করবে। এ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়কের জন্য আন্দোলন চালিয়ে জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করি না। তাছাড়া দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের মনে অনৈতিক চাহিদার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান সেই সুশীল বাবুটি কুশীল হতে কতক্ষণ? সুযোগ ও পরিমাণের ব্যাট-বলে সংযোগ ঘটানোর জন্য তিনি যে শিংয়ে তেল মেখে কোরবানির হাটে উঠবেন না এ নিশ্চয়তা কে দেবে। কাজেই সরকারি দলের দেয়া সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি বিরোধী দলের জন্য আত্মঘাতী বলেই মনে হয়।
অরবিন্দ রায় : একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি পরিচালক
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির আগমন ও নির্গমন বিষয়ে পুরনো কাসুন্দি ঘেঁটে লাভ নেই। লেখার খাতিরে তত্ত্বাবধায়ক কথাটি যে কয়বার আসে তা বাদে এ নিয়ে কোনো জ্ঞানগর্ভ বয়ানের প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। কেননা ভাবসাবে বোঝা যাচ্ছে, এ পদ্ধতির সরকার অতীতে দেখা দিলেও বর্তমানে দেখা দেয়ার কোনো লক্ষণ নেই। তবে আসন্ন সংসদ নির্বাচন সর্বদলীয় সরকারের অধীনে সম্পন্নের যে প্রস্তাব সরকারের তরফ থেকে এসেছে, আমার মনে হয় সরকারি দলের এ প্রস্তাব বিরোধী দল রাজনৈতিক সংস্কৃতির সূত্র মতে প্রত্যাখ্যান করেছে। পরীক্ষা শুরুর কয়েক মাস আগেই প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পরও বিরোধী দলের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করার বিষয়টি হতাশ না করিয়ে ছাড়ে না। কেবল পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়াই নয়। পরীক্ষায় ফার্স্ট হওয়ার সবুজ সংকেত পাওয়ার পরও পরীক্ষা হলের পরিবেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলার বিষয়টি অনভিপ্রেত। ক্লাসের বর্তমান ফার্স্ট বয় নকল করবে কিংবা করতে পারে এই আশংকায় যদি সেকেন্ড বয় পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়- এ ঘটনা যে কারও মনে বিস্ময় না জাগিয়ে পারে না। কাজেই সরকারি দলের সর্বদলীয়ের এ প্রস্তাব বিরোধী দলের হাতে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার বিষয়টি রাজনৈতিক সংস্কৃতির ফের না বলে অপসংস্কৃতি বলাই উত্তম। অপসংস্কৃতি বলতে এটাকেই বোঝানো হচ্ছে যে, একদল কোনো প্রস্তাব রাখলে তা যত ভালোই হোক অন্যদল তা অবধারিত প্রত্যাখ্যান করবে। এখানে প্রত্যাখ্যানই যেন কোনো প্রস্তাবের অমোঘ নিয়তি। বলা যায়, উভয়ের কাছে উভয়ের রাখা যে কোনো প্রস্তাব এখন কার্যকরী অর্থে ফুটবলে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ একজন গোল করার জন্য বল একদিকে কিক করার সঙ্গে সঙ্গে অন্য দল ঠিক উল্টো দিকে কিক করবে। অপসংস্কৃতির মাত্রা এখন এমন পর্যায়ে এসে ঠেকেছে যে, একপক্ষ সূর্য পূর্বদিকে ওঠার কথা বললেও অন্য পক্ষ সেটি মানতে নারাজ। যতক্ষণ পর্যন্ত না সেটি মানাতে বাধ্য করানো হয়। তাও সেটি মানানো হয় দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে। জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির বিনিময়ে। মাত্রাতিরিক্ত বৈরী মনোভাবই রাজনৈতিক এ দীনতা সৃষ্টির কারণ বলে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। তাই নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব সরকারের জন্য আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত হওয়া সত্ত্বেও বিরোধী দল তা প্রত্যাখ্যান করেছে।
