থাইল্যান্ড ফিরতে পারবে গণতন্ত্রের পথে? by তৌহিদুল ইসলাম
আগামী
মাসে থাইল্যান্ডে নির্বাচন। ২৪ মার্চের নির্বাচনে থাই রকসা চার্ট পার্টির
এবং এর মিত্রদের সঙ্গে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচার সেনা–সমর্থিত
ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর পিস অ্যান্ড অর্ডারের (এনসিপিও) মূল লড়াই হবে বলে
ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনের আগেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে শুরু
হয়েছে তোলপাড়। প্রশ্ন উঠেছে, দেশটি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরতে পারবে তো?
পাঁচ বছর সেনা শাসনের পর প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির গণতন্ত্রের পথে ফেরার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাজকুমারী উবলরাতানা মাহিদলকে (৬৭) নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করায় ওই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠছে।
নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে প্রাউত ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডের ক্ষমতায় বসেছিলেন। তাঁকে সরাতে রাজকুমারীকে প্রার্থী করে চমক দেখাতে গিয়ে এখন উল্টো নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির মুখে পড়েছে ‘থাই রকসা চার্ট পার্টি’। রাজপরিবারের সদস্যকে প্রার্থী করায় দলটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়েও নির্বাচন কমিশন ভেবে দেখছে। বিষয়টি নিয়ে এখন গণমাধ্যম সরব।
থাইল্যান্ডের রাজকুমারী উবলরাতানা মাহিদলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এর ফলে তিনি সাধারণ নির্বাচনে আর প্রার্থী হতে পারছেন না। ৬৭ বছর বয়সী ওই নারী থাইল্যান্ডের রাজার বোন। রাজকুমারী মাহিদল সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার পক্ষে একটি দলের হয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন থাইল্যান্ডের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, রাজকুমারীর নাম নেই। দেশটির বর্তমান রাজা প্রিন্স মাহা ওয়াজিরালংকর্নের বোন তিনি। থাই নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশটির ঐতিহ্য অনুযায়ী রাজপরিবারের সদস্যরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে।
একই সঙ্গে তাঁরা কোনো রাজনৈতিক পদেও থাকতে পারেন না। বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচনে থাই রকসা চার্ট পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন উবলরাতানা। পেয়েছিলেন মনোনয়নও। কিন্তু উবলরাতানার বড় ভাই নির্বাচনে তাঁর অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষার কঠোর সমালোচনা করেন।
ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজকীয় বিধি ও রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে উবলরাতানাকে পিছু হটতে হলেও গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় আলোচনা এখনো ব্যাপকভাবে চলছে। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র নিয়ে সংশয়ে পড়তে হচ্ছে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশে প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবার ও রাজপরিবারের দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখল করে থাই সেনাবাহিনী। সে সময় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক জান্তা। ওই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন সেনাবাহিনীর প্রধান প্রাউত চান-ওচা, যিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এই নির্বাচনী উত্তাপ এখন রাজপরিবার থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের এই লড়াইয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি নতুন মাত্রা পায়। ওই দিন রাজপরিবারের রাজকুমারী উবলরাতানা মাহিদলকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা জমা দেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনওয়াত্রার দল থাই রাকসা চার্ট।
সে সময় উবলরাতানার উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, তিনি তাঁর রাজকীয় সব উপাধি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এখন থেকে তিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে উবলরাতানা বলেছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তাঁর অধিকার চর্চা করতে। সব থাই নাগরিকের সমৃদ্ধির জন্য তিনি আন্তরিকতা ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।
