পুড়ে ছাই লস অ্যানজেলেস: ঘরবাড়ি বাঁচাতে ঘণ্টায় ২০০০ ডলার দিয়ে দমকল ভাড়া করছেন ধনকুবেররা
দাবদাহে পুড়ে ছাই লস অ্যানজেলেসের জনপদ। ধনী থেকে দরিদ্র। সবার বাড়িই ছাইভস্ম। এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি আগুন। উপরন্তু আবহাওয়া বিভাগ পূর্বাভাসে বলেছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় শক্তিশালী বাতাস প্রবাহিত হবে। তার ফলে এই দাবদাহ থেকে সৃষ্ট আগুন বিধ্বংসী রূপ নিতে পারে। পুড়িয়ে দিতে পারে নতুন নতুন পার্ক ও জনপদ। ক্যালিফোর্নিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে ইটন এবং পালিসাডেসে। আগুনে পুড়ে গেছে প্রায় ৬০ বর্গমাইল এলাকা। এরই মধ্যে কোনো কোনো মহল লুটতরাজে মেতে উঠেছে। নতুন করে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার ফলে রেড ফ্ল্যাগ আবহাওয়া বিষয়ক সতর্কতা দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার ভোর ৪টা থেকে সেখানে ঘণ্টায় ৭০ মাইল বেগে বাতাস প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়তে পারে। এ জন্য লস অ্যানজেলেসের অধিবাসীদেরকে ঘরের বাইরে বের না হতে বলা হয়েছে। পরামর্শ দেয়া হয়েছে ময়লা ও ছাইভস্ম এড়িয়ে চলতে। এই সতর্কতা বুধবার ১২টা পর্যন্ত বহাল থাকবে। উল্লেখ্য, রেড ফ্ল্যাগ সতর্কতাকে চিহ্নিত করা হয় রেড বা লালের নিচের সতর্কতা হিসেবে। এর আওতায় আছে লস অ্যানজেলেস, ভেনচুরা কাউন্টি, আছে সান লুইস ওবিস্পো পাহাড়, সান্তা বারবারা কাউন্টি। চারদিকে এখন যে পরিস্থিতি তা নিয়ে বিবিসি নিউজের এমা পেঙ্গেলি বলেছেন, সত্যিকারভাবে মনে হচ্ছে একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা। যুক্তরাষ্ট্রের সিএনএন নেটওয়ার্কের সাবেক প্রযোজক ডেভ ওয়াটারফল বলেছেন, তিনি আরেকটি বিপর্যয় দেখছেন। তার ভাষায়, আমি কখনো ভাবিনি এমন বিপর্যয়ের একটি সম্প্রদায়ে বসবাস করবো। গত সপ্তাহে সান্তা মোনিকা এলাকার বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তাকে, তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে। বর্তমানে সান্তা মোনিকায় নিজের মোটরসাইকেল দোকানের ভেতর সবাইকে নিয়ে বসবাস করছেন। বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, ওই অঞ্চলে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিরূপণে হিমশিম খাচ্ছে লস অ্যানজেলেসভিত্তিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো। কেউ কেউ অফিস সরিয়ে নিচ্ছেন। যেসব স্টাফ ঘরবাড়ি হারিয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন কেউ। ক্যাপিটল গ্রুপ, টিসিডব্লিউ গ্রুপ, ওকট্রি ক্যাপিটাল, অ্যারেস ম্যানেজমেন্টের মতো বিশাল সব শিল্প বিষয়ক কোম্পানির মালিক বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাড়ি লস অ্যানজেলেসে। যুক্তরাষ্ট্রে বৈশ্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ক মোট ১৩২ ট্রিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে। তার মধ্যে কমপক্ষে ৪ ট্রিলিয়নের ব্যবস্থাপনা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানের অবস্থান লস অ্যানজেলেসে। দাবানলের গ্রাসে তাদের আশপাশ সহ সবকিছুকে ধ্বংসস্তূপ করে দিয়ে গেছে। চারদিকে শুধু শূন্যতা। হাহাকার। পড়ে আছে শুধু ছাই আর ছাই। ধনীদের বসতি থেকে শুরু করে উপশহর। কিছুই অক্ষত নেই। টিসিডব্লিউ-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রেসিডেন্ট কেটি কোচ বলেন, আমাদের টিমের বিপুল পরিমাণ সদস্য বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। বেশ কয়েকজন তাদের বাড়িঘর একেবারে হারিয়েছেন। আমার নিজের পরিবারেরও একই অবস্থা। উল্লেখ্য, টিসিডব্লিউ ২০,৩০০ কোটি ডলারের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করে। কেটি কোচ লস অ্যানজেলেসে তার সহকর্মীদের কাছে এসব নিয়ে একটি চিঠি লিখেছেন। টিসিডব্লিউ বলেছে, লস অ্যানজেলেসে তাদের যেসব কর্মী ছিলেন তারা সবাই নিরাপদে আছেন। তাদের খোঁজ মিলেছে। আগুনের মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে প্যাসিফিক পালিসাডেসে ৬০.৫ মিলিয়ন ডলারের তহবিল নিয়ে বিশাল অফিস খুলেছিল আনাকাপা এডভাইজরস। তারা দেখেছে, চারপাশে সবকিছু আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে যাচ্ছে। এ প্রতিষ্ঠানেরও সব কর্মী নিরাপদে আছেন।
ঘরবাড়ি বাঁচাতে ঘণ্টায় ২০০০ ডলার দিয়ে দমকল ভাড়া করছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের ধনকুবেররা
