সহমর্মিতার মাস রমজান
ইসলাম সাম্য ও মৈত্রীর ধর্ম। মৈত্রীর জন্য প্রয়োজন সাম্য, সাম্যের জন্য প্রয়োজন সহমর্মিতা ও সমবেদনা বা সম উপলব্ধি ও সম অনুভব। রমজান মাস সাম্য, মৈত্রী, সমবেদনা ও সহমর্মিতা সৃষ্টিতে বিশেষ অবদান রাখে। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেন: ‘রমজান হলো সমবেদনা ও সহমর্মিতার মাস।’ (বায়হাকি)। রমজান মাসে ধনীরা গরিবের দুঃখ বুঝবে; ক্ষুধায় জঠর জ্বালা অনুভব করবে। ইফতারে অনুভব করবে ক্ষুৎপিপাসায় কাতর অসহায় মানুষের খাবারের প্রতি কী দুর্নিবার আকর্ষণ। সম্মান করতে শিখবে খাদ্যকে; মর্যাদা দিতে শিখবে ক্ষুধার্ত মানুষকে। বুঝবে কেন অসহায় গরিব মানুষ দুমুঠো অন্নের জন্য অন্যের ঘরে কাজ করে। কেন প্রসূতি মা তাঁর নাড়িছেঁড়া বুকের ধনকে কয়েকটি টাকার বিনিময়ে অচেনা কারও কাছে বিক্রি করে দেন। উপলব্ধি করবে দুস্থ-গরিব অসহায় মানুষ ফুটপাতে ফেলে রাখা বর্জ্যের স্তূপ থেকে পচা খাবার কেন তুলে মুখে পুরে দেয়। অনুভব করবে ক্ষুধায় কাতর মানুষ কীভাবে তার আত্মসম্মান বিসর্জন দেয়, মর্যাদা ভুলে যায়, মান-ইজ্জত বিকিয়ে দেয় খাবারের জন্য। তাদের ঘৃণা ও উপেক্ষা নয়, তাদের জন্য ভালোবাসা ও সহযোগিতার হাত বাড়াতে হবে। এটুকু অনুভূতি যদি জাগ্রত না হয় তাহলে রোজা ও রমজান উপবাস ছাড়া আর কিছুই নয়।
জাকাতের শাড়ি কাপড়
অনেক জায়গায় দেখা যায় ‘এখানে জাকাতের শাড়ি কাপড় ও লুঙ্গি পাওয়া যায়’ মর্মে ব্যানার ঝুলিয়ে কিছু কম দামি নিম্নমানের শাড়ি কাপড় ও লুঙ্গি বিক্রি করা হয়। কিছু জাকাতদাতা আছেন যাঁরা এগুলো কিনে গরিব মানুষের মাঝে বিতরণ করেন। এতে জাকাতকে অসম্মান করা হয়, জাকাত গ্রহীতাকে অসম্মান করা হয়; মানবতাকে অসম্মান করা হয়। এসব শাড়ি ও লুঙ্গি দেখলেই চেনা যায় এটি করুণার দান; যাতে ব্যবহারকারীর আত্মমর্যাদা বিনষ্ট হয়। যা পরে কোনো ভালো জায়গায় যেতে দ্বিধা বোধ করেন। রমজানের শিক্ষা এখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করবে না, কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, আরব-অনারবের পার্থক্য নেই; ক্রীতদাস ও কর্মচারীকে নিজ ভাইয়ের সমান মর্যাদা দেবে; তোমরা যা খাও তাদের তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করো তাদেরও তা পরিধান করাবে।’ (বুখারি)।
কাউকে অসম্মান করা কবিরা গুনাহ
জাকাত প্রদান ফরজ ও সদকা আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু কোনো মানুষকে হেয় জ্ঞান করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, কারও সম্মানহানি করা নাজায়েজ, হারাম ও কবিরা গুনাহ। সুতরাং ফরজ জাকাত ও ওয়াজিব সদকা আদায় করতে গিয়ে এই কবিরা গুনাহের মতো হারাম ও নাজায়েজ কাজ করা মোটেই উচিত নয়। প্রকারান্তরে যা বাস্তবে ঘটে থাকে।
ধনীর সম্পদে গরিবের পাওনা