রাজকুমারীর রাজনীতিতে আসা নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে সরাসরি রাজনীতিতে আসা আইনের লঙ্ঘন বলেও অভিযোগ ওঠে। উবলরাতানার ছোট ভাই ও থাই রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন এক বিবৃতিতে বলেন, রাজপরিবারের কোনো সদস্যকে রাজনীতিতে আনা ঐতিহ্য ও জাতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী সিদ্ধান্ত। এটি ‘ভীষণ অনুচিত’। রাজপরিবারকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার কথাও বলেন তিনি। সেই সঙ্গে ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশটির নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে, রাজকুমারীকে রাজনীতিতে এনে থাই রাকসা চার্ট রাজনৈতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এসবের জবাব দিতে গিয়ে তোপের মুখে পড়ে থাকসিনের ছেলের মালিকানাধীন ‘ভয়েস টিভি’। জেনারেলদের নির্দেশে ১৫ দিনের জন্য ওই টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত রাজার হস্তক্ষেপে নির্বাচনে রাজকুমারীকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করে প্রার্থিতা বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানায়, ‘রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষতা ধারণ করার নিয়ম রাজপরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য প্রযোজ্য।’ পরে অবশ্য থাই রাকসা চার্ট বিষয়টি মেনে নিয়ে জল ঘোলা থেকে বিরত থাকে। এ নিয়ে রাজকুমারী ক্ষমাপ্রার্থনা করে ইনস্টাগ্রামে এক বার্তায় বলেন, ‘দেশের জন্য কাজ করার স্বাভাবিক ইচ্ছা যদি থাই জনগণের সমস্যার কারণ হয়, তবে সেটা করা উচিত হয়নি।’
সম্প্রতি ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজকীয় ও সামরিক বিশিষ্টজনেরা ‘ইয়োলো শার্ট’ হিসেবে পরিচিত। আর সাবেক জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনওয়াত্রার সহকারী ও সমর্থকের পরিচিত ‘রেড শার্ট’ হিসেবে। এই দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিভাজন ও সংঘাতের জেরে ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী।
সিনাওয়াত্রাদের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে ‘রেড শার্ট’পন্থীরা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। ২০১১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ী হলে পিউ থাই পার্টির পক্ষে ক্ষমতায় বসেন থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা। তবে তিনি জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট শুরু করেন। রাজপরিবার ও সামরিক বিশিষ্টজনদের কাছে চক্ষুশূলে পরিণত হন ইংলাক। ক্ষমতার তিন বছরের মাথায় তৎকালীন রাজা ভূমিবলের মদদে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। ফলে আবার শুরু হয় সেনা শাসন।
১৯৩২ সালে রাজতন্ত্র অবসান হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১২ বার ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। এই বাহিনীর হস্তক্ষেপে থাই গণতন্ত্র বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে সেনা শাসন থেকে বের হয়ে গণতন্ত্রের পথে ফেরার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে ফিরতে পারবে কি থাইল্যান্ড? এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। নাকি মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন থাই প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচা। লোক দেখানো একটা নির্বাচন দিয়ে সেনা সমর্থনের জোরে ভোট বাগিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রাউত চানের ক্ষমতায় আসার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী প্রাউতকে নির্বাচনে মোকাবিলা করা থাকসিন সিনওয়াত্রার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জই বটে।
প্রধানমন্ত্রী প্রাউত গত কয়েক মাস থেকে সরকারি ব্যবস্থায় সারা দেশে নির্বাচনী প্রচার ও শোভাযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। বেসামরিক রাজনীতিকদের রুখতেও তাঁর নানা পদক্ষেপ দৃশ্যমান। পাঁচজনের বেশি একসঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। পালং প্রাচার্য পার্টি নামে একটি দল সেনা–সমর্থিত দলকে সমর্থন দিয়েছে। এতে দলটির কিছু আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ছোট ও আঞ্চলিক দলগুলোর তারা সমর্থন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ডে সুষ্ঠু নির্বাচন ও কার্যকর গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
