একজন সেনাপুত্রের গল্প: ‘আমি জানলাম, আমার বোন আসলে আমার মা’
শৈশবটা
আনন্দেই কাটিয়েছিলেন এলবার্ট গিলমোর। এরপর কৈশোর শেষে সময়ের আবর্তে যুবকে
পরিণত হলেন। এসব প্রায় ৬০ বছর আগের কথা। তখন ১৯৬৫ সাল। গিলমোর ২১ বছরে পা
দিয়েছেন। বিয়ে করতে চান। সেজন্য জন্ম সনদ দরকার তার। মায়ের কাছে জন্ম সনদ
চাইলেন। কিন্তু তার মা জন্ম সনদ দিতে ইতস্তত করছিলেন। জন্ম সনদটায় লুকিয়ে
ছিল তার জীবনের সবচেয়ে বড় গোপন কথা। সনদের যেখানে তার মায়ের নাম থাকার কথা
সেখানে তার বড় বোনের নাম লেখা। বাবার নামের জায়গাটা ফাঁকা। অবাক বিস্ময় আর
অবিশ্বাস নিয়ে গিলমোর জানতে পারলেন, তার বড় বোন আসলে তার বোন নন, তার মা।
সেদিনকার ঘটনা আর অনুভূতি আজও স্পষ্ট মনে আছে এলবার্টের। ভুলেননি। ভোলার কথাও নয়। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ব্যাপারটা খুবই অপ্রীতিকর ছিল। কিন্তু মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। সেদিনের ওই আবিষ্কার তার ২১ বছরের জীবন উলটপালট করে দিয়েছিল। তিনি জানতে পারলেন, এতদিন ধরে যাদের নিজের বাবা-মা ভেবেছেন তিনি তারা আসলে নানা-নানী।
এলবার্ট তার জন্মদাত্রী মা রুবি গিলমোরের কাছে পুরো সত্যটা জানতে চাইলেন। রুবি তাকে বলেন, তার বাবার নাম এলবার্ট কার্লো। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও সেনা ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গিলমোরের জন্মভূমি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে মোতায়েন করা হয় তাকে। রুবির বয়স তখন ১৭। লন্ডনবেরির এংলিংটনে তার বাড়ির কাছেই এলবার্টের ঘাঁটি ছিল। সেখানেই দুজনের দেখা হয়। উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক বছর আগে, ১৯৪৪ সালে এলবার্ট চলে যান। অপারেশন নেপচুনের জন্য ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে মোতায়েন করা হয় তাকে। ওই বছরের নভেম্বরেই এক শিশুর জন্ম দেন রুবি। প্রিয়তমের নামেই শিশুর নামকরণ করেন। রুবির ধারণা, নরম্যান্ডিতে দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যু হয় এলবার্টের।
মায়ের কাছ থেকে নিজের পরিচয় সম্পর্কে সত্য জানার পর এলবার্ট পুরো বিষয়টা নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাননি। নানা-নানী ও মায়ের প্রতি সম্মানবোধ থেকে সব মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি করেন। এ বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে খুব একটা আলোচনা করেননি আর। কিন্তু ৩৫ বছর পর, নব্বইয়ের দশকে তার মেয়ে ক্যারেন কুক নিজের বাবার এই অভূতপূর্ব ঘটনা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
বেশ অল্প বয়স থেকেই ক্যারেন জানতো যে তার দাদা একজন আমেরিকান সেনা ছিলেন। এলবার্ট কার্লোর একটি ঠিকানা জানতেন রুবি। যুদ্ধের সময় রুবিকে একটি সিগারেটের প্যাকেটে ওই ঠিকানা লিখে দিয়েছিলেন তিনি। ৫০ বছর পর ওই ঠিকানা ব্যবহার করে এলবার্টের এক ফুফুর সন্ধান খুঁজে বের করেন ক্যারেন। ক্যারেন জানান, আমি আমার বাবাকে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার হিসেবে তার আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলাম। আমি জানতাম তার মধ্যে ওই আমেরিকান আত্মীয়দের জন্য সবসময় একটা টান কাজ করে।
