ভারতের বিমান হামলা, প্রাণহানি নিয়ে পাল্টাপাল্টি: যুদ্ধের দামামা by পরিতোষ পাল
হুমকি।
পাল্টাপাল্টি। শেষ পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বুঝি লেগেই যাচ্ছে।
পালওয়ামা হামলায় পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারতের পক্ষ থেকে একের পর এক হুমকি ও
সতর্কবার্তা দেয়া হচ্ছিল। এরই মধ্যে ওই হামলার প্রতিশোধ নিতে সোমবার
ভোররাতে পাকিস্তানের ৫০ কিলোমিটার ভেতরে একটি কথিত জঙ্গি আস্তানায় হামলা
চালিয়েছে ভারত। এতে জৈশ-ই-মোহাম্মদের সন্ত্রাসী, শীর্ষ কমান্ডার ও
প্রশিক্ষকদের নির্মূল করা হয়েছে বলে দাবি করা হচ্ছে। নয়াদিল্লির পক্ষ থেকে
বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির কথা বলা হলেও পাকিস্তান তা পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান
করেছে। ইসলামাবাদের দাবি, ভারতীয় বাহিনীর হামলার শিকার অঞ্চলটি পুরোপুরি
জনশূন্য।
ভারতের বিমান দু’দেশের কার্যত সীমান্ত ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ অতিক্রম করলেও পাকিস্তানি বাহিনীর তাড়া খেয়ে পালিয়ে গেছে।
তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় যুদ্ধবিমানগুলো কয়েকটি পেলোড (যুদ্ধবিমানে বহন করা বিস্ফোরক) ফেলে গেছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে ভারতের এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে যে বালাকোট শহরে হামলার দাবি করেছে ভারত, সত্যতা যাচাই করে দেখার জন্য ওই শহরটি বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে উভয় দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সীমান্তের ওপারে ভারতের বিমান হামলায় বিপুল সংখ্যক জেইএম সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষক ও জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নির্মূল করা হয়েছে। এরা আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে যে, জেইএম জঙ্গিরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আরো আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছিল। বিজয় গোখলে জানান, ভারতের হামলায় তছনছ হওয়া জেইএম আস্তানাটি ছিল পাকিস্তানের বালাকোটে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেন নি তিনি। বালাকোট পাকিস্তানের খাইবার-পখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি শহর। সীমান্ত রেখা ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ থেকে এর দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার।
ভারতীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার এই বালাকোটেই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে তারা। তাদের দাবি, ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে বিমান বাহিনীর মিরাজ-২০০০ ফাইটার বিমান। এগুলো থেকে বেছে বেছে জৈশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো হয়। পুলওয়ামার হামলার পর জম্মু-কাশ্মীরে সীমান্তবর্তী জঙ্গি ঘাঁটিগুলো ভেতরের দিকে সরিয়ে নেয়া হয়। ফলে বেশ খানিকটা ভেতরে ঢুকে খাইবার-পাখতুনওয়ার বালাকোট শহরে জৈশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান আস্তানায় এই হামলা চালানো হয়। ভারতীয় বিমানগুলো ২১ মিনিট ধরে ১০০০ কেজি বোমা ফেলে ওই অঞ্চল গুঁড়িয়ে দেয়। সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, বালাকোট হামলায় ৩০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আবার কয়েকটি গণমাধ্যমে নিহতের সংখ্যা ৩৫০ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে সেখানে কোনো প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল আসিফ গফুর টুইটারে দেয়া বার্তায় জানান, ভারতীয় বিমান ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ অতিক্রম করে। কিন্তু পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের মুখে তারা সীমান্তবর্তী বালাকোট অঞ্চল থেকে পালিয়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় ভারতীয় বিমানগুলো পেলোড ফেলে যায়। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। আসিফ গফুর ভারতীয় বিমানের ফেলে যাওয়া পেলোডের ছবিও টুইটারে পোস্ট করেন। এতে গভীর বনাঞ্চলে আলগা মাটির ওপর বিচ্ছিন্ন ধাতব পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, বালাকোট শহরের পার্শ্ববর্তী অধিবাসীরা গতকাল ভোররাতে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। মোহাম্মদ আদিল নামের এক কৃষক জানান, বিকট বিস্ফোরণের শব্দে রাত ৩টার দিকে তিনি ও তার স্ত্রী জেগে ওঠেন। ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা মাথার ওপর যুদ্ধবিমান ওড়ার শব্দ পাই।
