বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত দিচ্ছে না ইউনিপেটুইউ by কাজী আনিছ

নির্দিষ্ট সময়ে অনশনকারী ও অন্যান্য গ্রাহকের বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিল কথিত মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ইউনিপেটুইউ কর্তৃপক্ষ। এমন আশ্বাসে অনশন স্থগিত করেছিলেন গ্রাহকেরা। তবে নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও বেশির ভাগ গ্রাহকই টাকা ফেরত পাননি। কোম্পানির বেশ কয়েকজন গ্রাহক প্রথম আলোর কার্যালয়ে এসে এবং মুঠোফোনে এমন অভিযোগ করেন। অনেক গ্রাহক এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের নির্বিকার ভূমিকার জন্য ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও ব্যক্ত করেন।


ইউনিপেটুইউতে বিনিয়োগ করা টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে শহীদ মিনারে আমরণ অনশন শুরু করেন বিনিয়োগকারী গ্রাহকেরা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর শাহবাগ থানার পুলিশের মধ্যস্থতায় ইউনিপেটুইউ কর্তৃপক্ষ অনশনকারী প্রতিনিধিদের সঙ্গে বনানীর এক বাসায় সমঝোতা বৈঠক করে। বৈঠকে শাহবাগ থানার ওসি রেজাউল করিমও উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকের লিখিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, গত বছরের (২০১১) ২ ও ৯ অক্টোবর অনশনকারী ১৫০ জন ও ১০ অক্টোবর সব বিনিয়োগকারীর টাকা কর্তৃপক্ষের ফেরত দেওয়ার কথা।
গ্রাহকেরা অভিযোগ করেন, নির্দিষ্ট সময় পার হয়ে গেলেও বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী গ্রাহক টাকা ফেরত পাননি। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা থাকলেও প্রশাসন নির্বিকার ভূমিকা পালন করছে।
বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে প্রথম স্বাক্ষরকারী মো. সোহেল প্রথম আলোর কার্যালয়ে এসে অভিযোগ করে বলেন, তালিকায় থাকা ১৫০ জনের মধ্যে মাত্র ৭৫ জনকে কোম্পানি মূলধনের ১০ শতাংশ টাকা ফেরত দিয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তালিকার বাকি ৭৫ জনসহ লক্ষাধিক গ্রাহক এখনো টাকা ফেরত পাননি।
মাহফুজুর রহমান নামের আরেক গ্রাহক মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নির্দিষ্ট সময়ের ১০ দিন পর এ ব্যাপারে কোম্পানির পরিচালক মেজর (অবসরপ্রাপ্ত) জলিলের কাছে ফোন করে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলেন। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন, ‘টাকা নাই। কোত্থেকে দেব।’ এরপর তিনিসহ কোম্পানির সব কর্মকর্তাকে ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করেন, এ ব্যাপারে শাহবাগ থানার পুলিশকে বেশ কয়েকবার জানানো হলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যোগাযোগ করা হলে শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, ইউনিপেটুইউ কর্তৃপক্ষ তাদের প্রতিশ্রুতি রাখেনি। টাকা না পাওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রতিদিনই থানায় বিভিন্ন গ্রাহক আসছেন। ইউনিপেটুইউ কর্তৃপক্ষের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও তিনি জানান।
সূত্র জানায়, শুরুর দিকে রাজধানীর মোতালিব প্লাজায় ইউনিপেটুইউর কার্যালয় ছিল। পরে সেখান থেকে কর্তৃপক্ষ মোহাম্মদপুরের সাতমসজিদ রোড এলাকায় নিজস্ব ভবন করে কার্যক্রম শুরু করেন।
গ্রাহকদের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বেশ কয়েকবার ওই ভবনে গেলে প্রধান ফটক তালাবদ্ধ পাওয়া যায়। আশপাশের লোকজন জানান, এটি সব সময় বন্ধ থাকে। কেউ আসেন না। তবে গভীর রাতে কয়েকজন লোক এসে চলে যান।
পরে ইউনিপেটুইউর দুই পরিচালক মেজর (অব.) এম এ মুকিত ও মেজর (অব.) জলিল এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুনতাসির হোসেন ও মো. তাহেরের মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার ফোন করা হয়। কিন্তু কউ ফোন ধরেননি। তাঁদের মুঠোফোনে বেশ কয়েকটি খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের অক্টোবরে মালয়েশিয়াভিত্তিক ইউনিপেটুইউ আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু করে। স্বর্ণের ব্যবসার কথা বলে সাধারণ মানুষের কাছে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তাঁরা। আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের প্রায় সাড়ে ছয় লাখ সাধারণ মানুষ তাঁদের গ্রাহক হন। এর মধ্যে প্রায় দুই লাখ গ্রাহকের প্রত্যেকেই লক্ষাধিক টাকা বিনিয়োগ করেন।
শর্ত অনুযায়ী, কোম্পানি প্রতি মাসে ১০ শতাংশ হারে ১০ মাসে লভ্যাংশ ও মূলধন মিলে প্রতি গ্রাহককে মূলধনের দ্বিগুণ টাকা দেওয়ার কথা। কিন্তু প্রথম দিকে হাতে গোনা কয়েকজন নিয়ম অনুযায়ী টাকা পেলেও বেশির ভাগই লভ্যাংশ দূরে থাক, মূলধনই ফেরত পাননি। এ ব্যাপারে দুদক গত বছরের ৬ জুন কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলাটি বিচারাধীন। এ ছাড়া ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেটসহ দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায় ইউনিপেটুইউর বিরুদ্ধে তিন শতাধিক মামলা হয়েছে। মামলার পর থেকে ইউনিপেটুইউ কর্তৃপক্ষ কার্যালয় বন্ধ করে গা ঢাকা দিয়েছে। তবে কোম্পানি খিলক্ষেতে ভিন্ন নামে ব্যবসা পরিচালনা করছে বলে গ্রাহকেরা জানিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.