প্রয়োজন মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে চাপে রাখা
মিয়ানমারে
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ভয়াবহ ট্রাজেডির বিষয়টি অনুধাবনের দাবি রাখে। এরই
মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বেশকিছু
শীর্ষ কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে অবরোধ দিয়েছে। পাশাপাশি
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চালানো নৃশংসতার জন্য দায়ী সরকারি কর্মকর্তা ও
কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করছে।
কালবিলম্ব না করে এটা করা উচিত। মুসলিম সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায়ের ওপর
চালানো পাশবিক নিষ্পেষণের ফলে এরই মধ্যে মিয়ানমার ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন
কমপক্ষে ছয় লাখ রোহিঙ্গা। এর মধ্য দিয়ে তাদের ওপর নেমে এসেছে ভয়াবহ
দুর্ভোগ।
প্রতিবেশী বাংলাদেশের সম্পদে (রিসোর্সেস) ও ধৈর্য্যে টান পড়েছে। তারপরও আরো রোহিঙ্গা আসছেই।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যাটির শিকড় এতটাই গভীরে যে, দৃশ্যত শুধু কঠোর অবরোধ দিয়ে এই নিষ্পেষণ থামানোর সুযোগ খুবই কম। নিউ ইয়র্ক টাইমসে হান্নাহ বিচ যেভাবে খোলামেলা রিপোর্ট করেছেন, তাতে দেখা গেছে মিয়ানমারের সব মানুষই দৃশ্যত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে তা হলো তারা অবৈধ, সহিংস, দ্রুত বর্ধনশীল আগন্তুক। যদিও তারা রাখাইনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বসবাস করে আসছে, তাও তাদের বিষয়ে সার্বিকভাবে এমনই ধারণা মিয়ানমারে।
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে এ বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থা প্রামাণ্য রিপোর্ট উপস্থাপন করেছে। তবে এমন রিপোর্টকে বিদেশের শত্রুতাপূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা হিসেবে দাবি করে মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করে আসছে। আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) নামের বিদ্রোহী সংগঠন সীমান্ত পোস্টে হামলা চালানোর ফলে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিশোধমূলক সেনা অভিযান এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, জাতিসংঘ একে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সম্প্রতি মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্টে বলেছে, তারা স্যাটেলাইটে ২৮৮টি রোহিঙ্গা গ্রামের ছবি ধারণ করেছে। এসব গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ হতাশাগ্রস্ত। তারাই এক সময় সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বীরের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অং সান সুচিকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু সেই সুচিই এখন রহস্যে ফেলে দিয়েছেন। কেন এত বিপুল সংখ্যক মুসলিম পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছেন- এমন কথা বলে তিনি রহস্য সৃষ্টি করছেন। এটা তর্কসাপেক্ষ ব্যাপার, যে সরকারের নিরাপত্তা ও সিভিল সার্ভিসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখনো রয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে সেই সরকারের শীর্ষ বেসামরিক কর্মকর্তা হলেন অং সান সুচি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করার ক্ষমতা তার নেই। এর মধ্য দিয়ে সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে গণতান্ত্রিক শাসনের পথে উদার অগ্রযাত্রা ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়া গেছে যে, মঙ্গলবার বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অং সান সুচি একমত হয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া বন্ধ করতে এবং রাখাইন প্রদেশে তাদের বসতিতে ফিরে যেতে স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করতে কাজ করবে দু’দেশ।