সকালে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে একটি বড় গর্ত ও ৪/৫টি বাড়ি বিধ্বস্ত হতে দেখেছি। হামলার পরপরই জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পরে এক বিবৃতিতে বালাকোট শহরে জঙ্গি আস্তানায় হামলা ও এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির বিষয়ে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান। বিবৃতিতে পাকিস্তান বলেছে, ভারত সরকার আবারো একটি স্বপ্রণোদিত, বেপরোয়া ও ভুয়া দাবির আশ্রয় নিয়েছে। নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ সুবিধা পেতেই এই হামলার দাবি করা হচ্ছে বলে মনে করে পাকিস্তান। যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের জনগণকে সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ভারতীয় বাহিনীর গতকালের হামলা কোনো প্রাণহানি ছাড়াই যথাসময়ে রুখে দেয়ার কারণে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রশংসা করেন।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কুরেশি। তিনি বলেন, পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। ভারতের আক্রমণের বিষয়ে পাকিস্তান আগে থেকেই ইঙ্গিত পেয়েছিল বলে দাবি করেন কুরেশি। তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে আমরা বলে আসছিলাম যে, ভারত এ ধরনের কিছু করার পরিকল্পনা করছে। আজ তারা সত্যিই হামলা করেছে। পাকিস্তানের আকাশে বিপদের মেঘ জড়ো হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান এখনো শক্ত রয়েছে। কুরেশি বলেন, আমরা একটি দায়িত্বশীল জাতি। কৌশলগতভাবে আমরা এই হামলার জবাব দেবো। পাকিস্তান জানে কীভাবে নিজ স্বার্থ রক্ষা করতে হয়।
এদিকে, হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও প্রভাবশালী মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। তবে ওই বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানা যায়নি। বৈঠক শেষে রাজস্থানে একটি জনসভায় ভাষণ দেন মোদি। সেখানে তিনি বলেন, দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দেশ নিরাপদ হাতে রয়েছে। আমরা আজকের জন্য আমাদের নায়কদের কুর্নিশ করছি।
গতকালের হামলা ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পালওয়ামায় জেইএম জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলার প্রতিশোধ। ওই হামলায় ভারতের আধা-সামরিক বাহিনীর ৪০ জনেরও বেশি জওয়ান নিহত হয়। দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের এমন পাল্টাপাল্টি হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আরেক প্রতিবেশী চীন। দেশটি উভয়পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান সীমান্তে ঢুকে বোমা হামলার ঘটনায় দুই দেশকে সর্বোচ্চ সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়াও দেশ দু’টিকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অধিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। দু’দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার আশঙ্কায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। শ্রীনগরের ব্যাংকার সাবির আখোন বলেন, বৈরী দু’দেশের মধ্যে যাই ঘটছে, যুদ্ধ নাটকের মধ্যে আমরাই আছি। কয়েকজন অধিবাসী জানান, পালওয়ামা হামলার পর তারা উত্তেজনা কেটে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু কাশ্মীরে গত তিনদিন ধরে ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এতে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পালওয়ামার এক শিক্ষক বলেন, বিজেপির সামনে বড় নির্বাচনের সময় এসেছে। শুধু ভোট পাওয়ার জন্য কাশ্মীরকে উস্কে দেয়া বন্ধ করা উচিত দলটির।
