‘৫ মাসেও সরকার চমক দেখাতে পারেন নাই’ জুলাই ঘোষণা নিয়ে মাঠে ছাত্ররা, দ্বিধায় সরকার
এ ছাড়া জটিলতা নিরসন করে জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে আহত ও নিহতদের পরিবারকে দ্রুত সহায়তা প্রদান করতে হবে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে জড়িত অপরাধীদের দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে, গণঅভ্যুত্থানের জন্য সম্পূর্র্ণ পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে এবং সকল দাবিগুলো সরকারিভাবে লিপিবদ্ধ করে দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
কবি নজরুল সরকারি কলেজের আহত শিক্ষার্থী মো. তৌফিক শাহরিয়ারের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ, আলোকচিত্রী ও মানবাধিকার কর্মী শহিদুল আলম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাজমুল হাসানসহ আহত ও নিহত পরিবারের সদস্যরা।
জুলাই ঘোষণা নিয়ে মাঠে ছাত্ররা, দ্বিধায় সরকার
ছাত্র-জনতার নজিরবিহীন আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের চার মাস পর আন্দোলনকারীরা জুলাই বিপ্লবের ঘোষণার বিষয়টি সামনে আনেন। শুরুতে সরকার থেকে বলা হয়, এর সঙ্গে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। এটিকে যেন একটি বেসরকারি উদ্যোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এরপর ৩০শে ডিসেম্বর সরকার জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা প্রস্তুতের কথা জানায়। ছাত্ররা সরকারে আস্থা রেখে বিপ্লবের ঘোষণা থেকে সরে আসে। কিন্তু এর জন্য সরকারকে ১৫ দিন সময় বেঁধে দেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। ছাত্রদের বেঁধে দেয়া সময় শেষ হচ্ছে আগামী পরশু। কিন্তু জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা নিয়ে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে সরকারের একজন উপদেষ্টা জানিয়েছেন, সরকার জুলাই বিপ্লব ঘোষণা করবে না তারা কেবল সহায়তা করবে। এরপর নতুন করে আলোচনা সরকার আসলে কী করতে চাইছে। সরকার জুলাই বিপ্লব নিয়ে রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার কথা বললেও এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কারও সঙ্গে বসা হয়নি। অন্যদিকে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা নিয়ে জনমত তৈরি করতে মাঠে নেমেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটি। আর বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা নিয়ে আপত্তি জানিয়ে রেখেছে। সবমিলিয়ে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণা নিয়ে অস্পষ্টতা কাটেনি।
বিষয়টি নিয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন শনিবার বলেন, সরকারের আশ্বাসে গত ৩১শে ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ স্থগিত রাখা হয়। সরকারের তরফ থেকে আগের রাতে আশ্বস্ত করা হয় যে সরকার সব রাজনৈতিক পক্ষ ও অন্যদের সঙ্গে বসে জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র জারি করবে। পরদিন সরকারকে ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র জারির কাজটি শেষ করতে আহ্বান জানানো হয়। তবে সরকার এখন পর্যন্ত তেমন কিছু জানায়নি।
এর আগে বৃহস্পতিবার সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে ঘোষণাপত্র তৈরি করা। তবে এই সময় কিছুটা বাড়ানো হতে পারে। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রস্তুত করা হবে। সরকার কোনো ঘোষণাপত্র দেবে না। এটি আসবে শিক্ষার্থীদের প্রস্তাবনা এবং সব রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে। এজন্য শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী সপ্তাহ থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় শুরু হবে। তিনি বলেন, সরকার যখন অনুভব করলো বিষয়টি শুধু ছাত্রদের দিক থেকে গেলে সেটি বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা ও ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ফলে সরকার দায়িত্ব নিয়েছে, সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি ঘোষণাপত্র তৈরি করা হবে। অন্যদিকে সরকারের সময় নেয়ার বিষয়ে জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, সরকারকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজটি শেষ করার আহ্বান জানাই। আর যদি অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয়, তাহলে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর পর সবাই মিলে এ বিষয়ে শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে শনিবার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠন আব্দুল হান্নান মাসুদ দাবি করেছেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র যাতে না হয়, সেজন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে নানাভাবে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ১৫ই জানুয়ারির মধ্যে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র প্রকাশে আমাদের পক্ষ থেকে সরকারকে একটা আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে। তার আলোকে আমরা মাঠে মানুষের সঙ্গে কথা বলছি। আমরা মানুষের কাছ থেকে মেসেজ নিতে এসেছি, তারা আগামীর বাংলাদেশ কেমন দেখতে চাচ্ছেন? আগামীর বাংলাদেশ নিয়ে তাদের স্বপ্ন কী, সেটা জানতে এসেছি। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে যারা জীবন বাজি রেখে লড়াই করেছেন। গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের রক্তের বিনিময়ে আমরা যে বাংলাদেশ পেয়েছি, সেই বাংলাদেশে তারা কী ধরনের পরিবর্তন দেখতে চাচ্ছেন, সেটা আমরা জানতে এসেছি। তাদের চাওয়াটা যাতে আমরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি, সেজন্য আমরা তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন মেসেজ নিয়ে যাচ্ছি। যে মানুষগুলো আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে লড়াই করেছেন, তাদের আগামীতেও আমরা পাশে চাচ্ছি, যাতে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্বীকৃতিতে কেউ বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। ১০ই জানুয়ারি ভোলায় জনসংযোগকালে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠন সারজিস আলম বলেন, ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ যেন কয়েকজনের কথা না হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। এই ঘোষণাপত্রে প্রতিটি জেলা ও উপজেলার শ্রমিক, মেহনতি মানুষের আত্মত্যাগের কথা উঠিয়ে আনতে হবে। এটি যেন কয়েকজনের কথা না হয়। তিনি বলেন, ১৫ বছর ধরে বাংলাদেশের জনগণ একটি নজিরবিহীন ফ্যাসিবাদী ও মাফিয়া শাসনের অধীন চরম জুলুম-নির্যাতন সহ্য করেছে। বাংলার মানুষ হাতে হাত রেখে বাংলার মাটিতে লড়াই করে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারকে বিদায় করেছে। সেজন্য বাংলার জনগণ সরকারের কাছে অবিলম্বে ২৪’র অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রে সবার আগে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার বিচার দেখতে চায়।
অন্যদিকে জুলাই বিপ্লব নিয়ে সরকার আসলে কী করছে তা স্পষ্ট নয়। বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করার কথা বলা হলেও সেটি এখনো দৃশ্যমান নয়। কবে নাগাদ হবে তাও অজানা সবার কাছে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও এ বিষয়ে কথা বলতে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকি সরকার কী করছে তাও প্রকাশ করা হচ্ছে না। গতকাল এ বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে নতুন করে কিছু অ্যাড করার নেই। বৃহস্পতিবার উপদেষ্টা যা বলেছেন সেটিই সরকারের বক্তব্য।
No comments