গল্প- 'সোনালি চিল' by সৈয়দ মোফাজ্জেল হোসেন

ক'দিন ধরেই মন খারাপ রাজিবের। রাত্রির সঙ্গে ওর পরিচয় গত পাঁচ বছরের। এই পাঁচ বছর ধরে ওরা সব সময়েই নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা স্বপ্ন দেখেছে।

রাত্রির বাবা-মাও বিষয়টি জানেন। তার সম্মতি ছিল রাজিবের সঙ্গে রাত্রির বিয়েটা হয়ে যাক। শুধু অপেক্ষা ছিল রাত্রির চাচার আমেরিকা থেকে দেশে আসা নিয়ে। তিনি ঢাকাতে এলেই রাজিব-রাত্রির বিয়েটা হয়ে যাবে। এর ভিতরে রাত্রির এমএটাও শেষ হবে। তার পর আর যেন বাধা নেই।
রাজিবের মারও এ বিয়েতে আপত্তি নেই। রাত্রির রংটা একটু কালো ধরনের। আপত্তি-টাপত্তি একটু এখানেই। মার মনটা খুব একটা সায় দেয় না। রাজিব মায়ের এই আপত্তির বিষয়টি খুব একটা গুরুত্ব দেয়নি। বলেছে, মা রং-টং খুব একটা ম্যাটার হবে না আমার কাছে? ওকে পাঁচ বছর ধরে দেখছি, চমৎকার মেয়ে রাত্রি। আমার দৃষ্টিতে ও খুব সুপার মেয়ে। তুমি দেখে নিও।
রাত্রির চাচা আমেরিকার কোন স্টেটে থাকেন রাজিব জানে না।। শুধু শুনেছে উনি গত পঁচিশ বছর ধরে আমেরিকায় বসবাস করেন সস্ত্রীক। ভালো ব্রোকার ফার্মের মালিক। অঢেল পয়সা।
যেদিন ভদ্রলোকের আসার কথা সেদিন তিনি এলেন না। এলেন তার স্ত্রী। সঙ্গে তার বোনের ছেলে। আমেরিকাতে যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে তার পক্ষে অনেক চেষ্টা করেও প্রোগ্রাম মতো দেশে আসা অতি সহজ হয় না। তাদের নানা সমস্যা থাকে। কাজের মধ্য থেকে ফুরসত পাওয়াটাই কষ্টকর।
মাঝখানে ক দিন রাত্রিকে পাওয়াই গেলো না। ওর গায়েও আমেরিকার বাতাস লেগেছে। মোবাইলে টেলিফোন করলে হয় ওটা বন্ধ থাকে কিংবা 'রাজিব একটু ব্যস্ত আছি, পরে, কথা বলি' বলে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। শুধু রাজিবের ইচ্ছে এখন আর রাত্রির সঙ্গে কথা হয় না। সকালে গেলে কিংবা রাত দশটার দিকে ওদের বাসায় গেলে রাত্রি বাসায় নেই বলে জানিয়ে দেয় ওদের গেট থেকেই। দারুণ অপমান বোধ করে রাজিব। মোবাইল ফোন কোম্পানিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার সে। লাখ টাকার মতো বেতন। বুয়েট থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ইঞ্জিনিয়ারিং পাস। নিজের গাড়ী আছে। রাত্রিদের বাড়ীতে আজকাল যখন ওকে পাওয়া যায় না তখন ইগোতে খুব লাগে। ওর পৌরুষ আর ব্যক্তিত্ব আহত হয়।
এ কারণেই আজকাল ওর মনটা খুব খারাপ থাকে। ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। রাজিব ভাবে ও কি হেরে যাচ্ছে কারো সঙ্গে প্রতিযোগিতায়। কিন্তু ওর তো কোন প্রতিযোগী ছিলো না। তা হলে?
এর ভেতরেই রাজিব খবর পায় রাত্রির সঙ্গে ওর চাচীর বোনের ছেলের একটা সম্পর্ক তৈরির চেষ্টা চলছে পারিবারিকভাবে। ছেলেটাও ব্রোকার হাউজে চাকুরী করে। রাত্রির সঙ্গে বিয়ে হলে তাৎক্ষণিকভাবে ওকে আমেরিকায় নিয়ে যেতে কোন সমস্যা হবে না। প্রস্তুতি সে রকমই। আর আমেরিকা সে তো যে কোন নারীর জন্যে স্বপ্নের দেশ।
রাত্রির জন্যেও এটা কোন ব্যতিক্রম নয়। রাজিব এসব শুনে তো অবাক। ওর সঙ্গে এই যে পাঁচ বছরের পরিচয়? তার কি হবে? আমেরিকার হাতছানীর কাছে ওর প্রেম বিশ্বাস ভাবনার অপমৃতু্য।
কি আশ্চার্য!
