বান্দরবানে প্রতিবছর পাহাড়ধসে মৃত্যু: ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরানোর উদ্যোগ নেই by বুদ্ধজ্যোতি চাকমা
বান্দরবান জেলা শহরের নিউ গুলশান এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসতঘর। গত বৃহস্পতিবার এই ঘরের ওপর পাহাড় ধসে পড়ে মারা যায় এক শিশু :প্রথম আলো |
বান্দরবানে
পাহাড়ধসে প্রতিবছর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। গত ছয় বছরে মারা গেছে ৬৫ জন, আহত
হয়েছে শতাধিক। তারপরও পাহাড়ে ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরানোর কোনো উদ্যোগ
নেই। সর্বশেষ ২০ আগস্ট জেলা শহরের নিউগ গুলশান এলাকায় পাহাড়ধসে এক শিশু
নিহত হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ইসলামপুর, কাশেমপাড়া, নিউ গুলশান, বনরূপা, সিদ্দিকনগর ও লাঙ্গিপাড়ায় পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাস করছে কয়েক শ পরিবার। বেড়া আর টিনের ছাউনির দেওয়া ঘরগুলোর কিছু পাহাড়ের পাদদেশে, কিছু খাঁজে। এসব ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে নিম্নআয়ের লোকজন।
সিদ্দিকনগরে পাহাড়ে ঝুঁকিতে বাস করা রবিউল আলম ও আবু হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমরা জানি, এখানে ঝুঁকি আছে। কিন্তু কী করব? আমরা গরিব মানুষ। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’
বান্দরবানের মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও পানি বিভাজিকা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি পরিবেশে লাগসই বসতি গড়ে না তোলা, নির্বিচারে বন কেটে ভূমিতে চাষাবাদ করে মাটি ক্ষয় করা, পাহাড় কাটা, অধিকসংখ্যক অবৈধ ইটভাটায় মাটি ও বন কেটে জ্বালানি ব্যবহার, পানির উৎস থেকে প্রাকৃতিক পাথর সরিয়ে ফেলার কারণে পাহাড়ধস হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে পাহাড়ধসের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জেলা প্রশাসনের করা এক জরিপে বলা হয়েছে, জেলার সাতটি উপজেলায় ২ হাজার ৩৩৪ পরিবারের ১২ হাজার ৭২৭ জন মারাত্মক ঝঁুকিপূর্ণ অবস্থায় পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে বসবাস করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বসবাসকারী লামা উপজেলায়—১ হাজার ৪২২ পরিবার। এ ছাড়া আলীকদমে ৩৪০, রুমায় ২৩২ ও বান্দরবান সদরে ১৪৭ পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালের জরিপের চেয়েও বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ জন্য লামায় ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনার পর পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে ঝঁুকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করার জন্য সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বান্দরবানে ব্যাপক আকারে পাহাড়ধস শুরু হয়েছে ১৯৯৯ সাল থেকে। ওই বছর আগস্টে আজিজ নগরে চিউরতলী এলাকায় এক রাতে শতাধিক পাহাড়ধসে পড়ে। সেখানে তিনজন নিহত ও ১২ জন আহত হন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে ২০০৯ সাল থেকে। ওই বছর আজিজনগরে তিন পরিবারের ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে লামা ফাইতং ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩৭ জন নিহত হন। এ ছাড়া ২০১১ ও ২০১৩ সালে দুজন করে ও ২০১৪ সালে তিনজনের মৃত্যু হয়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে সিদ্দিকনগরে একজন, জুনে বনরূপায় দুই শিশু ও ৩১ জুলাই লামায় ছয়জনের মৃত্যু হয়।
লামার ইউএনও খালেদ মাহমুদ বলেন, বৃষ্টি হলেই ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়। এরপরও না সরলে উপজেলা প্রশসনের দল গিয়ে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে। কিন্তু দিনে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এলেও রাতে তারা আবার ঘরে ফিরে যায়। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মনসুরুর রহমান বলেন, ২০১২ সালে ৩৭ জনের মৃত্যুর পর পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পাহাড়ে বসতি স্থাপন বন্ধ করা, পাহাড়ি পরিবেশে লাগসই ঘরবাড়ি নির্মাণ, ইটভাটার সংখ্যা কমিয়ে আনা, ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া, পাহাড় কাটা বন্ধ করে বনায়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তৈরি করা এ সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রশাসন থেকেই কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, পাহাড় ও নদীতীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের তালিকা পাওয়া গেলে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি ইতিমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, শহরের ইসলামপুর, কাশেমপাড়া, নিউ গুলশান, বনরূপা, সিদ্দিকনগর ও লাঙ্গিপাড়ায় পাহাড়ের ঝুঁকিতে বসবাস করছে কয়েক শ পরিবার। বেড়া আর টিনের ছাউনির দেওয়া ঘরগুলোর কিছু পাহাড়ের পাদদেশে, কিছু খাঁজে। এসব ঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছে নিম্নআয়ের লোকজন।