ক্যালিফোর্নিয়ায় ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় লস অ্যাঞ্জেলেসের সবচেয়ে বিলাসবহুল এলাকাগুলো এখন হুমকির মুখে। এই পরিস্থিতিতে ধনী বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপণ সেবাও নিচ্ছেন। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই সেবা নিতে প্রতি ঘণ্টায় খরচ হচ্ছে প্রায় ২ হাজার ডলার। নিউ ইয়র্ক পোস্টের একটি প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘরবাড়ি বাঁচাতে বেসরকারি দমকল ভাড়া করছেন লস অ্যাঞ্জেলেসের ধনকুবেররা। বেসরকারি এই দলগুলোতেও বিশেষজ্ঞ দমকলকর্মী, অত্যাধুনিক সরঞ্জাম, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং পানির ট্যাঙ্ক রয়েছে।
ঘরবাড়ি এবং সম্পত্তি আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে অনেকেই এই বেসরকারি দমকলের সাহায্য নিয়ে থাকেন। ২০১৮ সালে কিম কার্দাশিয়ান এবং কেইন ওয়েস্টও সম্পত্তি বাঁচাতে এই বেসরকারি দমকলের সাহায্য নিয়েছিলেন।
একটি প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানির মালিক ক্রিস ডান বলেছেন, সংকটময় পরিস্থিতিতে এ ধরনের সেবার চাহিদা বেড়েছে। সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলের একজন সাংবাদিক সম্প্রতি একটি প্রাইভেট অগ্নিনির্বাপক দলকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সারা রাত ধরে একটি বাড়ির ছাদে পানি ঢালতে দেখেছেন। ওই সাংবাদিক এক্স মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপকেরা এই হলিউড হিলসের বাড়ি সুরক্ষিত রাখছেন। তারা দ্বিতীয় তলার কার্নিশ থেকে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছেন। তারা সারা রাত এখানে থাকবেন।’
এ নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিধ্বংসী আগুনে যেখানে লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন, সেখানে এই ধরনের পরিষেবা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ধনী-গরিবের বৈষম্য ।
সম্প্রতি মিলিয়নিয়ার কিথ ওয়াসারম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রাইভেট অগ্নিনির্বাপক দল নিয়োগের চেষ্টা করায় তীব্র সমালোচনার শিকার হন। বিলিয়নিয়ার রিক কারুসোও একইভাবে সমালোচনার মুখে পড়েন, যখন জানা যায়, তিনি তার সম্পত্তি রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপক দল ভাড়া করেছিলেন।
এখনও পর্যন্ত দাবানলে ১২ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘর ছেড়ে অন্য কোনও আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিধ্বংসী আগুন প্রাণ কেড়েছে ২৪ জনের।
সূত্র : এনডিটিভি
ঘরবাড়ি এবং সম্পত্তি আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে অনেকেই এই বেসরকারি দমকলের সাহায্য নিয়ে থাকেন। ২০১৮ সালে কিম কার্দাশিয়ান এবং কেইন ওয়েস্টও সম্পত্তি বাঁচাতে এই বেসরকারি দমকলের সাহায্য নিয়েছিলেন।
একটি প্রাইভেট সিকিউরিটি কোম্পানির মালিক ক্রিস ডান বলেছেন, সংকটময় পরিস্থিতিতে এ ধরনের সেবার চাহিদা বেড়েছে। সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলের একজন সাংবাদিক সম্প্রতি একটি প্রাইভেট অগ্নিনির্বাপক দলকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সারা রাত ধরে একটি বাড়ির ছাদে পানি ঢালতে দেখেছেন। ওই সাংবাদিক এক্স মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপকেরা এই হলিউড হিলসের বাড়ি সুরক্ষিত রাখছেন। তারা দ্বিতীয় তলার কার্নিশ থেকে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছেন। তারা সারা রাত এখানে থাকবেন।’
এ নিয়ে সমালোচনাও কম হচ্ছে না। লস অ্যাঞ্জেলেসের বিধ্বংসী আগুনে যেখানে লক্ষাধিক মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছেন, সেখানে এই ধরনের পরিষেবা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে ধনী-গরিবের বৈষম্য ।
সম্প্রতি মিলিয়নিয়ার কিথ ওয়াসারম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রাইভেট অগ্নিনির্বাপক দল নিয়োগের চেষ্টা করায় তীব্র সমালোচনার শিকার হন। বিলিয়নিয়ার রিক কারুসোও একইভাবে সমালোচনার মুখে পড়েন, যখন জানা যায়, তিনি তার সম্পত্তি রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপক দল ভাড়া করেছিলেন।
এখনও পর্যন্ত দাবানলে ১২ হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘর ছেড়ে অন্য কোনও আশ্রয় খুঁজতে বাধ্য হয়েছেন অনেকে। কত টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। বিধ্বংসী আগুন প্রাণ কেড়েছে ২৪ জনের।
সূত্র : এনডিটিভি
No comments