অনেকেই জাকাত ও সদকা দিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। এটা মোটেই সমীচীন নয়। কারণ জাকাত ও সদকা দয়ার দান নয়, এটি ধনীর সম্পদে গরিবের প্রাপ্য অংশ। যা তারা দাবি না করলেও বা না চাইলেও পরিশোধ করতে হবে; তার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যেহেতু এটি তার পাওনা, সুতরাং প্রাপককে সসম্মানে তা প্রদান করতে হবে; যাতে তিনি তা পেয়ে সন্তুষ্ট হন। মুজতাহিদ ফকিহগণের মতে, সদকা ও জাকাত এমনভাবে দেওয়া উত্তম, যা গ্রহীতা স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে টাকাই অগ্রগণ্য। কেননা, এর দ্বারা গ্রহণকারী নিজের রুচিমতো প্রয়োজন মেটাতে পারেন। যদি কোনো কাপড় বা খাদ্যদ্রব্য অথবা অন্য কোনো বস্তু কিনে দেন তাহলে মানসম্পন্ন জিনিসই দেওয়া উচিত। এমন শাড়ি বা লুঙ্গি দেওয়া উচিত, যা পরে তিনি কোনো উন্নত পরিবেশে একটি ভালো মজলিশে বা কোনো অনুষ্ঠানে যেতে পারেন এবং স্বাচ্ছন্দ্য ও আনন্দ বোধ করেন। (আল ফিকহুল ইসলামি)।
ইতিকাফ অবস্থার কী করা যায় বা যায় না
ইতিকাফকারী মসজিদের মধ্যে ইতিকাফরত অবস্থায় চাইলে বা প্রয়োজন হলে ও আয়োজন করা গেলে বিয়েশাদি করতে বা করাতে পারবেন। কারণ এটি একটি সুন্নত আমল, যা ইতিকাফের পরিপন্থী নয় এবং এর দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না। এমনকি ইতিকাফ অবস্থায় বিবাহ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত মসজিদে হতে পারে। (আল বাদায়ে ওয়াস সানায়ে)। ইতিকাফ অবস্থায় ইতিকাফকারী প্রয়োজনে মসজিদের ভেতরে মোচ ছাঁটতে ও নখ কাটতে পারবেন। তবে এই মাসআলা তাঁদের জন্য যাঁরা দীর্ঘ সময় তথা ১০ দিন, ২০ দিন, ৩০ দিন বা ৪০ দিন একাধারে ইতিকাফ করবেন। তাঁদের জন্য মসজিদের বাইরে গিয়ে ক্ষৌরকর্ম করাও জায়েজ আছে। কিন্তু অল্প সময় অর্থাৎ ১০ দিনের চেয়ে কম সময় ইতিকাফকারীর জন্য এসব উচিত নয়। এগুলো ইতিকাফের পরেও করতে পারবেন।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com
জাকাতের শাড়ি কাপড়
অনেক জায়গায় দেখা যায় ‘এখানে জাকাতের শাড়ি কাপড় ও লুঙ্গি পাওয়া যায়’ মর্মে ব্যানার ঝুলিয়ে কিছু কম দামি নিম্নমানের শাড়ি কাপড় ও লুঙ্গি বিক্রি করা হয়। কিছু জাকাতদাতা আছেন যাঁরা এগুলো কিনে গরিব মানুষের মাঝে বিতরণ করেন। এতে জাকাতকে অসম্মান করা হয়, জাকাত গ্রহীতাকে অসম্মান করা হয়; মানবতাকে অসম্মান করা হয়। এসব শাড়ি ও লুঙ্গি দেখলেই চেনা যায় এটি করুণার দান; যাতে ব্যবহারকারীর আত্মমর্যাদা বিনষ্ট হয়। যা পরে কোনো ভালো জায়গায় যেতে দ্বিধা বোধ করেন। রমজানের শিক্ষা এখানে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। বিদায় হজের ভাষণে রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করবে না, কালোর ওপর সাদার প্রাধান্য নেই, আরব-অনারবের পার্থক্য নেই; ক্রীতদাস ও কর্মচারীকে নিজ ভাইয়ের সমান মর্যাদা দেবে; তোমরা যা খাও তাদের তা খাওয়াবে, তোমরা যা পরিধান করো তাদেরও তা পরিধান করাবে।’ (বুখারি)।
