শাহবাগ স্কয়ারের আন্দোলন নিয়ে তসলিমার ভিন্নমত
শাহবাগ স্কয়ারে তরুণ প্রজন্মের আন্দোলন
নিয়ে খোলামেলা মত প্রকাশ করেছেন বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তার নিজের
ফ্রিথট ব্লগে ‘শাহবাগ ইজ নিউ তাহরির স্কয়ার’ শীর্ষক লেখায় তিনি লিখেছেন,
আরব
বসন্তের পর তাহরির অভ্যুত্থানে মিশরের ক্ষমতার মঞ্চে আবির্ভূত হয় মুসলিম
ব্রাদারহুড এবং ইসলামপন্থিরা। বাংলাদেশের শাহবাগও এখন ক্ষুদ্র তাহরির
স্কয়ার। যুদ্ধাপরাধী আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে জড়ো
হচ্ছে ফেসবুক ও টুইটার প্রজন্ম। ৪০ বছরেরও বেশি সময় আগে মুক্তিযুদ্ধ
চলাকালে কাদের মোল্লা ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত ছিল। এ যুদ্ধাপরাধীর যাবজ্জীবন
কারাদণ্ড হয়েছে। কিন্তু শাহবাগের জনতা এতে সন্তুষ্ট নন। তারা তার
মৃত্যুদণ্ড চাইছেন। এখানে আরও মানুষ জড়ো হচ্ছেন। শাহবাগ সব যুদ্ধাপরাধীরই
ফাঁসি দাবি করছে। এটা সত্য সব যুদ্ধাপরাধীই ইসলামপন্থি। তারা ইসলামী
রাষ্ট্র পাকিস্তান থেকে আলাদা হতে চায়নি।
একজন বৃদ্ধ ইসলামপন্থি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে অনড় শাহবাগের জনতা। কিন্তু তরুণ ইসলামপন্থিদের ব্যাপারে তারা কি করছে? শাহবাগের জনতা এটা স্পষ্ট করে বলেছে, তারা ইসলাম বা ইসলামপন্থিদের বিপক্ষে নন, তারা ১৯৭১ সালের খুনি, ধর্ষক ও অপরাধীদের বিপক্ষে। তাহরির স্কয়ারের জনতা মোবারকের বিপক্ষে ছিলেন, তারা ইসলামের বিপক্ষে ছিলেন না। শাহবাগের জনতাও যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে, ইসলামের বিপক্ষে নন।
১৯৯৪ সালে আমার ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশের চার লাখ লোক রাস্তায় জড়ো হয়েছিল। আজকের শাহবাগের জনতা থেকে তারা সংখ্যায় বেশি ছিল। গত ২০ বছরে ইসলামপন্থিদের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি ইসলামপন্থিরা শাহবাগের চেয়ে এক শ’ গুণ বেশি লোক জড়ো করতে সক্ষম। ফেসবুক, টুইটার অথবা ব্লগ ব্যবহারকারীদের চেয়ে বেশি লোক মাদরাসায় যায়। ইসলামপন্থিদের দ্বারা বেশি লোকের মগজ ধোলাই হয়েছে। আগের চেয়ে বেশি লোক এখন মসজিদে যায়। বহু বছর আগেই বাংলাদেশকে নিয়ে আমি আমার আশা ত্যাগ করেছি। তবে এখন আমি নতুনভাবে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি, অন্তত তরুণ প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে তাদের প্রতি- যারা ধর্ষক ও গণহত্যাকারী, যাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছে এবং যাদের ক্ষমতায়িত করেছেন অযোগ্য রাজনীতিবিদ ও সামরিক শাসকেরা। আমি শাহবাগের তরুণদের প্রতি সহানুভূতিশীল কিন্তু কারও সর্বোচ্চ শাস্তি আমি সমর্থন করি না। সে আমার যত বড় শত্রুই হোক না কেন, সে যত বড় অপরাধই করুক না কেন? প্রত্যেকেরই বাঁচার অধিকার রয়েছে। শাহবাগের অভ্যুত্থানকারীদের একজনকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কাদের মোল্লার বয়স এখন ৬৪। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগের সময় কারাগারেই সে মৃত্যুবরণ করবে। কেন তোমরা তার মৃত্যুদণ্ড চাও? সে বলেছে, পরবর্তী সরকার তাকে মুক্তি দিয়ে দেবে। আমি তাকে বলেছি, এখনকার মতো তখন তোমরা প্রতিবাদ করবে। তখন দ্বিতীয় শাহবাগ হবে। সে আমার যুক্তি পছন্দ করেনি। সে আমাকে গালমন্দ করেছে।