ক্যারেনের অনুসন্ধানে বিস্ফোরক এক তথ্য বের হয়ে আসে। ক্যারেন জানতে পারেন, তার ২০ বছর আগে মারা গেছেন, ৫০ বছর আগে নয়। এলবার্ট যখন প্রথম তার বাবার পরিচয় সম্পর্কে জেনেছিলেন, তখন তার বাবা বেঁচে ছিল। যুদ্ধ শেষে ফের বিয়ে করেছিলেন কার্লো। দুই পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। এলবার্টকে তার বাবার একটি ছবি পাঠান তার ফুফু। বিস্মিত চোখে বাবার সঙ্গে নিজের চেহারার মিল আবিষ্কার করেছিলেন এলবার্ট। পরবর্তীতে আমেরিকায় ভ্রমণ করেন তিনি। সে স্মৃতিচারণ করে বলেন, সব অবাস্তব লাগছিল। আমার মধ্যে আমি আমার বাবার ছায়া দেখতে পারছিলাম। আমাকে কিছুই ব্যাখ্যা করতে হয়নি, কিছুই প্রমাণ করতে হয়নি। সবাই জানতো আমি কে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের চেয়ে আমেরিকাকে বেশি আপন মনে হয়েছিল আমার।
আমেরিকায় নিজের বাবার কবর পরিদর্শন করেন এলবার্ট। এ নিয়ে তিনি বলেন, সমাধির প্রস্থরখ-টি তুষারে ঢাকা পড়ে গেছিল। আমি সেগুলো সরিয়ে তার নাম দেখেছিলাম। মনে হয়েছিল ভেতর থেকে বিশাল একটা বোঝে যেন নাই হয়ে গেছে। সেখান থেকে চলে আসার সময় জীবনকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছিল। আর কোনো অপেক্ষা নয়। নিজের পরিচয় নিয়ে আর কোনো উদ্বেগ নয়।
আমেরিকা থেকে ফিরে বাবার একটি ছবি মাকে দেখান এলবার্ট। ছবি দেখেই রুবির চোখ দিয়ে অশ্রু বেয়ে পড়ে। এলবার্ট বলেন, তিনি খুব কষ্ট নিয়ে কেঁদেছিলেন। তার জন্য ব্যাপারটা খুব কঠিন ছিল। বাবা ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছিল। তিনি রুবিকে বলেন, যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরতে পারেননি কার্লো। তাকে সরাসরি আফ্রিকায় মোতায়েন করা হয়। কিন্তু তিনি আজীবন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের যুদ্ধের সময়কার পয়সা নিজের কাছে রেখেছিলেন।
সেদিনকার ঘটনা আর অনুভূতি আজও স্পষ্ট মনে আছে এলবার্টের। ভুলেননি। ভোলার কথাও নয়। স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, ব্যাপারটা খুবই অপ্রীতিকর ছিল। কিন্তু মেনে নেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। সেদিনের ওই আবিষ্কার তার ২১ বছরের জীবন উলটপালট করে দিয়েছিল। তিনি জানতে পারলেন, এতদিন ধরে যাদের নিজের বাবা-মা ভেবেছেন তিনি তারা আসলে নানা-নানী।
এলবার্ট তার জন্মদাত্রী মা রুবি গিলমোরের কাছে পুরো সত্যটা জানতে চাইলেন। রুবি তাকে বলেন, তার বাবার নাম এলবার্ট কার্লো। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও সেনা ছিলেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গিলমোরের জন্মভূমি নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে মোতায়েন করা হয় তাকে। রুবির বয়স তখন ১৭। লন্ডনবেরির এংলিংটনে তার বাড়ির কাছেই এলবার্টের ঘাঁটি ছিল। সেখানেই দুজনের দেখা হয়। উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। যুদ্ধ শেষ হওয়ার এক বছর আগে, ১৯৪৪ সালে এলবার্ট চলে যান। অপারেশন নেপচুনের জন্য ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে মোতায়েন করা হয় তাকে। ওই বছরের নভেম্বরেই এক শিশুর জন্ম দেন রুবি। প্রিয়তমের নামেই শিশুর নামকরণ করেন। রুবির ধারণা, নরম্যান্ডিতে দায়িত্ব পালনকালে মৃত্যু হয় এলবার্টের।
