ডায়াবেটিস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের অর্থনীতি by মোহাম্মদ আবদুল মজিদ
নীরব ঘাতক ডায়াবেটিস সম্পর্কে মানুষকে
সচেতন করার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশন ও বিশ্ব^ স্বাস্থ্য
সংস্থা ১৯৯১ সাল থেকে ১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস হিসেবে পালনের
উদ্যোগ নেয়। ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান সমস্যা ও
সীমাবদ্ধতার প্রতি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ ও সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণে
ঐকমত্য সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ২০০৬ সালে জাতিসংঘকে প্রস্তাব গ্রহণের
আহ্বান জানায়। মূলত বাংলাদেশের প্রস্তাবে ১৪ নভেম্বরকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে
বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস হিসেবে ঘোষণা দিয়ে জাতিসংঘ ২০০৭ সালে ৬১/২২৫নং
প্রস্তাব গ্রহণ করে। সেই থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশ, বিশ্ব ডায়াবেটিক
ফেডারেশনের দুশর অধিক সদস্য সংগঠন, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন ও ডায়াবেটিক
রোগীদের মাঝে বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস প্রাসঙ্গিক প্রতিপাদ্য নিয়ে উদযাপিত
হচ্ছে। ২০০৭ সালেই জাতিসংঘের গৃহীত প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ব ডায়াবেটিক
দিবসের ব্ল– সার্কেল লোগোটিও নির্বাচিত হয়। নীল বৃত্ত জীবন ও স্বাস্থ্যের
ধনাÍক প্রতীক। নীল বৃত্ত বিশ্বব্যাপী ডায়াবেটিক মহামারীকে নিয়ন্ত্রণ ও জয়ে
ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের প্রতীক। এবার বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক করা
হয়েছে- ডায়াবেটিস জটিলতা সম্পর্কে সজাগ হোন। ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে রাখার
ক্ষেত্রে ১৯২১ সালে ফ্রেডারিক ব্যান্টিং (১৮৯১-১৯৪১) ও চার্লস বেস্ট
(১৮৯৯-১৯৭৮) কর্তৃক ইনসুলিনের আবিষ্কার এক যুগান্তকারী অগ্রগতি। এ জন্য
ব্যান্টিং চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন ১৯২৩ সালে। বস্তুত, ১৪
নভেম্বর ফ্রেডারিক ব্যান্টিংয়ের জন্মদিনের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে
বিশ্ব ডায়াবেটিক দিবস হিসেবে গৃহীত হয়েছে।
ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০০৯-২০১৩) মূল প্রতিপাদ্য হল ডায়াবেটিসকে জানা এবং নিয়ন্ত্রণ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ব্যক্তির সজ্ঞান ও আন্তরিক আগ্রহ আবশ্যক বলেই তাকে উদ্বুদ্ধকরণ, সার্বিক সহায়তা প্রদান, চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি এবং উপকরণ সরবরাহ তথা পরিবেশ নির্মাণে বিরাট ভূমিকা রয়েছে সরকার ও সমাজের। কারণ সুস্থ জনশক্তি বা নাগরিকের সুস্বাস্থ্য সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার অন্যতম অবলম্বন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, ২০০০ সালে বিশ্বে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭ কোটি। আশংকা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাবে। প্রাদুর্ভাব ও বিস্তারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উন্নত বিশ্বে টাইপ-২ অর্থাৎ ইনসুলিন নিরপেক্ষ রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি (১৮০%), এরপর আফ্রিকা মহাদেশে (১৬০%), তারপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (১৫৫%) ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। বিশ্বে এ রোগের গড় বিস্তার যেখানে ১১৪%, সেখানে বাংলাদেশে বিস্তারের হার ১৪৯%, যা যথেষ্ট আশংকাজনক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে নগরায়ন, ওয়েস্টার্ন ফুড ও সার্বিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা এ রোগের বিস্তারকে বেগবান করছে। বিশ্ব রোগ নিরাময় কেন্দ্রের মতে, এ শতকের মাঝামাঝি পৌঁছার আগেই এটি মহামারীরূপে দেখা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ডায়াবেটিক তথ্য কেন্দ্রের হিসাব মতে, যুক্তরাষ্ট্রে এ ঘাতকব্যাধি বছরে দেশটির জাতীয় অর্থনীতির অন্তত ১৩২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিসাধন করে।
দীর্ঘদিন ধরে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকলে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। ডায়াবেটিস সাধারণত বংশগত কারণে ও পরিবেশের প্রভাবে হয়। কখনও কখনও অন্যান্য রোগের কারণেও এ রোগ হতে পারে। ডায়াবেটিস একবার হলে আর নিরাময় হয় না। এটা সব সময় ও আজীবনের রোগ। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ রোগকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়- এ ধারণাও সঠিক নয়। