পণ্ডিত নেহরুকে লেখা পণ্ডিত মান্টোর ঐতিহাসিক পত্রের ব্যবচ্ছেদ by কে এইচ রুধির

সাদাত হাসান মান্টো, জীবনের শেষ দিকে ‘বেগায়রে ওনওয়ানকে(নামহীন)’ নামে একটি উপন্যাস লিখে গেছেন। ১৯৫৪ সালের অগাস্টের দিকে প্রকাশিত এই উপন্যাসের ভূমিকা ছিল একটি পত্র। তবে যেই সেই পত্র নয়, তখনকার ভারতের প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে লেখা রাজনৈতিক বিচক্ষণতা ও সাহিত্য মানসম্পন্ন একটি পত্র। বইটি মান্টো নেহরুকে উৎসর্গ করেছিলেন। পত্রটি ঐতিহাসিকভাবেও গুরুত্বপূর্ণ ।
পত্রের শুরুতেই মান্টো নেহরুকে ‘পণ্ডিতজি’ সম্বোধন করে কৌতুক ছলে আমেরিকানদের নেহরু প্রীতির কথা তুলে ধরে লিখছেন-

“পণ্ডিতজি, আসসালাম আলায়কুম-
*এটা আমার প্রথম পত্র, যেটা আপনার দরবারে প্রেরণ করছি। আপনি মাসাল্লাহ আমেরিকানদের কাছে খুব সুপুরুষ বলে পরিগণিত। কিন্তু আমি মনে করি, আমার গঠনাকৃতিও খুব একটা মন্দ না। যদি আমেরিকা যাই, তাহলে হয়তো আমাকেও সেই সৌন্দর্যের মর্যাদা প্রদান করা হবে।”
তারপরই মান্টো, নেহরুর সাথে কী কী মিল এবং অমিল আছে সেইটার বয়ান দিয়ে লিখছেন-

*“কিন্তু আপনি হচ্ছেন বিশাল হিন্দুস্থানের প্রধানমন্ত্রী, আর আমি পাকিস্তানের একজন শ্রেষ্ঠ গল্পকার। দু’টোর মধ্যে অনেক ব্যবধান। অবশ্য একটা ব্যাপারে আমাদের দু’জনের মধ্যে মিল আছে, আপনিও কাশ্মিরী, আমিও কাশ্মিরী। আপনি নেহরু, আমি মান্টো। কাশ্মিরী হবার আরেক মানে সৌন্দর্য এবং সৌন্দর্য মানে… যা আমি এখনো দেখিনি।”

মান্টো আফসোস করে বলছেন নিজে কাশ্মিরী হয়েও তাঁর কাশ্মীরের সৌন্দর্য প্রাণ ভরে উপভোগ করার কিংবা অনুভব করার সৌভাগ্য হয়নি কারণ তাঁর “স্রেফ বাঁহাল পর্যন্ত যাবার সৌভাগ্য হয়েছে”। কাশ্মিরী হবার কারণে তাঁর নেহরুর সাথে দেখা করবার অনেক আগ্রহ থাকা সত্ত্বেও কখনো নেহরুর সাথে দেখা হয়নি। যদিও উনি বলছেন তার দরকার নেই, জীবন চলার পথে “কোন না কোন রাস্তায়, কিম্বা কোন চৌমাথায় এক কাশ্মিরীর সাথে অপর কাশ্মিরীর দেখা হয়েই যায়” কিন্তু নেহরুর সাথে উনার কখনো দেখা হয়নি। মান্টো সচেতনভাবেই এইখানে ভৌগলিকভাবে দ্বিখণ্ডিত কাশ্মীরের দিকে ইঙ্গিত করছেন, যার কারণে এক কাশ্মিরীর সাথে আরেক কাশ্মিরীর সাক্ষাৎও দুরূহ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী হবার দরুণ কাশ্মিরী হয়েও নেহরু যে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কাঠামোর কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন সেইটারও একটি সূক্ষ্ম ইঙ্গিত আছে মান্টোর লেখায়। মান্টো লিখছেন ‘নহর’ এর পাশে জন্ম বলে নাম রাখা হয়েছে ‘নেহরু’ কিন্তু মান্টোর নাম কেন মান্টো হলো? তাঁর বন্ধু-বান্ধবরা যারা কাশ্মিরী ভাষা জানেন তাদের বরাত দিয়ে উনি বলছেন “মান্টো অর্থ ‘মানুট’, অর্থাৎ দেড়-সেরী পাথর”। মান্টো নেহরু কে তাঁর নামকরণের সার্থকতা জানাতে অনুরোধ করে লিখেছেন-

