পশ্চিমবঙ্গে শেষ ভোটে প্রভাব ফেলবে সারদা
শেষ দফার ভোটের মাত্র তিন দিন আগে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট সারদা চিটফান্ড কেলেঙ্কারির তদন্তভার কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিলেন। সুপ্রিম কোর্টের এই রায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের কড়া সমালোচনারই প্রতীক। তাই বিরোধী দলগুলো উল্লসিত। অন্যদিকে বহু চেষ্টা করেও সিবিআইয়ের তদন্ত ঠেকাতে ব্যর্থ হওয়ায় মমতা ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেস বিচলিত। মমতার উদ্বেগের কারণ আছে। বাকি যে ১৭টি লোকসভা আসনে আগামী সোমবার ভোট হবে, তার মধ্যে রয়েছে নদীয়া, উত্তর ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুরের মোট ১৬টি আসন এবং মুর্শিদাবাদ জেলার একটি আসন। সারদা কেলেঙ্কারিতে প্রতারিত যে ১২ লাখ লোক সরকারি কমিশনের কাছে আবেদন করেছেন, তাঁদের সিংহভাগই এসব জেলার কৃষ্ণনগর, বসিরহাট, বারাসাত, যাদবপুর, জয়নগর, মথুরাপুর, ডায়মন্ডহারবার, তমলুক প্রভৃতি লোকসভা আসনের অন্তর্গত অসংখ্য গ্রামের লোক। তদন্তের দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে দেওয়ায় এই অঞ্চলগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন আবারও আশায় বুক বাঁধবেন। সারদার মালিক সুদীপ্ত সেন গত বছরেই পলাতক হওয়ার পরে উত্তর ভারতে গ্রেপ্তার হন। আরও পরে তৃণমূল সাংসদ কুনাল ঘোষকেও পুলিশ গ্রেপ্তার করে। কিন্তু সারদা চিটফান্ডের কোটি কোটি টাকা কোথায় গেল, তা রাজ্য পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল এত দিন কিছুই বের করতে পারেনি। রাজ্য সরকার মানুষের ক্ষোভ সামলাতে তড়িঘড়ি ৫০০ কোটি টাকার এক বিশেষ তহবিল তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে কিছু কিছু টাকা দিতে শুরু করে।
কিন্তু বিশিষ্ট আইনজীবী ও সিপিএমের নেতা বিকাশ ভট্টাচার্যসহ অনেকেই প্রশ্ন তোলেন এই তহবিলের আইনি বৈধতা নিয়ে। কিন্তু সরকারের পদক্ষেপে যে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন আশ্বস্ত হননি, তার প্রমাণ কিছুদিন ধরেই চলা দুই চব্বিশ পরগনার গ্রামগঞ্জে সারদাকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের বিক্ষোভ। গত বৃহস্পতিবারও সারদায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন কলকাতায় মিছিল করে সিবিআইয়ের তদন্তের দাবি তোলেন। সরকারি হিসাবেই ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের মধ্যে ১২ লাখ লোক লিখিতভাবে আবেদন করেছেন। আরও পাঁচ লাখ লোক অন্য বিভিন্ন চিটফান্ডের কাছে প্রতারিত হয়ে ক্ষতিপূরণ চেয়েছেন। কিন্তু রাজ্য সরকার কেন এত দিন প্রথমে কলকাতা হাইকোর্টে ও পরে সুপ্রিম কোর্টে প্রাণপণে সিবিআইয়ের তদন্তে বাধা দিয়ে গেল? এ প্রশ্নের জবাবে কেউই মুখ খুলছেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা যে এতে প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ, সেটা স্পষ্ট করে দিয়ে মন্তব্য করেছেন, ‘তা হলে আমাদের দায়িত্ব শেষ, সিবিআই এখন ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করুক।’ রাজ্যের বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো এখন প্রাণপণে সারদাকাণ্ডকে হাতিয়ার করতে রাস্তায় নেমে পড়েছে।
No comments