রাত্রির সঙ্গে ওর পরিচয় হয়েছিল ওর এক বন্ধুর বাড়িতে। প্রথম প্রথম রাজিব ওকে পাত্তা দেয়নি। ওর দিকে তাকালে কেমন যেনো একটা মেকি মেকি লাগতো ওকে। এদেশের গিলটি সোনার গয়না। তারপর যা হবার তাই হলো। ওকে ভালো লাগা শুরু হলো ক্রমশ।
স্বপ্নের জাল বুনলো দুজনেই। রাত্রির মা-বাবা দু'জনেই পছন্দ করতেন রাজিবকে। নিজের ছেলেকে যতো না খাতির করতেন তার থেকে মনে হয় বেশীই করতেন। জামাই হবার আগেই যেনো জামাই আদর করতেন।
সেদিন ওর ভাই তান্না এসে অনেকটা ক্ষুব্ধ স্বরেই বললো, তুমি রাত্রির আশা ছেড়ে দাও। রাত্রি মনে হয় ঐ আমেরিকার হারামীকেই বিয়ে করতে আগ্রহী। তোমাকে তো ভুলেই গেছে। ঘরে থাকলেও বলে রাজিবকে বলে দে আমি বাসায় নেই।
তান্না রাজিবের বছর পাঁচেকের ছোট। ভার্সিটির শেষ বর্ষের ছাত্র। এসব শোনার পর থেকেই রাজিব উদ্ভ্রান্তের মতো থাকে। ভেতরে অশান্তির আগুন জ্বলছে।
রাজিব জানে এ যুগে লায়লি-মজনুদের কোন মূল্য নেই। রোমিও-জুলিয়েট গল্পকথা মাত্র। তারপরেও প্রেমের শূন্যতা মানুষকে দিকভ্রষ্ট তো করেই। রাজিবের অবস্থাও সে রকম। বৈঠাবিহীন নৌকা। আজকাল তো আর কেউ প্রেমের জন্য জীবন দেয় না। অধিকাংশ ছেলে বিয়ের আগেই, ছাত্র অবস্থা থেকেই শ্রীকৃষ্ণ ক্লাবের সদস্য হয়ে যায়। চারিদিকে গোপীজন পরিবেষ্টিত থাকে-আবার বিয়ে করে অন্য কোথাও, অন্য কোন খানে। কিন্তু রাজিব এ ধরনের ছেলে না। ওর চারিত্রিক দৃঢ়তা অনেক বেশী। রাত্রির সঙ্গে ওর সম্পর্ক সেই ছাত্রজীবন থেকেই।
কবি বলেছেন, নারীরিত্র দেবা নশ্চাং জানোন্তি কুত. মনুষ্য। আজকাল মনে হয় মেয়েদের মন অতো জটিল নেই। জীবন যেমনই হোক মেয়েদের মন অনেক সহজসাধ্য।
টাকা-পয়সা-আরাম আয়েস আর আমেরিকার হাতছানি। ব্যস্ আর কি চাই। মেয়েদের থেকে মনে হয় পুরুষের মনই জটিল বেশি।
তান্না সেদিন খুব দুঃখ করে বলেছিলো, রাজিব ভাই, আপা আজকাল যেনো কেমন হয়ে গেছে। ওই শালা আমেরিকান ছেলে ওকে কিভাবে যেনো আচ্ছন্ন করে রেখেছে। মার চাচী-মা তো তার বোনের ছেলের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কাহাতক আর সহজ হয় ও বলো?
কোন কথা বলে না রাজিব। রাত্রির জন্যে ক্রমান্বয়ে একটা ঘৃণা তৈরি হতে লাগলো। লোকে বলে প্রেমের অপর পৃষ্ঠায় ঘৃণা লেখা থাকে। রাজিবের ক্ষেত্রে তাই হচ্ছে।
এখন নভেম্বর মাস। এই মুহূর্তে ঢাকার আবহাওয়া আর ভালস্নাগে না রাজিবের। ভাবলো ক দিনের জন্যে কক্সবাজার ঘুরে আসবে। সমুদ্রের ধারে গেলে হয়ত মনটা কিছুটা ভালো লাগতে পারে।
এ কারণেই ওর কক্সবাজার আসা। না, এখানেও অনেক ভীড়। সমুদ্র সৈকত নোংরায় ভরা। অনেক মানুষ গিজ গিজ করে। সৈকতের চারিদিকে হোটেল আর রিসোর্ট সমুদ্রকে যেভাবে গ্রাস করছে তাতে বঙ্গোপসাগরের এই অংশ আর তার পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। দেশের নদীগুলোর মতো হয়ত সমুদ্রের অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।
রাজিবের কক্সবাজার আজকাল আর ভালস্নাগে না। এখানে এলে প্রথমে মনে হয়েছিল হয়ত ভালো লাগতে পারে। কিন্তু বাদামের খোসা, ডাবের খোসা, কোকের বোতলের ছড়াছড়ির ভেতরে মনে শান্তি আশা করাই বৃথা। রাজিব মনের ক্ষোভে কক্সবাজার ছাড়লো।
