গল্প- 'চিরদিনের' by মঈনুল আহসান সাবের
জিএম-এর মুখ দেখে মনে হলো জীবনে সে এত অবাক আগে কখনো হয়নি। এমন আশ্চর্য কথা সে আগে কখনো শোনেনি। জিএমকে অবাক করে দিতে চেয়েছে, এটা বুঝতে পেরে সে ভেতরে ভেতরে উৎফুলস্ন হয়ে উঠল।
তবে বাইরে তার কোনো ছাপ সে পড়তে দিতে চাইল না। একটা গুরুতর অভিযোগ নিয়ে সে কর্তৃপক্ষের কাছে এসেছে। গুরুতর অভিযোগ এনে আর যাই হোক, মুখ হাসি হাসি করে রাখা যায় না।
এমনকি, এই যে জিএম তার অভিযোগ শুনে অবাক হয়ে গেছে, এ সময়ও মুখ রাখতে হবে গম্ভীর, নইলে অভিযোগ গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। তবে জিএম যদি তাকে ধন্যবাদ জানায়, যদি বলে, অফিসের স্বার্থ খেয়াল করে করে সে আসলে একটা প্রয়োজনীয় কাজই করেছে, তবে তখন না হয় একটু হাসি হাসি করা যাবে মুখ।
এমনকি, এই যে জিএম তার অভিযোগ শুনে অবাক হয়ে গেছে, এ সময়ও মুখ রাখতে হবে গম্ভীর, নইলে অভিযোগ গুরুত্বহীন হয়ে পড়বে। তবে জিএম যদি তাকে ধন্যবাদ জানায়, যদি বলে, অফিসের স্বার্থ খেয়াল করে করে সে আসলে একটা প্রয়োজনীয় কাজই করেছে, তবে তখন না হয় একটু হাসি হাসি করা যাবে মুখ।
জিএম-এর মুখ থেকে বিস্ময় ভাবটা একটু একটু করে কমল। তিনি বললেন, শুনুন।
সে বলল, জ্বী স্যার।
আপনার নামটা আমি ভুলে গেছি।
সে তখনই তার নাম বলল। জিএম তার নাম ভুলে গেছে বলে সে একটু মনক্ষুণ্ন বইকি, তবে এও তো ঠিক, জিএম যে ব্যস্ত থাকেন। জিএম এবার জিজ্ঞেস করলেন, আপনি এস্টাবলিশমেন্টে কাজ করেন, তাই না?
জ্বী স্যার। তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। এটা স্যার ঠিকই মনে রেখেছেন।
এস্টাবলিশমেন্টের কাজ কী?
মানে! সে ঠিক বুঝতে পারল না। এস্টাবলিশমেন্টের কী কাজ সেটা কি জিএম জানেন না? তাকে জিজ্ঞেস করার কী কারণ!
আপনার কাজ আপনার ডিপার্টমেন্টে। তাই না?
জ্বী স্যার। তা তো বটেই।
আপনি অন্য ডিপার্টমেন্টের কাজে নাক গলাচ্ছেন কেন! আপনার হাতে কি অনেক অবসর?
না, মানে স্যার, আমি ভাবলামঃ।
আপনার ভাবার দরকার নেই। বুঝেছেন?
সে মাথা নিচু করল। লজ্জা লাগল তার, আবার তার মন খারাপও হয়ে গেছে। জিএম-এর এ কী আচরণ! অফিসের কয়েকটা লোক চুরি করছে, ব্যাপারটা একদম স্পষ্ট, তবু কেউ যে কেন খেয়াল করছে না, এই ভেবে প্রথমে সে খুব অবাক হয়েছিল, খেয়াল করছে না কেউ, বাধাও দিচ্ছে না, তা তার মনে হলো ব্যাপারটা কতর্ৃপক্ষকে জানানো দরকার। এ অফিসের একজন কমর্ী হিসেবে এ অফিসের স্বার্থ দেখাই তার কর্তব্য। ব্যাপারটা এই এ রকমই, এখানে অর কোনো ব্যাপার নেই, তার নিজের স্বার্থ দূরের কথা।
সে নিচু মুখ সামান্য তুলল, স্যারঃ
বলুন।
আমি ভাবলাম অফিসের একটা ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
আপনার কি ধারণা অফিসের লাভক্ষতি নিয়ে শুধু আপনারই মাথাব্যথা?
না না স্যার, তা কেন হবে!
তাহলে আপনি এত উৎসাহ নিয়ে নাক গলিয়েছেন কেন এর ভেতরে?
সে আরো বিব্রতবোধ করল। এখন আর কিছু বলার নেই তার। যা বলার ছিল বলেছে। সে চুপ করে থাকল।
জিএম এবার খুব তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হাসল,
আপনি কে, হঁ্যা?
জ্বী স্যার?
নিজেকে কী মনে করেন! কে আপনি?
