খাদ্যে ভেজাল-ঈদের খাবার কেনাকাটায় সতর্ক থাকুন by আ ব ম ফারুক
বাংলাদেশে খাদ্যে ভেজাল একটি মারাত্মক সমস্যা। যদিও এর প্রতিকারে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে উদ্যোগগুলো সীমিত। সরকারের নেওয়া উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা, অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ‘বিশুদ্ধ খাদ্য আইন’ ও ‘ভোক্তা অধিকার আইন’ প্রয়োগ এবং সরকার-নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে
ভেজালের বিরুদ্ধে ঘন ঘন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান। ভেজালের বিরুদ্ধে মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। ঈদে খাদ্যসামগ্রী কেনাকাটায় সতর্ক হলে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমানো সম্ভব।
ঈদের অনুষঙ্গ সেমাই। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, ভাজা সেমাই না কিনে কাঁচা সেমাই কিনুন। এরপর ঘরে নিয়ে ভেজে নিন। অধিকাংশ সেমাই তৈরির কারখানা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় সেমাই তৈরি করে থাকে। ড্রায়ারের পরিবর্তে খোলা আকাশের নিচে রোদে শুকানো সেমাইয়ে মাছি বসে প্রচুর, ধুলাবালিও পড়ে। এসবের জীবাণু সেমাই রান্নার পদ্ধতিতে সব মরে যায় না।
তবে কাঁচা সেমাইও ধবধবে সাদা না কেনা ভালো। কারণ, এগুলো ধবধবে সাদা করার জন্য হাইড্রোজ ব্যবহার করা হয়, যা ক্ষতিকর। স্বাভাবিক অর্থার্যা কম সাদা কাঁচা সেমাই কেনা তাই স্বাস্থ্যকর। হাইড্রোজ মানে সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড বা সোডিয়াম ডাইথায়োনাইট। দেখতে সুন্দর হলেও এটি মুখগহ্বর ও পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর। ফলে মুখে প্রদাহ এবং পাকস্থলীতে এসিডের অতিরিক্ত নিঃসরণ ঘটে, নিয়মিত ব্যবহারে যা আলসারে রূপ নিতে পারে।
রঙিন না কিনে সাদাটে লাচ্ছা সেমাই কিনুন। রঙিনগুলোতে টেক্সটাইল কালার ব্যবহার করা হয়—যা মারাত্মক বিষাক্ত বলে নানা রকম সমস্যা তৈরি করে, যার মধ্যে রয়েছে চর্মরোগ, অ্যালার্জি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, পাকস্থলীর গোলযোগ, পেপটিক আলসার, রক্তকণিকার গোলযোগ, লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার, লিভারের নানা গোলযোগ, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, কিডনির মারাত্মক ক্ষতি ইত্যাদি। তাই সাদা লাচ্ছা সেমাই কিনুন এবং তা যেন অবশ্যই কম তেল-চর্বিযুক্ত হয়।
চিনি কেনার সময়ও সাবধানতা প্রয়োজন। বেশি সাদা চিনি কেনা অনুচিত। চিনি ধবধবে সাদা করতেও ব্যবহূত হয় ক্ষতিকর হাইড্রোজ। দেশি চিনি দেখতে লালচে হলেও এতে হাইড্রোজ দেওয়া হয় না বলে স্বাস্থ্যসম্মত।
গরম মসলা, দারচিনি কেনার সময় পাতলা ছাল দেখে কিনবেন, মোটা ও গন্ধহীনগুলো নয়। দারচিনিতে ভেজাল দেওয়া হয় লালচে দেখতে গজারি বা অন্যান্য ছাল দিয়ে। গজারির ছাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে সতর্ক থাকলে এ ফাঁকিটুকু পরিহার করা সম্ভব। এলাচ ও লবঙ্গে এখনো কোনো ভেজাল পাওয়া যায়নি।