ইসলামপন্থি অথবা যুদ্ধাপরাধীরা যদি কাউকে হত্যা করতে চায় তবে তারা আমাকেই হত্যা করবে, শাহবাগের জনতাকে নয়। তারা জানে কে তাদের সত্যিকার শত্রু। আমি সব ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদ, যুদ্ধাপরাধীর বিপক্ষে। কিন্তু আমি মৃত্যুদণ্ডেরও বিপক্ষে। ইসলামবাদ, দুর্নীতিপরায়ণ এবং অসভ্য একটি দেশের নাগরিক এক বৃদ্ধ লোকের মৃত্যুদণ্ডের জন্য ক্ষেপে উঠেছে। কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীকে হত্যা করেও তোমরা তোমাদের সত্যিকার শত্রু দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, দুর্নীতি, ইসলামবাদ থেকে মুক্তি পাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের সত্যিকার শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে না পারো ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কোন বিপ্লবই সত্যিকার বিপ্লব হবে না। (ব্লগের ঠিকানা: http://freethoughblogs.com/taslima/)
একজন বৃদ্ধ ইসলামপন্থি যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির দাবিতে অনড় শাহবাগের জনতা। কিন্তু তরুণ ইসলামপন্থিদের ব্যাপারে তারা কি করছে? শাহবাগের জনতা এটা স্পষ্ট করে বলেছে, তারা ইসলাম বা ইসলামপন্থিদের বিপক্ষে নন, তারা ১৯৭১ সালের খুনি, ধর্ষক ও অপরাধীদের বিপক্ষে। তাহরির স্কয়ারের জনতা মোবারকের বিপক্ষে ছিলেন, তারা ইসলামের বিপক্ষে ছিলেন না। শাহবাগের জনতাও যুদ্ধাপরাধীদের বিপক্ষে, ইসলামের বিপক্ষে নন।
১৯৯৪ সালে আমার ফাঁসির দাবিতে বাংলাদেশের চার লাখ লোক রাস্তায় জড়ো হয়েছিল। আজকের শাহবাগের জনতা থেকে তারা সংখ্যায় বেশি ছিল। গত ২০ বছরে ইসলামপন্থিদের ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি বিশ্বাস করি ইসলামপন্থিরা শাহবাগের চেয়ে এক শ’ গুণ বেশি লোক জড়ো করতে সক্ষম। ফেসবুক, টুইটার অথবা ব্লগ ব্যবহারকারীদের চেয়ে বেশি লোক মাদরাসায় যায়। ইসলামপন্থিদের দ্বারা বেশি লোকের মগজ ধোলাই হয়েছে। আগের চেয়ে বেশি লোক এখন মসজিদে যায়। বহু বছর আগেই বাংলাদেশকে নিয়ে আমি আমার আশা ত্যাগ করেছি। তবে এখন আমি নতুনভাবে আশার আলো দেখতে পাচ্ছি, অন্তত তরুণ প্রজন্ম যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছে তাদের প্রতি- যারা ধর্ষক ও গণহত্যাকারী, যাদেরকে ক্ষমা করা হয়েছে এবং যাদের ক্ষমতায়িত করেছেন অযোগ্য রাজনীতিবিদ ও সামরিক শাসকেরা। আমি শাহবাগের তরুণদের প্রতি সহানুভূতিশীল কিন্তু কারও সর্বোচ্চ শাস্তি আমি সমর্থন করি না। সে আমার যত বড় শত্রুই হোক না কেন, সে যত বড় অপরাধই করুক না কেন? প্রত্যেকেরই বাঁচার অধিকার রয়েছে। শাহবাগের অভ্যুত্থানকারীদের একজনকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কাদের মোল্লার বয়স এখন ৬৪। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগের সময় কারাগারেই সে মৃত্যুবরণ করবে। কেন তোমরা তার মৃত্যুদণ্ড চাও? সে বলেছে, পরবর্তী সরকার তাকে মুক্তি দিয়ে দেবে। আমি তাকে বলেছি, এখনকার মতো তখন তোমরা প্রতিবাদ করবে। তখন দ্বিতীয় শাহবাগ হবে। সে আমার যুক্তি পছন্দ করেনি। সে আমাকে গালমন্দ করেছে।
ইসলামপন্থি অথবা যুদ্ধাপরাধীরা যদি কাউকে হত্যা করতে চায় তবে তারা আমাকেই হত্যা করবে, শাহবাগের জনতাকে নয়। তারা জানে কে তাদের সত্যিকার শত্রু। আমি সব ধরনের ধর্মীয় মৌলবাদ, যুদ্ধাপরাধীর বিপক্ষে। কিন্তু আমি মৃত্যুদণ্ডেরও বিপক্ষে। ইসলামবাদ, দুর্নীতিপরায়ণ এবং অসভ্য একটি দেশের নাগরিক এক বৃদ্ধ লোকের মৃত্যুদণ্ডের জন্য ক্ষেপে উঠেছে। কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীকে হত্যা করেও তোমরা তোমাদের সত্যিকার শত্রু দারিদ্র্য, নিরক্ষরতা, অজ্ঞতা, দুর্নীতি, ইসলামবাদ থেকে মুক্তি পাবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত তোমরা তোমাদের সত্যিকার শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে না পারো ততক্ষণ পর্যন্ত তোমাদের কোন বিপ্লবই সত্যিকার বিপ্লব হবে না। (ব্লগের ঠিকানা: http://freethoughblogs.com/taslima/)
No comments