প্রকৃতির উপহার by কেয়া নন্দী
মামা এসেছে। খুব মজার লোক তিনি। মামা যখনই আসে তখনই আমাদের নতুন কোনো জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যায়। এইতো গত বছর, আমাদের নিয়ে গিয়েছিল সোমপুর বিহার। আশ্চর্য এক অভিজ্ঞতা সেটি। কিন্তু এবার মামা একটু বেঁকে বসেছে। বলছে, এবার এসেছি শুধু বিশ্রাম করতে। এবার আর কোথাও ঘুরতে যাব না।
কিন্তু আমরাও নাছোড়বান্দা। মামাও কিন্তু একেবারে ছেড়ে দেবার পাত্র নয়। নিজের কথা থেকে একটুও টলতে চায় না সে। স্বাভাবিকভাবেই মনটা বেশ খারাপ। কিন্তু এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলেই তো চলবে না। সবাই মিলে প্লান করছি কীভাবে মামাকে রাজি করানো যায়। অপু বাসার সবচেয়ে ছোট। আমার চাচাতো ভাই। মামা ওকে খুব আদর করে। ভাবলাম অপুকে দিয়েই কাজটা করানো সম্ভব। সকাল-সকাল অপুকে ফুল দিয়ে পাঠিয়েছি মামার ঘরে। মামা ফুল খুব পছন্দ করেন। শুধু ফুল বললে ভুল হবে, মামার সঙ্গে পুরো প্রকৃতিটাই যেন সর্বক্ষণ মিশে থাকে। মামা খুব প্রকৃতি পাগল মানুষ। বন বিভাগের চাকরি করে। সেই সিলেট গিয়ে পড়ে আছে। ঢাকা শহর মামার ভাল লাগে না। এখানকার সবচেয়ে খারাপ লাগে যানজটের সমস্যা। এছাড়াও ঢাকা মানেই সমস্যায় জর্জরিত কোনো জায়গাÑএ রকমই মনে করে মামা। সে কারণেই সিলেট গিয়ে পড়ে আছে। যাই হোক, অপুর হাতে তাজা ফুলগুলো দেখে খুব খুশি হলো মামা। মামা বলছে অপু, আজ সকাল থেকেই তুমি আমার মনটা তাজা করে দিয়েছ। তুমি আমায় এর ভাল একটা উপহার দিয়েছ, তোমাকেও তো একটা কিছু দেয়া উচিত। এই কথা বলেই মামা কতগুলো চকলেট দিল অপুকে। অপু নিজের লোভ সংবরণ করে বলল, চকলেট চাই না। অন্য কিছু দিতে হবে। মামা বলেছে,
বল কী চাও?
দেবে তো?
হ্যাঁ, অবশ্যই দিব।
যদি পরে না দাও?
বলেই দেখ না তোমাকে সত্যিকারেই দিই কি না। এই কথা দিলাম।
মামা তুমি আমাদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবে?
না, এবার আগে থেকেই বলেছি, শুধু বিশ্রাম করব। কোথাও যাবো না।
না, না এসব বললে চলবে না।
আমরা দৌড়ে ঘরে ঢুকেছি। আমরাও সমান তালে বলে যাচ্ছি, না বললে চলবে না। মামা, তুমি কথা দিয়েছ আমরা যা চাই, তাই দেবে।
Ñকিন্তু তোদের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে অনেক দূরত্ব। Ñএসব বুঝি না। চষবধংব, মামা না করো না।
কিছুক্ষণ পর মা এসে ঘরে ঢুকল। মা বলল, কি হয়েছে পলাশ? ওরা এভাবে তোর পায়ে ধরে বসে আছে কেন?
আর বলো না। তোমার ছেলেমেয়ে আমাকে পাগল করে তবেই ছাড়বে। তাদেরকে নাকি বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। আর তাই এরা এভাবে বসে আছে। মা খুব বকা দিয়েছে আমাদের।
Ñএই ক’টা দিনের জন্য আসে আমার ভাইটা, তাতেও তোদের জ্বালায় থাকতে পারে না।
মায়ের অগ্নিশর্মা মূর্তির দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস হচ্ছিল না। সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। মামা বুঝতে পেরেছে যে, আমরা খুব রাগ করেছি। বিকেলে আমরা সবাই ছাদে বসেছিলাম। মামা পাশে গিয়ে বসল।
কিরে খুব রাগ হয়েছে? অপু বলল হুঁ। আমরা কোনো কথা বলিনি। মামা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল। বলল-ঠিক আছে, রাগ করিস না। যাব, অনেক সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাব। আমরা চিৎসার দিয়ে বলে উঠলামÑযাব না। মামা রাগ ভাঙানোর জন্য প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা করল। বুঝতে পারছি, এইবার একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।
Ñঠিক আছে, যাব।
এবার সবাই খুব খুশি। কাল সকালে আমরা যাব। এই নিয়ে কত কল্পনাÑজল্পনা মাথায় ঘুরছে। হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে, সবাই তৈরি হয়ে নিলাম। শুরু হল আমাদের পর্যটন। বেশ কয়েক ঘণ্টা। এরপর শুরু হল সেই দৃশ্য। এক চিলতে আকাশ নয়, উপরে তাকালেই চোখ যেন সাদা মেঘে আটকে যায়। বাকি পুরোটাই ঝকঝকে নীল আকাশ। নিচে সবুজ-শ্যামলের ছড়াছড়ি। মাঝে মাঝে ঝরনা। নাকে আসছে বুনো ফুলের গন্ধ। দেখা যাচ্ছে, আদিবাসীদের ছোট-বড় উঁচু উঁচু ঘর। আমরা গিয়েছি বান্দরবান। সেখানকার একটা রেস্ট হাউসে বিশ্রাম করে আবার শুরু হলো ভ্রমণ। কী সুন্দর সেই দৃশ্য। কী সাদামাটা আদিবাসীদের জীবন। মনে হচ্ছিল যেন প্রাকৃতিক, কৃত্রিম, বাস্তব, কল্পনা সবকিছুর মিশ্রণ পাওয়া যায় এখানে। মনে হয় যেন সত্যিই বাংলাদেশ কত সুন্দর। রেস্ট হাউসে ফিরে এলাম। খাওয়া শেষে গাড়িতে উঠলাম বিদায় বান্দরবান। সত্যিই এটি ভোলার মতো নয়। হয়ত একেই বলে প্রকৃতির উপহার।
এস. ভি. সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
কিশোরগঞ্জ, ১০ম শ্রেণী
বল কী চাও?
