‘বোন’ সু চির জয়ে প্রেসিডেন্ট থিন কিউ
পাঁচ দশকেরও বেশি সময় পর মিয়ানমারের বেসামরিক প্রেসিডেন্ট হলেন থিন কিউ। দেশটির পার্লামেন্টের সদস্যরা গতকাল মঙ্গলবার গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী অং সান সু চির স্কুলের এই বন্ধুকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেন। গত নভেম্বরের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের অভিযাত্রায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটিতে। নির্বাচনে বিজয়ের পরপরই থিন কিউ বলেন, ‘এ বিজয় বোন সু চির’। সেনাবাহিনীর তৈরি সংবিধানে নিষেধাজ্ঞা থাকায় নিজে প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে পারেননি ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী সু চি। কিন্তু থিনের এ কথায় স্পষ্ট, ‘বোন সু চির’ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ছায়া প্রেসিডেন্ট হয়েই থাকবেন তিনি। রাজধানী নেপিডোর পার্লামেন্ট ভবনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ব্যালট হাতে গুনতে বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। নির্বাচনের ফল প্রচারের পর উল্লাসে ফেটে পড়েন এমপিরা। ৬৫২টি প্রদত্ত ভোটের মধ্যে থিন পান ৩৬০ ভোট। সু চির দল এনএলডি গত বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায়। এরপর সু চি সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কয়েক দফা আলোচনায় বসেন। কিন্তু প্রভাবশালী সেনাবাহিনী তাদের তৈরি সংবিধান সংশোধন না করতে অনড় অবস্থান নেয়। বর্তমান সংবিধানের একটি ধারা অনুযায়ী, কোনো নাগরিকের স্বামী/স্ত্রী বা সন্তান বিদেশি নাগরিক হলে ওই নাগরিক প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চির প্রয়াত স্বামী এবং দুই সন্তান ব্রিটিশ নাগরিক। সেনাবাহিনীর বাধার মুখে সু চি প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেন তাঁর দীর্ঘদিনের সহযোগী থিন কিউকে। গতকাল নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর সাংবাদিকদের সামনে, এ বিজয়ের জন্য ‘বোন সু চি’কে ধন্যবাদ জানান থিন।
নতুন প্রেসিডেন্ট ৩০ মার্চ ক্ষমতা গ্রহণ করবেন। তিনি সেনাসমর্থিত প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের স্থলাভিষিক্ত হবেন। সেইনের বিগত পাঁচ বছরের শাসন গণতন্ত্রে উত্তরণের পথে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। গতকালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন সু চির দলের অনেক এমপির জন্য একটি বিজয়। এসব এমপির অনেকেই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে অংশ নিতে সামরিক বাহিনীর নিষ্পেষণের শিকার হয়েছেন। ১৯৯০ সালের নির্বাচনে এনএলডি বিপুল ভোটে বিজয়ী হলেও জোর করে সেই জনরায় ছিনিয়ে নেয় সেনাবাহিনী। এনএলডির বর্তমান এমপি জিন মা অং ১৯৮৮ সালে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে গণবিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য কারাভোগ করেছিলেন। থিন কিউয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়াকে তিনি ‘বিরাট ঐতিহাসিক ঘটনা’ বলে উল্লেখ করেন। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অপর দুই প্রার্থীর মধ্যে সেনাসমর্থিত প্রার্থী মিয়ে শোয়ে পান ২১৩ ভোট। আর এনএলডির আরেক প্রার্থী হেনেরি ভ্যানথিও পান ৭৯ ভোট। এই দুজন এখন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন। সাবেক জেনারেল মিয়ে শোয়ে সামরিক বাহিনীর সাবেক প্রধান থান শোয়ের কট্টর সমর্থক। মিয়ে শোয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় আছেন। গতকালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মিয়ানমারের সাধারণ মানুষের মধ্যেও জাগিয়েছে নতুন আশা। ইয়াঙ্গুনের কেন্দ্রস্থলের একটি চায়ের দোকানে বসে টেলিভিশনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন দেখছিলেন দ মিও (৬০)। নতুন প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য হলো, ‘তিনি মা সু চির পছন্দের। তিনি এখন আমাদের প্রেসিডেন্ট। তিনি অবশ্যই ভালো হবেন। কেননা দীর্ঘ সময় ধরে মা সু চির সঙ্গে কাজ করছেন।’
No comments