সে তার সিটে ফিরল মুখ নিচু করে। মুখ নিচু করেই সে অনেকক্ষণ বসে থাকল। আচ্ছা, তার ভুলটা কোথায়! চুরির কথা কর্তৃপক্ষকে জানানো কী তার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে না? অফিসের কর্মী হিসাবে এটা তার দায়িত্ব, এমনকি সাধারণ মানুষ হিসাবেও এটা তার দায়িত্ব। সে আশা করেছিল জিএম তার কথা শুনে খুশি হবে। আশা করেছিল, 'আপনার মতো স্টাফই এ অফিসে দরকার', এভাবে না বললেও গাঢ় গলায় ধন্যবাদ জানাবে। অথচ হলো তার উল্টো। এর কী কারণ, সে বুঝে উঠতে পারল না। কেন জিএম সে অমন একটা ভালো ব্যাপার নিয়ে যাওয়ার পরও তার ওপর ক্ষেপে গেল। কোথায় তার ভুল? একটা ভুল অবশ্য এটা যে, চুরির অভিযোগ নিয়ে জিএম-এর কাছে তার যাওয়াই উচিত হয়নি। না গেলেও জিএম তাকে বলতে পারত না, আপনি কে?
এই 'আপনি কে' কথাটা আবার তাকে শুনতে হলো অফিস ছুটির পর। ঠিক সরাসরি ওভাবে নয়, কিছুটা ঘুরিয়ে। অফিস ছুটির পর রকিবকে পাশে নিয়ে সে দাঁড়িয়ে আছে রাস্তায়। তার মন খারাপ, তার ইচ্ছা জিএম তার সঙ্গে আজ যে ব্যবহার করেছে, সেটা সে রকিবকে বলবে, বলে একটু হালকা হবে। অফিসে রকিবের সঙ্গেই তার ভালো সম্পর্ক। সম্পর্ক অবশ্য কারও সঙ্গেই তার খারাপ না, রকিবের সঙ্গে বেশি ভালো। যেমন, সে যে চুরির অভিযোগ নিয়ে জিএম-এর কাছে যাচ্ছে এটা সে একমাত্র রকিবকেই বলে গিয়েছিল।
রকিবকে নিয়ে সে দাঁড়িয়েছিল অফিসের সামনে। যে দু'জনের বিরুদ্ধে সে অভিযোগ জানিয়েছে, সে দু'জন এসে দাঁড়াল তার সামনে। তার দিকে তাকিয়ে হাসল। একজন বলল, কী রে, তুই নাকি আমাদের বিরুদ্ধে জিএম-এর কাছে নালিশ করেছিস?
সে ভীষণ অবাক হয়ে গেল। এই লোক দুটোর সঙ্গে তার সম্পর্ক 'আপনি' করে; অথচ এখন কি না কী নির্বিকারচিত্তে তাকে 'তুই' করে বলছে। তাছাড়া, সে যে জিএম-এর কাছে গিয়েছিল সেটা এরা জানাল কী করে? জিএম বলে দিয়েছে? সে এত অবাক হয়ে গেল যে কোনো কথাই বলতে পারল না।
দ্বিতীয় লোকটা বলল, তুই কী ভেবেছিলি? তুই কী ভেবেছিলি যে তুই গিয়ে নালিশ করবি আর ভূমিকম্প হয়ে যাবে? কী মনে করিস তুই নিজেকে, হঁ্যা? কে তুই, কে?
লোক দুটো খ্যাকখ্যাক করে হাসতে আরম্ভ করল। হাসতে হাসতেই চলে গেল।
লজ্জায় আবার তার মাথা নিচু হয়ে গেল। আড়চোখে সে রকিবের দিকে তাকাল। রকিবের চোখেমুখে বিরক্তি, সে বলল, আমি আপনাকে কিন্তু প্রথমেই বারণ করেছিলাম। কিন্তু না, আপনি একদম ঝাঁপিয়ে পড়লেন। যার ইচ্ছা সে চুরি করছে। এসব আপনাকে কে দেখতে বলেছে? ওসবের মধ্যে কে আপনি? বলুন?
রকিবের কথার কোনো উত্তর সে দিতে পারল না। কিছুক্ষণ মুখ নিচু করে রেখে সে একটু হাসার চেষ্টা করল, যেন সবকিছু ঝেরে ফেলার চেষ্টা। রকিবের দিকে তাকাল সে, সহজ গলায় বলার চেষ্টা করল, যাই তাহলে, কাল দ্যাখা হবে।
।। দুই ।।
সে অফিস ছুটির পর একটা পার্কের ভেতর দিয়ে বাড়ি ফেরে। শর্টকাট রাস্তা, কিছু পয়সাও বাঁচে। তাছাড়া এমনিতেও বেশ লাগে তার। পার্কে নানা ধরনের লোকজন, গাছে গাছে নানা ধরনের ফুল। কখনো পার্ক জুড়ে বাতাস বয় চমৎকার, শরীরের একটু তেজীভাব জাগে। এই বয়সে একটু হাঁটাচলাও করা উচিত, সে জানে। একদিন অফিস থেকে বেরিয়ে মৃদু পায়ে হাঁটতে হাঁটতে পার্কের মাঝামাঝি এসেছে সে, এক জায়গায় জটলা দেখে সে দাঁড়িয়ে পড়ল। দু'টো মেয়ে আছে, আর এক দঙ্গল লোক, ওই দঙ্গলের মধ্যে লুঙ্গি-পাঞ্জাবি পরা লম্বা চওড়া এক লোক নিরীহ চেহারার এক তরুণের কলার চেপে ধরেছে। কী হয়েছে, কী ব্যাপার, ভাবতে ভাবতে সে ভিড়ের কাছে পেঁৗছে গেল। উপস্থিত লোকজনের কিছু বার্তা শুনল সে। মেয়ে দু'টো কী কলগার্ল। আজকাল এদের উৎপাতে কোনো কোনো এলাকায় পা রাখা দায়। কিন্তু অমন ফুটফুটে চেহারার দুটো মেয়ে, ভাবতে অবাক লাগে দেখে কখনো অমন মনে হয় না। কিন্তু এই ভিড়ের কী কারণ? ব্যাপারটা সে বুঝতে পারল না। যে তরুণের কলার চেপে ধরা হয়েছে, সে নিতান্তই গোবেচারা, গাবদা-গোবদা মুখ, কাঁদো কাঁদো মুখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। লম্বা-চওড়া লোকটা এক হাত উঠিয়েছে তাকে মারবে বলে। সে ভিড় ঠেলে আরেকটু এগিয়ে গেল, কী হয়েছে? ট্যারা চোখে তার দিকে তাকাল, আপনে ক্যাঠা?
