কৃষকের ঘাড়ে কেন লোকসানের ভার -আলু সংকট by রানা ভিক্ষু
অধিক আলু উৎপাদনের ফলে আবার কৃষকের মাথায় হাত, আবার তাদের হূদয় ভারাক্রান্ত। রংপুর বিভাগের প্রায় সব জেলার মহাসড়কেই এখন যানজট। মহাসড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা হিমাগারগুলোতে আলু নিয়ে আসা শত শত ট্রাক ও ট্রাক্টরচালিত ট্রলিগুলো দাঁড়িয়ে থাকছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। উদ্বিগ্ন উৎপাদক সাধারণ কৃষক। অন্যদিকে বেশি মুনাফার শুভসংকেতে চকচক করছে মধ্যস্বত্বভোগীদের মুখচ্ছবি। আর এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি প্রতিবছরই ঘটে চলেছে উত্তরবঙ্গের আলুচাষিদের জীবনে।
কৃষিনির্ভর উত্তরবঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষের ইতিহাস খুব বেশি দীর্ঘ নয়। নব্বইয়ের দশকে ধানের হাইব্রিড প্যাটেন্ট হিসেবে ইরি চাষ যখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, তখন থেকে তামাকের বিকল্প হিসেবে আলুকে বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে গ্রহণ করেন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের কৃষকেরা। তার আগে আলু উৎপাদিত হতো মৌসুমি সবজি হিসেবে। আলু যেহেতু পরিবারেই সংরক্ষণযোগ্য একটি সবজি, সেহেতু সারা বছরে অন্যান্য সবজির পরিপূরক হিসেবে কিছু জমিতে আলু চাষ করতেন জোতদার গোছের বড় কৃষকেরা। বড় কৃষকদের কৃষির মূল ক্ষেত্র ছিল তামাক। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেরও নির্ভরতা ছিল তামাকে। ধীরে ধীরে রংপুরে তামাকের খ্যাতি হ্রাসে আলুর বাণিজ্যিক উৎপাদনই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। যা একই সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তার পক্ষেও সহায়ক হয়েছে। কিন্তু নীতিনির্ধারক মহলের উদাসীনতার সুযোগে কৃষিপণ্যের বাজারব্যবস্থা দিনে দিনে চলে যাচ্ছে কৃষকের বিপক্ষে। সর্বনাশের দেয়ালে পিঠ ঠেকতে চলেছে উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশের আলুচাষি কৃষকদের। চলতি বছর মুন্সিগঞ্জের আলুচাষিদেরও একই পরিণতির কথা শোনা যাচ্ছে।
উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারণে আলু চাষ করতে গিয়ে উত্তরবঙ্গের কৃষকেরা নিজের তহবিল তো শেষ করেছেনই, আলু চাষকে কেন্দ্র করে ঋণও করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের নামে ঋণ দিয়েছে এনজিও, কৃষি ব্যাংক এবং স্থানীয় সুদখোর মহাজনেরা। এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন মূলত বড় কৃষকেরা। ছোট কৃষকেরা দ্বারস্থ হয়েছেন সুদখোর মহাজনের, আলু তোলার সঙ্গে সঙ্গে যাদের টাকা সুদ ও আসলে আলু দিয়ে পরিশোধ করতে হয়। ফলে ফসল ওঠার সময় দাম থাকার কারণে স্বাভাবিক বাজার দামের থেকে বেশি পরিমাণ আলু চলে যায় মহাজনদের গোলায়। তারা কোল্ডস্টোরেজে আলু মজুদ করে এবং পরে কৃষকদের ঘরের আলু শেষ হয়ে গেলে উচ্চ দামে বাজারে আলু ছাড়ে। পরিস্থিতির শিকার কৃষক তখন নিজের উৎপাদিত আলু বিক্রির থেকে বেশি দামে কিনে খেতে বাধ্য হয়।