ঈদে জর্দা রান্নায় ব্যবহারের জন্য জাফরানি রং কিনতে গিয়ে আপনি ঠকবেন, এটা নিশ্চিত। জাফরানি রং অত্যন্ত দামি বলে ১০-২০ টাকার জাফরানি রং কোনো দোকানির পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব নয়। জাফরানি রং বলে অসাধু দোকানদার দিয়ে থাকে টেক্সটাইল কালার। রংটি ফুড কালার না টেক্সটাইল কালার, তা চেনার সহজ উপায় হলো—একটুখানি রং হাতে নিয়ে ঘষুন, এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফুড কালার হলে হাতে লেগে থাকবে না। যদি লেগে থাকে, তাহলে তা টেক্সটাইল কালার এবং তা তুলতে সাবান লাগবে। অতএব, ঝুঁকি না নিয়ে রংহীন জর্দা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
একই কারণে পোলাও, বিরিয়ানি বা শরবতেও রঙের ব্যবহার বর্জন করা ভালো।
পোলাও, বিরিয়ানি বা কোর্মায় ঘি ব্যবহার না করাই ভালো। ভেজালের দৌরাত্ম্যে বাজারে আসল ঘি প্রায় দুর্লভ হলেও ঘিয়ের গন্ধযুক্ত অন্য জিনিস পাওয়া যায়। তাই ঘিয়ের পরিবর্তে সয়াবিন দিয়ে রান্না করাই ভালো। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরল জমার আশঙ্কাও কমবে। ইদানীং কেউ কেউ খাঁটি সরিষার তেলের পোলাও, বিরিয়ানি রান্না করছেন। এর স্বাদও চমর্যাকার। তবে সরিষার তেলটি খাঁটি কি না, তা-ও নিশ্চিত হতে হবে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝাঁজওয়ালা এসব তেল শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বাজারে অধিকাংশ হলুদ-মরিচ-ধনে-জিরার পাউডারে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে হলুদ ও মরিচের গুঁড়ায় পাওয়া গেছে যথাক্রমে সুদান রেড এবং লেড ক্রোমেট। সুদান রেড ক্যানসার তৈরি করে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নিষিদ্ধ। আর লেড ক্রোমেট লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং হেভি মেটাল পর্যায়ভুক্ত বলে শরীর থেকে সহজে বেরিয়ে না গিয়ে জমে থাকে ও ক্ষতি করে।
টেক্সটাইল কালারের কারণে বাজারের অধিকাংশ সস ও আচার খাওয়ার অযোগ্য। টকটকে লালগুলোতে থাকে সুদান রেড কিংবা এমারান্থ। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে এমারান্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই নিষিদ্ধ।
ক্ষতিকর টেক্সটাইল কালার আমাদের দেশে চকলেট-আইসক্রিম-দই-মিষ্টি ইত্যাদি তৈরিতে দেদার ব্যবহূত হচ্ছে। শরবত তৈরিতে ব্যবহূত প্রায় সব পাউডার-গ্রানিউলস বা কনসেনট্রেটে খাদ্য-নিষিদ্ধ টেক্সটাইল কালার রয়েছে। এগুলো ব্যবহারে সাবধান হওয়া উচিত। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে হলুদ রঙের দই বর্জন করুন, সাদা রঙের দই কিনুন। মিষ্টির বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য, স্বাস্থ্যরক্ষার কারণে রংহীন মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
আম-কমলার তথাকথিত জুসগুলো কৃত্রিম। এগুলোতে এমন সব কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। বিজ্ঞাপনের মোহে পড়ে, বিশেষ করে বাচ্চারা, যেন এসব জুস নিয়মিত না খায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কারণ, বাচ্চাদের লিভার-কিডনি-অস্থিমজ্জা-ফুসফুস—সবই অপরিণত বলে ক্ষতিকর রংগুলো বড়দের চেয়েও বাচ্চাদের ক্ষতি করে বেশি।
ঈদে নিশ্চয়ই প্রচুর কোল্ড ডিংকস খাওয়া হবে। মাঝেমধ্যে কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া ক্ষতিকর নয়, তবে বেশি খাওয়া ক্ষতিকর। বিশেষ করে বাচ্চাদের কোলাজাতীয় কোনো কোল্ড ড্রিংকস না দেওয়াই ভালো। এর উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন বাচ্চাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে, মেজাজ খিটখিটে করে, অস্থিরতা আনে, লেখাপড়ায় গভীর মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটায়, কিডনিকে চাপে ফেলে। বিকল্প হিসেবে আপনি বরফ মিশিয়ে লেবুর শরবত খান। ডায়াবেটিস থাকলে লবণ মিশিয়ে লেবুর শরবত খাওয়া যেতে পারে। বাজারে বেশ কিছু এনার্জি ড্রিংকস বিভিন্ন নামে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোতে থাকে অতি উচ্চমাত্রার সুগার ও ক্যাফেইন। শুধু তরুণেরাই পরিমিত মাত্রায় খেতে পারে, কিন্তু বৃদ্ধ ও বাচ্চারা কখনোই নয়।