আমি! হঠাৎ ওরকম এক প্রশ্নে সে একটা থতমত খেয়ে গেল। আমি। সে বলল, এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। ভিড় দেখে কী হয়েছে জানার জন্য এসেছি।
তয় কাইট্যা পড়েন। ষস্না বলল। আপনার এহানে কী কাম!
কী হয়েছে এটা শুনি।
শুনবেন? নাকি আপনেও আছেন এর লগে? পিটিশ, পিটিশ, হঁ্যা? আপনেরেও তাইলে এ ধরনের কাম। দ্যাহেন দেহি এই হালারে চিনতে পারেননি? এক লগেই আছিলেন?
কী আশ্চর্য কথা। কী সহজেই তাকে কিনা পুরো ব্যাপারটার সঙ্গে জড়িয়ে দিতে চাইছে। সে কিছুটা ভড়কে গিয়ে এদিক-ওদিক তাকাল। কেউ যদি তার পক্ষে এগিয়ে আসে। কেউ এল না, শুধু নিরীহ চেহারার তরুণ তার দিকে তাকিয়ে প্রায় কেঁদে ফেলল, ভাই, আপনে আমারে বাঁচান, এনারা আমাকে ফাঁদে ফেলেছে। আমি পার্কে একা একা ঘুরছিলাম। হঠাৎ মেয়ে দুটো কোত্থেকে এসে কথা বলতে আরম্ভ করে দিল। তারপরই এ লোকটাসহ ২/৩ জন এসে আমাকে বলল, আমি নাকি মেয়ে দুটোর পেছনে লেগেছি, ওদেরকে আমার সঙ্গে যেতে বলেছি।
কী ভয়ঙ্কর ব্যাপার। সে ঘাবড়েই গেল। এই ভিড়ের কাছেই তার আসা উচিত হয়নি। কিন্তু এসেই যখন পড়েছে এ লোকটাকে তো বাঁচাতে হয়। সে তখন মাটির সঙ্গে পা ভালো করে সেঁটে একপাশে ঘাড় কাত করে দাঁড়াল। ষস্না লোকটার হাতের ওপর হাত রেখে বলল, ছাড়েন। ঃ এসব অনেক পুরনো ট্যাকটিস, অনেক দেখেছি। এখানে খাটবে না।
কয় কী! ষস্না অবাক হলো। কয় কী অঁ্যা! আরে মাইয়ালোকের সম্মান নাই এই ব্যাটার পাঁচশ' টাকা ফেলব, তারপর তারে ছাড়-ম। এই শিক্ষা না পাইলে কাইলকাই আবার ভদ্রঘরের মাইয়াগো পিছু লাগব। না, কখনো না। সে সজোরে মাথা নাড়ল। তোমাদের ফাঁদ এবার কাজ করবে না।
সে খুব জোরগলায় বলল। কিন্তু আশপাশে থেকে কোনো সাড়াশব্দ পেল না। দু'একজন যারা বুঝল ব্যাপারটা আসলেও ট্র্যাপ, তারা কেটে পড়ল। তাদের সমাপ্তি দৃশ্য দ্যাখার ইচ্ছা নেই। কেউ কেউ অবশ্য থাকল। তারা কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়াল। ষস্নার সঙ্গী দু'জন এবার একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল। আপনে ক্যাঠা মিয়া, ছাড়ান দ্যান, এসব ছাড়ান দ্যান, আর দরদ দ্যাখাইবার চাইলে পকেট থেইকা পাঁচশ' ট্যাকা ফেলাইয়া বন্ধুরে যেহানে মনে চায় লইয়া যান। ঃআমরা মাইয়া মানুষরে ইজ্জত দেই, হুঁ।
বাঁচোয়া, ইদানীং এদিকে পুলিশ টহল দ্যায়। একটা পেট্রোল জীপ এসে থামল গেটের বাইরে। ওই জীপ থেকে কয়েকজন পুলিশ নামল, ভিড় দেখে তারা কিছুটা তাড়াতাড়ি এগোল। তাদের পেছনে একজন অফিসারও। পুলিশ এগোলে ভিড় হালকা হতে আরম্ভ করল। প্রথমে সটকে পড়তে চাইল মেয়ে দুটো। কিন্তু পুলিশ এসব ব্যাপারে খুব অভ্যস্ত। তারা ঠিকই সবাইকে আটকে ফেলল। নিরীহ তরুণ ষস্নার হাত থেকে ছাড়া পেয়ে পুলিশ অফিসারকে সব খুলে বলল। কিন্তু অফিসার মাথা নাড়ল, না, এভাবে হবে না। এনকোয়ারি দরকার। আপনাকেও থানায় যেতে হবে।
থানায়। তরুণ প্রায় কেঁদে ফেলল। তাও বাজে দুটো মেয়ের কারণে!
