মালয়েশিয়ায় সাজেদার ১২ টুকরা লাশ
কৌতূহলী
এক ফটোগ্রাফারের চোখ আটকে যায় একটি কালো ব্যাগে। ধারণা করা হচ্ছিলো
ব্যাগটিতে ভারি কিছু রয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় পুলিশ। সেই ব্যাগ
খুলতেই এক ভয়ংকর দৃশ্য দেখতে পান তারা। ব্যাগের ভেতরে এক নারীর টুকরো
টুকরো লাশ। চাঞ্চলক্যর এই ঘটনাটি ঘটেছে মালয়েশিয়ার কুয়ালামপুরের সুঙ্গাই
গম্বাকের জালান ইপো ব্রিজ এলাকায়। গত ৫ই জুলাই লাশটি উদ্ধার হলেও পাওয়া
যাচ্ছিলো না পরিচয়। মুহূর্তেই খবরটি পৌঁছে যায় সর্বত্র। মালয়েশিয়া থেকে
বাংলাদেশ। মালয়েশিয়ার গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ ও ছবি দেখে গত ১১ই জুলাই
নিহতের স্বজনরা শনাক্ত করেছেন ওই নারীর লাশ। নিহত সাজেদা ই বুলবুল
বাংলাদেশের নাগরিক। তিনি পটুয়াখালীর পুরাতন আদালত পাড়ার ৯৯ বড় মসজিদ
মহল্লার আনিস হাওলাদার ফিটারের মেয়ে। কুয়ালামপুর পুলিশের প্রধান দাতুক সেরি
মাজলান লাজিম গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই নারীর বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছর হবে।
ব্যাগের মধ্যে তার টুকরো লাশ, কসমেটিকস, চাবি ও রক্তমাখা কয়েক জামা পাওয়া
গেছে। এরমধ্যে ‘আল্লাহ্’ লেখা একটি নেকলেস রয়েছে। এ থেকেই পুলিশ ধারণা
করছিলো নিহত নারী মুসলিম। লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠায় পুলিশ। ঘটনার
পর থেকে পলাতক রয়েছে সাজেদার স্বামী শাহজাদা সাজু।
এ বিষয়ে গতকাল মানবজমিন-এর সঙ্গে কথা বলেন, নিহতের বড় বোন খাদিজা পারভীন উপমা। তিনি অভিযোগ করেন, সাজেদাকে হত্যা করেছে সাজু। বিয়ের পর থেকেই এই দম্পতির সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। ঘটনা গড়িয়েছিল থানা পুলিশ পর্যন্ত। ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি ও এলএলএম করেছিলেন সাজেদা। আইন বিষয়ে ডক্টরেট করানোর প্রলোভন দেখিয়ে তাকে মালয়েশিয়া নিয়ে গিয়েছিলো সাজু। শেষ পর্যন্ত সাজু তার বোনকে প্রাণে মারবে এটি ভাবতে পারেননি তারা।
উপমা জানান, ২০০৪ সালে একই জেলার মির্জাগঞ্জের সুবিদখালীর ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের মৃত সোহরাব ফকিরের ছেলে সাজুর সঙ্গে বিয়ে হয় সাজেদার। সাজেদা তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। অন্যদিকে সাজু সৌদি ফেরত, বেকার। সাজেদার বাবা আনিস হাওলাদার লঞ্চের ব্যবসা করেন। বিয়ের পর থেকেই একটার পর একটা দাবি নিয়ে হাজির হয় সাজু। কখনো ব্যবসা, কখনো বিদেশে যাওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা নেয় শ্বশুরের কাছ থেকে। শ্বশুরের টাকায় চলতো সাজুর সংসার। ২০১১ সালে এক কন্যাসন্তানের মা-বাবা হন এই দম্পতি।
সাজেদাকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে থাকতো সাজু। ২০০৭ সালে প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলএম করেন সাজেদা। পাশাপাশি চাকরি করেন একটি ওষুধ কোম্পানিতে। সাজেদার বোন উপমার অভিযোগ, তারপরও বাবার কাছ থেকে টাকা আনার জন্য সাজেদাকে চাপ দিতো। মারধর করতো। খাদিজা পারভীন উপমা বলেন, শাহজাদা সাজু পরকীয়ায় আসক্ত ছিলো। দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইতো। আমার বোন বাধা দিতো। এ নিয়ে কলহ আরও বেড়ে যায়। সাজুকে তার মাসহ পরিবারের সদস্যরাও প্রশয় দিতো বলে অভিযোগ করেন তিনি। সাজেদাকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় সাজু। সেখানে গিয়ে আইন বিষয়ে