দেবে তো?
হ্যাঁ, অবশ্যই দিব।
যদি পরে না দাও?
বলেই দেখ না তোমাকে সত্যিকারেই দিই কি না। এই কথা দিলাম।
মামা তুমি আমাদের নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবে?
না, এবার আগে থেকেই বলেছি, শুধু বিশ্রাম করব। কোথাও যাবো না।
না, না এসব বললে চলবে না।
আমরা দৌড়ে ঘরে ঢুকেছি। আমরাও সমান তালে বলে যাচ্ছি, না বললে চলবে না। মামা, তুমি কথা দিয়েছ আমরা যা চাই, তাই দেবে।
Ñকিন্তু তোদের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে অনেক দূরত্ব। Ñএসব বুঝি না। চষবধংব, মামা না করো না।
কিছুক্ষণ পর মা এসে ঘরে ঢুকল। মা বলল, কি হয়েছে পলাশ? ওরা এভাবে তোর পায়ে ধরে বসে আছে কেন?
আর বলো না। তোমার ছেলেমেয়ে আমাকে পাগল করে তবেই ছাড়বে। তাদেরকে নাকি বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে। আর তাই এরা এভাবে বসে আছে। মা খুব বকা দিয়েছে আমাদের।
Ñএই ক’টা দিনের জন্য আসে আমার ভাইটা, তাতেও তোদের জ্বালায় থাকতে পারে না।
মায়ের অগ্নিশর্মা মূর্তির দিকে তাকিয়ে কথা বলার সাহস হচ্ছিল না। সবাই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম। মামা বুঝতে পেরেছে যে, আমরা খুব রাগ করেছি। বিকেলে আমরা সবাই ছাদে বসেছিলাম। মামা পাশে গিয়ে বসল।
কিরে খুব রাগ হয়েছে? অপু বলল হুঁ। আমরা কোনো কথা বলিনি। মামা শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল। বলল-ঠিক আছে, রাগ করিস না। যাব, অনেক সুন্দর জায়গায় নিয়ে যাব। আমরা চিৎসার দিয়ে বলে উঠলামÑযাব না। মামা রাগ ভাঙানোর জন্য প্রায় আধা ঘণ্টা চেষ্টা করল। বুঝতে পারছি, এইবার একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে।
Ñঠিক আছে, যাব।
এবার সবাই খুব খুশি। কাল সকালে আমরা যাব। এই নিয়ে কত কল্পনাÑজল্পনা মাথায় ঘুরছে। হঠাৎ ঘুমিয়ে পড়লাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে, সবাই তৈরি হয়ে নিলাম। শুরু হল আমাদের পর্যটন। বেশ কয়েক ঘণ্টা। এরপর শুরু হল সেই দৃশ্য। এক চিলতে আকাশ নয়, উপরে তাকালেই চোখ যেন সাদা মেঘে আটকে যায়। বাকি পুরোটাই ঝকঝকে নীল আকাশ। নিচে সবুজ-শ্যামলের ছড়াছড়ি। মাঝে মাঝে ঝরনা। নাকে আসছে বুনো ফুলের গন্ধ। দেখা যাচ্ছে, আদিবাসীদের ছোট-বড় উঁচু উঁচু ঘর। আমরা গিয়েছি বান্দরবান। সেখানকার একটা রেস্ট হাউসে বিশ্রাম করে আবার শুরু হলো ভ্রমণ। কী সুন্দর সেই দৃশ্য। কী সাদামাটা আদিবাসীদের জীবন। মনে হচ্ছিল যেন প্রাকৃতিক, কৃত্রিম, বাস্তব, কল্পনা সবকিছুর মিশ্রণ পাওয়া যায় এখানে। মনে হয় যেন সত্যিই বাংলাদেশ কত সুন্দর। রেস্ট হাউসে ফিরে এলাম। খাওয়া শেষে গাড়িতে উঠলাম বিদায় বান্দরবান। সত্যিই এটি ভোলার মতো নয়। হয়ত একেই বলে প্রকৃতির উপহার।
এস. ভি. সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়
কিশোরগঞ্জ, ১০ম শ্রেণী
No comments