অফিসারকে গম্ভীর দ্যাখাল, হঁ্যা, হয়তো আপনি যা বলছেন তাই ঠিক। কিন্তু শুধু মুখের কথায় আমি তো ডিসিশন নিতে পারি না। এই মাঠে দাঁড়িয়ে সবকিছু চুকিয়ে ফেলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
আচ্ছা, আমি যদি এদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না করি?
কিন্তু এরা তো আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।
তরুণটি এবার আরো কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল। কী করবে বুঝতে না পেরে বোকার মতো অফিসারের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকল। অফিসার কোনো অযৌক্তিক কথা বলছে না, সে বুঝল, কিন্তু যখন কোনো দোষই নেই তখন তরুণটি কেন খামাখা কিছু সময়ের জন্য ঝামেলায় পড়বে। সে মনস্থির করে একটু এগোল, অফিসার সাহেব, কিছু মনে না করলে আমি একটা কথা বলি। আমি এ পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম, আমি ব্যাপারটা দেখেছি। এ ছেলেটি সত্যি কথাই বলছে। এ ট্র্যাপেই পড়েছিল।
অফিসার সরু চোখে তার দিকে তাকাল, হতে পারে, নাও হতে পারে। সে আমরা বুঝব। ঃআপনি কে?
আমি! সে সামান্য অপ্রস্তুত বোধ করতে করতে নিজেকে সামলে নিল। বললাম, না, আমি এ পথ দিয়েই যাচ্ছিলাম।
অফিসার মাথা নাড়ল, সেটা কোনো ব্যাপার নয়।
সে তখনই বলল, এ পথ দিয়েই যখন যাচ্ছিলাম, তখন সবই দেখেছি, তাই সাক্ষী, মানে আইউইটনেস হিসেবেঃ।
তার কথা শেষ হওয়ার আগেই অফিসার বলল, থানায় যেতে চান।
সে চমকে গেল, না না, তা নয়। তবে এখানে দাঁড়িয়েই ব্যাপারটার মীমাংসা যদিঃ।
সেটা যে হবে না, তা তো আমি আগেই বলেছি। আপনি কথা বাড়াচ্ছেন কেন। কথা বলতে বলতে অফিসার একটু যেন রেগেই গেল। শুনুন, এসব ব্যাপারে যারা ইনভলবড, তাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কথা বললেই আমরা আসল ব্যাপারটা বুঝতে পারি, আপনাকে আমাদের দরকার হবে না। তবে আপনার যদি থানায় যাওয়ার ইচ্ছা হয়ে থাকেঃ।
সে তখনই হাত ওঠাল, না না, না নাঃ।
তাহলে আপনি এত ফাল পাড়ছেন কেন। অফিসার এবার কঠিন চোখে তার দিকে তাকাল। কেন এর মধ্যে নাক গলাচ্ছেন হু আর ইউ? আপনি কে?
।। তিন ।।
তাদের বাড়ি সামনে যে দু'টো বাড়ি, সে দু'বাড়ির লোকজনের মধ্যে গোলমাল লেগেই ছিল। প্রতিবেশীদের ব্যাপার যখন, তার মনে হয়েছিল ওসব মিটিয়ে দেওয়া তার কর্তব্যের মধ্যেই পড়ে। নিজেদের মধ্যে রোজ রোজ এত ঝগড়াঝাটি কী ভালো? পাশাপাশি যখন থাকতেই হচ্ছে, মিলেমিশে বন্ধুর মতো থাকাটাই জরুরি। তাছাড়া মাঝেমধ্যে খুব বিচ্ছিরি ব্যপারও ঘটে যায়। এ ধরনের ঝগড়ার যা নিয়ম সাধারণত বাড়ির মেয়েরাই অাঁচল জড়ায়, কিন্তু এই ঝগড়ায় দু'বাড়ির পুরুষও অাঁচল বাঁধে। তারা খুব অশ্রাব্য গালিও জানে, আর সেসব গালি ছোড়াছুড়ি করে রাস্তায় ভিড়ও জমিয়ে ফেলতে পারে। একে অন্যের অনেক গোপন কথাও তারা জানে। ওসব শুনতেও আশপাশের লোকজনের খুব উৎসাহ লক্ষ্য করা যায়। সব মিলিয়ে সে এক বিতিকিচ্ছিরি ব্যাপার।
ওসব দেখতে দেখতে একদিন বিরক্তিতে তার মনে ভরে গেল। সে গম্ভীর মুখে এগিয়ে গেল, গিয়ে দু'পক্ষের মাঝখানে দাঁড়াল, আরে, আপনারা রোজ রোজ এসব কী করেন, বলেন তো!
কিন্তু কেউ শুনল না তার কথা। সে যে জলজ্যান্ত এক মানুষ, এই পাড়ায়ই সুখে-দুঃখে বহুদিন ধরে বসবাস, এখন তাদের ভালোর জন্যই দু'পক্ষের মাঝখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে, এটা যেন কোনো ব্যাপারই নয়। একপক্ষ চেঁচিয়ে উঠল, আপনি সরেন, আপনি নাক গলাবেন না।
এর মধ্যে নাক গলানোর কিছু নেই। ব্যাপারটা মিটমাট হলেই সে সরে আসবে। রোজ রোজ এভাবে ঝগড়া করা কী ভালো?