ডক্টরেট করবে সাজেদা। সেইসঙ্গে দু’জন মিলে ব্যবসা করবে। এরমধ্যেই সাত বছর বয়সী মেয়ে মুগ্ধকে দেশে রেখে সাজেদাকে নিয়ে ২০১৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর মালয়েশিয়া চলে যায় সাজু। মেয়ে মুগ্ধ থাকে শাহজাদা সাজুর বোনের কাছে। কুয়ালামপুরে গিয়ে লেখাপড়া সেভাবে না হলেও স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসা ভালোই করছিলেন। কুয়ালালামপুর একটি রেস্টুরেন্ট চালাতেন সাজেদা। একটি গাড়িও কিনেছিলেন। কিন্তু তখনই সাজেদা বুঝতে পারেন তার স্বামী একজন জুয়ারি। প্রায়ই জুয়ার আসরে বসে কষ্টে আয় করা টাকা হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়। খেসারত হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি করতে হয়েছে রেস্টুরেন্ট, গাড়ি। আবার বাড়তে থাকে স্বামী-স্ত্রীর কলহ। গত ২৭শে জুন সাজু মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয় সাজেদাকে। পরিচিত জনরা সেদিন শাহজাদা সাজু ও সাজেদাকে মিলিয়ে দেন। সাজেদার বোন বলেন, রাগ-অভিমান ভুলে বারবার সংসার করতে চাইলেও সংসার তার ভাগ্যে জুটেনি। প্রায়ই নির্যাতন করা হতো তাকে। হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে থেকেই সাজু বাইরে গেলে বাইরে থেকে তালা দিয়ে যেতো বাসায়। দেশে থাকা মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দিতো না। সর্বশেষ গত ২রা জুলাই কথা হয়েছে দুই বোন উপমা ও সাজেদার। ফোনের ওই প্রান্ত থেকে বোনের কান্না শব্দ পেয়েছেন উপমা। সাজুর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন সাজেদা। এমনকি একমাত্র সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে না দেয়ার কষ্টগুলোও প্রকাশ করেছেন। এই করুণ অবস্থা থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন সাজেদা। শেষপর্যন্ত তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে টুকরো টুকরো করে মুক্তি দিয়েছে সাজু!
মালয়েশিয়ার অবস্থানরত স্বজন ও ময়নাতদন্তের বরাত দিয়ে উপমা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাজেদার মাথায় আঘাত করা হয়। এমনকি তাকে ইনজেকশন পুশ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তারপর তার লাশটি টুকরো টুকরো করা হয়েছে। অন্তত ১২ টুকরো করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তারা। পরে লাশটি ব্যাগে ভরে নদীর চড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকেই লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
উপমা বলেন, লাশ দেশে আনা, মামলা বা আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
এ বিষয়ে গতকাল মানবজমিন-এর সঙ্গে কথা বলেন, নিহতের বড় বোন খাদিজা পারভীন উপমা। তিনি অভিযোগ করেন, সাজেদাকে হত্যা করেছে সাজু। বিয়ের পর থেকেই এই দম্পতির সংসারে অশান্তি লেগেই ছিল। ঘটনা গড়িয়েছিল থানা পুলিশ পর্যন্ত। ঢাকার প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলবি ও এলএলএম করেছিলেন সাজেদা। আইন বিষয়ে ডক্টরেট করানোর প্রলোভন দেখিয়ে তাকে মালয়েশিয়া নিয়ে গিয়েছিলো সাজু। শেষ পর্যন্ত সাজু তার বোনকে প্রাণে মারবে এটি ভাবতে পারেননি তারা।
উপমা জানান, ২০০৪ সালে একই জেলার মির্জাগঞ্জের সুবিদখালীর ঘটকের আন্দুয়া গ্রামের মৃত সোহরাব ফকিরের ছেলে সাজুর সঙ্গে বিয়ে হয় সাজেদার। সাজেদা তখন এসএসসি পরীক্ষার্থী। অন্যদিকে সাজু সৌদি ফেরত, বেকার। সাজেদার বাবা আনিস হাওলাদার লঞ্চের ব্যবসা করেন। বিয়ের পর থেকেই একটার পর একটা দাবি নিয়ে হাজির হয় সাজু। কখনো ব্যবসা, কখনো বিদেশে যাওয়ার নামে লাখ লাখ টাকা নেয় শ্বশুরের কাছ থেকে। শ্বশুরের টাকায় চলতো সাজুর সংসার। ২০১১ সালে এক কন্যাসন্তানের মা-বাবা হন এই দম্পতি।