*“আমি যদি সত্যি দেড় সের হই তাহলে আপনার সাথে আমার কোন তুলনাই হয় না। আপনি পুরো নহর আর আমি স্রেফ দেড়-সেরী। আপনার সাথে আমার কি সংঘর্ষ হতে পারে?”

তারপর উনি ঠাট্টা ছলে পণ্ডিত নেহরুকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন সে এবং নেহরু উভয়ই এমন এক জোড়া বন্দুক যা কাশ্মিরীদের সম্পর্কে প্রচলিত প্রবাদ মতে ‘অন্ধকারে নিশানা লাগায়’! মান্টোর ভাষ্যমতে এই প্রবাদ শুনে তাঁর গা জ্বলে কারণ কাশ্মিরীরা আজ পর্যন্ত কোন ময়দানে পরাজয় বরণ করেনি, না কুস্তিতে না কাব্যচর্চায়। নেহরুর রাজনৈতিক অসততার সমালোচনা করে মান্টো লিখেছেন-

*“রাজনীতিতে আপনার নাম বড় গর্বের সাথে নিতে পারি। কারণ আপনি কথা বলে সঙ্গে সঙ্গে বড়খেলাপ করতে বড় পটু।”

ভারত থেকে কাশ্মির হয়ে পাকিস্তানে প্রবাহিত নদীগুলোর গতিপথ বন্ধ করে দেয়ার অবিবেচনাপ্রসূত ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে মান্টো লিখছেন-

*“তা পণ্ডিতজি, আপনি তো স্রেফ নেহেরু। দূর্ভাগ্য যে, আমিও স্রেফ দেড়-সেরী পাথর। যদি ত্রিশ-চল্লিশ-মণী পাথর হতাম, তাহলে নিজেকে সেই নদীতে শুইয়ে দিতাম। যাতে পাথর সরাবার জন্য আপনাকে অন্ততঃ কিছুক্ষণ সময়ের জন্য হলেও ইঞ্জিনীয়ারদের সঙ্গে পরামর্শ করতে হতো।”

উপরোক্ত বাক্যগুলোতে মান্টোর প্রতিবাদী মননের নিদর্শন পাওয়া যায়। মান্টো আসলে বুঝাতে চাইছেন উনি নেহরুর মতো রাজনৈতিকভাবে এত ওজনদার ও প্রভাবশালী ব্যক্তি নন। অন্যথায় তিনি নেহরুর এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দাঁড়াতেন এবং তাঁকে এই অবিচেনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে আরো গভীরভাবে ভাবতে বাধ্য করতেন যৌক্তিক সমাধানের জন্য। মান্টোর এই পত্র ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক পানি বন্টন চুক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। মান্টো এমন সময় এই পত্রটি লিখছেন যখন দুই দেশের মধ্যে প্রবাহিত নদীগুলোর পানির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যুদ্ধংদেহী অবস্থা। মান্টো রাজনীতিবিদ না হওয়া সত্ত্বেও সেই সময় তাঁর দেশের ন্যায্য হিৎসা চাইতে কলম ধরেছেন। নিজ দেশ ও জনগণের প্রতি বুদ্ধিজীবীদের যে দায়িত্ব মান্টো সেই দায়িত্ব থেকে সরে যাননি।

