মার্কিন কংগ্রেসের উদ্বেগ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস এবং ইউরোপীয় পার্লামেন্ট (ইইউ) একই দিনে যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, তা কার্যত শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সর্বদলীয় মন্ত্রিসভার প্রতি একটি অনাস্থার বহিঃপ্রকাশ। আমাদের সংসদ ও সরকার নিষ্ক্রিয় না থাকলে দুটি বিদেশি সংসদের সক্রিয় হওয়ার সুযোগই থাকত না। এর কারণ, প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে কোনো ধরনের আলাপ-আলোচনায় না গিয়ে শেখ হাসিনা একতরফাভাবে একটি মন্ত্রিসভা করে প্রকারান্তরে একতরফা নির্বাচনের পথে পা বাড়িয়েছেন। ফলে সংকট ঘনীভূত হয়েছে। বিএনপি ও তার মিত্ররা ওই সরকারে যোগদানে ন্যূনতম আগ্রহ দেখায়নি। উপরন্তু দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর হাতে ক্ষমতা আরও কুক্ষিগত হয়েছে। নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ স্বরাষ্ট্র এবং আইন ও বিচার নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর সরাসরি করতলগত হয়েছে।
এতে অবস্থার আরও এক ধাপ অবনতি ঘটেছে। যেকোনো দেশের উদ্বেগজনক পরিস্থিতি সম্পর্কে মার্কিন কংগ্রেস বরাবরই এ রকম শুনানি করে আসছে। বাংলাদেশ নিয়েও শুনানি নতুন নয়। যদিও প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম কংগ্রেসের শুনানির উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ইঙ্গিত করেছেন, জামায়াত পয়সা খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করে এ শুনানি করিয়ে থাকতে পারে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে নিক্সন-কিসিঞ্জারের ভূমিকা সমালোচিত হয়েছিল। ক্ষমতাসীনদের উচিত হবে এর প্রক্রিয়ার দিকে না তাকিয়ে সারবত্তার প্রতি মনোযোগ দেওয়া। কংগ্রেসের পররাষ্ট্রবিষয়ক উপকমিটির চেয়ারম্যান এড রয়েস পাকিস্তানের পরিস্থিতির সঙ্গে বাংলাদেশের পরিস্থিতির কোনো সাযুজ্য আছে কি না, তা জানতে চান। তিনি মন্তব্য করেন পাকিস্তানের সমস্যা অঙ্কুরে বিনষ্ট করা যায়নি বলেই গভীর হয়েছে। আশা করব, এড রয়েস যে কথা পরিষ্কার করে উচ্চারণ করেননি, তার নিহিতার্থ আমাদের নেতারা, বিশেষ করে বিরোধীদলীয় নেতা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন।
কারণ, মৌলবাদ ও জঙ্গি দমনে তাঁর কৌশল কী হবে, তা তিনি এখনো খুব স্পষ্ট বা নির্দিষ্ট করেননি। কংগ্রেসের শুনানিতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও মাদ্রাসাশিক্ষা নিয়েও আলোচনা হয়। সম্ভাব্য সেনা হস্তক্ষেপ সম্পর্কেও সেখানে কথা হয়েছে। প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল বলেছেন, ‘সহিংসতা চলতে থাকলে’ তাদের ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও’ সে সম্ভাবনা নাকচ করেননি। এ ধরনের ইঙ্গিত প্রায়শ উচ্চারিত হয়ে থাকে। কিন্তু এটাকে দরকার একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক করে তোলা। আর সে জন্য এখনই সংলাপ শুরু করতে হবে। ইইউ বিরোধী দলকে নির্বাচন বর্জন না করতে বলেছে। তারা লক্ষণীয়ভাবে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে রাষ্ট্র ও মানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে দুই মেয়াদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা চলতে পারার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। আর ইসিকে বলেছে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ উপায়ে নির্বাচন পরিচালনা ও তদারকির ব্যবস্থা করতে। তাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে বিরোধী দলকে ফেলে সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও অহিংস নির্বাচন বাংলাদেশে বাস্তবে সম্ভব কি না? অবশ্যই সংলাপ লাগবে। সেটা শুরুর প্রাথমিক দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।
No comments