এরচেয়ে টেকনাফ ভালো লাগতে পারে। রাজিব ঠিক করলো টেকনাফেই কাটাবে কয়েকদিন। অনেক দিন আগে একবার টেকনাফে এসেছিলো রাজিব। তখনো টেকনাফকে ওর ভালো লেগেছিলো। পর্যটন করপোরেশনের হোটেলটা নাফ নদীর তীরে। জানলার ধারে বসলে নাফ নদীর সম্পূর্ণটা চোখে পড়ে। নাফ নদীর ওপারে বার্মা।
রাজিব কক্সবাজার থেকে অাঁকাবাঁকা পথ বেয়ে টেকনাফ এলো। পর্যটন করপোরেশনের হোটেলটা দেখতেও অনেকটা প্রাচীন যুগের বাড়ীর মতো। ঘর-দোরগুলো সুসজ্জিত। একটু হোমলি পরিবেশ আছে। দোতলার একটি রুম ভাড়া নিলো রাজিব। ভাড়াও খুব ন্যায়সঙ্গত-নাগালের মধ্যে। রেজিস্টার নাম এন্ট্রি করতে গিয়ে মনে হলো দু'চার জন বিদেশীও আছে। কিন্তু হোটেলে খুব ভিড় নেই।
নিজের রুমে এলো রাজিব। এখানেই নিরিবিলি ক'দিন থাকবে। মনের ভেতরে উথাল-পাতাল। রাত্রিও কথা মনে হলেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে। নাফ নদীর ঢেউয়ের মতোই মনে হতাশার ঢেউ খেলে যায়।
বিকেলের দিকে গাড়ীটা নিয়ে সমুদ্রের দিকে গেলো রাজিব। টেকনাফ অংশে সমুদ্রে ঢেউ ওঠে তবে সে রকম না। কক্সবাজারের সমুদ্রে সাপের ফনার মতো ঢেউগুলো সমুদ্রতটে আছড়ে পড়ে। একটা তরঙ্গ ভাঙ্গতে ভাঙ্গতেই আরেকটা ঢেউ-এর পেছনে পেছনে ছুটে আসে। সে এক অপূর্ব দৃশ্য। কিন্তু লোকজনের ভিড়ে এ দৃশ্য দেখার আনন্দটা সেভাবে অনুভব করে না রাজিব।
টেকনাফ অংশে সমুদ্র অনেক বেশি শান্ত। শুধু বড় বড় কিছু নৌকা ফেলে রাখা আছে।
রাজিব সমুদ্র তটে বসলো। সূর্য সামনের দিকে কিছুক্ষণের ভেতরেই হয়ত অস্ত যাবে। এখানে সূর্যোদয় দেখা যায় না। অস্তগামী সূর্য দেখলে রাজিবের কষ্ট লাগে। সারাদিনের প্রচণ্ডতাশেষে এক সময় ক্লান্ত সূর্য প্রকৃতি কোলে ঢলে পড়ে। মানুষের জীবনের সঙ্গে সূর্যের উদয় হওয়া মধ্যাহ্নের প্রচণ্ডতা শেষে এক সময়ে মেঘের কোলে হারিয়ে যাওয়া-কি অপূর্ব মিল মানুষের জীবনের সঙ্গে।
সমুদ্র সৈকতের বালিগুলোর গাঁথুনি খুব শক্ত, এর ওপর দিয়ে গাড়ী চালানো যায়। মসৃণ বালু তটে গাড়ী খুব সহজেই চলে।
বালু কনার ওপরে আংগুল দিয়ে অকারণে দাগ কাটছে রাজিব। কোন উদ্দেশ্য নেই-এমনিতেই।
এই মুহূর্তে রাত্রির কথা মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে ওর বাড়িতে গেলে রাজিবকে এড়িয়ে যাওয়ার বিষয়গুলোই নিয়েই কি এতটাই স্বার্থপর? রাজিবের কথা একবারও ভাবলো না রাত্রি।
সাগরের ছোট ছোট ঢেউয়ের মতো ওর মনেও নানা ভাবনা আকুলি-বিকুলি করছে।
হঠাৎ করেই রাজিব লক্ষ্য করে একটু দূরে সরে মহিলা একাই বসে আছে। সামনে অস্তগামী সূর্যের দিকে তিনি তাকিয়ে আছেন। এক নজরে মহিলাকে দেখলো রাজিব।
মেয়েদের ব্যাপারে রাজিবের আগ্রহ আছে কিন্তু উত্তাপ নেই। লাল পাড় সাদা শাড়ী পরা মহিলা। খুব পরিপার্টি করে তিনি বসে আছেন। এর বেশি আর কিছু খেয়াল করলো না রাজিব।
রাত্রির কথা মনে হচ্ছে বারংবার। কিছুতেই ভুলতে পারছে না। ওর ভাই তান্না যেটুকু জানিয়েছে তা ওর কাছে বিশ্বাসযোগ্য। কেননা যতবার ওদের বাড়িতে গেছে ততবারই শুনেছে রাত্রি বাসায় নেই। অথবা অসুস্থ। যে মেয়ের সঙ্গে একদিন দেখা না হলেই মোবাইলে অস্থির করে তুলতো আজ কতদিন কোন মোবাইল নেই। ম্যাসেজ পাঠালেও জবাব পাওয়া যায় না। হয়ত সীমটাই বদলে ফেলেছে।
আপনি একা? এই প্রশ্নেই সম্বিত ফিরে পেলো রাজিব। হঁ্যা, আমি একা। একদম একা।
মহিলা বললেন, আপনার পাশে বসতে পারি?