মান্টোর মৃত্যুর প্রায় পাঁচ বছর পর, টানা আট বছর দর কষাকষির পর ১৯৬০ সালের সেপ্টেম্বর ১৯ তারিখে সিন্ধু পানি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। মান্টো আরো সমালোচনা করে লিখেন যে পণ্ডিত নেহরু যতই বিখ্যাত ব্যক্তি হোক না কেন উনি এক পরিচয়ের মোড়কে আবদ্ধ-‘হিন্দুস্থানের প্রধানমন্ত্রী’। এই হিন্দুস্থানের সাথে মান্টোরও সম্পর্ক আছে কিন্তু এখন তাতে পণ্ডিত নেহরুর রাজত্ব, তিনিই সর্বেসর্বা, তিনিই নিয়ন্ত্রক। পত্রের শেষের দিকে মান্টো অভিযোগ তুলেছেন যে নেহরুর রাজত্বে বসবাস করে দিল্লী, লক্ষ্ণৌ ও জুলান্ধরের প্রকাশকরা বিনা অনুমতিতে তাঁর বই ছেপে বেআইনিভাবে ব্যবসা করে চলছে কিন্তু নীতিবাদী পণ্ডিতজি সেইদিকে দৃষ্টিপাতও করছেন না-

*“আপনি আমাদের নদীর পানি বন্ধ করে দিচ্ছেন। আর আপনার দেখাদেখি আপনার রাজধানীর প্রকাশকরা অনুমতি ছাড়াই আমার বইগুলো চটপটে ছেপে বের করে ফেলছে। এটা কোন ধরনের ভদ্রতা! আমিতো ভেবেছিলাম, আপনার মন্ত্রিত্বে এ ধরনের হীন কাজ হতেই পারে না।”

ভারতে মান্টোর বই শুধু বেআইনিভাবেই ছাপা হচ্ছিল না এমনকি প্রকাশকরা ইচ্ছেমতো নাম দিয়ে মান্টোর গল্প সংকলন বের করে ফেলছিল। অশ্লীলতার অভিযোগে মান্টোকে মোট ছয়বার অভিযুক্ত হয়েছেন। অবিভক্ত ভারতে তিনবার (ধোঁয়া, বু, কালি শালোয়ার) এবং দেশভাগের পর পাকিস্তানে আরো তিনবার(খোল দো, ঠান্ডা গোশত, উপর নিচে দারমিয়া)। অশ্লীলতার অভিযোগের প্রেক্ষিতে মান্টোর উত্তর ছিল ‘আমি একজন গল্প লেখক, কোন পর্ণগ্রাফার নই’। একদিকে মামলা-মোকাদ্দমা চলছে আর সেই সময়েই দিল্লীতে এক প্রকাশক ‘মান্টোর অশ্লীল গল্প’ নাম দিয়ে গল্প সংকলন বের করে চুটিয়ে ব্যবসা করছিল। এমনকি তাঁর ‘গঞ্জে ফেরেশতে’ নামের বইটিও ভারতের এক প্রকাশক ছাপিয়ে দিল ‘পর্দে কে পিছে’ নামে! সেই সব অভিযোগ শেষে মান্টো পণ্ডিত নেহরুকে এক প্রকার সূক্ষ্ম হুমকি দিয়েই জানাচ্ছেন-

*“আমি এই নতুন বইটি লিখলাম। এই পত্রই তার ভূমিকা যেটি আপনার কাছে লিখছি। এই বইটাও আপনাদের ওখানে কেউ বেআইনীভাবে প্রকাশ করে বসে, তাহলে খোদার কসম, আমি যে কোন দিন দিল্লী এসে আপনার কলার চেপে ধরবো, আর ছাড়বো না আপনাকে-এমনভাবে আপনার ওপর চেপে বসব যে, আজীবন মনে থাকবে, প্রতিদিন ভোরে উঠে বলবো নিমকা-চা খাওয়ান। সাথে একটা তাফতানাও। শালগমের শবদেগ তো প্রতি সপ্তাহ অন্তে থাকবেই।”

