একজন বিথির আর্তনাদ
বাংলাদেশের
বিথি আকতারের দুর্দশার কাহিনী এখন ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বময়। তাকে নিয়ে সচিত্র
রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। এর মধ্যে রয়েছে
বার্তা সংস্থা এএফপি। বিথি আকতারের বয়স মাত্র ১২ বছর। কিন্তু তার মুখ ও
সারা শরীরে চুলে ছেয়ে যাচ্ছে। তাকে স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে তহবিল
সংগ্রহের চেষ্টা করছেন পিতামাতা। চিকিৎসকরা বলছেন, তাকে হরমোনের চিকিৎসা
দিলে এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে পারে বিথি। তার শরীরে যে রোগ রয়েছে তাকে বলা
হচ্ছে বায়ারস-জুরকিউইচ সিনড্রোম। কেউ এটাকে ওয়ারউলফ সিনড্রোমও বলে থাকেন।
বিথির মা বিউটি বেগম বলেছেন, জন্মের সময় থেকেই বিথির মুখমন্ডলে চুল ছিল।
আমরা ভেবেছিলাম মেয়ে বড় হলে এ সমস্যা একদিন চলে যাবে। কিন্তু না, তা হলো
না। সে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার দাঁতের গোঁড়া ফুলে যেতে থাকে। তার স্তনের
আকৃতি অসম্ভব রকম স্ফীত হতে থাকে। এতটাই স্ফীত হয় যে তা তার পক্ষে বহন করা
প্রায় অসম্ভব। এমনকি সে স্কুলে যেতে পারে না। বিথির মা বিউটি বেগম আরও
বলেন, এক সময় আমরা ভেবেছিলাম এটা আল্লাহর ইচ্ছা। আল্লাহ হয়তো চেয়েছেন তাকে
এভাবে সৃষ্টি করতে। কিন্তু এখন আমি সন্তানের কষ্ট আর সইতে পারছি না। ঢাকায়
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল ইউনিভার্সিটির ডাক্তার ফখরুল আলম বলেন, বিথির
যে সিনড্রোম রয়েছে তাতে মুখমন্ডলে স্বাভাবিকের চেয়ে এলোমেলো অবস্থা দেখা
দেয়। এতে বয়ঃসন্ধিক্ষণে পৌঁছানোর পর একটি মেয়ের স্তনের আকৃতি বৃদ্ধি পায়,
যা এই মেয়েটির ক্ষেত্রেও ঘটেছে। এখন বিথির পরিবার তার চিকিৎসার জন্য অর্থ
সংগ্রহে নেমেছে। কারণ, চিকিৎসকরা অভয় দিয়ে বলেছেন, অপারেশন করা হলে বিথির
জীবনের প্রভূত উন্নতি ঘটানো সম্ভব। চিকিৎসকরা অপারেশন করে তার স্তনের আকৃতি
ছোট করার পরিকল্পনা করছেন। দাঁতের ফোলা কমাবেন তারা। তার দেহে চুল গজানো
কমানোর জন্য দেবেন হরমোন থেরাপি। ডাক্তার ফখরুল আলম বলেন, আমরা সত্যিকার
অর্থে এই মেয়েটিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।
বিথি আখতার এখন ওই হাসপাতালেই আছে। হাসপাতাল তার চিকিৎসার কিছু অংশ বহন
করছে। কিন্তু তার পিতা একজন ট্যাক্সিচালক আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলছেন, বাকি
খরচ চালানোর মতো সামর্থ নেই তার পরিবারের। এরই মধ্যে তিনি মেয়ের ওষুধ
কিনতে ৮০ হাজারেরও বেশি টাকা খরচ করেছেন। এর বেশির ভাগই ব্যাংক থেকে ঋণ
নেয়া। এখন তার চিকিৎসা করানোর অর্থই নেই তার কাছে। সম্প্রতি ২৬ বছর বয়সী
‘ট্রি ম্যান’ হিসেবে খ্যাতি পাওয়া আবুল বাজানদারের চিকিৎসায় মানুষের আর্থিক
সহায়তার আগ্রহ দেখে বিথির পিতামাতা মেয়েকে হাসপাতালে আনতে উৎসাহিত হয়েছেন।
তাদেরও মাঝে আশা, কেউ না কেউ তার মেয়ের চিকিৎসার সহায়তায় এগিয়ে আসবেন। এখন
বিথির বেশির ভাগ সময় কাটছে হাসপাতালে। সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে অন্য দশজন
নারীর মতো বাঁচতে চায়। বিথির ভাষায় ‘আমি আবার স্কুলে ফিরতে চাই। বড় হয়ে আমি
একজন ডাক্তার হতে চাই’।
No comments