বসুন। রাজিব সহজভাবেই বললো। মহিলা বললেন, আমার নাম ইন্দ্রানী স্যানাল। বসতে বসতে বললেন, আমি আর আমার মা কোলকাতা থেকে এসেছি। আমি কলেজের অধ্যাপক।
রাজিব হাসলো। বললো, আমি রাজিব হাসান। একজন আইটি ইঞ্জিনিয়ার। বাড়ী ঢাকার মুন্সীগঞ্জে।
রাজিবের পরিচয় পাবার পরই ইন্দ্রানী দুই হাত জোড় করে বললো, আপনি বাংলাদেশী এজন্যে আপনাকে নমস্কার।
আপনি ইন্দ্রানী স্যানাল একজন বাংলাদেশীকে নমস্কার করলেন কেন।
হাসলো রাজিব। হঠাৎ নমস্কার কেন?
ইন্দ্রানী বলল, এই জন্যে যে আপনি সেই বাংলাদেশীর একজন যারা মাতৃভাষা, আই মীন, বাংলা ভাষার জন্যে জীবন দিয়েছেন। আপনারাই বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্যাদা এনে দিয়েছেন। আপনাদের প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র সংঘে বাংলা ভাষায় তেজদীপ্ত কণ্ঠে বক্তৃতা করেছেন। আমরা ভারতের বাঙ্গালীরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
কিন্তু আপনাদের এখানে নামকরা কবি সাহিত্যিক আছেন, যারা বাংলা ভাষাকে অনেক বেশি পছন্দ করেছেন।
ওপারে ছাই করেছে। ওরা সব কমার্শিয়াল লেখক। ওরাও আপনাদের বইয়ের বাজারের দিকে চেয়ে থাকে।
আপনার সঙ্গে সবে পরিচয় হলো। এ ব্যাপারে আপনার অনেক বাহাস আছে।
ইন্দ্রানী স্যানাল বলল, শুনলে অবাক করেন কোলকাতায় বাঙ্গালীরা হিন্দু আর মুসলমানরা, হাসলো ইন্দ্রানী মুসলমানরা শুধুই মোহামেডান। কি মূর্খতা আর অপমানকর বলেন?
এবার আগ্রহ ভরে মহিলার দিকে তাকালো রাজিব। হঁ্যা খুবই সুন্দরী মহিলা। কথা বলার স্টাইলও সুন্দর। চোখ দুটো বড় এবং টানা টানা। ইন্দ্রানী সমুদ্রকে সামনে রেখে আমার পাশেই বসলো। আমি কখনো আপনাদের বাংলাদেশে আসিনি। আসি আসি করেও আসা হয়নি। আমরা আজ সাতদিন বাংলাদেশে। মার সঙ্গে আমার সম্পর্কটা বন্ধুর মতো। তাই অচেনা দেশে এসেও কোন সমস্যা হয়নি। এক নাগাড়ে কথাগুলো বললেন ইন্দ্রানী স্যানাল।
সমুদ্র দেখাতে আনলেন না মাকে?
আজ মার শরীরটা ভালো নেই তাই একাই এলাম। আপনি?
রাজিব বললো, আমি? আমি ভাই ভীষণ একা। একাই এসেছি, মাঝে মাঝে আসি। ক' দিন থেকে চলে যাই।
কক্সবাজারে যান না?
কক্সবাজারে এতো ভীড় আর নোংরা আমার একদম পছন্দ হয় না। সমুদ্রের গর্জন শোনার জন্যে কখনো সখনো মন চায় যেতে কিন্তু অই বললাম ভীড় আর নোংরার জন্যে যাওয়া হয় না।
ইন্দ্রানী চুপ করে রইলেন।
রাজিব বললো, অনেকদিন আগে একবার কক্সবাজার এসেছিলাম। তখন এতো ভীড় আর নোংরা ছিল না। খুব পরিচ্ছন্ন। দূরের হোটেল থেকেও সমুদ্রের গর্জন শোনা যেতো। আজকাল আর সে গর্জন শোনা যায় না। এখন চারিদিকে বড় বড় হোটেল হয়ে কক্সবাজারের নাভিশ্বাস উঠছে। সমুদ্রের বেলাভূমিতে এখন সমুদ্র পোকারা আর বালু কেটে ছবি অাঁকে না। এ এক হতাশার কথা। তারচে' টেকনাফ ঢের ভালো। অন্তত, আমার তো তাই মনে হয়।
কোলকাতার মেয়ে ইন্দ্রানী বললেন, আপনি নিজেকে নিজের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কোন হতাশা কি ঘিরে রেখেছে আপনাকে? রাজিব জিজ্ঞেস করলো, কেনো বলুন তো? এ রকম মনে হচ্ছে কেনো আপনার কাছে। ইন্দ্রানী বললেন, না যেভাবে আপনি নির্জনতা খুঁজছেন তা একমাত্র হতাশাগ্রস্থরাই করে থাকে। তাই বললাম আর কি।
চমকে উঠলো রাজিব। ওর চেহারায় কি রাত্রির হতাশা দাগ কেটেছে? তা না হলে ইন্দ্রানী এটা বলবে কেনো? রাজিব বললো, হতাশা-টতাশায় বিশ্বাসী নই আমি। কোন দুঃখ বা হতাশা আমাকে স্পর্শ করে না।
ইন্দ্রানী জিজ্ঞেস করলেন, বিয়ে-টিয়ে তো করেননি। তা হলে কোন প্রেমঘটিত ব্যাপার স্যাপার নেই তো?