কাশ্মীরিদের আতিথেয়তা ও আন্তরিকতার উদাহরণ দিতে গিয়ে মান্টো তাঁর পিতা মরহুম গোলাম হাসান মান্টো’র কথা লিখেছেন। তাঁর পিতা কোন ‘হাতুর’ এর দেখা পেলেই ডেকে নিয়ে বাড়ী আসতেন। দেউড়িতে বসিয়ে নিমকা-চা ও কুলচা খাওয়াতেন এবং গর্বভরে বলতেন ‘আমিও কাশর’। এই যে এক কাশ্মিরীর অপর কাশ্মিরীর সাথে অবিচ্ছেদ্য আত্মিক বন্ধন, সেইটাই মান্টোর কাছে স্বাভাবিক মনে হয়। এমনকি এই টানটি প্রত্যেক কাশ্মিরী যে জীবনে এক বারও কাশ্মীরের সৌন্দর্য চোখ মেলে দেখেনি তার ভেতরেও থাকা উচিত বলে মনে করেন। মান্টো এই কথা দিয়ে কাশ্মীরের সৌন্দর্য পুরোপুরি না দেখা সত্ত্বেও তাঁর ভেতর কাশ্মীরের প্রতি যে অবিচ্ছেদ্য আত্মিক টান অনুভব করেন সেইটার দিকেই ইঙ্গিত করছেন। মান্টো শুধু কাশ্মীরের সৌন্দর্য দেখেননি, দেখেছেন ক্ষুধা-দারিদ্র্য আক্রান্ত কাশ্মিরীদেরও। তাদের দুঃখ-দুর্দশা, অভাব-অনটন মান্টোকে ভাবিয়েছে। পত্রের এক পর্যায়ে মান্টো নেহরুকে আহ্বান জানাচ্ছেন যদি তিনি কাশ্মিরীদের ক্ষুধা দারিদ্র্য দূর করতে পারেন তাহলে কাশ্মীরকে তাঁর কাছেই রেখে দিতে। কিন্তু মান্টো জানেন নেহরু তখন যতটা না কাশ্মিরী তার চেয়ে বেশি ‘হিন্দুস্থানের প্রধানমন্ত্রী’, তাই তিনি লিখছেন-

*“তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আপনি স্বয়ং কাশ্মিরী হওয়া সত্ত্বেও তা দূর করতে পারবেন না, কারণ আপনার সে অবকাশই নেই।”

মান্টো লিখেছেন তিনি রাজনীতিবিদ নন কিন্তু এমন না যে রাজনীতির কিছুই বুঝেন না। তাই তিনি নেহরুর কাছে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন তাঁকে কাশ্মীর দেখা-শোনার দায়িত্ব সমঝে দেওয়ার জন্য। বখশী গোলাম মোহাম্মদ(জম্মু-কাশ্মীর রাজ্য প্রধান, ১৯৫৩-৬৪) এর মতো প্রথম শ্রেণির জুচ্চোর ও বাটপারদের হাতে কাশ্মীরের দেখা শোনার ভার নেয়ার জন্য কেন খামোখা বখশিশ দিয়ে রাখছেন সেইটা নিয়েও প্রশ্ন করেছেন।

রেডক্লিফ লাইনের ভিত্তিতে ৪৭ এর দেশভাগ মান্টোর হৃদয়েও দাগ কেটেছিল। সেই ক্ষত নিয়েই বাকি জীবন পার করেছেন, কখনো সেই ক্ষত সেরে উঠেনি। বানরের রুটি ভাগ করার মত এই দেশভাগের কারণে মানুষে মানুষে যে সংঘাত হলো, হানাহানি হলো, রক্তগঙ্গা বয়ে গেল দুই দেশেই, সেই ইতিহাস, সেই ভয়ংকর অমানবিক দৃশ্যগুলো মান্টোকে তাড়িয়েছে আমৃত্যু। মান্টোর লেখাপত্র জুড়েই সেইসবের উপাদান পাওয়া যায়। বৃটিশরাজ খুব সচেতনে দুই দেশের মানুষের মধ্যে যে জাতিবিদ্বেষের বীজ বপন করে গেছে সেইটা উপড়ে ফেলা সম্ভব হয়ে উঠেনি, বরঞ্চ সময়ে-অসময়ে ডালপালা মেলেছে। দেশভাগ পরবর্তী যে রক্তগঙ্গা বয়ে গেল তার দায়ভার থেকে নেহরু ও জিন্নাহ কেউই মুক্ত নন। দেশভাগ পরবর্তী ভারত সরকার কর্তৃক জুনাগড় রাজ্য দখলের কথা মান্টো তাঁর পত্রে উল্লেখ করেছেন। ১৯৪৭ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর জুনাগড় পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয় কিন্তু ৯ নভেম্বরে আবার ভারত জুনাগড় দখল করর নেয় এবং পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালের ২৫ শে ফেব্রুয়ারি কার্যকরভাবে ভারত রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হয়। নেহরুর এমন ভূমিকার সমালোচনা করে মান্টো লিখেছেন-

