রাশিয়া যেভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে by আসিফ রশীদ
এই
লেখাটিকে আমার আগের দুটি নিবন্ধের (‘সিরিয়া সংকট থেকে নতুন স্নায়ুযুদ্ধ?’,
৩ সেপ্টেম্বর এবং ‘যুক্তরাষ্ট্র কেন পিছু হটল’, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৩)
ধারাবাহিকতায় পরবর্তী অংশ বলা যেতে পারে। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি
রাশিয়া আবার পরাশক্তি হিসেবে আÍপ্রকাশ করেছে এবং এর ফলে বিশ্ব ব্যবস্থায়
আবার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি ফিরে আসছে অথবা বলা যায় ইতিমধ্যেই ফিরে
এসেছে। এ তিনটি লেখায় সে বিষয়টিই স্পষ্ট করার চেষ্টা করেছি। সোভিয়েত
ইউনিয়নের ভাঙন এবং স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের পর নব্বইয়ের দশকের বেশিরভাগ সময়
রুশ নীতিনির্ধারকরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় সামাল দিতেই ব্যস্ত
ছিলেন। প্রকৃতপক্ষে সেই সময়টা ছিল রাশিয়ার জন্য একটি সন্ধিক্ষণ। বিশ্বের
মোড় ফেরানো ওই ঘটনায় দেশটির যেসব খাত সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের সম্মুখীন
হয়েছিল, প্রতিরক্ষা ছিল তার অন্যতম। সে সময় রুশ সরকারের জন্য এ বিভাগের
শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। বিচ্ছিন্ন বা
স্বাধীন হয়ে যাওয়া সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলোয় অবস্থিত সামরিক
ঘাঁটিগুলো পরিত্যক্ত হয়ে গিয়েছিল। সামরিক বাহিনীতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা
হয়ে পড়েছিল সংকুচিত। গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সরঞ্জামগুলো দীর্ঘদিন অব্যবহৃত
অবস্থায় পড়ে থাকায় তাতে মরচে ধরতে থাকে। সব মিলিয়ে রাশিয়ার সামরিক অভিযান
চালানোর প্রস্তুতি সর্বনিু পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল। এমন এক পরিস্থিতিতে
ক্রেমলিনের হর্তাকর্তা হয়ে আসেন ভাদিমির পুতিন। তিনি প্রেসিডেন্টের
দায়িত্বভার হাতে নেয়ার পর রাশিয়ার সামরিক সক্ষমতা পুনরুদ্ধারে দৃষ্টি দেন।
তার শাসনামলের প্রথম ১০ বছরে রাশিয়ার সামরিক বাজেট তিনগুণ বাড়ানো হয়। এ
ধারা এখনো অব্যাহত আছে। স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইন্সটিটিউটের
হিসাব মতে, বর্তমানে সামরিক খাতে রাশিয়ার বাজেট দেশটির জিডিপির ৪.৪ শতাংশ।
অংকের হিসাবে যার পরিমাণ ৯ হাজার কোটি মার্কিন ডলারেরও বেশি। বস্তুত,
ক্রেমলিনে বরিস ইয়েলৎসিন যুগের অবসানের পর এক দশকেরও বেশি সময় প্রেসিডেন্ট
থাকাকালে, এমনকি দিমিত্রি মেদভেদেভ যে সময়টিতে প্রেসিডেন্টের পদে আসীন
ছিলেন সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও ভাদিমির পুতিন
অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ও দৃঢ়তার সঙ্গে এমন একটি নীতি অনুসরণ করেছেন, যাকে
অনায়াসেই ‘পুতিন ডকট্রিন’ বলা যেতে পারে। বর্তমানে আবার প্রেসিডেন্ট পদে
থেকে তিনি সেই একই নীতি অনুসরণ করে চলেছেন। প্রকৃতপক্ষে পুতিন চাচ্ছেন
সামরিক ও কূটনৈতিক প্রয়াস জোরদার করার মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক
রাজনীতিতে মস্কোর মর্যাদা ও প্রভাব পুনরুদ্ধার করতে। মোদ্দা কথা, রাশিয়াকে
আবারও বিশ্বের অন্যতম প্রধান শক্তিতে পরিণত করতে চান তিনি। এ লক্ষ্য
অর্জনের জন্য তিনি প্রধানত তিনটি পথ অবলম্বন করেছেন- যা যুক্তরাষ্ট্রের
স্বার্থের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে, এমনকি কখনো কখনো মার্কিন স্বার্থ
নস্যাৎও করে দিয়েছে।
