মৃত্যুর পর দান করা মানুষের মৃতদেহ দিয়ে কী হয়?
আলঝেইমার্স রোগের গবেষণার জন্য নিজের মায়ের মৃতদেহ দান করেছিলেন এক ব্যক্তি।
কিন্তু সেটি গবেষণার কাজে ব্যবহৃত না হয়ে বিস্ফোরক পরীক্ষা করার কাজে ব্যবহার করা হয়।
সম্পতি আমেরিকার অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যে একটি বায়োলজিক্যাল রিসোর্স সেন্টারের বিরুদ্ধে মামলার বিস্তারিত প্রকাশ পেয়েছে।
২০১৪ সালে সেই সেন্টারটিতে মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআই অভিযান চালিয়ে মানবদেহের কয়েকশত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পেয়েছে।
এই
সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, মৃতদেহ দানকারী ব্যক্তিদের ইচ্ছা
অনুযায়ী সেগুলো গবেষণার কাজে ব্যবহার না করে অবৈধভাবে বিক্রি করে দেয়া
হচ্ছে।
আদালতের কাগজপত্রে দেখা যাচ্ছে, মৃতদেহ দানকারী ব্যক্তিদের
পরিবারগুলো বলছে যে চিকিৎসা বিজ্ঞানের গবেষণার জন্য মৃতদেহ দান করা
হয়েছিল।
একটি মামলার বাদী জিম স্টফার বলেন, তাঁর মা আলঝেইমার্স রোগের চিকিৎসার গবেষণার জন্য মৃতদেহ দান করেছিলেন।
যেহেতু
তিনি নিজে আলঝেইমার্স রোগে ভুগছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে মি: স্টফার জানতে
পারেন যে বিস্ফোরকের কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য সেনাবাহিনী তার মায়ের
মৃতদেহ ব্যবহার করেছিল।
শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান করার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ বা দেখভাল করে যুক্তরাষ্ট্রের হেলথ এন্ড হিউম্যান সার্ভিসেস বিভাগ।
কিন্তু মৃতদেহ দান করার বিষয়টি দেখভালের কেউ নেই।
যুক্তরাষ্ট্রে
মৃতদেহ কেনা-বেচা একটি অপরাধ। কিন্তু মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া, সংরক্ষণ করা,
পরিবহন করা এবং ফেলে দেয়ার জন্য কিছু যৌক্তিক অর্থ নেয়া আইনসিদ্ধ কাজ।
কিন্তু এই 'যৌক্তিক অর্থ' বলতে কী বোঝায় সেটি অবশ্য পরিষ্কার নয়।
চিকিৎসা গবেষণার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর কত মৃতদেহ দান করা হয় সেটির কোন পরিসংখ্যান নেই।
তবে ধারণা করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর কয়েক হাজার মানুষ শিক্ষা এবং চিকিৎসার জন্য মৃতদেহ দান করে।
তারা মনে করে, এই মৃতদেহ গবেষণার কাজে ব্যবহার করা হবে।
মেডিকেল
শিক্ষার্থীদের শেখানোর জন্য এই মৃতদেহ ব্যবহার করা হয়। ইউনিভার্সিটি অব
ক্যালিফোর্নিয়ার মতো অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা কাজটি স্বচ্ছ উপায়ে করে।
ইউনিভার্সিটি
অব টেনেসি অ্যানথ্রোপলজিক্যাল রিসার্চ ফ্যাসিলিটি বলছে, মানুষের মৃতদেহ
কিভাবে পঁচে যায় সেটি নির্ণয় করার জন্য ফরেনসিক দলকে প্রশিক্ষণ দেয়া
হয়।
ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যানাটমিক্যাল সার্ভিসেস-এর এক
কর্মকর্তা জানালেন, মৃতদেহগুলো কোথায় যাচ্ছে সেটি নির্ণয় করা একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি বলেন বর্তমানে যেসব নিয়মকানুন আছে সেগুলো যথেষ্ট নয়।
সুনির্দিষ্ট
আইনের অভাবে দানকরা মৃতদেহগুলো যে উদ্দেশ্যে দেয়া হচ্ছে, সেটি পুরোপুরি
পালন করা হচ্ছে না। এগুলোর অপব্যবহার হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
যেসব প্রতিষ্ঠানে মৃতদেহ দান করা হয় সেগুলোকে সনদ দেয় আমেরিকান এসোসিয়েশন অব টিস্যু ব্যাংকস।
যদিও
এ ধরণের সনদ বাধ্যতামূলক নয়। অ্যারিজোনার যে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে
মৃতদেহ অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে তাদের কোন সনদ ছিল না এবং তারা সম্পূর্ণ
বাণিজ্যিক-ভিত্তিতে পরিচালিত।
এই প্রতিষ্ঠানটি বিনা খরচে মৃতদেহ নিয়ে আসা এবং সমাহিত করার ব্যবস্থা করে। ফলে বিষয়টি নিম্ন আয়ের মানুষকে আকৃষ্ট করে।
অন্যান্য দেশে মৃতদেহ দান
ইংল্যান্ড, ওয়েলস এবং নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে হিউম্যান টিস্যু অথরিটি নামে একটি সংস্থা আছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা গবেষণার জন্য মৃতদেহ দান করা হয়, সেখানে নিয়মিত পরিদর্শন করে টিস্যু অথরিটি।
ব্রিটেনে ১৯টি প্রতিষ্ঠান আছে যারা দান করা মৃতদেহ গ্রহণ করে।
অনেক দেশ আছে যেখানে ধর্মীয় কারণে চিকিৎসা গবেষণার জন্য মৃতদেহ দান করার বিষয়টি বাধাগ্রস্ত হয়।
আফ্রিকার অনেক দেশে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দান করার ক্ষেত্রেও নানা ধরণের সামাজিক বিধি-নিষেধ আছে।
কাতারে
একটি হাসপাতাল আছে যেখানে চিকিৎসা গবেষণার জন্য মানব দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ
আমদানি করা হয়। এই হাসপাতালটি ১২ বছর যাবত কাজ করছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনায় বায়োলজিক্যাল রিসার্চ সেন্টারে যে ঘটনা ঘটেছে সেটি মৃতদেহ দানকারী শিল্পে অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে।
কিন্তু তারপরেও মৃতদেহ দানকরা চিকিৎসা বিজ্ঞানের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মানবদেহকে বোঝার জন্য এটি অমূল্য একটি বিষয়।
মৃতদেহ দানকরা নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের ডেনভারের সুসান পর্টারের ঘটনা।
২০১৫ সালে এই বৃদ্ধ নারী তার মৃতদেহ দান করেন কলোরাডো ইউনিভার্সিটির ভিজিবল হিউম্যান প্রজেক্ট-এর ড. ভিক স্পিটজারের কাছে।
এই প্রজেক্টর মাধ্যমে মানবদেহকে ভার্চুয়াল নমুনায় রূপান্তর করা হয়।
সুসান
পর্টারের মৃতদেহ কেটে ২৭০০০ টুকরা করা হয়। প্রতিটি টুকরার ছবি নিয়ে
সেগুলোর ভার্চুয়াল স্তূপ করা হয় এবং সেগুলোর মাধ্যমে তার শরীরের থ্রিডি
ইমেজ তৈরি করা হয়।
No comments