অবাক ব্যাপার, দ্বিতীয় পক্ষও প্রায় একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াল, আপনি কে, আমাদের ব্যাপারে আপনি কে?
সে কে মানে! সে তাদের প্রতিবেশী। এত বছর তারা একসঙ্গে পাশাপাশি। এখন সামান্য ময়লা ফেলার জায়গা নিয়ে ঝড়া বেঁধেছে বলে জলজ্যান্ত সে কেউ না হয়ে গেল।
সে কতক্ষণ দ্বিতীয় পক্ষের দিকে তাকিয়ে থাকল। তারপর বলল, আমি কে, কী বলছেন ভাই!ঃ। আর এসব কী, প্রতিবেশী হয়েও প্রতিদিন এত ছোট-খাটো ব্যাপার নিয়ে কী সব ঝগড়া করছেন। এসব মানায় আপনাদের?
মানায় কী মানায় না সে আমরা বুঝব। এক পক্ষ বলল। আপনি কেন এসেছেন?
হঁ্যা দ্বিতীয়পক্ষও তখনই বলল। আমাদের ব্যাপার আমাদের বুঝতে দেন। আপনি কে? সে কী বলবে বুঝে ওঠার আগেই তার স্ত্রী ছোট ছেলেকে পাঠিয়ে তাকে ডেকে নিয়ে গেল। স্ত্রীর বড়ই রুক্ষ মেজাজ, মাঝে মাঝে প্রায় ঝাঁটা তুলেই দাঁড়ায়। সে ফিরে গেলে স্ত্রী প্রায় চেঁচিয়ে উঠল, আশ্চর্য ব্যাপার তো। এই বোকা লোকটাকে নিয়ে আমি আর পারি না।ঃ তুমি কে, বলো তো, তুমি কে! ওদের যা ইচ্ছা করবে, ঝগড়া করবে, মারামারি করবে, খুনোখুনি করবে, একে অন্যের কলস্না চেপে ধরবে। ওদের ব্যাপার ওরা বুঝবে, ওরা মেটাবে। বলি ওদের ব্যাপারের মধ্যে তুমি কে?
তার বন্ধু বলতে রকিব। রকিবকে কখনো সখনো সে তার কষ্টের কথাটা বলে। তেমন কষ্ট তার এই একটাই, 'আপনি বা তুমি' বলে সবাই তাকে উড়িয়ে দ্যায় কেন!
রকিব হাসতে হাসতে বলে, আপনি সবকিছুতেই একটু বেশি বেশি নাক গলান। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য তো ভালোই থাকে। তা হয়তো থাকে, কিন্তু যে ব্যাপারটায় নাক গলান, সে ব্যাপারটা তো আপনার না, তাই না?
তা বটে।ঃ তা হলে সবকিছু থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে।
সেটাই ভালো।
এই যে লোকজন মাঝে মাঝে বলে 'আপনি কে', আমার খুব খারাপ লাগে। আমি কী কেউ না?
ওই একই কথা, অন্যের ব্যাপারে আমি কিন্তু কেউ না?
ওই একই কথা, অন্যের ব্যাপারে আমি কিন্তু কেউ। অন্তত একজন মানুষ। কিন্তু সবাই এমনভাবে আমাকে উড়িয়ে দ্যায়।
শোনেন ভাই, নিজের সংসার নিয়ে সন্তুষ্ট থাকেন, তাহলেই হবে।
সে হয়তো একটু হাসার চেষ্টা করে। সামান্য মাথা ঝাঁকায়।
আপনার আসল অস্তিত্ব আপনার সংসারে। ওখানে আপনি বাবা, স্বামী। ওখানে তো আপনি একজন তাই না?
সে এসব সময়ে কোনো জবাব দ্যায় না।
।। চার ।।
সে ওসব সময়ে কোনো জবাব দ্যায় না। কারণ সংসারেও তার অবস্থান নিতান্তই নড়বড়ে। 'নড়বড়ে' বললে সম্ভবত একটু কমই বলা হয়। বাড়িতে তার আসলে লেজেগোবরে অবস্থা। স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েরা তাকে কখনো এতটুকু কেয়ার তো করেই না বরং সবাই প্রায় সব সময়ই তার প্রতি মারমুখো। বাড়িতে কত সময় কত কী ঘটে, তাকে ওসব শুধু দেখে যেতে হয়। একটু কম বয়সেই বিয়ে করেছিল সে। কিশোরীকাল সবে উত্তীর্ণ, চঞ্চলা, শ্যামলা মেয়েটিকে তার প্রথম দ্যাখায়ই ভালো লেগে গিয়েছিল। কিন্তু ওই কিশোরী একদিন চর্বির স্তূপে পরিণত হবে, আর মেজাজ হবে আগুনের মতো, এটা কে জানত! তার মাঝে মাঝে এই ভেবে বিস্ময় জাগে, এই যে তার স্ত্রীর আগুনের মতো মেজাজ, ওই আগুনে স্ত্রীর সব চর্বি তো গলে যাওয়ার কথা! কেন গলে না?
তা, রকিবকে সে এই কথা কী করে বলে, সংসারে আর অবস্থার কথা! অথচ ঘটনাটা ঘটে গেল পরোক্ষভাবে রকিবকে জড়িয়েই। রকিবের মেয়ের জন্মদিন, সে বলল, আপনাদের কিন্তু আসতেই হবে। সন্ধ্যার দিকে ভাবী আর বাচ্চাদের নিয়ে অবশ্যই চলে আসবেন। এটা কী লজ্জার ব্যাপার বলুন তো,,, এতদিন একসঙ্গে চাকরি করছি, কিন্তু আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক নেই!