না না। প্রতিবাদ করলো রাজিব। ইন্দ্রানী বললো, দেখুন আপনি আর আমি একই সময়ের মানুষ। দুর্ভাগ্যক্রমে আপনি বাংলাদেশের পরিমণ্ডলে আর আমি ভারতীয় আবহাওয়ায় মানুষ। আমরা যদি পরস্পরকে বুঝতে না পারি তো পারবে কে? আমাদের ঠাকুরদা আর ঠাকুর মা?
ইন্দ্রানী সেন মনে হচ্ছে একটু ফাস্টই যাচ্ছে।
রাজিব বললো, তা হলে আপনি বলছেন দেশে দেশে সমবয়েসীদের মন মানসিকতা একই রকম? একজন অন্যজনের মন পড়তে পারে?
তা পারে বৈকি! হঠাৎ ইন্দ্রানী বললো, দেখুন মেঘটা কিভাবে সূর্যটা কে ঢেকে ফেলছে। কি অপূর্ব! সূর্যটা মেঘের আড়ালে চলে যাচ্ছে। আমাদের দীঘাতে এতো সুন্দর সূর্যাস্ত দেখা যায় না।
রাজিব মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখলো। অনেক সময় ঢাকার আকাশ পরিষ্কার থাকলে সূর্যাস্ত দেখা যায়। কিন্তু এমন অপূর্ব দৃশ্যের জুড়ি নেই।
ইন্দ্রানী কোন কথা বলছে না।
একটু পরেই সন্ধ্যা নামবে। দূরে সমুদ্রের পানিতে সূর্যের আলোটা কাঁপছে। খণ্ড খণ্ড হয়ে যাচ্ছে। মেঘের চারপাশে সোনালী সূর্যের আলো। না দেখলে বিশ্বাসই করতে পারতো না রাজিব। আগে এমন করে সূর্যাস্ত রাজিবের চোখে ধরা দেয়নি। ওর মনের ভেতরেও একটা আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। দু'জনেই মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো ওইদিকে।
সূর্যের সোনালী রং আস্তে আস্তে ফিকে হয়ে আসছে। চারিদিকে উজ্জ্বল সন্ধ্যার আলো। ইন্দ্রানী রাজিবকে প্রশ্ন করলো, আপনি কোথায় উঠেছেন?
রাজিব বললো, নাফ নদীর পাশে পর্যটনের যে হোটেলটা আছে ওটাতে।
কি বলছেন? খুব উৎফুলস্ন হলো ইন্দ্রানী, আমরাও তো ওই হোটেলেই উঠেছি। আমাদের রুম নং দুশো পাঁচ। চলুন সন্ধ্যা তো হয়েই এলো। উঠলো রাজিব। বললো, এক সেকেন্ড। আমি গাড়ীটা নিয়ে আসি। একটু দূরেই গাড়ী পার্ক করা ছিল। ইন্দ্রানী বললো, দু'জনে এক সঙ্গে যাই।
পাশাপাশি দু'জনেই বালির ওপর হাঁটতে হাঁটতে এগিয়ে গেলো। বেশ লাগছে রাজিবের। ইন্দ্রানীর সঙ্গে মনে হচ্ছে বহুদিনের পরিচয়। খুব সহজ আর স্বাচ্ছন্দ্যভাবে হেঁটে চললো ইন্দ্রানী। কোন জড়তা নেই নতুন পরিচয়ের কোন গন্ধ নেই। এই তো বেশ দু'জনে পাশাপাশি হেঁটে যাওয়া। রাজিবের মনে হলো এইভাবে ইন্দ্রানীর সঙ্গেও সারাজীবন হাঁটতে পারে।
ওরা যখন হোটেলে পৌঁছলো তখন সন্ধ্যা প্রায় হয়ে গেছে। ইন্দ্রানী বললো, রাজিব চলুন মার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেই।
আজকেই?