ভারতের বিমান দু’দেশের কার্যত সীমান্ত ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ অতিক্রম করলেও পাকিস্তানি বাহিনীর তাড়া খেয়ে পালিয়ে গেছে।
তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় যুদ্ধবিমানগুলো কয়েকটি পেলোড (যুদ্ধবিমানে বহন করা বিস্ফোরক) ফেলে গেছে বলে জানিয়েছে পাকিস্তান। তবে ভারতের এই হামলার উপযুক্ত জবাব দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে যে বালাকোট শহরে হামলার দাবি করেছে ভারত, সত্যতা যাচাই করে দেখার জন্য ওই শহরটি বিশ্ববাসীর জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করেছে পাকিস্তান। দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমকে সেখানে আমন্ত্রণ জানিয়েছে তারা। এমন পরিস্থিতিতে উভয় দেশের মধ্যে দ্বন্দ্ব আরো তীব্র হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিজয় গোখলে নয়াদিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সীমান্তের ওপারে ভারতের বিমান হামলায় বিপুল সংখ্যক জেইএম সন্ত্রাসী, প্রশিক্ষক ও জ্যেষ্ঠ কমান্ডার নির্মূল করা হয়েছে। এরা আত্মঘাতী হামলার প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল। বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য আছে যে, জেইএম জঙ্গিরা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে আরো আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করছিল। বিজয় গোখলে জানান, ভারতের হামলায় তছনছ হওয়া জেইএম আস্তানাটি ছিল পাকিস্তানের বালাকোটে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য দেন নি তিনি। বালাকোট পাকিস্তানের খাইবার-পখতুনখাওয়া প্রদেশের একটি শহর। সীমান্ত রেখা ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ থেকে এর দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার।
ভারতীয় বিমান বাহিনী জানিয়েছে, মঙ্গলবার এই বালাকোটেই ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে তারা। তাদের দাবি, ভোররাত সাড়ে তিনটার দিকে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে ঢুকে পড়ে বিমান বাহিনীর মিরাজ-২০০০ ফাইটার বিমান। এগুলো থেকে বেছে বেছে জৈশ-ই-মোহাম্মদের জঙ্গি ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো হয়। পুলওয়ামার হামলার পর জম্মু-কাশ্মীরে সীমান্তবর্তী জঙ্গি ঘাঁটিগুলো ভেতরের দিকে সরিয়ে নেয়া হয়। ফলে বেশ খানিকটা ভেতরে ঢুকে খাইবার-পাখতুনওয়ার বালাকোট শহরে জৈশ-ই-মোহাম্মদের প্রধান আস্তানায় এই হামলা চালানো হয়। ভারতীয় বিমানগুলো ২১ মিনিট ধরে ১০০০ কেজি বোমা ফেলে ওই অঞ্চল গুঁড়িয়ে দেয়। সরকারি সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে গণমাধ্যমের খবরে বলা হচ্ছে, বালাকোট হামলায় ৩০০ জনের প্রাণহানি হয়েছে। আবার কয়েকটি গণমাধ্যমে নিহতের সংখ্যা ৩৫০ বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে সেখানে কোনো প্রাণহানি বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি বলে দাবি করেছে পাকিস্তান। দেশটির সেনাবাহিনীর মুখপাত্র জেনারেল আসিফ গফুর টুইটারে দেয়া বার্তায় জানান, ভারতীয় বিমান ‘লাইন অব কন্ট্রোল’ অতিক্রম করে। কিন্তু পাকিস্তানি বিমান বাহিনীর তাৎক্ষণিক প্রতিরোধের মুখে তারা সীমান্তবর্তী বালাকোট অঞ্চল থেকে পালিয়ে যায়। তাড়াহুড়ো করে পালানোর সময় ভারতীয় বিমানগুলো পেলোড ফেলে যায়। তবে এতে কোনো হতাহত বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। আসিফ গফুর ভারতীয় বিমানের ফেলে যাওয়া পেলোডের ছবিও টুইটারে পোস্ট করেন। এতে গভীর বনাঞ্চলে আলগা মাটির ওপর বিচ্ছিন্ন ধাতব পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, বালাকোট শহরের পার্শ্ববর্তী অধিবাসীরা গতকাল ভোররাতে বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পেয়েছেন। মোহাম্মদ আদিল নামের এক কৃষক জানান, বিকট বিস্ফোরণের শব্দে রাত ৩টার দিকে তিনি ও তার স্ত্রী জেগে ওঠেন। ঘুম থেকে ওঠার পর আমরা মাথার ওপর যুদ্ধবিমান ওড়ার শব্দ পাই।