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, শৃংখলা এবং ওষুধ এ রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায়। খাদ্যের গুণগত মানের দিকে নজর রেখে পরিমাণ মতো খাদ্য গ্রহণ, জীবনের সবক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন বা শৃংখলা অর্থাৎ কাজেকর্মে, আহারে-বিহারে, চলাফেরায়, এমনকি বিশ্রাম ও নিদ্রায় শৃংখলা মেনে চলা দরকার। নিয়ম-শৃংখলাই ডায়াবেটিস রোগীর জীবনকাঠি। ডায়াবেটিস রোগীকে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলতে হয়। রোগ সম্বন্ধে ব্যাপক শিক্ষা ছাড়া ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। তবে ডায়াবেটিস বিষয়ে শিক্ষা কেবল রোগীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। একই সঙ্গে আÍীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং ডাক্তার ও নার্সদেরও শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। রোগী যদি চিকিৎসকের সঙ্গে সহযোগিতা করে তার উপদেশ ও নির্দেশ ভালোভাবে মেনে চলে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যথাযথভাবে পালন করে, তবে সুখী, কর্মঠ ও দীর্ঘজীবন লাভ করা সম্ভব।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান, চিফ কো-অর্ডিনেটর, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি
ডায়াবেটিক নিয়ন্ত্রণে বিশ্বব্যাপী দ্বিতীয় পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার (২০০৯-২০১৩) মূল প্রতিপাদ্য হল ডায়াবেটিসকে জানা এবং নিয়ন্ত্রণ। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে ব্যক্তির সজ্ঞান ও আন্তরিক আগ্রহ আবশ্যক বলেই তাকে উদ্বুদ্ধকরণ, সার্বিক সহায়তা প্রদান, চিকিৎসার সুযোগ সৃষ্টি এবং উপকরণ সরবরাহ তথা পরিবেশ নির্মাণে বিরাট ভূমিকা রয়েছে সরকার ও সমাজের। কারণ সুস্থ জনশক্তি বা নাগরিকের সুস্বাস্থ্য সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনার অন্যতম অবলম্বন।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব মতে, ২০০০ সালে বিশ্বে ডায়বেটিস রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৭ কোটি। আশংকা করা হচ্ছে, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে যাবে। প্রাদুর্ভাব ও বিস্তারের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, উন্নত বিশ্বে টাইপ-২ অর্থাৎ ইনসুলিন নিরপেক্ষ রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ২০৩০ সালের মধ্যে পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় দেশগুলোয় সবচেয়ে বেশি (১৮০%), এরপর আফ্রিকা মহাদেশে (১৬০%), তারপর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় (১৫৫%) ডায়াবেটিসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার আশংকা রয়েছে। বিশ্বে এ রোগের গড় বিস্তার যেখানে ১১৪%, সেখানে বাংলাদেশে বিস্তারের হার ১৪৯%, যা যথেষ্ট আশংকাজনক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে নগরায়ন, ওয়েস্টার্ন ফুড ও সার্বিক পরিবেশের ভারসাম্যহীনতা এ রোগের বিস্তারকে বেগবান করছে। বিশ্ব রোগ নিরাময় কেন্দ্রের মতে, এ শতকের মাঝামাঝি পৌঁছার আগেই এটি মহামারীরূপে দেখা দেবে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় ডায়াবেটিক তথ্য কেন্দ্রের হিসাব মতে, যুক্তরাষ্ট্রে এ ঘাতকব্যাধি বছরে দেশটির জাতীয় অর্থনীতির অন্তত ১৩২ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিসাধন করে।
দীর্ঘদিন ধরে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি থাকলে ডায়াবেটিস দেখা দেয়। ডায়াবেটিস সাধারণত বংশগত কারণে ও পরিবেশের প্রভাবে হয়। কখনও কখনও অন্যান্য রোগের কারণেও এ রোগ হতে পারে। ডায়াবেটিস একবার হলে আর নিরাময় হয় না। এটা সব সময় ও আজীবনের রোগ। তবে আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করে এ রোগকে ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখা এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা সম্ভব।
ডায়াবেটিস ছোঁয়াচে বা সংক্রামক রোগ নয়। বেশি মিষ্টি খেলে ডায়াবেটিস হয়- এ ধারণাও সঠিক নয়। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, শৃংখলা এবং ওষুধ এ রোগ নিয়ন্ত্রণের উপায়। খাদ্যের গুণগত মানের দিকে নজর রেখে পরিমাণ মতো খাদ্য গ্রহণ, জীবনের সবক্ষেত্রে নিয়ম-কানুন বা শৃংখলা অর্থাৎ কাজেকর্মে, আহারে-বিহারে, চলাফেরায়, এমনকি বিশ্রাম ও নিদ্রায় শৃংখলা মেনে চলা দরকার। নিয়ম-শৃংখলাই ডায়াবেটিস রোগীর জীবনকাঠি। ডায়াবেটিস রোগীকে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব গ্রহণ এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খাদ্য নিয়ন্ত্রণ ও নিয়ম-শৃংখলা মেনে চলতে হয়। রোগ সম্বন্ধে ব্যাপক শিক্ষা ছাড়া ডায়াবেটিসের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের চিকিৎসায় আশানুরূপ ফল পাওয়া যায় না। তবে ডায়াবেটিস বিষয়ে শিক্ষা কেবল রোগীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। একই সঙ্গে আÍীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং ডাক্তার ও নার্সদেরও শিক্ষার প্রয়োজন রয়েছে। রোগী যদি চিকিৎসকের সঙ্গে সহযোগিতা করে তার উপদেশ ও নির্দেশ ভালোভাবে মেনে চলে এবং রোগ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা যথাযথভাবে পালন করে, তবে সুখী, কর্মঠ ও দীর্ঘজীবন লাভ করা সম্ভব।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ : সাবেক সচিব ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান, চিফ কো-অর্ডিনেটর, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি
No comments