সবার জন্য ঈদ হোক আনন্দের ও সুস্বাস্থ্যের।
প্রফেসর আ ব ম ফারুক: ডিন (ভারপ্রাপ্ত), ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
abmfaroque@yahoo.com
ঈদের অনুষঙ্গ সেমাই। আমাদের পরামর্শ হচ্ছে, ভাজা সেমাই না কিনে কাঁচা সেমাই কিনুন। এরপর ঘরে নিয়ে ভেজে নিন। অধিকাংশ সেমাই তৈরির কারখানা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় সেমাই তৈরি করে থাকে। ড্রায়ারের পরিবর্তে খোলা আকাশের নিচে রোদে শুকানো সেমাইয়ে মাছি বসে প্রচুর, ধুলাবালিও পড়ে। এসবের জীবাণু সেমাই রান্নার পদ্ধতিতে সব মরে যায় না।
তবে কাঁচা সেমাইও ধবধবে সাদা না কেনা ভালো। কারণ, এগুলো ধবধবে সাদা করার জন্য হাইড্রোজ ব্যবহার করা হয়, যা ক্ষতিকর। স্বাভাবিক অর্থার্যা কম সাদা কাঁচা সেমাই কেনা তাই স্বাস্থ্যকর। হাইড্রোজ মানে সোডিয়াম হাইড্রোসালফাইড বা সোডিয়াম ডাইথায়োনাইট। দেখতে সুন্দর হলেও এটি মুখগহ্বর ও পাকস্থলীর জন্য ক্ষতিকর। ফলে মুখে প্রদাহ এবং পাকস্থলীতে এসিডের অতিরিক্ত নিঃসরণ ঘটে, নিয়মিত ব্যবহারে যা আলসারে রূপ নিতে পারে।
রঙিন না কিনে সাদাটে লাচ্ছা সেমাই কিনুন। রঙিনগুলোতে টেক্সটাইল কালার ব্যবহার করা হয়—যা মারাত্মক বিষাক্ত বলে নানা রকম সমস্যা তৈরি করে, যার মধ্যে রয়েছে চর্মরোগ, অ্যালার্জি, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, পাকস্থলীর গোলযোগ, পেপটিক আলসার, রক্তকণিকার গোলযোগ, লিউকেমিয়া বা ব্লাড ক্যানসার, লিভারের নানা গোলযোগ, লিভার সিরোসিস, লিভার ক্যানসার, কিডনির মারাত্মক ক্ষতি ইত্যাদি। তাই সাদা লাচ্ছা সেমাই কিনুন এবং তা যেন অবশ্যই কম তেল-চর্বিযুক্ত হয়।
চিনি কেনার সময়ও সাবধানতা প্রয়োজন। বেশি সাদা চিনি কেনা অনুচিত। চিনি ধবধবে সাদা করতেও ব্যবহূত হয় ক্ষতিকর হাইড্রোজ। দেশি চিনি দেখতে লালচে হলেও এতে হাইড্রোজ দেওয়া হয় না বলে স্বাস্থ্যসম্মত।
গরম মসলা, দারচিনি কেনার সময় পাতলা ছাল দেখে কিনবেন, মোটা ও গন্ধহীনগুলো নয়। দারচিনিতে ভেজাল দেওয়া হয় লালচে দেখতে গজারি বা অন্যান্য ছাল দিয়ে। গজারির ছাল স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, তবে সতর্ক থাকলে এ ফাঁকিটুকু পরিহার করা সম্ভব। এলাচ ও লবঙ্গে এখনো কোনো ভেজাল পাওয়া যায়নি।
ঈদে জর্দা রান্নায় ব্যবহারের জন্য জাফরানি রং কিনতে গিয়ে আপনি ঠকবেন, এটা নিশ্চিত। জাফরানি রং অত্যন্ত দামি বলে ১০-২০ টাকার জাফরানি রং কোনো দোকানির পক্ষে বিক্রি করা সম্ভব নয়। জাফরানি রং বলে অসাধু দোকানদার দিয়ে থাকে টেক্সটাইল কালার। রংটি ফুড কালার না টেক্সটাইল কালার, তা চেনার সহজ উপায় হলো—একটুখানি রং হাতে নিয়ে ঘষুন, এরপর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ফুড কালার হলে হাতে লেগে থাকবে না। যদি লেগে থাকে, তাহলে তা টেক্সটাইল কালার এবং তা তুলতে সাবান লাগবে। অতএব, ঝুঁকি না নিয়ে রংহীন জর্দা খাওয়ার অভ্যাস করুন।
একই কারণে পোলাও, বিরিয়ানি বা শরবতেও রঙের ব্যবহার বর্জন করা ভালো।