পাঁচ বছর সেনা শাসনের পর প্রথমবারের মতো এই নির্বাচনের মাধ্যমে দেশটির গণতন্ত্রের পথে ফেরার সুযোগ তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাজকুমারী উবলরাতানা মাহিদলকে (৬৭) নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করায় ওই প্রশ্ন এখন বড় হয়ে উঠছে।
নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে প্রাউত ২০১৪ সালে থাইল্যান্ডের ক্ষমতায় বসেছিলেন। তাঁকে সরাতে রাজকুমারীকে প্রার্থী করে চমক দেখাতে গিয়ে এখন উল্টো নিষেধাজ্ঞার ঝুঁকির মুখে পড়েছে ‘থাই রকসা চার্ট পার্টি’। রাজপরিবারের সদস্যকে প্রার্থী করায় দলটিকে নিষিদ্ধ করার বিষয়েও নির্বাচন কমিশন ভেবে দেখছে। বিষয়টি নিয়ে এখন গণমাধ্যম সরব।
থাইল্যান্ডের রাজকুমারী উবলরাতানা মাহিদলকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে দেশটির নির্বাচন কমিশন। এর ফলে তিনি সাধারণ নির্বাচনে আর প্রার্থী হতে পারছেন না। ৬৭ বছর বয়সী ওই নারী থাইল্যান্ডের রাজার বোন। রাজকুমারী মাহিদল সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার পক্ষে একটি দলের হয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশন থাইল্যান্ডের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে ইচ্ছুক রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধানমন্ত্রী পদে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, রাজকুমারীর নাম নেই। দেশটির বর্তমান রাজা প্রিন্স মাহা ওয়াজিরালংকর্নের বোন তিনি। থাই নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশটির ঐতিহ্য অনুযায়ী রাজপরিবারের সদস্যরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে।
একই সঙ্গে তাঁরা কোনো রাজনৈতিক পদেও থাকতে পারেন না। বহুল প্রতীক্ষিত নির্বাচনে থাই রকসা চার্ট পার্টি থেকে প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলেন উবলরাতানা। পেয়েছিলেন মনোনয়নও। কিন্তু উবলরাতানার বড় ভাই নির্বাচনে তাঁর অংশগ্রহণের আকাঙ্ক্ষার কঠোর সমালোচনা করেন।
ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজকীয় বিধি ও রাজনৈতিক মারপ্যাঁচে উবলরাতানাকে পিছু হটতে হলেও গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসার প্রক্রিয়ায় আলোচনা এখনো ব্যাপকভাবে চলছে। জাতীয় নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে দেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্র নিয়ে সংশয়ে পড়তে হচ্ছে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই দেশে প্রভাবশালী সিনাওয়াত্রা পরিবার ও রাজপরিবারের দ্বন্দ্ব, সংঘাত এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিয়ে ২০১৪ সালে ক্ষমতা দখল করে থাই সেনাবাহিনী। সে সময় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রাকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক জান্তা। ওই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেন সেনাবাহিনীর প্রধান প্রাউত চান-ওচা, যিনি বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। এই নির্বাচনী উত্তাপ এখন রাজপরিবার থেকে শুরু করে দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদে নির্বাচনের এই লড়াইয়ে ৮ ফেব্রুয়ারি নতুন মাত্রা পায়। ওই দিন রাজপরিবারের রাজকুমারী উবলরাতানা মাহিদলকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করে নির্বাচন কমিশনে প্রার্থিতা জমা দেয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনওয়াত্রার দল থাই রাকসা চার্ট।
সে সময় উবলরাতানার উদ্ধৃতি দিয়ে বিবিসির খবরে বলা হয়, তিনি তাঁর রাজকীয় সব উপাধি থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। এখন থেকে তিনি একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে জীবন যাপন করবেন। প্রধানমন্ত্রী পদে নিজের প্রার্থিতা ঘোষণা করে উবলরাতানা বলেছিলেন, তিনি চেয়েছিলেন একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে তাঁর অধিকার চর্চা করতে। সব থাই নাগরিকের সমৃদ্ধির জন্য তিনি আন্তরিকতা ও দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন।