এটা হতে পারে একটি ভালো আইডিয়া। কিন্তু এ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের রাজি করাতে হবে বা তাদেরকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, তারা দেশে ফিরে গেলে প্রকৃতপক্ষেই তাদের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ বন্ধ হবে। এ কাজটি শুধুমাত্র মিয়ানমারের জেনারেলরাই করতে পারেন। রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করতে হবে যে, তাদেরকে একপেশে করে রাখা, নিষ্পেষণ ও তাদের বিরুদ্ধে ভীতি সৃষ্টি করা হলে তার প্রেক্ষিতে সরাসরি ও গুরুতর শাস্তি দেয়া হবে।
(২৫শে অক্টোবর নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয়’র অনুবাদ)
প্রতিবেশী বাংলাদেশের সম্পদে (রিসোর্সেস) ও ধৈর্য্যে টান পড়েছে। তারপরও আরো রোহিঙ্গা আসছেই।
বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারে রোহিঙ্গা সমস্যাটির শিকড় এতটাই গভীরে যে, দৃশ্যত শুধু কঠোর অবরোধ দিয়ে এই নিষ্পেষণ থামানোর সুযোগ খুবই কম। নিউ ইয়র্ক টাইমসে হান্নাহ বিচ যেভাবে খোলামেলা রিপোর্ট করেছেন, তাতে দেখা গেছে মিয়ানমারের সব মানুষই দৃশ্যত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে যে দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে তা হলো তারা অবৈধ, সহিংস, দ্রুত বর্ধনশীল আগন্তুক। যদিও তারা রাখাইনে প্রজন্মের পর প্রজন্ম বসবাস করে আসছে, তাও তাদের বিষয়ে সার্বিকভাবে এমনই ধারণা মিয়ানমারে।
মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলে রাখাইনে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা, গণধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ চালাচ্ছে এ বিষয়ে বিভিন্ন সংস্থা প্রামাণ্য রিপোর্ট উপস্থাপন করেছে। তবে এমন রিপোর্টকে বিদেশের শত্রুতাপূর্ণ মিথ্যা প্রচারণা হিসেবে দাবি করে মিয়ানমার প্রত্যাখ্যান করে আসছে। আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) নামের বিদ্রোহী সংগঠন সীমান্ত পোস্টে হামলা চালানোর ফলে সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু প্রতিশোধমূলক সেনা অভিযান এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, জাতিসংঘ একে জাতি নিধন হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। সম্প্রতি মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ রিপোর্টে বলেছে, তারা স্যাটেলাইটে ২৮৮টি রোহিঙ্গা গ্রামের ছবি ধারণ করেছে। এসব গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
বিশ্বজুড়ে অসংখ্য মানুষ হতাশাগ্রস্ত। তারাই এক সময় সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে বীরের মতো প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অং সান সুচিকে সমর্থন করেছিলেন। কিন্তু সেই সুচিই এখন রহস্যে ফেলে দিয়েছেন। কেন এত বিপুল সংখ্যক মুসলিম পালিয়ে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে চলে যাচ্ছেন- এমন কথা বলে তিনি রহস্য সৃষ্টি করছেন। এটা তর্কসাপেক্ষ ব্যাপার, যে সরকারের নিরাপত্তা ও সিভিল সার্ভিসের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এখনো রয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে সেই সরকারের শীর্ষ বেসামরিক কর্মকর্তা হলেন অং সান সুচি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে নৃশংসতার বিরুদ্ধে কোনো কিছু করার ক্ষমতা তার নেই। এর মধ্য দিয়ে সেখানে সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে গণতান্ত্রিক শাসনের পথে উদার অগ্রযাত্রা ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ বিষয়ে রিপোর্ট পাওয়া গেছে যে, মঙ্গলবার বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অং সান সুচি একমত হয়েছেন যে, রোহিঙ্গাদের দেশছাড়া বন্ধ করতে এবং রাখাইন প্রদেশে তাদের বসতিতে ফিরে যেতে স্বাভাবিক অবস্থা তৈরি করতে কাজ করবে দু’দেশ।
এটা হতে পারে একটি ভালো আইডিয়া। কিন্তু এ বিষয়ে রোহিঙ্গাদের রাজি করাতে হবে বা তাদেরকে আশ্বস্ত করতে হবে যে, তারা দেশে ফিরে গেলে প্রকৃতপক্ষেই তাদের বিরুদ্ধে নিষ্পেষণ বন্ধ হবে। এ কাজটি শুধুমাত্র মিয়ানমারের জেনারেলরাই করতে পারেন। রোহিঙ্গাদের আশ্বস্ত করতে হবে যে, তাদেরকে একপেশে করে রাখা, নিষ্পেষণ ও তাদের বিরুদ্ধে ভীতি সৃষ্টি করা হলে তার প্রেক্ষিতে সরাসরি ও গুরুতর শাস্তি দেয়া হবে।
(২৫শে অক্টোবর নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত সম্পাদকীয়’র অনুবাদ)
No comments