সিদ্দিকনগরে পাহাড়ে ঝুঁকিতে বাস করা রবিউল আলম ও আবু হোসেন মোল্লা বলেন, ‘আমরা জানি, এখানে ঝুঁকি আছে। কিন্তু কী করব? আমরা গরিব মানুষ। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।’
বান্দরবানের মৃত্তিকা সংরক্ষণ ও পানি বিভাজিকা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহবুবুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ি পরিবেশে লাগসই বসতি গড়ে না তোলা, নির্বিচারে বন কেটে ভূমিতে চাষাবাদ করে মাটি ক্ষয় করা, পাহাড় কাটা, অধিকসংখ্যক অবৈধ ইটভাটায় মাটি ও বন কেটে জ্বালানি ব্যবহার, পানির উৎস থেকে প্রাকৃতিক পাথর সরিয়ে ফেলার কারণে পাহাড়ধস হচ্ছে। এসব নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে ভবিষ্যতে পাহাড়ধসের মাত্রা আরও বাড়তে পারে।
২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে জেলা প্রশাসনের করা এক জরিপে বলা হয়েছে, জেলার সাতটি উপজেলায় ২ হাজার ৩৩৪ পরিবারের ১২ হাজার ৭২৭ জন মারাত্মক ঝঁুকিপূর্ণ অবস্থায় পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে বসবাস করছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বসবাসকারী লামা উপজেলায়—১ হাজার ৪২২ পরিবার। এ ছাড়া আলীকদমে ৩৪০, রুমায় ২৩২ ও বান্দরবান সদরে ১৪৭ পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে।
জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সালের জরিপের চেয়েও বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে বসতি স্থাপনকারীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এ জন্য লামায় ছয়জনের মৃত্যুর ঘটনার পর পাহাড়ের ঢালে ও পাদদেশে ঝঁুকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের হালনাগাদ তালিকা তৈরি করার জন্য সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, বান্দরবানে ব্যাপক আকারে পাহাড়ধস শুরু হয়েছে ১৯৯৯ সাল থেকে। ওই বছর আগস্টে আজিজ নগরে চিউরতলী এলাকায় এক রাতে শতাধিক পাহাড়ধসে পড়ে। সেখানে তিনজন নিহত ও ১২ জন আহত হন। তবে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকে ২০০৯ সাল থেকে। ওই বছর আজিজনগরে তিন পরিবারের ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এরপর ২০১২ সালে লামা ফাইতং ও নাইক্ষ্যংছড়িতে ৩৭ জন নিহত হন। এ ছাড়া ২০১১ ও ২০১৩ সালে দুজন করে ও ২০১৪ সালে তিনজনের মৃত্যু হয়। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে সিদ্দিকনগরে একজন, জুনে বনরূপায় দুই শিশু ও ৩১ জুলাই লামায় ছয়জনের মৃত্যু হয়।
লামার ইউএনও খালেদ মাহমুদ বলেন, বৃষ্টি হলেই ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করা হয়। এরপরও না সরলে উপজেলা প্রশসনের দল গিয়ে তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসে। কিন্তু দিনে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে এলেও রাতে তারা আবার ঘরে ফিরে যায়। এ কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে।
জানতে চাইলে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মনসুরুর রহমান বলেন, ২০১২ সালে ৩৭ জনের মৃত্যুর পর পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে পাহাড়ে বসতি স্থাপন বন্ধ করা, পাহাড়ি পরিবেশে লাগসই ঘরবাড়ি নির্মাণ, ইটভাটার সংখ্যা কমিয়ে আনা, ঝুঁকিতে বসবাসকারীদের সরিয়ে নেওয়া, পাহাড় কাটা বন্ধ করে বনায়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত করাসহ বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের তৈরি করা এ সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রশাসন থেকেই কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
জেলা প্রশাসক মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, পাহাড় ও নদীতীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের তালিকা পাওয়া গেলে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিষয়টি ইতিমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে।
No comments