প্রথমত, পুতিন রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদ- প্রাথমিকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও অপরিশোধিত তেল থেকে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ব্যবহার করে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপকভিত্তিক পুনর্গঠনে মনোযোগী হয়েছেন। দ্বিতীয়ত, পুতিন যেসব মার্কিন পদক্ষেপকে রাশিয়ার স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর মনে করেছেন, সেগুলো ব্যর্থ করে দিতে বা সেগুলোতে বিঘœ সৃষ্টি করতে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক প্লাটফরমকে ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের আগে সাদ্দাম সরকারের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগে জাতিসংঘের অনুমোদন লাভের জন্য একটি মার্কিন প্রস্তাব রাশিয়া সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থ করে দেয়। ফলে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য বিশ্বব্যাপী এমনকি নিজ দেশের জনগণের কাছেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ব্যাপকভাবে নিন্দিত হন। বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ‘সীমিত আকারে শাস্তিমূলক হামলা’ চালানোর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আন্তর্জাতিক অনুমোদন লাভের চেষ্টা করছেন, তখনও রাশিয়া তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে যাচ্ছে সক্রিয়ভাবে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থায় (আইএইএ) ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার সময়ও রাশিয়া একই ধরনের আচরণ করছে।
তৃতীয়ত, পুতিন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কতগুলো রাষ্ট্রকে নিজ পক্ষে নিয়ে এক ধরনের সংঘ তৈরি করেছেন, যারা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মৌলিক বিষয়গুলোয় অভিন্ন মার্কিনবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। যেমন ওবামার পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য ব্যর্থ করে দেয়ার ক্ষেত্রে চীন পরিণত হয়েছে রাশিয়ার প্রধান মিত্রে। ইরান বা সিরিয়ার ক্ষেত্রেই হোক কিংবা ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে হোক অথবা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের ক্ষেত্রে হোক- যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার প্রশ্ন এলেই রাশিয়া আর চীন হয়ে গেছে একাট্টা। এ দুটি দেশই নিজ নিজ শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত, নিশ্চিতভাবেই যার উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অত্যধিক ক্ষমতা ও রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বকে খর্ব করা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে কূটনৈতিক বিভেদ সৃষ্টিরও চেষ্টা করেছেন পুতিন। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি জার্মান চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাকের সঙ্গে বহুবার সাক্ষাৎ করেছেন জাতিসংঘের ভেতরে ও বাইরে, তাদের যুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। পুতিনের সন্তুষ্টির জন্য আস্থা তৈরির পদক্ষেপ হিসেবে তিনি পূর্ব ইওরোপে ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনসহ কিছু বিতর্কিত পরিকল্পনা বাতিল বা স্থগিত করেন। তবে এসব মার্কিন প্রয়াসকে অকার্যকর করে দেয় পুতিন ডকট্রিন। পুতিন বিশ্বাস করেন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অবক্ষয় ঘটছে এবং দেশটির সামাজিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ছে। বস্তুত, সিরিয়া প্রশ্নে রাশিয়ার ক্ষমতা ও প্রভাব যখন বাড়ছে তখন এ ইস্যুতে মার্কিন জনগণ ও কংগ্রেসের সতর্ক মনোভাব দেখে পুতিন মনে করছেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতার লক্ষণ।
সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণাধীনে আনার ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনে পুতিন যে কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে রাশিয়ার সম্পৃক্ততা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়ারও কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, সিরিয়ার ক্ষেত্রে পুতিনের এ উদ্যোগ হোয়াইট হাউস, কংগ্রেস ও মার্কিন জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির একটি প্রয়াস। এ ধারণা সত্য হলে এক্ষেত্রেও পুতিন সফল হয়েছেন বলা যায়। সিরিয়ার বাশার সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এবং ওবামাকে প্রথমবারের মতো সেদিক থেকে পিছু হটতে বাধ্য করে পুতিন তার ব্যক্তিগত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও মার্কিন বিরোধিতার ইচ্ছাই ব্যক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে সম্ভবত ইরানের ক্ষেত্রেও আমরা এই পুতিন ডকট্রিনের কার্যকারিতা দেখতে পাব। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছে দু’দশকেরও বেশি আগে। ইতিমধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু বৈশিষ্ট্য পুনরুদ্ধার করেছেন ভাদিমির পুতিন। এ ধারা বজায় থাকলে বিশ্বে নিশ্চিতভাবেই আবারও শক্তির ভারসাম্য ফিরে আসবে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্যের বিপরীতে রাশিয়ার এ উত্থানকে উন্নয়নশীল বিশ্বের বিশেষ করে দুর্বল দেশগুলোর সরকার ও সাধারণ মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখবে।
আসিফ রশীদ : সাংবাদিক ও লেখক
প্রথমত, পুতিন রাশিয়ার জ্বালানি সম্পদ- প্রাথমিকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস ও অপরিশোধিত তেল থেকে ক্রমবর্ধমান রাজস্ব ব্যবহার করে দেশটির সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপকভিত্তিক পুনর্গঠনে মনোযোগী হয়েছেন। দ্বিতীয়ত, পুতিন যেসব মার্কিন পদক্ষেপকে রাশিয়ার স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর মনে করেছেন, সেগুলো ব্যর্থ করে দিতে বা সেগুলোতে বিঘœ সৃষ্টি করতে বেশ কিছু প্রাতিষ্ঠানিক প্লাটফরমকে ব্যবহার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের আগে সাদ্দাম সরকারের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগে জাতিসংঘের অনুমোদন লাভের জন্য একটি মার্কিন প্রস্তাব রাশিয়া সাফল্যের সঙ্গে ব্যর্থ করে দেয়। ফলে জাতিসংঘকে পাশ কাটিয়ে ইরাকে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য বিশ্বব্যাপী এমনকি নিজ দেশের জনগণের কাছেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ব্যাপকভাবে নিন্দিত হন। বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা যখন সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ‘সীমিত আকারে শাস্তিমূলক হামলা’ চালানোর জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আন্তর্জাতিক অনুমোদন লাভের চেষ্টা করছেন, তখনও রাশিয়া তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে যাচ্ছে সক্রিয়ভাবে। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থায় (আইএইএ) ইরানের পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার সময়ও রাশিয়া একই ধরনের আচরণ করছে।