হঁ্যা আজকেই। এখুনি, ক্ষতি কি? আসুন।
অনেক পীড়াপীড়ি সত্ত্বেও রাজীব আজকেই ইন্দ্রানীর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে রাজী হলো না। শুধু নিজের সমস্যাটা বলে চলে গেলো।
এখন রাত্রির বিরহের প্রভাব কাটেনি রাজিবের। মনটা খুবই লণ্ডভণ্ড অবস্থায়। কিছুই ভালো লাগছে না। রাত্রির সঙ্গে ওর সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে কখনো ভাবেনি রাজিব।
এই মুহূর্তে ইন্দ্রানীকে বা ওর আহ্বানে সাড়া দেবার প্রস্তুতি নেই তার। সারারাত ওর ভালো ঘুম হলো না। শুধু বিছানায় ছটফট করলো।
সকালে ঘুম থেকে উঠলো সাড়ে পাঁচটার দিকে। নিজে ফ্রেশ-ট্রেশ হয়ে পাঞ্জাবিটা গায়ে চড়ালো। ভাবলো ইন্দ্রানী স্যানালের রুমের দিকে যাবে। কিন্তু মনটা সায় দিলো না। কয়েক ঘন্টার পরিচয়ে একজনের কক্ষের সামনে দাঁড়ানোটা কেমন যেন বিতিকিচ্ছিরি লাগলো। তারচে নিচে রেস্টুরেন্টে ব্রেক ফাস্ট করা অনেক দৃষ্টিনন্দন।
রাজিব এগিয়ে গেলো সামনে। নিচে রেস্টুরেন্টে ঢুকতেই দেখলো ইন্দ্রানী এবং ওর মা ব্রেকফাস্টের টেবিলে।
নমস্কার করে দাঁড়িয়ে গেলো ইন্দ্রানী। রাজিব স্মিত হাসলো। ইন্দ্রানী বললো, আসুন আসুন। এখানে বসুন। এক সঙ্গে ব্রেকফাস্ট করি। এই যে উনি আমার মা, দেবকী স্যানাল। এক সময় মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ছিলেন।
রাজিব সহাস্যে হাতদুটো জোড় করে সম্মান জানালো। দেবকী স্যানাল বললেন, গতকাল সারারাত ইন্দ্রানী আমাকে ঘুমুতেই দেয়নি। শুধু তোমার আর তোমার কথা। দেবকী হাসতে হাসতে বললেন, এখন বুঝছি তোমাকে নিয়ে কেনো এত কথা।
ওয়েটার এসে বললো, বলুন কি অর্ডার চাই। বাধা দিলো ইন্দ্রানী, আমি অর্ডার করছি।
প্রতিবাদ করে রাজিব বললো, আপনারা বেড়াতে এসেছেন, অতিথি আমাদের। আর আপনি তো জানেন অতিথি ভব 'দেব'। দেবতাকে তুষ্ট করতে দিন।
মা-মেয়ে দু'জনেই হাসলো। দেবকী বললেন, তুমি এসব বিশ্বেস কর বাবা।
অবশ্যই করি। মেনুটা নিয়ে সুপ, পরিস আর ব্রেড অ্যান্ড বাটার উইথ অমলেটের অর্ডার দিল এবং মা-মেয়ের প্রতিবাদ সত্ত্বেও বিল রাজিবই পরিশোধ করলো।
ইন্দ্রানী বললো, ধীরাজ ভট্টচার্যের 'আমি যখন পুলিশ ছিলাম' বইয়ে মাথিনের কূপের কথা আছে। আসলেই টেকনাফে মাথিনের কূপ আছে? চলুন না দেখে আসি।
রাজিব রাজী হলো। তিন জনে গেলো মাথিনের কূপের কাছে। টেকনাফ থানার বাউন্ডারির ভেতরেই কূপটা। ওখানে একটা সাইন বোর্ডের মতো আছে। ওটাতে ধীরাজ ভট্টচার্জের নাম উলেস্নখসহ মাথিনের কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে।
ইন্দ্রানী অভিভূত হয়ে পড়লো। প্রেমের জন্যে একটা মেয়ে এই কূপের মধ্যে জীবন বিসর্জন দিলো। রাজিবের মনে হলো খুব ইমোশনাল মেয়ে ইন্দ্রানী। ওর মা বললেন, শুধু কি আর প্রেমের জন্যে? নিশ্চয়ই এমন কিছু ঘটেছিল যে, মেয়েটি সমাজে মুখ দেখাতে পারছিলো না। আর ধীরাজ বাবু! মস্নেচ্ছ হাসি দিয়ে দেবকী বললেন, তার চরিত্র-ফরিত্র বলে কিছু ছিল বলে তো শুনিনি। কি জানি বাপু।
একটি ছেলে এসে বললো, স্যার কাপড় কিনবেন? এখানে ব্যাংকক মার্কেট আছে। সব বিদেশী কাপড় একশ' টাকায় ডবল বেড মশারি, বিদেশী কাপড়, বিছনার চাদর- সব ফরেন স্যার।
ইন্দ্রানী বললো, চলুন দেখি কি জিনিস। ইন্ডিয়ানরা আবার ফরেন শুনলেই আগ্রহী হয়ে পড়ে।
