ত্রিমুখী আক্রমণে তৃণমূল প্রার্থী
দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাট অঞ্চলে থাকেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাদ্যায়৷ ফলে এলাকাটি তাঁর দুর্গ হিসেবেই পরিচিত৷ ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করে মমতার তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ৪২টি আসনের মধ্যে পেয়েছিল মাত্র একটি আসন৷ সেটি এই দক্ষিণ কলকাতা৷ প্রার্থী ছিলেন মমতা নিজেই৷ তাই এই আসনটিকে মমতার আসন হিসেবে বিবেচনা করেন অনেকেই৷ তবে এবার আর এই আসনের প্রার্থী নন তিনি৷ দাঁড়িয়েছেন তাঁর দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী৷ কিন্তু তাঁর জয়ের পথ মমতার মতো মসৃণ নাও হতে পারে৷ এই আসনে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) থেকে নির্বাচন করছেন তথাগত রায়৷ তিনি বিজেপির সাবেক রাজ্য সভাপতি৷ আরও লড়ছেন বামফ্রন্টের নন্দিনী মুখোপাধ্যায়, কংগ্রেসের মালা রায়৷ ২০০৪ সালে মমতা হেসেখেলে জিতলেও ২০০৯ সালে তাঁকে বেশ বেগ দিয়েছিলেন বামফ্রন্টের প্রার্থী রবীন দেব৷ সেবারও তৃণমূল ভোট করে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে৷ ২০১১ সালে মমতা মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এই আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে জয়ী হন সুব্রত বক্সী৷ তবে এবার প্রেক্ষাপট অনেক বদলে গেছে৷ মমতার সরকারের বিরুদ্ধে সারদা কেলেঙ্কারি ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে নানা দুর্নীতিসহ একাধিক অভিযোগ৷ তাই কিছুটা হলেও এই অঞ্চলে হ্রাস পেয়েছে মমতার জনপ্রিয়তা৷ প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হচ্ছিল বিজেপির প্রার্থী তথাগত রায়ের৷ তিনি জোর দিয়েই বলেন, ‘দেখুন কী হয়? অনেক পাল্টে গেছে প্রেক্ষাপট৷
মমতার আর সেই জৌলুশ নেই৷ এখন মোদি হাওয়া দেশজুড়ে৷ বিজেপির অবস্থানও বদলে গেছে৷ নিশ্চিত থাকুন, জয় এবার বিজেপিরই হবে৷ এই আসনে জিতছি আমি৷’ তথাগত আরও বলেন, ‘২০০৯ সালের নির্বাচন ছিল বামফ্রন্টকে হটানোর৷ এবার আর সেই ইস্যু নেই৷ ফলে মানুষ ভোট দেবে যোগ্য প্রার্থীকেই৷’ কংগ্রেস প্রার্থী মালা রায়ও প্রথম আলোকে বলেন, ‘জয়ের আশা নিয়েই তো নির্বাচনে নেমেছি৷ আমরা তো জয়ের আশা ছাড়তে পারি না৷ দেখুন কী হয়? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কংগ্রেসের পরাজয় নিয়ে যা বলেছে তা হবে না৷ কংগ্রেস এবার হারছে না৷’ অন্যদিকে সুব্রত বক্সী এখন এলাকায় ঘুরছেন মমতার ঝান্ডা নিয়ে৷ তাঁর শক্তি মমতা৷ সুব্রত বক্সীও বলেছেন, তাঁর জয় নিশ্চিত৷ এটা মমতার আসন৷ মানুষ জানে৷ মমতাকে ভালোবাসে৷ তাই এই আসনে এবারও অন্য কাউকে আনবে না মানুষ৷ অন্য প্রার্থীদের মতো বামফ্রন্টের নন্দিনী মুখোপাধ্যায়ও নিজের জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী৷ তাঁরই এক সমর্থক তপন বসু বলেন, ‘গত নির্বাচনে এই আসনে বামফ্রন্ট প্রার্থী পেয়েছিল ৩৫ দশিমক ৩৯ শতাংশ ভোট৷ তখন তো কংগ্রেস-তৃণমূল একজোট হয়ে নির্বাচন করেছিল৷ এবার আর সেই সুযোগ থাকছে না৷ তৃণমূলের ভোট ভাগ হচ্ছে৷ মোদি হাওয়ায় বিজেপিও কিছু ভোট টানবে৷ ফলে চতুমুর্খী এই লড়াইয়ে নন্দিনী মুখোপাধ্যায় জিতে গেলে আশ্চর্য হওয়ার কিছু থাকবে না৷ তপন বসু আরও বলেন, ‘আমার তো মনে হয়, তৃণমূল যতটা ভাবছে ততটা ভোট নাও পেতে পারে৷ লোকসভার দরজা খুলে যেতে পারে বামফ্রন্ট প্রার্থীর৷’
No comments