পোলাও, বিরিয়ানি বা কোর্মায় ঘি ব্যবহার না করাই ভালো। ভেজালের দৌরাত্ম্যে বাজারে আসল ঘি প্রায় দুর্লভ হলেও ঘিয়ের গন্ধযুক্ত অন্য জিনিস পাওয়া যায়। তাই ঘিয়ের পরিবর্তে সয়াবিন দিয়ে রান্না করাই ভালো। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকি কমার পাশাপাশি রক্তে কোলেস্টেরল জমার আশঙ্কাও কমবে। ইদানীং কেউ কেউ খাঁটি সরিষার তেলের পোলাও, বিরিয়ানি রান্না করছেন। এর স্বাদও চমর্যাকার। তবে সরিষার তেলটি খাঁটি কি না, তা-ও নিশ্চিত হতে হবে। স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ঝাঁজওয়ালা এসব তেল শরীরের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
বাজারে অধিকাংশ হলুদ-মরিচ-ধনে-জিরার পাউডারে ভেজাল পাওয়া যাচ্ছে। বিশেষ করে হলুদ ও মরিচের গুঁড়ায় পাওয়া গেছে যথাক্রমে সুদান রেড এবং লেড ক্রোমেট। সুদান রেড ক্যানসার তৈরি করে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক নিষিদ্ধ। আর লেড ক্রোমেট লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং হেভি মেটাল পর্যায়ভুক্ত বলে শরীর থেকে সহজে বেরিয়ে না গিয়ে জমে থাকে ও ক্ষতি করে।
টেক্সটাইল কালারের কারণে বাজারের অধিকাংশ সস ও আচার খাওয়ার অযোগ্য। টকটকে লালগুলোতে থাকে সুদান রেড কিংবা এমারান্থ। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণে এমারান্থ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশেই নিষিদ্ধ।
ক্ষতিকর টেক্সটাইল কালার আমাদের দেশে চকলেট-আইসক্রিম-দই-মিষ্টি ইত্যাদি তৈরিতে দেদার ব্যবহূত হচ্ছে। শরবত তৈরিতে ব্যবহূত প্রায় সব পাউডার-গ্রানিউলস বা কনসেনট্রেটে খাদ্য-নিষিদ্ধ টেক্সটাইল কালার রয়েছে। এগুলো ব্যবহারে সাবধান হওয়া উচিত। তাই স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনা করে হলুদ রঙের দই বর্জন করুন, সাদা রঙের দই কিনুন। মিষ্টির বেলায়ও একই কথা প্রযোজ্য, স্বাস্থ্যরক্ষার কারণে রংহীন মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস করুন।
আম-কমলার তথাকথিত জুসগুলো কৃত্রিম। এগুলোতে এমন সব কৃত্রিম রং ব্যবহার করা হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য নিরাপদ নয়। বিজ্ঞাপনের মোহে পড়ে, বিশেষ করে বাচ্চারা, যেন এসব জুস নিয়মিত না খায়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকুন। কারণ, বাচ্চাদের লিভার-কিডনি-অস্থিমজ্জা-ফুসফুস—সবই অপরিণত বলে ক্ষতিকর রংগুলো বড়দের চেয়েও বাচ্চাদের ক্ষতি করে বেশি।
ঈদে নিশ্চয়ই প্রচুর কোল্ড ডিংকস খাওয়া হবে। মাঝেমধ্যে কোল্ড ড্রিংকস খাওয়া ক্ষতিকর নয়, তবে বেশি খাওয়া ক্ষতিকর। বিশেষ করে বাচ্চাদের কোলাজাতীয় কোনো কোল্ড ড্রিংকস না দেওয়াই ভালো। এর উচ্চ মাত্রার ক্যাফেইন বাচ্চাদের স্নায়ুতন্ত্রকে উত্তেজিত করে, মেজাজ খিটখিটে করে, অস্থিরতা আনে, লেখাপড়ায় গভীর মনঃসংযোগে বিঘ্ন ঘটায়, কিডনিকে চাপে ফেলে। বিকল্প হিসেবে আপনি বরফ মিশিয়ে লেবুর শরবত খান। ডায়াবেটিস থাকলে লবণ মিশিয়ে লেবুর শরবত খাওয়া যেতে পারে। বাজারে বেশ কিছু এনার্জি ড্রিংকস বিভিন্ন নামে পাওয়া যাচ্ছে। এগুলোতে থাকে অতি উচ্চমাত্রার সুগার ও ক্যাফেইন। শুধু তরুণেরাই পরিমিত মাত্রায় খেতে পারে, কিন্তু বৃদ্ধ ও বাচ্চারা কখনোই নয়।
সবার জন্য ঈদ হোক আনন্দের ও সুস্বাস্থ্যের।
প্রফেসর আ ব ম ফারুক: ডিন (ভারপ্রাপ্ত), ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
abmfaroque@yahoo.com
No comments