ওরা তিন জনেই গেলো অই ফরেন মার্কেটে। ইন্দ্রানী তো অভিভূত। শিফন শাড়ী, আমেরিকান জর্জেট, থ্রি পীস আর মশারি মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার টাকার জিনিস কিনলো। একেবারে ছোট বাচ্চার মতো। এটা কিনি, ওটা কিনি। ইন্দ্রানীকে প্রজাপতির মতো দেখাচ্ছে। রাজিবেরও ভাল লাগছে। এক বারের জন্যেও মনে হচ্ছে ওর জীবনে ইন্দ্রনী নবাগত। ওর সঙ্গে যেনো বহু বছরের পরিচয়। ও যেন আত্মার আত্মীয়। কোন কপটতা নেই, কোন সংকোচ নেই। এ যেনো অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস।
প্রায় দু'ঘন্টা ধরে দোকান থেকে দোকানে ঘুরলো ইন্দ্রানী আমি আর ওর মা। রাজিব বিল পরিশোধ করতে বার বার বাধা দিচ্ছেন দেবকী দেবী। রাজিব শুনছে না। ইন্দ্রানী শুধু হাসে। ওর শপিং ব্যাগগুলো রাজিব বয়ে নিয়ে এলো গাড়ীতে। ব্যাক ডালায় রাখলো সেগুলো। খুব খুশী ইন্দ্রানী। এমন আনন্দ আর তৃপ্তি জীবনে কখনো আসেনি ওর। কয়েকবার ওর মার উদ্দেশ্যে বলেই ফেললো। বিস্মিত আর মুগ্ধ হয়ে গেলেন ওর মা। অতীতে এ মেয়েতো কখনো এরকম বলেনি। অভিজ্ঞতার সঙ্গে কিছুতেই মিলছে না।
রাজিব বললো, চলুন কোথাও গিয়ে কিছু খাই। স্ন্যাকস্।
সঙ্গে সঙ্গে রাজী হয়ে গেলো ইন্দ্রানী। রাজিব খুব খুশী। ওর ভেতরে একটি সুখের সোনালী চিল দাপাদাপি করতে থাকলো। এই মুহুর্তে একেবারের জন্যও রাত্রির কথা মনে এলো না রাজিবের। মনের ভেতরে অশান্তির আগুনটা এই মুহুর্তে প্রশমিত। একটা সোনালী চিল ওর মনের মধ্যে উড়তে থাকলো। ওরা ফিরে এলো পর্যটন রেস্টুরেন্টে। দেবকী দেবীকে রেস্টুরেন্টে বসিয়ে রেখে রাজিব আর ইন্দ্রানী উপরে উঠে গেলো প্যাকেটগুলো রাখতে।
ওরা দু'জনে যখন ফিরে এলো দেবকী দেবী খুবই খুশী। তিনি খুব রেখেঢেকে কথা বলতে পারেন না। বললেন, তোমাদের দু'জনকে রাধা-কৃষ্ণের জুড়ির মতো মনে হয়। বাবা কিছু মনে করো না। আমার কাছে ধর্ম কোন কিছুর প্রতিবন্ধক হতে পারে না। আমার কাছে সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। এই আদর্শেই আমি মানুষ। পরমহংস দেব শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ ঠাকুর মহাশয়ের আমি একজন ভক্ত। বাবা যত কথাই বলো আর যত রকম ধর্মই পালন করো মানুষ ছাড়া তো কিছুই নেই। মানুষই সব। সব কিছু মানুষের জন্য। মানুষের ভালোর জন্যই।
রাজীব বললো, মাসি মা আপনারা আমার অতিথি হিসেবে ডিনার করবেন আজ। আপনাদের আমি স্পেশাল মেনু খাওয়াবো। বিশাল রূপচাঁদার ফ্রাই। এখানে বড় বড় রূপচাঁদার স্পেশাল ফ্রাই করে। সমুদ্রের কাছে এসে সমুদ্রের মাছ না খেলে অন্যায় হয়।
ইন্দ্রানী বললো, ওয়াউ, ঠিকই বলেছেন, নৌকা-টৌকা তো চড়া হলো না- তবে সমুদ্রের মাছ সে অপূর্ব। একেবারে ছোট্ট মেয়েটির মতো হাততালি দিলো ইন্দ্রানী।
আরো দিন তিনেক ওরা রইলো টেকনাফে। এই ক'দিনেই ইন্দ্রানী জয় করে ফেলেছে রাজিবকে। রাজিব এখন ইন্দ্রানী চিন্তায় বিভোর। ওরা এখন আর একজন আরেকজনকে আপনি সম্বোধন করে না। কখন যে ওরা তুমিতে এসেছে বোঝাই যাচ্ছে না। রাজিব এখন পুরোপুরি দেবকী দেবীর পরিবারের একজন সদস্য।
ঠিক হয়েছে দেবকী দেবী রাজিবের মায়ের সঙ্গে ঢাকায় দেখা করবেন এবং রাজিবকে ইন্দ্রানীর জন্যে চাইবেন। পারলে ঢাকাতেই শুভ কাজ সারবেন। এ ব্যাপারে ইন্দ্রানী কিংবা রাজিবের কারো অমত নেই। ইন্দ্রানীতো দারুণ খুশী। এদেশ ওর খুব আপন মনে হয়। এদেশে থাকলে ক্ষতি কি! এ ক'দিন রাজিবের সঙ্গে ঘুরে ওর খুব ভালো লেগেছে। এক কথায় রাজিব দারুণ ছেলে। দারুণ স্মার্ট। খুব সপ্রতিভ। এমন ছেলেই ওর কল্পনায় ছিল।