ঠিক কথা। সে ঠিক করেছিল, অবশ্যই সে রকিবের মেয়ের জন্মদিনে যাবে, বাসার সবাইকে নিয়ে। বাসায়ও সেভাবেই বলা ছিল। কিন্তু অনুষ্ঠানের দিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে সে দেখল বাসায় কেউ নেই। সে পুরো বাড়ি একবার চক্কর দিল। কাজের বয়স্ক মেয়েলোকটা জানতে চাইল সে চা খাবে কিনা। সে মাথা নেড়ে চেয়ার টেনে বারান্দায় বসল।
তার স্ত্রী এবং তিন ছেলে-মেয়ে ফিরল অনেক পরে। বড় ছেলে কোথায় কে জানে। তখন রাতের খাবার সময় হয়ে এসেছে। সে এতক্ষণ বারান্দা ছেড়ে একটুও নড়েনি। একবার বোধহয় বাথরুমে গিয়েছিল, আরো একবার বাড়ি চক্কর দিয়েছিল, এইটুকুই। সিনেমায় গিয়েছিল তার স্ত্রী এবং ছেলে-মেয়েরা, আবার নিজেদের মধ্যে এবং নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। সে যে বলে গিয়েছিল জন্মদিনের দাওয়াতের কথা, সেটা যেন কারও কাছে কোনো ব্যাপারই নয়। কাল রকিবকে সে কী বলবে? সে খুব গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
সে কিছুক্ষণ বসে থাকল বারান্দায়। কিছুক্ষণ এদিক-ওদিক ঘোরাঘুরি করল। কিন্তু তার দিকে কেউ ফিরেও তাকাল না। সে যে একটা মানুষ, সে যে তাদের আশপাশেই দাঁড়িয়ে আছে, এটা যেন কারও বোধেই নেই। এমনকি, ছোট্ট ওই মেয়েটা, যাকে সে বুকের মধ্যে সব সময় জড়িয়ে ধরে রাখতে চায়, সেও একবার ভুলেও তার কাছে ঘেঁষল না। সে খুব গোপনে আরও একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাথা নাড়ল,। নাহ্, মন খারাপ করব না আমি, এসব নিয়ে ভাবব না, এসব তো হয়েই এসেছে। খাওয়ার সময় সে নিজেই সবার সঙ্গে গিয়ে বসল। এ সময় টুকটাক কথা হলো, সেসব অবশ্যই নেহায়েতই সাদামাটা কথা। বড় ছেলে এখনো ফেরেনি, বন্ধুর বাসায় থাকবে রাতে, মাকে জানিয়েছে, কিন্তু তাকে কিছুই বলেনি। স্ত্রী খেতে খেতে সে কথা বললে, সে লুকিয়ে আরো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।
খেয়ে ওঠার পরপরই বড় মেয়ের সঙ্গে তার কথাকাটাকাটি হয়ে গেল। দোষ কি তার? সে শুধু মেয়ের পড়াশোনা কেমন হচ্ছে জানতে চেয়েছিল। ভেবেছিল, মেয়ে জানাবে সেটা, সে আরো কিছু বলবে এবং এভাবে কথা বলতে বলতে গুমোট পরিবেশ সহজ হয়ে উঠবে। কিন্তু মেয়ে তার প্রশ্ন প্রায় উড়িয়ে দিল। সে আরেকবার জিজ্ঞেস করলে মেয়ে ক্রিম ঘষতে ঘষতে বলল, হচ্ছে এক রকম। একটা কথা তার ভেতরে ছিল, সেটাকে সে চেপে রাখতে পারল না, বলে ফেলল। বলল, তোর কলেজের এক টিচারকে আমি চিনি। ভদ্রলোক বললেন, তুই নাকি বেশিরভাগ ক্লাসেই থাকিস না। কোথায় যাস?
এ কথা কে বলেছে। মেয়ে ভ্রূ কুঁচকাল। আমি আমার দরকার মতো ক্লাস ঠিকই করি। আর তোমার ওই পরিচিত টিচারের যখন এতই দরদ, তখন তার কাছ থেকেই জেনে নিও আমি কোথায় যাই।
ওভাবে কথা বলিস না বেয়াদব মেয়ে। সে ধমকে উঠল। আমি তোর বাবা, বাবার সঙ্গে ওভাবে কথা বলে না।
হুঁম! বাবা হও! মেয়ের ক্রিম মাখা শেষ। সে অন্য ঘরের দিকে এগোতে এগোতে বলল, বাবা হয়ে কত কী করেছ আমাদের জন্য। সে তখনই ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দার চেয়ারটা এক হাতে উঠিয়ে সামনের মরাহাজা বাগানে নেমে এল। সে এখান থেকে আজ আর উঠবে না। কান্নায় তার বার বার চোখ ভিজে গেল। 'ঃআমি..আমি' নিজের অস্ফুট কথাও তার শেষ হলো না, সে দু'চোখ মুছে শেষ করতে পারল না। কী করেনি সে এদের জন্য, অথচ মেয়ের কাছে তার কোনো মূল্য নেই। এতদিনেও সে তার মেয়ের কাছে কেউ নয়, এই দুঃখে মাথা তার নুয়ে পড়ল। নুয়ে পড়া মাথা তুলতে তার ইচ্ছে হলো না। রাত বেশি হলে ভেতরের প্রায় সব বাতি নিভে গেল। তারও বেশ পরে স্ত্রী তাকে ডাকতে এল, আরে, চলো তো তুমি, বাচ্চা মেয়ে কী বলতে কী বলেছে, আর তাই শুনে মাঝরাত পর্যন্ত তুমি এখানে বসে আছ!ঃআর তোমার আক্কেলও বটে। সিনেমা দেখে ফ্রেশ মনে ফিরেছে, তখন কিনা ওসব প্রশ্ন। সে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকল, বলল, থাক ওসব কথা। ঃআমি রকিবের ওখানে দাওয়াতের কথা বলেছিলাম, আর তোমরা গেলে সিনেমা দেখতে!