মায়ের কাছ থেকে নিজের পরিচয় সম্পর্কে সত্য জানার পর এলবার্ট পুরো বিষয়টা নিয়ে আর কথা বাড়াতে চাননি। নানা-নানী ও মায়ের প্রতি সম্মানবোধ থেকে সব মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি করেন। এ বিষয়ে পরিবারের সঙ্গে খুব একটা আলোচনা করেননি আর। কিন্তু ৩৫ বছর পর, নব্বইয়ের দশকে তার মেয়ে ক্যারেন কুক নিজের বাবার এই অভূতপূর্ব ঘটনা নিয়ে গবেষণা শুরু করেন।
বেশ অল্প বয়স থেকেই ক্যারেন জানতো যে তার দাদা একজন আমেরিকান সেনা ছিলেন। এলবার্ট কার্লোর একটি ঠিকানা জানতেন রুবি। যুদ্ধের সময় রুবিকে একটি সিগারেটের প্যাকেটে ওই ঠিকানা লিখে দিয়েছিলেন তিনি। ৫০ বছর পর ওই ঠিকানা ব্যবহার করে এলবার্টের এক ফুফুর সন্ধান খুঁজে বের করেন ক্যারেন। ক্যারেন জানান, আমি আমার বাবাকে সবচেয়ে মূল্যবান উপহার হিসেবে তার আত্মীয়দের সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলাম। আমি জানতাম তার মধ্যে ওই আমেরিকান আত্মীয়দের জন্য সবসময় একটা টান কাজ করে।
ক্যারেনের অনুসন্ধানে বিস্ফোরক এক তথ্য বের হয়ে আসে। ক্যারেন জানতে পারেন, তার ২০ বছর আগে মারা গেছেন, ৫০ বছর আগে নয়। এলবার্ট যখন প্রথম তার বাবার পরিচয় সম্পর্কে জেনেছিলেন, তখন তার বাবা বেঁচে ছিল। যুদ্ধ শেষে ফের বিয়ে করেছিলেন কার্লো। দুই পুত্র সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। এলবার্টকে তার বাবার একটি ছবি পাঠান তার ফুফু। বিস্মিত চোখে বাবার সঙ্গে নিজের চেহারার মিল আবিষ্কার করেছিলেন এলবার্ট। পরবর্তীতে আমেরিকায় ভ্রমণ করেন তিনি। সে স্মৃতিচারণ করে বলেন, সব অবাস্তব লাগছিল। আমার মধ্যে আমি আমার বাবার ছায়া দেখতে পারছিলাম। আমাকে কিছুই ব্যাখ্যা করতে হয়নি, কিছুই প্রমাণ করতে হয়নি। সবাই জানতো আমি কে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের চেয়ে আমেরিকাকে বেশি আপন মনে হয়েছিল আমার।
আমেরিকায় নিজের বাবার কবর পরিদর্শন করেন এলবার্ট। এ নিয়ে তিনি বলেন, সমাধির প্রস্থরখ-টি তুষারে ঢাকা পড়ে গেছিল। আমি সেগুলো সরিয়ে তার নাম দেখেছিলাম। মনে হয়েছিল ভেতর থেকে বিশাল একটা বোঝে যেন নাই হয়ে গেছে। সেখান থেকে চলে আসার সময় জীবনকে পরিপূর্ণ মনে হচ্ছিল। আর কোনো অপেক্ষা নয়। নিজের পরিচয় নিয়ে আর কোনো উদ্বেগ নয়।
আমেরিকা থেকে ফিরে বাবার একটি ছবি মাকে দেখান এলবার্ট। ছবি দেখেই রুবির চোখ দিয়ে অশ্রু বেয়ে পড়ে। এলবার্ট বলেন, তিনি খুব কষ্ট নিয়ে কেঁদেছিলেন। তার জন্য ব্যাপারটা খুব কঠিন ছিল। বাবা ফিরে আসার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছিল। তিনি রুবিকে বলেন, যুদ্ধ শেষে বাড়ি ফিরতে পারেননি কার্লো। তাকে সরাসরি আফ্রিকায় মোতায়েন করা হয়। কিন্তু তিনি আজীবন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের যুদ্ধের সময়কার পয়সা নিজের কাছে রেখেছিলেন।
No comments