রাজকুমারীর রাজনীতিতে আসা নিয়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। রাজপরিবারের সদস্য হিসেবে সরাসরি রাজনীতিতে আসা আইনের লঙ্ঘন বলেও অভিযোগ ওঠে। উবলরাতানার ছোট ভাই ও থাই রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন এক বিবৃতিতে বলেন, রাজপরিবারের কোনো সদস্যকে রাজনীতিতে আনা ঐতিহ্য ও জাতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থী সিদ্ধান্ত। এটি ‘ভীষণ অনুচিত’। রাজপরিবারকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার কথাও বলেন তিনি। সেই সঙ্গে ১৩ ফেব্রুয়ারি দেশটির নির্বাচন কমিশন ঘোষণা করে, রাজকুমারীকে রাজনীতিতে এনে থাই রাকসা চার্ট রাজনৈতিক আইন লঙ্ঘন করেছে। এসবের জবাব দিতে গিয়ে তোপের মুখে পড়ে থাকসিনের ছেলের মালিকানাধীন ‘ভয়েস টিভি’। জেনারেলদের নির্দেশে ১৫ দিনের জন্য ওই টেলিভিশনের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়েছিল।
শেষ পর্যন্ত রাজার হস্তক্ষেপে নির্বাচনে রাজকুমারীকে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করে প্রার্থিতা বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন। কমিশন জানায়, ‘রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষতা ধারণ করার নিয়ম রাজপরিবারের প্রতিটি সদস্যের জন্য প্রযোজ্য।’ পরে অবশ্য থাই রাকসা চার্ট বিষয়টি মেনে নিয়ে জল ঘোলা থেকে বিরত থাকে। এ নিয়ে রাজকুমারী ক্ষমাপ্রার্থনা করে ইনস্টাগ্রামে এক বার্তায় বলেন, ‘দেশের জন্য কাজ করার স্বাভাবিক ইচ্ছা যদি থাই জনগণের সমস্যার কারণ হয়, তবে সেটা করা উচিত হয়নি।’
সম্প্রতি ইকোনমিস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজকীয় ও সামরিক বিশিষ্টজনেরা ‘ইয়োলো শার্ট’ হিসেবে পরিচিত। আর সাবেক জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনওয়াত্রার সহকারী ও সমর্থকের পরিচিত ‘রেড শার্ট’ হিসেবে। এই দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব, বিভাজন ও সংঘাতের জেরে ২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনওয়াত্রাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী।
সিনাওয়াত্রাদের ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে ‘রেড শার্ট’পন্থীরা তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। ২০১১ সালের সাধারণ নির্বাচনে বড় ব্যবধানে জয়ী হলে পিউ থাই পার্টির পক্ষে ক্ষমতায় বসেন থাকসিনের বোন ইংলাক সিনাওয়াত্রা। তবে তিনি জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি। তিনি ও তাঁর সহযোগীরা ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট শুরু করেন। রাজপরিবার ও সামরিক বিশিষ্টজনদের কাছে চক্ষুশূলে পরিণত হন ইংলাক। ক্ষমতার তিন বছরের মাথায় তৎকালীন রাজা ভূমিবলের মদদে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। ফলে আবার শুরু হয় সেনা শাসন।
১৯৩২ সালে রাজতন্ত্র অবসান হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ১২ বার ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। এই বাহিনীর হস্তক্ষেপে থাই গণতন্ত্র বারবার মুখ থুবড়ে পড়েছে। আসন্ন নির্বাচনের মাধ্যমে সেনা শাসন থেকে বের হয়ে গণতন্ত্রের পথে ফেরার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। গণতন্ত্রের পথে ফিরতে পারবে কি থাইল্যান্ড? এ প্রশ্নই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে। নাকি মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির পদাঙ্ক অনুসরণ করবেন থাই প্রধানমন্ত্রী প্রাউত চান-ওচা। লোক দেখানো একটা নির্বাচন দিয়ে সেনা সমর্থনের জোরে ভোট বাগিয়ে নিয়ে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রাউত চানের ক্ষমতায় আসার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ফলে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী প্রাউতকে নির্বাচনে মোকাবিলা করা থাকসিন সিনওয়াত্রার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জই বটে।
প্রধানমন্ত্রী প্রাউত গত কয়েক মাস থেকে সরকারি ব্যবস্থায় সারা দেশে নির্বাচনী প্রচার ও শোভাযাত্রা অব্যাহত রেখেছেন। বেসামরিক রাজনীতিকদের রুখতেও তাঁর নানা পদক্ষেপ দৃশ্যমান। পাঁচজনের বেশি একসঙ্গে রাজনৈতিক আলোচনা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছেন। পালং প্রাচার্য পার্টি নামে একটি দল সেনা–সমর্থিত দলকে সমর্থন দিয়েছে। এতে দলটির কিছু আসনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া ছোট ও আঞ্চলিক দলগুলোর তারা সমর্থন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে থাইল্যান্ডে সুষ্ঠু নির্বাচন ও কার্যকর গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
No comments