ঢাকায় হোটেল পূর্বাণীতে ইন্দ্রানী আর মা উঠলেন। রাজিব সকাল-বিকাল ওদের সঙ্গে থাকে। ওদের সব খরচ-খরচা রাজিবই বহন করে। দেবকী দেবী বললেন, চলো যাই তোমার মার সঙ্গে একটু দেখা করে আসি। এবং সত্যি রাজিবের বাসায় গিয়ে হাজির হলেন তিনি। ইন্দ্রানীও গেলো সঙ্গে।
রাজিবের মা আগে থেকেই জানতেন। ওদের স্বাগত জানালেন। ইন্দ্রানী পা ছুয়ে দাঁড়ালো। রাজিবের মা ওকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। ওকে দেখে রাজিবের মা খুব খুশী হলেন। দেবকী দেবী দু'হাত এক করে নমস্কার করলেন। বললেন, দিদি শুধু একটি জিনিস চাইতে এসেছি আমি।
বলুন, কি দেবো আপনাকে।
না দিদি শুধু রাজিবকে দিন। ইন্দ্রানীর জন্য; ইন্দ্রানী আমার একমাত্র মেয়ে। ওর সুখেই আমার সুখ। যদি বলেন তো ঢাকাতেই ওর বিয়ের ব্যবস্থা করি।
রাজিবের মা বললেন, রাজিব সব বলেছে আমাকে। ওরা রাজি থাকলে আমরা আপত্তি করার কে?
হেসে উঠলেন দু'জনেই। জড়িয়ে ধরলেন দেবকী দেবীকে রাজিবের মা।
আর ঠিক তখুনি রাত্রি আর ওর মা এসে ঢুকলো ঘরে।
ওরা দু'জনে দাঁড়িয়ে বিষয়টি পরখ করার চেষ্টা করলো। রাত্রির মা কথা না বাড়িয়ে রাজিবকে বললেন, বাবা তোমার সঙ্গে একটু কথা ছিলো, এদিকে এসো।
বাইরের বারান্দায় রাত্রি, ওর মা ও রাজিব দাঁড়ালো। ওর মা বললেন, তোমাদের ভেতরে কি হয়েছে জানিনে বাবা। তোমাদের বিয়ে এ মাসেই সারতে চাই।
রাজিব তাকালো রাত্রির দিকে ও মাথা নীচু করে আছে। রাজিব শুধু বললো, এখন রাত্রি আমার কাছে শুধুই অতীত। আমাকে ক্ষমা করে দেবেন।
==============================
গল্প- 'বোবা ইশারা' by মণীশ রায়  গল্প- 'চিরদিনের' by মঈনুল আহসান সাবের  স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ সাহিত্যের এক সর্বসত্তা  আলোচনা- 'বাংলা চর্চা পরিচর্যা ও ইংরেজি শেখা'  আলোচনা- 'আমার ছেলেবেলার ঈদ আর বুড়োবেলার ঈদ'  আলোচনা- 'নৈতিক চেতনা : ধর্ম ও মতাদর্শ' by আবুল কাসেম ফজলুল হক খবর- গণতান্ত্রিক সব শক্তির সঙ্গে কাজ করতে চাই: সু চি  ফিচার- ‘নিজের কথা : বেঁচে আছি' by হুমায়ূন আহমেদ  কবিতা- সাম্প্রতিক সময়ের কিছু কবিতা  আলোচনা- 'মোস্লেম ভারত' পত্রিকায় চর্চিত মুসলিম ধর্ম- দর্শনের স্বরূপ  ইতিহাস- 'চারশ' বছরের ঢাকা লোক ঐতিহ্যের দশ-দিগন্ত' by আনিস আহমেদ  গল্পালোচনা- 'মৃত্যুর মুশায়রা' by সেলিনা হোসেন  গল্প- 'বৃষ্টি নেমেছিল' by ইমদাদুল হক মিলন  গল্প- 'সড়ক নভেল' by হাসনাত আবদুল হাই  গল্প- 'জানালার বাইরে' by অরহ্যান পামুক  স্মৃতি ও গল্প- 'কবির অভিষেক' by মহাদেব সাহা  ইতিহাস- 'ভাওয়ালগড়ের ষড়যন্ত্র' by তারিক হাসান  আলোচনা- 'বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা' by বেলাল চৌধুরী  আলোচনা- 'শিল্প সৃষ্টি ও নান্দনিকতা' by আহমদ রফিক  আলোচনা- ''স্বর্ণকণা শোভে শত শত' মদির গন্ধভরা কণ্টকফল by মুহম্মদ সবুর  বিশেষ রচনা :ওমর খৈয়াম by ড. শামসুল আলম সাঈদ


দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ সৈয়দ মোফাজ্জেল হোসেন


এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
free counters

No comments

Powered by Blogger.