এয়ারটেল রাইজিং স্টারস- অপেক্ষা আরও এক দিনের by মাহফুজ রহমান

এয়ারটেল রাইজিং স্টারস কর্মসূচির একটা অপেক্ষার অবসান; গতকাল শুক্রবার দেশসেরা হয়ে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম ছাড়ল খুলনা বিভাগ। আগামীকাল জানা যাবে, কোন ১২ জন খুদে ফুটবলার পাচ্ছে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার টিকিট। আজ শনিবার ও আগামীকাল রোববার ২০০ জনের মধ্য থেকে হবে চূড়ান্ত বাছাই।


বাছাইয়ের জন্য প্রস্তুত ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সকার স্কুলের তিন কোচ কেভিন ও’কনেল, মাইকেল ম্যাকক্লিন ও মাইকেল বেনেট।
গতকাল শুক্রবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পশ্চিম গ্যালারিতে তুমুল হইচই। ঘড়িতে তখন বিকেল চারটা। সামনের চেয়ারে বোতল দিয়ে শব্দ করতে করতে একঝাঁক শিশু গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে, ‘ঢাকা! ঢাকা!’ অথচ খেলার দ্বিতীয়ার্ধে খুলনার আবদুল্লাহ টোফেল যখন ঢাকা-২-এর জালে বল পাঠাল, তখনো তাদের উল্লাসের কমতি নেই। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে উঠল সবাই, ‘গোওওওওল!’ ঢাকার রায়েরবাজারের জাগো ফাউন্ডেশনের স্কুল থেকে এসেছিল এই কিশোর ফুটবলভক্তরা। ফুটবল নিয়ে তাদের মহা উৎসাহ!
খেলা শুরুর আগে ফুটবল নিয়ে এই উদ্দীপনার কথাই বলছিলেন এয়ারটেলের বিপণন বিভাগের প্রধান মীর নওবত আলী, ‘আমরা চাই বাংলাদেশের শিশু-কিশোরেরা ফুটবল নিয়ে আরও আগ্রহী হোক। আশা করি, এয়ারটেল রাইজিং স্টারস তাতে বড় ভূমিকা রাখবে।’ চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি তাবিথ আওয়ালও বললেন একই কথা। এয়ারটেলের এই আয়োজনে সহযোগী প্রথম আলো ও চ্যানেল আই।
ফলাফল যা-ই হোক, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যাওয়ার স্বপ্ন তো এখনো দুই চোখে। গ্রাম-গঞ্জ আর পাড়ার মাঠ থেকে উঠে আসা এই কিশোরেরা তাই প্রস্তুত করছে নিজেদের। তাদেরই একজন মাহমুদুল হাসান। শেরপুর থেকে এসেছে ও। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যাওয়ার ব্যাপারে সে দারুণ আশাবাদী, ‘আমি জানি, ভালো খেললে, ফুটবল ভালোবাসলে সুযোগ পাবই।’ স্বপ্নেও ফুটবল খেলে আবদুল্লাহ টোফেল। ফাইনালে ওর গোলেই জয়ের মুকুট পরল খুলনা। ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর আলিয়া মাদ্রাসায় পড়ে ও।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সঙ্গে এয়ারটেল এই খুদে ফুটবলারদের খুঁজতে শুরু করেছিল গত ৩০ জুলাই থেকে। নাম নিবন্ধন করেছিল ৬০ হাজার ফুটবলার। সেখান থেকে প্রথমে জেলা পর্যায়ে ১৬ জন করে এবং পরে বিভাগীয় পর্যায়ে ২৫ জন করে মোট ২০০ জনকে বেছে নেয় তারা। এই ২০০ জন থেকেই মিলবে এক ডজন সেরা খুদে ফুটবলার, যারা আগামী নভেম্বর মাসে যাবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। অংশ নেবে সাত দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণে।
গতকাল খেলা শুরুর আগে সকার স্কুলের তিন কোচ দেখা করলেন সবার সঙ্গেই। হাত মেলালেন আর কুশল বিনিময় করলেন। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ইব্রাহীম হোসেন বনে গেল বার্সেলোনার স্ট্রাইকার ডেভিড ভিয়া, ‘আই অ্যাম ডেভিড ভিয়া!’ হেসে ফেললেন কেভিন ও’কনেল। খেলা দেখতে দেখতে বলছিলেন, ‘বাচ্চাদের খেলা দেখে খুব ভালো লাগল! আশা করি, অনেক ভালো মানের ফুটবলার পাব এখান থেকে। আসলে এখানে সবাই ভালো খেলে। ভালো ফুটবলার হয়ে ওঠার জন্য পরিশ্রম আর ফুটবলের প্রতি ভালোবাসার বিকল্প নেই।’
ম্যাচ শেষে আবার ২০০ জনের সঙ্গে বসলেন তিন কোচ। আজ ও আগামীকাল কী হবে না হবে, তা জানিয়ে দিলেন। সঙ্গে এ-ও জানিয়ে দিলেন, বাছাইয়ের সময় সেরা ১২ জনকে তাঁরা বেছে নেবেন কী করে। চট্টগ্রামের মাশহুদ উদ্দিন আহমদ বলল, ‘তিন কোচ বললেন, মাঠে আমাদের কৌশলগুলো খেয়াল করবেন তাঁরা। এর মধ্যে পাসিং, শ্যুটিং এবং ওয়ান ইজ টু ওয়ান ড্রিবলিংয়ের কৌশলগুলোও থাকবে। চেষ্টা করব নিজের সেরাটুকু দিতে।’ ফুটবলারদের পাশাপাশি স্থানীয় কোচদের সঙ্গেও চূড়ান্ত বাছাইয়ের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে কথা বললেন কোচত্রয়। আজ বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) মাঠে শুরু হচ্ছে বাছাইপর্ব। খুদে ফুটবলারদের মনে এখন একটাই প্রশ্ন—যেতে পারব তো ম্যানচেস্টারে? উত্তর মিলবে আগামীকাল বিকেল চারটায়।

No comments

Powered by Blogger.