সাজেদাকে নিয়ে ঢাকার মিরপুরে থাকতো সাজু। ২০০৭ সালে প্রাইম ইউনিভার্সিটি থেকে এলএলএম করেন সাজেদা। পাশাপাশি চাকরি করেন একটি ওষুধ কোম্পানিতে। সাজেদার বোন উপমার অভিযোগ, তারপরও বাবার কাছ থেকে টাকা আনার জন্য সাজেদাকে চাপ দিতো। মারধর করতো। খাদিজা পারভীন উপমা বলেন, শাহজাদা সাজু পরকীয়ায় আসক্ত ছিলো। দ্বিতীয় বিয়ে করতে চাইতো। আমার বোন বাধা দিতো। এ নিয়ে কলহ আরও বেড়ে যায়। সাজুকে তার মাসহ পরিবারের সদস্যরাও প্রশয় দিতো বলে অভিযোগ করেন তিনি। সাজেদাকে মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় সাজু। সেখানে গিয়ে আইন বিষয়ে ডক্টরেট করবে সাজেদা। সেইসঙ্গে দু’জন মিলে ব্যবসা করবে। এরমধ্যেই সাত বছর বয়সী মেয়ে মুগ্ধকে দেশে রেখে সাজেদাকে নিয়ে ২০১৬ সালের ৩রা ডিসেম্বর মালয়েশিয়া চলে যায় সাজু। মেয়ে মুগ্ধ থাকে শাহজাদা সাজুর বোনের কাছে। কুয়ালামপুরে গিয়ে লেখাপড়া সেভাবে না হলেও স্বামী-স্ত্রী মিলে ব্যবসা ভালোই করছিলেন। কুয়ালালামপুর একটি রেস্টুরেন্ট চালাতেন সাজেদা। একটি গাড়িও কিনেছিলেন। কিন্তু তখনই সাজেদা বুঝতে পারেন তার স্বামী একজন জুয়ারি। প্রায়ই জুয়ার আসরে বসে কষ্টে আয় করা টাকা হাওয়ায় উড়িয়ে দেয়। খেসারত হিসেবে গত ফেব্রুয়ারিতে বিক্রি করতে হয়েছে রেস্টুরেন্ট, গাড়ি। আবার বাড়তে থাকে স্বামী-স্ত্রীর কলহ। গত ২৭শে জুন সাজু মারধর করে বাসা থেকে বের করে দেয় সাজেদাকে। পরিচিত জনরা সেদিন শাহজাদা সাজু ও সাজেদাকে মিলিয়ে দেন। সাজেদার বোন বলেন, রাগ-অভিমান ভুলে বারবার সংসার করতে চাইলেও সংসার তার ভাগ্যে জুটেনি। প্রায়ই নির্যাতন করা হতো তাকে। হত্যাকাণ্ডের কয়েক মাস আগে থেকেই সাজু বাইরে গেলে বাইরে থেকে তালা দিয়ে যেতো বাসায়। দেশে থাকা মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে দিতো না। সর্বশেষ গত ২রা জুলাই কথা হয়েছে দুই বোন উপমা ও সাজেদার। ফোনের ওই প্রান্ত থেকে বোনের কান্না শব্দ পেয়েছেন উপমা। সাজুর নির্যাতনের বর্ণনা দিয়েছেন সাজেদা। এমনকি একমাত্র সন্তানের সঙ্গে কথা বলতে না দেয়ার কষ্টগুলোও প্রকাশ করেছেন। এই করুণ অবস্থা থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন সাজেদা। শেষপর্যন্ত তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে টুকরো টুকরো করে মুক্তি দিয়েছে সাজু!
মালয়েশিয়ার অবস্থানরত স্বজন ও ময়নাতদন্তের বরাত দিয়ে উপমা জানান, ধারালো অস্ত্র দিয়ে সাজেদার মাথায় আঘাত করা হয়। এমনকি তাকে ইনজেকশন পুশ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। তারপর তার লাশটি টুকরো টুকরো করা হয়েছে। অন্তত ১২ টুকরো করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছেন তারা। পরে লাশটি ব্যাগে ভরে নদীর চড়ে ফেলে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকেই লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
উপমা বলেন, লাশ দেশে আনা, মামলা বা আসামি গ্রেপ্তারের বিষয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কোনো সহযোগিতা পাচ্ছি না। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, আমরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
No comments