তৃতীয়ত, পুতিন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে কতগুলো রাষ্ট্রকে নিজ পক্ষে নিয়ে এক ধরনের সংঘ তৈরি করেছেন, যারা আন্তর্জাতিক ব্যবস্থার মৌলিক বিষয়গুলোয় অভিন্ন মার্কিনবিরোধী মনোভাব পোষণ করে। যেমন ওবামার পররাষ্ট্রনীতির লক্ষ্য ব্যর্থ করে দেয়ার ক্ষেত্রে চীন পরিণত হয়েছে রাশিয়ার প্রধান মিত্রে। ইরান বা সিরিয়ার ক্ষেত্রেই হোক কিংবা ২০০৯ সালে কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত জলবায়ু সম্মেলনে হোক অথবা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের ক্ষেত্রে হোক- যুক্তরাষ্ট্রের বিরোধিতার প্রশ্ন এলেই রাশিয়া আর চীন হয়ে গেছে একাট্টা। এ দুটি দেশই নিজ নিজ শক্তি বৃদ্ধির মাধ্যমে বহুমেরুকেন্দ্রিক বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত, নিশ্চিতভাবেই যার উদ্দেশ্য যুক্তরাষ্ট্রের অত্যধিক ক্ষমতা ও রাজনৈতিক শ্রেষ্ঠত্বকে খর্ব করা। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মধ্যে কূটনৈতিক বিভেদ সৃষ্টিরও চেষ্টা করেছেন পুতিন। উদাহরণস্বরূপ, ২০০৩ সালে ইরাক যুদ্ধের সময় তিনি জার্মান চ্যান্সেলর গেরহার্ড শ্রোয়েডার এবং ফরাসি প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাকের সঙ্গে বহুবার সাক্ষাৎ করেছেন জাতিসংঘের ভেতরে ও বাইরে, তাদের যুদ্ধবিরোধী কার্যক্রম সমন্বয়ের জন্য। বারাক ওবামা প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর ওয়াশিংটন ও মস্কোর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের একটা চেষ্টা চালিয়েছিলেন। পুতিনের সন্তুষ্টির জন্য আস্থা তৈরির পদক্ষেপ হিসেবে তিনি পূর্ব ইওরোপে ক্ষেপণাস্ত্র স্থাপনসহ কিছু বিতর্কিত পরিকল্পনা বাতিল বা স্থগিত করেন। তবে এসব মার্কিন প্রয়াসকে অকার্যকর করে দেয় পুতিন ডকট্রিন। পুতিন বিশ্বাস করেন, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অবক্ষয় ঘটছে এবং দেশটির সামাজিক ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়ছে। বস্তুত, সিরিয়া প্রশ্নে রাশিয়ার ক্ষমতা ও প্রভাব যখন বাড়ছে তখন এ ইস্যুতে মার্কিন জনগণ ও কংগ্রেসের সতর্ক মনোভাব দেখে পুতিন মনে করছেন, এটা যুক্তরাষ্ট্রের দুর্বলতা ও সিদ্ধান্তহীনতার লক্ষণ।
সিরিয়ার রাসায়নিক অস্ত্র আন্তর্জাতিক নিয়ন্ত্রণাধীনে আনার ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালনে পুতিন যে কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন, তা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে রাশিয়ার সম্পৃক্ততা পুনরুদ্ধারে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়। এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো রাশিয়ারও কৌশলগত স্বার্থ রয়েছে। অনেক পর্যবেক্ষক মনে করেন, সিরিয়ার ক্ষেত্রে পুতিনের এ উদ্যোগ হোয়াইট হাউস, কংগ্রেস ও মার্কিন জনগণের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির একটি প্রয়াস। এ ধারণা সত্য হলে এক্ষেত্রেও পুতিন সফল হয়েছেন বলা যায়। সিরিয়ার বাশার সরকারের পক্ষে অবস্থান নিয়ে এবং ওবামাকে প্রথমবারের মতো সেদিক থেকে পিছু হটতে বাধ্য করে পুতিন তার ব্যক্তিগত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও মার্কিন বিরোধিতার ইচ্ছাই ব্যক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে সম্ভবত ইরানের ক্ষেত্রেও আমরা এই পুতিন ডকট্রিনের কার্যকারিতা দেখতে পাব। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়েছে দু’দশকেরও বেশি আগে। ইতিমধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নের কিছু বৈশিষ্ট্য পুনরুদ্ধার করেছেন ভাদিমির পুতিন। এ ধারা বজায় থাকলে বিশ্বে নিশ্চিতভাবেই আবারও শক্তির ভারসাম্য ফিরে আসবে। বিশ্বব্যাপী মার্কিন আধিপত্যের বিপরীতে রাশিয়ার এ উত্থানকে উন্নয়নশীল বিশ্বের বিশেষ করে দুর্বল দেশগুলোর সরকার ও সাধারণ মানুষ ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখবে।
আসিফ রশীদ : সাংবাদিক ও লেখক
No comments