বিমানের দুই বোয়িং কেনা অনিশ্চিত, ঋণ স্থগিত করেছে সোনালী ব্যাংক- হলমার্ক কেলেঙ্কারিতে দৈন্যদশা, দিতে পারছে না কোটি ডলারের অনুমোদিত ঋণ by আজাদ সুলায়মান

বোয়িং থেকে দুটো ৭৭৭ কিনতে ঋণের টাকা দেবে না সোনালী ব্যাংক। এতে ২০১৩ সালে দুটো জাহাজ আনার যে সম্ভাবনা ছিল তাও অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এমনিতেই বিমানকে জাহাজ সরবরাহে টালবাহানা করছে বোয়িং কোম্পানি।


এ অবস্থায় সোনালী ব্যাংক আগের অনুমোদিত ১ কোটি ডলারের মেয়াদী ঋণ স্থগিত করায় বিমানকে চরম বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে। তবে বিমান বলছে- সোনালী ব্যাংক ঋণ আপাতত স্থগিত করেছে। কারণ হলমার্ক কেলেঙ্কারি ফাঁস হওয়ার পর সোনালী ব্যাংকের দৈন্যদশা ফুটে ওঠায়, এখন তাদের আর্থিক অবস্থা এতটাই খারাপ যে, প্রতিদিন ধার করে চলতে হচ্ছে। এ অবস্থায় আগের করা সব ঋণচুক্তি বাতিল করতে হচ্ছে। এতে করে বিমান নতুন দুশ্চিন্তায় পড়েছে। এমনিতেই বিমানের আর্থিক অবস্থা ত্রাহি ত্রাহি। তার ওপর যোগ হয়েছে ঋণ স্থগিতের মতো বড় ধরনের আঘাত। এটা যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা।
জানা যায়, বিমানের বোয়িং থেকে দুটো ৭৭৭ উড়োজাহাজ আনার কথা আগামী বছরের শেষের দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান উৎপাদনকারী কোম্পানি বোয়িং থেকে ১০টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য ২০০৮ সালের এপ্রিলে চুক্তি করে ওয়ান্ ইলেভেন সরকার। এসব জাহাজের মূল্য দুই দশমিক তিন বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা। এ সমুদয় টাকার বেশির ভাগই ঋণ হিসেবে দেয়ার কথা যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিম ব্যাংকের। আর বাকি টাকা দেবে বাংলাদেশের কয়েকটি ব্যাংক। তবে যে দুটো উড়োজাহাজ কেনা হয়েছে এর মূল্য ৩৩ কোটি ডলার। এসব টাকার মধ্যে অগ্রিম পেমেন্ট ১১ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার ডলার পরিশোধ করেছে বাংলাদেশের ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডের নেতৃত্বাধীন ১০টি বেসরকারী ব্যাংক। জাহাজ কেনার মতো কাজে এত বড় ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে বেসরকারী ব্যাংকের ইতিহাসে এটাই প্রথম।
বিমানের অর্থ বিভাগের একটি সূত্র জানায়, বেসরকারী ১০ ব্যাংকের মোট ঋণের মধ্যে ৮ কোটি ডলার ঋণ সমন্বয়ের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে প্রধান ঋণদাতা করা হয়।তখন বিমানের অনুকূলে পাঁচ বছর মেয়াদী ঋণ দেয়ার জন্য সোনালী ব্যাংককে আহ্বান জানায় স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। সোনালী ব্যাংক সিদ্ধান্ত নেয় এক কোটি ডলার ঋণ দেবে। সে হিসেবে গত ২৫ এপ্রিল সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংককে শর্তসাপেক্ষে এক কোটি ডলার ঋণ দেয়ার প্রস্তাব অনুমোদন করে। এতে সোনালী ব্যাংকের ঋণের চুক্তির পর বিমান যথেষ্ট নিশ্চিত হয় আগামী বছরের মধ্যেই জাহাজ দুটো এনে বহরে সংযুক্ত করার। কিন্তু এরই মাঝে হঠাৎ হলমার্ক কেলেঙ্কারি সবকিছু যেন তছনছ করে দিয়েছে। ব্যাংকটির কেলেঙ্কারির পাশাপাশি দৈন্যদশাও ফাঁস হতে থাকে। এমনকি অবস্থা এতটাই শোচনীয় হয়ে দেখা দেয় যে সোনালী ব্যাংককে এখন ঋণ করে চলতে হচ্ছে। তাই গত ৩০ আগস্ট পর্ষদের ২৬৯তম সভায় এ ঋণ বিষয়টি আপাতত স্থগিত করা হয়।
এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হলমার্র্কের ঘটনা ফাঁস হওয়ার আগেই সোনালী ব্যাংক দারুণ অর্থ সঙ্কটে পড়ে। এমনকি দৈনিক প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা ধার করে চলছে। আমানতের নিরাপত্তা (সিআরআর) বিধিবদ্ধ জমার যে নগদ অংশ কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে হয় সেটাও করতে পারছে না। এখন তাদের প্রতিদিনের সিআরআর ঘাটতি হচ্ছে ৭৪৬ কোটি টাকা। আর এ কারণেই আগের অনুমোদিত ঋণ স্থগিত করতে বাধ্য হচ্ছে ব্যাংকটি। এ কারণে গত সোমবার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারীর কাছে লেখা চিঠিতে ধার করে চলা, সিআারআর ঘাটতি ও অনুমোদিত ঋণচুক্তি স্থগিতের কথা জানায় সোনালী ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ।
এ দিকে সোনালী ব্যাংক ঋণচুক্তি স্থগিত করায় বিমান বোয়িং থেকে দুটো জাহাজ আনার ক্ষেত্রে কি ধরনের জটিলতায় পড়তে পারে জানতে চাইলে জনৈক পরিচালক বলেন এখন দেখতে হবে কতদিনের জন্য এটা স্থগিত করা হয়েছে। যদি দীর্ঘমেয়াদী হয় তাহলে বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.