*“যেটা কোন কাশ্মিরী একমাত্র কোন মারাঠার প্রভাবেই করতে পারে; আমার ইঙ্গিত প্যাটেলের প্রতি।”

ভারত ভাগের পর পর নেহরুর দেওয়া ভাষণকে কটাক্ষ করে মান্টো লিখেছেন “আমার বোধগম্য হলো না আপনি এমন ভাষণ পাঠ করার জন্য রাজী হলেন কি করে…!” মান্টোর মতে নেহরু যেন প্রতি বাক্যের উপর বমি করছিল। মান্টো রাজনীতিবিদ নন কিন্তু তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতা ও বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায় নিম্নোক্ত বক্তব্যে-

*“এটা তখনকার কথা, যখন ‘রেড কলফ’ ভারতকে ডবল রুটির দু’টো টুকরো করে রেখে দিয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য যে, এখনো সেঁকা হয়নি। ওদিকে আপনি সেঁকছেন এদিকে আমরা। কিন্তু আমাদের উভয়ের উনুনের আগুন আসছে বিদেশ থেকে।”

বৃটিশ বানরের কাছে ভৌগোলিক রুটি সমানভাগে ভাগ করাতে গিয়ে দুই দেশের মধ্যে যে বিদ্বেষের বিষবাষ্পের উদ্ভব হলো সেটির সমাপ্তি কোথায়? যে স্বাধীন সার্বভৌমত্বের জন্য এত রক্তপাত সেটাও তো এক প্রকার ছলনাই! বৃটিশরাজের ‘ভাঙো এবং শাসন করো’ নীতিই অনুকরণ করে চলছি আমরা। মান্টো তাই পত্রের শেষে নিজেকে পরিচয় দিচ্ছেন ‘একজন ঝলসানো হৃদয়ের মানুষ’ হিসেব যাঁর শরীর থেকে ‘পোড়া মাংশের গন্ধ আসছে’।

টীকাঃ

‘প্রেম আমার প্রেম’ বইটির ভূমিকায় বাংলায় অনূদিত যে পত্রটি আছে তাতে দেশভাগের পর ভারত সরকার কর্তৃক হায়দ্রাবাদ দখলের কথাও উল্লেখ আছে। কিন্তু ইংরেজি অনুবাদটিতে হায়দ্রাবাদ দখল সংক্রান্ত কোন বাক্যই নেই। ‘প্রেম আমার প্রেম’ বইটিতে উল্লেখিত অংশটি নিম্নরূপঃ
“হায়দ্রাবাদের প্রতিও আপনি প্রতিবেশী সুলভ আক্রমণ চালালেন। হাজার হাজার মুসলমানের রক্তের গঙ্গা বইয়ে দিলেন এবং অবশেষে হায়দ্রাবাদ দখল করে নিলেন। এটি কি আপনার জন্য বাড়াবাড়ি নয়?”

তথ্যসূত্রঃ

১। পত্রটির বাংলা অনুবাদ সাদাত হাসান মান্টোর ‘বেগায়রে ওনওয়ানকে(নামহীন)’ উপন্যাসের বাংলা অনুবাদ ‘প্রেম আমার প্রেম’ গ্রন্থের ভূমিকা থেকে নেওয়া হয়েছে। অনুবাদ করেছেন আখতার-উন-নবী। প্রকাশকালঃ মে ১৯৮০। প্রকাশনায়ঃ বাংলাবাজার, ঢাকা।

২। ২। পত্রটির ইংরেজি অনুবাদ পাওয়া যাবে সাদাত হাসান মান্টোর গল্প সংকলন ‘Black Margines: Stories’ বইয়ে। পৃষ্ঠাঃ ২৭১-২৭৫। পত্রটির ইংরেজি অনুবাদ করেছেন M Asaduddin। পত্রটির ইংরেজি অনুবাদ পড়তে পারবেন এই লিংক থেকেওঃ >>>Manto’s Letter to Nehru

No comments

Powered by Blogger.