সকালে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। সেখানে একটি বড় গর্ত ও ৪/৫টি বাড়ি বিধ্বস্ত হতে দেখেছি। হামলার পরপরই জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির জরুরি বৈঠক ডাকেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। পরে এক বিবৃতিতে বালাকোট শহরে জঙ্গি আস্তানায় হামলা ও এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের প্রাণহানির বিষয়ে ভারতের দাবি প্রত্যাখ্যান করে পাকিস্তান। বিবৃতিতে পাকিস্তান বলেছে, ভারত সরকার আবারো একটি স্বপ্রণোদিত, বেপরোয়া ও ভুয়া দাবির আশ্রয় নিয়েছে। নির্বাচনে অভ্যন্তরীণ সুবিধা পেতেই এই হামলার দাবি করা হচ্ছে বলে মনে করে পাকিস্তান। যা আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান সশস্ত্র বাহিনীসহ দেশের জনগণকে সম্ভাব্য সব ধরনের পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ভারতীয় বাহিনীর গতকালের হামলা কোনো প্রাণহানি ছাড়াই যথাসময়ে রুখে দেয়ার কারণে তিনি পাকিস্তান বিমান বাহিনীর প্রশংসা করেন।
পাকিস্তানের অভ্যন্তরে ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলাকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে অভিহিত করেছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মোহাম্মদ কুরেশি। তিনি বলেন, পাকিস্তানের আত্মরক্ষার অধিকার রয়েছে। ভারতের আক্রমণের বিষয়ে পাকিস্তান আগে থেকেই ইঙ্গিত পেয়েছিল বলে দাবি করেন কুরেশি। তিনি বলেন, বিশ্বের কাছে আমরা বলে আসছিলাম যে, ভারত এ ধরনের কিছু করার পরিকল্পনা করছে। আজ তারা সত্যিই হামলা করেছে। পাকিস্তানের আকাশে বিপদের মেঘ জড়ো হয়েছে। কিন্তু পাকিস্তান এখনো শক্ত রয়েছে। কুরেশি বলেন, আমরা একটি দায়িত্বশীল জাতি। কৌশলগতভাবে আমরা এই হামলার জবাব দেবো। পাকিস্তান জানে কীভাবে নিজ স্বার্থ রক্ষা করতে হয়।
এদিকে, হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও প্রভাবশালী মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। তবে ওই বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হয়েছে তা জানা যায়নি। বৈঠক শেষে রাজস্থানে একটি জনসভায় ভাষণ দেন মোদি। সেখানে তিনি বলেন, দুশ্চিন্তার কারণ নেই। দেশ নিরাপদ হাতে রয়েছে। আমরা আজকের জন্য আমাদের নায়কদের কুর্নিশ করছি।
গতকালের হামলা ছিল ১৪ই ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পালওয়ামায় জেইএম জঙ্গিদের আত্মঘাতী হামলার প্রতিশোধ। ওই হামলায় ভারতের আধা-সামরিক বাহিনীর ৪০ জনেরও বেশি জওয়ান নিহত হয়। দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশের এমন পাল্টাপাল্টি হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আরেক প্রতিবেশী চীন। দেশটি উভয়পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে। ভারতীয় বিমানবাহিনী পাকিস্তান সীমান্তে ঢুকে বোমা হামলার ঘটনায় দুই দেশকে সর্বোচ্চ সংযত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া, অস্ট্রেলিয়াও দেশ দু’টিকে সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের অধিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। দু’দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার আশঙ্কায় নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তারা। শ্রীনগরের ব্যাংকার সাবির আখোন বলেন, বৈরী দু’দেশের মধ্যে যাই ঘটছে, যুদ্ধ নাটকের মধ্যে আমরাই আছি। কয়েকজন অধিবাসী জানান, পালওয়ামা হামলার পর তারা উত্তেজনা কেটে যাওয়ার বিষয়ে আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু কাশ্মীরে গত তিনদিন ধরে ব্যাপক সামরিক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এতে স্থানীয় অধিবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। পালওয়ামার এক শিক্ষক বলেন, বিজেপির সামনে বড় নির্বাচনের সময় এসেছে। শুধু ভোট পাওয়ার জন্য কাশ্মীরকে উস্কে দেয়া বন্ধ করা উচিত দলটির।
No comments