কাউকে অসম্মান করা কবিরা গুনাহ
জাকাত প্রদান ফরজ ও সদকা আদায় করা ওয়াজিব। কিন্তু কোনো মানুষকে হেয় জ্ঞান করা, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা, কারও সম্মানহানি করা নাজায়েজ, হারাম ও কবিরা গুনাহ। সুতরাং ফরজ জাকাত ও ওয়াজিব সদকা আদায় করতে গিয়ে এই কবিরা গুনাহের মতো হারাম ও নাজায়েজ কাজ করা মোটেই উচিত নয়। প্রকারান্তরে যা বাস্তবে ঘটে থাকে।
ধনীর সম্পদে গরিবের পাওনা
অনেকেই জাকাত ও সদকা দিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করেন। এটা মোটেই সমীচীন নয়। কারণ জাকাত ও সদকা দয়ার দান নয়, এটি ধনীর সম্পদে গরিবের প্রাপ্য অংশ। যা তারা দাবি না করলেও বা না চাইলেও পরিশোধ করতে হবে; তার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। যেহেতু এটি তার পাওনা, সুতরাং প্রাপককে সসম্মানে তা প্রদান করতে হবে; যাতে তিনি তা পেয়ে সন্তুষ্ট হন। মুজতাহিদ ফকিহগণের মতে, সদকা ও জাকাত এমনভাবে দেওয়া উত্তম, যা গ্রহীতা স্বচ্ছন্দে ব্যবহার করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে টাকাই অগ্রগণ্য। কেননা, এর দ্বারা গ্রহণকারী নিজের রুচিমতো প্রয়োজন মেটাতে পারেন। যদি কোনো কাপড় বা খাদ্যদ্রব্য অথবা অন্য কোনো বস্তু কিনে দেন তাহলে মানসম্পন্ন জিনিসই দেওয়া উচিত। এমন শাড়ি বা লুঙ্গি দেওয়া উচিত, যা পরে তিনি কোনো উন্নত পরিবেশে একটি ভালো মজলিশে বা কোনো অনুষ্ঠানে যেতে পারেন এবং স্বাচ্ছন্দ্য ও আনন্দ বোধ করেন। (আল ফিকহুল ইসলামি)।
ইতিকাফ অবস্থার কী করা যায় বা যায় না
ইতিকাফকারী মসজিদের মধ্যে ইতিকাফরত অবস্থায় চাইলে বা প্রয়োজন হলে ও আয়োজন করা গেলে বিয়েশাদি করতে বা করাতে পারবেন। কারণ এটি একটি সুন্নত আমল, যা ইতিকাফের পরিপন্থী নয় এবং এর দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না। এমনকি ইতিকাফ অবস্থায় বিবাহ-সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় আলোচনা ও সিদ্ধান্ত মসজিদে হতে পারে। (আল বাদায়ে ওয়াস সানায়ে)। ইতিকাফ অবস্থায় ইতিকাফকারী প্রয়োজনে মসজিদের ভেতরে মোচ ছাঁটতে ও নখ কাটতে পারবেন। তবে এই মাসআলা তাঁদের জন্য যাঁরা দীর্ঘ সময় তথা ১০ দিন, ২০ দিন, ৩০ দিন বা ৪০ দিন একাধারে ইতিকাফ করবেন। তাঁদের জন্য মসজিদের বাইরে গিয়ে ক্ষৌরকর্ম করাও জায়েজ আছে। কিন্তু অল্প সময় অর্থাৎ ১০ দিনের চেয়ে কম সময় ইতিকাফকারীর জন্য এসব উচিত নয়। এগুলো ইতিকাফের পরেও করতে পারবেন।
মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।
smusmangonee@gmail.com
No comments