আর দাওয়াত। স্ত্রী মুখ কুঁচকাল। ওই সিনেমাটার আজকেই লাস্ট শো ছিল।
তুমি ওদের নিয়ে বড় বেশি সিনেমা দ্যাখো। সে বলল। সে অনেকদিন থেকে এ কথাটা বলবে ভাবছে। আজ বলে সে তৃপ্তি পেল। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এত বেশি সিনেমা দেখা ভালো নয়।
স্ত্রী মুহূর্তের মধ্যে অাঁচল জড়াল কোমরে, একটা কথা বলি তোমাকে শোনো। আমি ওদের আমার মতো করে মানুষ করব। তুমি এসব ব্যাপারে নাক গলাবে না। আমি চাই না ওরা তোমার মতো মেনিমুখো হোক। কেন! হঠাৎ করে সে-ও একটু জোরাল হলো। আমার ফিফটি ফিফটি মতামত থাকবে, আমি ওদের বাবা।
ছাই বাবা। স্ত্রী বলল। ওসব আমার ব্যাপার।
তুমি চুপ।
স্ত্রীর গলা খুব কঠিন শোনাল, তবু সে শেষ চেষ্টা করল। এবার অবশ্য সে নরম গলায় বলল, দ্যাখো রেণু, আমি তোমার স্বামীঃ। তার নরম গলা তার স্ত্রীকে এতটুকু নরম করল না। বরং তার কথা শেষ হওয়ার আগেই, 'আরে ধ্যাৎ, এ কী আপদ' বলে তার স্ত্রী চেঁচিয়ে উঠল। কিসের স্বামী তুমি অঁ্যা, কিসের স্বামী!ঃ, কত স্বামী দেখলাম।
স্ত্রী আর দাঁড়াল না। সে-ও পরমুহূর্তে আবার নুয়ে পড়ল। কান্নায় তার চোখ আবার ভরে গেল। স্ত্রী তাকে ঘরে নিতে এসেছিল, তার মনে হলো, কিন্তু দ্বিতীয়বার তাকে অনুরোধ পর্যন্ত করল না, আর শেষ মুহূর্তে তাকে কীভাবে উড়িয়ে দিয়ে গেল, সে দু'চোখ বার বার মুছেও ফুরোতে পারল না।
।। পাঁচ ।।
এক সময় ভেতরের শেষ আলোটাও নিভে গেল। তাকে ঘিরে অন্ধকার গাঢ় হলো। ভেতরে যে আলোটা জ্বলছিল, তার কিছুই এতদূর পর্যন্ত আসার কথা নয়। কিন্তু শেষ আলোটাও যখন নিভে গেল, সে যখন টের পেল এটা, তার মনে হলো তাকে ঘিরে অন্ধকার আরো গাঢ় হলো। রাতও তো কম হয়নি। সামনের রাস্তায় একটা মানুষ পর্যন্ত নেই। আশপাশের কোনো বাসায়ও আলো জ্বলছে না, চারপাশে শুধু চাঁদের সামান্য আলো, সে নতমুখেও সেটা টের পেল।
বাতাস প্রথম থেকেই বইছিল ঢের, রাত বেশি হলে তার আনাগোনা বেড়ে গেল। সে একটু জড়সড় হয়ে বসল। চারপাশে কোথাও কোনো পরিচিত শব্দও নেই। তবে পরিচিত শব্দ শোনার জন্য সে কানও পেতে নেই। আজ তার বড় কষ্ট। সে কষ্ট তার শরীরজুড়ে তীক্ষ্ন ছুরির মতো নেচে বেড়াচ্ছে। নিচে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মৃদু মাথা নাড়ল সে, পায়ের বুড়ো আঙুলে মাটি ঘষল, 'আমি, আমি কেউ নইঃসে অস্ফুট গলায় বলল, থাক ভাবব না, ওসব কিছুই আমি আর ভাবব না। ওসব ভেবে কী!
