মোদি–হাওয়ার বেগ কমেছে
ভারতে বিজেপির ক্ষমতার ১০০ দিনও পূর্ণ হয়নি, দেশজোড়া মোদি-হাওয়া এর মধ্যেই স্তিমিত হয়ে গেছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠে গেল। কারণ, দেশের চার রাজ্যের ১৮টি বিধানসভার উপনির্বাচনে কংগ্রেস ও বিজেপিবিরোধী জোটের আশাতীত ভালো ফল। বিজেপিবিরোধী শক্তিরা ১৮-এর মধ্যে ১০টি আসনে জয়ী হয়েছে। আর বিজেপি ও তার সহযোগীরা পেয়েছে বাকি আটটি আসন। ভোট ছিল বিহারের ১০টি, কর্ণাটক ও মধ্যপ্রদেশে তিনটি করে এবং পাঞ্জাবে দুটি আসনে। এই আসনগুলোর মধ্যে বিহারে বিজেপির ছিল ছয়টি, মধ্যপ্রদেশের তিনটি, কর্ণাটকের তিনটির মধ্যে দুটি এবং পাঞ্জাবের একটি আসন। ভোটের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, বিহারে লালু প্রসাদ ও নীতিশ কুমারের জোট পাশার দান উল্টে ছয়টি আসন দখল করেছে। কর্ণাটকে বিজেপির কাছ থেকে একটা বাড়তি আসন ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। সেখানে বিজেপি যে আসনটিতে জিতেছে, সেটিতেও তাদের ভোট কমেছে ৬০ হাজারের বেশি। মধ্যপ্রদেশের যে তিন আসনে ভোট হলো, তার একটি বিজেপির কাছ থেকে কংগ্রেস ছিনিয়ে নিল। আর পাঞ্জাবে কংগ্রেস পাটিয়ালা আসনটি তাদের দখলে রেখে দিল। সব মিলিয়ে এই উপনির্বাচনের ফল কংগ্রেসের মরা গাঙে যেমন বান ডাকার শামিল, তেমনই লালু-নীতিশের হাত মেলানোর প্রভাব গো-বলয়ের অন্যত্র পড়ে কি না, সেটাও দ্রষ্টব্য হয়ে থাকছে। এই উপনির্বাচনের দিকে দৃষ্টি ছিল অনেক কারণে। প্রথমত, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির বিস্ময়কর উত্থানের পর এটাই ছিল প্রথম নির্বাচন। উন্নয়নের ডাক দিয়ে দেশজোড়া মোদি-হাওয়া এই সময়ে আরও বেগবান হলো, নাকি তাকে স্তিমিত করতে লালু-নীতিশের জাতভিত্তিক রাজনীতি,
কোনটা জেতে তা দেখার একটা আগ্রহ ছিল। দেখা গেল, দুই দশকের শত্রুতা ভুলে বিহারে লালু-নীতিশের কাছে আসা মোদির উন্নয়নের স্লোগান থমকে দিয়েছে। কংগ্রেস ও লালুর রাষ্ট্রীয় জনতা দল (আরজেডি) বিহারে আগে থেকেই জোটবদ্ধ ছিল। তার সঙ্গে নীতিশের জনতা দল (সংযুক্ত) হাত মেলানোয় ছয়টি আসন তাদের দখলে চলে আসে। মুম্বাইয়ের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন লালু টুইট করে সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। নীতিশ বলেছেন, দেশের রাজনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে। কর্ণাটকে বেলারি গ্রামীণ কেন্দ্রটি বিজেপির কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে কংগ্রেস। জিতেছে ৩৩ হাজারের বেশি ভোটে। চিকোড়ি কেন্দ্রও কংগ্রেস দখলে রেখেছে ৩১ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে। শিকারপুর কেন্দ্রে বিজেপি আগেরবার জিতেছিল ৬৮ হাজারের বেশি ভোটের ব্যবধানে। আর এবার জয় মাত্র ছয় হাজারের কিছু বেশি ভোটে। মধ্যপ্রদেশে তিনটি কেন্দ্রের একটিও কংগ্রেসের ছিল না। সেখানে একটি ছিনিয়ে নেওয়া এবং পাঞ্জাবে পাটিয়ালা আসনে সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংয়ের স্ত্রী প্রীনীত কাপুরের জয় কংগ্রেসের পক্ষে উৎসাহজনক। এই বছরের শেষে মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, জম্মু-কাশ্মীর ও ঝাড়খন্ডে ভোট। দিল্লির ভোটও আগামী বছরের গোড়ায় হতে পারে। এই ফল সেদিক থেকে বিজেপির কাছে একটা ‘ওয়ার্নিং’। লালু-নীতিশের জোট এবং এই উপনির্বাচনের ফল এসব রাজ্যে বিজেপিবিরোধী শক্তিদের প্রভাবিত করবে কি না, আপাতত সেদিকেই সবার নজর।
No comments