সরকারের অভ্যন্তরে থাকা দলীয় লোকজনকে প্রায় সময়েই একটি কথা বলতে শোনা যায়, তারা কারও হুমকি-ধামকিকে পরোয়া করে না। অথচ নির্বাচনী বৈতরণী পার না করেই দেশের প্রায় অর্ধেক ক্ষমতা বিরোধী দলের হাতে তুলে দেয়ার প্রস্তাবটি তাদের সেই বড় গলার সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে হয়। সম্পর্ক যেখানে এ রকম, ‘বিনা যুদ্ধে নাহি দেব সূচ্যগ্র মেদিনি’, সেখানে কোনো রকম সংলাপ-সংঘাত ছাড়াই নির্বাচনের মতো স্পর্শকাতর সময়ে বিরোধী দলকে প্রায় অর্ধেক ক্ষমতার শরিক বানানোর প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি সরকারের নতজানু মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। বিরোধী শিবিরের প্রতি এ নমনীয়তা সময়মতো তাদের ধরাশায়ী করলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার গরজ কেউ দেখাবে না। কারণ সরকারের তরফ থেকে উপহার পাওয়া ক্ষমতার অংশীদারিত্ব এবং সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিপুল জনরায়কে পুঁজি করে নির্বাচনে অংশ নিলে মনে হয় না এ যাত্রায় তাদের কেউ ঠেকাতে পারবে। কাজেই এই সুবর্ণ সুযোগ পাওয়ার পরও নির্বাচনে অংশ না নেয়ার বিষয়টি বিপুল জনরায়কে বিব্রত করার শামিল।
সর্বদলীয় সরকার গঠনে উভয় দলের পাঁচজন করে দশজন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যদি সেই সরকারের প্রধান থাকেনও তারপরও যে নির্বাচনের পরিবেশ ক্ষুণœ হবে, তা ভাবার অবকাশ নেই। কারণ সর্বদলীয় সরকার গঠন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো প্রশাসন দলীয় সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে পড়বে। অর্থাৎ প্রশাসনিক অবকাঠামো দলকানা রোগ থেকে মুক্তি পাবে। সেই সঙ্গে প্রশাসনে নতুন বলয়ের সৃষ্টি হবে। নতুন বলয়টির কারও অনৈতিক আবদার পূরণ না করার সম্ভাবনাই বেশি। উপরন্তু বর্তমান সরকারের বাধ্যানুগত কর্মকর্তা-কর্মচারীর চেয়ে ক্ষোভের আগুনে অঙ্গার হওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাই বেশি বলে ধারণা। কারণ তাড়িয়ে ফেরা চিতার চেয়ে নিরীহ মেষের সংখ্যা বরাবরই বেশি থাকে। কাজেই বর্তমান প্রধানমন্ত্রী সর্বদলীয় সরকারের প্রধান থাকলেও পুরনো প্রভাব বলয় কতটা কার্যকর রাখতে পারবেন এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা অমূলক নয়।
বিরোধী দলের পঞ্চশক্তি সরকারি দলের পঞ্চশক্তিকে নিষ্ক্রিয় করলে মাঠে থাকবেন কেবল শেখ হাসিনা। যার শরীরে রাজরক্ত বহমান। একজন রাজরক্তবাহী নারীর পক্ষে প্রজাতন্ত্রের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নির্বাচনে পক্ষপাতিত্বের প্রস্তাব দেয়ার বিষয়টি কতটা বাস্তবসম্মত তা যথেষ্ট ভাবার বিষয়। বরং নিরপেক্ষতার স্টিকারবাহী একজন অপরীক্ষিত তত্ত্বাবধায়কের কাছ থেকে এ ধরনের কুটিল প্রস্তাব আসার আশংকা হেসে উড়িয়ে দেয়া যায় না। তাছাড়া অবাধ মিডিয়ার যুগে একজন নারীর পক্ষে নির্বাচনী ফলাফল উল্টে দেয়ার কাজটি হিমালয় পর্বতকে তর্জনীর ডগায় নিয়ে ঘূর্ণি খেলার মতোই অসম্ভব। কেননা আসন্ন ২০১৪ সালটি ১৯৮৬-এর এক টিভি চ্যানেলীয় সাল নয়। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী ফলাফলের মতো বিভিন্ন কেন্দ্রের ফলাফল যখন বাঁধভাঙা জোয়ারের পানির মতো এসে পড়া শুরু হবে, তখন প্রশাসনে পুরনো তল্পিবাহী কেউ থাকলেও সে যেদিকে বৃষ্টি সেদিকেই ছাতা ধরা শুরু করবে। এ পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়কের জন্য আন্দোলন চালিয়ে জনপ্রিয়তাকে নষ্ট করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে মনে করি না। তাছাড়া দিনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের মনে অনৈতিক চাহিদার মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান সেই সুশীল বাবুটি কুশীল হতে কতক্ষণ? সুযোগ ও পরিমাণের ব্যাট-বলে সংযোগ ঘটানোর জন্য তিনি যে শিংয়ে তেল মেখে কোরবানির হাটে উঠবেন না এ নিশ্চয়তা কে দেবে। কাজেই সরকারি দলের দেয়া সর্বদলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রস্তাবকে প্রত্যাখ্যান করার বিষয়টি বিরোধী দলের জন্য আত্মঘাতী বলেই মনে হয়।
অরবিন্দ রায় : একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কারিগরি পরিচালক
No comments