এসব বলতে বলতে সে নতমুখ তুলে মাথা নাড়ল। তখন জলেভরা তার দু'চোখ চলে গেল আকাশের দিকে। একটু চমকে গিয়ে সে বেখেয়ালে উঠে দাঁড়াল। তখন তার খেয়াল হলো, সে দেখল, কী বইছে বাতাস, যেন স্বর্গ-মর্ত্য গ্রাস করে নেবে, আর চারপাশে অপরিচিত সব অদ্ভুত শব্দ। চাঁদের আলো মিশেছে বাতাসের সঙ্গে, তার পায়ের কাছটুকু ছাড়া আর কোথাও যেন অন্ধকার নেই। যতই উপরে সে তাকাচ্ছে, ততই দেখছে চাঁদের আলো বৃদ্ধি পেয়েছে ক্রমান্বয়ে। আকাশজুড়ে অগণিত তারা। সে বুঝল না কেন, কিন্তু তার সারা শরীর কেঁপে উঠল, সে টের পেল, এমন বিপুল-বিশাল কিছুই সে কোনোদিন দেখেনি। সে যেন উদভ্রান্ত হয়ে গেল, যেন ঘোর লাগল তার, আবার সে ওই বিশালের দিকে তাকিয়ে ভয়ও পেল। কী করবে বুঝতে না পেরে এক পা পিছু হটল, আকাশের দিকে তাকাল আরেকবার, তারপর যেন নিজেই জিজ্ঞেস করছে, এভাবে ফিসফিস করে বলল, আমি কে, আমি কে।
তার এই ভীত ও করুণ প্রশ্ন মুহূর্তের মধ্যে আবহমানকালের বাতাস এবং চাঁদের আলোর সঙ্গে মিলেমিশে গেল।
=========================
স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ সাহিত্যের এক সর্বসত্তা আলোচনা- 'বাংলা চর্চা পরিচর্যা ও ইংরেজি শেখা' আলোচনা- 'আমার ছেলেবেলার ঈদ আর বুড়োবেলার ঈদ' আলোচনা- 'নৈতিক চেতনা : ধর্ম ও মতাদর্শ' by আবুল কাসেম ফজলুল হক খবর- গণতান্ত্রিক সব শক্তির সঙ্গে কাজ করতে চাই: সু চি ফিচার- ‘নিজের কথা : বেঁচে আছি' by হুমায়ূন আহমেদ কবিতা- সাম্প্রতিক সময়ের কিছু কবিতা আলোচনা- 'মোস্লেম ভারত' পত্রিকায় চর্চিত মুসলিম ধর্ম- দর্শনের স্বরূপ ইতিহাস- 'চারশ' বছরের ঢাকা লোক ঐতিহ্যের দশ-দিগন্ত' by আনিস আহমেদ গল্পালোচনা- 'মৃত্যুর মুশায়রা' by সেলিনা হোসেন গল্প- 'বৃষ্টি নেমেছিল' by ইমদাদুল হক মিলন গল্প- 'সড়ক নভেল' by হাসনাত আবদুল হাই গল্প- 'জানালার বাইরে' by অরহ্যান পামুক স্মৃতি ও গল্প- 'কবির অভিষেক' by মহাদেব সাহা ইতিহাস- 'ভাওয়ালগড়ের ষড়যন্ত্র' by তারিক হাসান আলোচনা- 'বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা' by বেলাল চৌধুরী আলোচনা- 'শিল্প সৃষ্টি ও নান্দনিকতা' by আহমদ রফিক আলোচনা- ''স্বর্ণকণা শোভে শত শত' মদির গন্ধভরা কণ্টকফল by মুহম্মদ সবুর বিশেষ রচনা :ওমর খৈয়াম by ড. শামসুল আলম সাঈদ
দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ মঈনুল আহসান সাবের
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
স্মরণ- 'আবদুল মান্নান সৈয়দ সাহিত্যের এক সর্বসত্তা আলোচনা- 'বাংলা চর্চা পরিচর্যা ও ইংরেজি শেখা' আলোচনা- 'আমার ছেলেবেলার ঈদ আর বুড়োবেলার ঈদ' আলোচনা- 'নৈতিক চেতনা : ধর্ম ও মতাদর্শ' by আবুল কাসেম ফজলুল হক খবর- গণতান্ত্রিক সব শক্তির সঙ্গে কাজ করতে চাই: সু চি ফিচার- ‘নিজের কথা : বেঁচে আছি' by হুমায়ূন আহমেদ কবিতা- সাম্প্রতিক সময়ের কিছু কবিতা আলোচনা- 'মোস্লেম ভারত' পত্রিকায় চর্চিত মুসলিম ধর্ম- দর্শনের স্বরূপ ইতিহাস- 'চারশ' বছরের ঢাকা লোক ঐতিহ্যের দশ-দিগন্ত' by আনিস আহমেদ গল্পালোচনা- 'মৃত্যুর মুশায়রা' by সেলিনা হোসেন গল্প- 'বৃষ্টি নেমেছিল' by ইমদাদুল হক মিলন গল্প- 'সড়ক নভেল' by হাসনাত আবদুল হাই গল্প- 'জানালার বাইরে' by অরহ্যান পামুক স্মৃতি ও গল্প- 'কবির অভিষেক' by মহাদেব সাহা ইতিহাস- 'ভাওয়ালগড়ের ষড়যন্ত্র' by তারিক হাসান আলোচনা- 'বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা' by বেলাল চৌধুরী আলোচনা- 'শিল্প সৃষ্টি ও নান্দনিকতা' by আহমদ রফিক আলোচনা- ''স্বর্ণকণা শোভে শত শত' মদির গন্ধভরা কণ্টকফল by মুহম্মদ সবুর বিশেষ রচনা :ওমর খৈয়াম by ড. শামসুল আলম সাঈদ
দৈনিক ইত্তেফাক এর সৌজন্য
লেখকঃ মঈনুল আহসান সাবের
এই গল্প'টি পড়া হয়েছে...
No comments