এ ছাড়া আরও অনেক কারণে সিংহভাগ আলুচাষি হিমাগারে আলু রাখতে পারেন না। কারণ বড় ব্যবসায়ীরা প্রায় সব হিমাগার আগাম বুকিং দিয়ে ফেলে। সাধারণত যেসব কৃষক সরাসরি আলু চাষের সঙ্গে জড়িত থাকে, চাষাবাদে সব অর্থ ব্যয় করার কারণে তাদের হাতে উদ্বৃত্ত কোনো অর্থ থাকে না। বাধ্য হয়েই তাঁরা ঋণদাতাদের চাপ দূর করতে এবং পচনরোধে স্বল্প মূল্যেই আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন। কেউ যদি বা অধিক মূল্যে হিমাগারে আলু রাখেন, ভাড়া বাবদ তাঁদের মূল্য এত বেশি ধার্য করা হয় যে পরে আলু বিক্রি করে হিমাগারের খরচই ওঠে না। আর এসব কারণেই আলু চাষে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের সাফল্য দেশবাসীর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ভয় কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হলেও আলু চাষের সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁরা ভুগছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিব) পরিচালিত একটি গবেষণার তথ্যে জানা যায়, সুস্থতার জন্য দৈনিক ২২০০ কিলোক্যালোরি প্রয়োজন হলেও রংপুর বিভাগের মানুষের মাথাপিছু দৈনিক খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ ১৩০০ কিলোক্যালোরির কম। এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে যাঁদের যাতায়াত আছে, কোনো পরিসংখ্যান ছাড়াই তাঁরা স্বীকার করবেন যে এ অঞ্চলের মানুষের ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ দিনে দিনে কমছে। যার অন্যতম অংশ হলো এ অঞ্চলের কৃষক।
শুধু আলুই নয়, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে উত্তরবঙ্গের কৃষকের উৎপাদিত প্রায় সব ফসলই কৃষকের পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের সম্পদ বাড়িয়ে চলেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, রংপুরের আট জেলার মোট জনসংখ্যার ৩৭.৪৪ ভাগই প্রান্তিক চাষি। যাঁরা নিজেরা ক্ষেতে পরিশ্রম করে ফসল ফলায় কিন্তু বাধ্যতামূলক কম মূল্যে তাঁদের ফসল আগাম বিক্রি করার ফলে ফসল উৎপাদনের মুনাফা চলে যায় মহাজন বা জোটবদ্ধ মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। বলা বাহুল্য, এ অবস্থা প্রায় সারা দেশের কৃষকের।
উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার কৃষকের বিদ্যুৎ-চাহিদা পূরণ, সার-বীজ-কীটনাশকে ভর্তুকি প্রদান, কৃষি কার্ড প্রদান প্রভৃতির মাধ্যমে এ দেশের উৎপাদন বাড়ানোর নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি কেন উপেক্ষা করা হচ্ছে—শুধু কৃষকবান্ধব বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় প্রতিবছর পচে যাচ্ছে টমেটো, মুলা, কলা, কপি, দেশীয় ফলসহ নানা কৃষিপণ্য। যেগুলোর সঙ্গে মিশে আছে এ দেশের কৃষকের শ্রম, ঘাম ও বাঁচার স্বপ্ন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যেই সরকার ২৫ হাজার টন আতপ চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার প্রতি টন আমদানিতে খরচ পড়বে ৩৯৫ ডলার অর্থাৎ আতপ চাল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৬৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অথচ উদ্বৃত্ত আলু, টমেটো, কলা, মুলা এসব রপ্তানির বিষয়টি সরকার আমলেই নিচ্ছে না। তাহলে কি প্রমাণিত হয় না যে সরকারের এসব উদ্যোগ মূলত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে কৃষিপণ্য আমদানি করে ভোক্তাসাধারণের চাহিদা পূরণের নাম করে ব্যবসায়ীদের পুঁজি বৃদ্ধি করার জন্যই? প্রতিনিয়ত যার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে শুধু এ দেশের কৃষককে?
ননা আলু চাষ করে কৃষক যখন ক্ষতিগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত, ঋণ পরিশোধের ভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পালানোর উপক্রম; তখন আমাদের বিএডিসি গর্ব ভরে বলছে, তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে, আগামী বছরের জন্য তারা আরও ১৭ হাজার লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত বীজ সংরক্ষণ করবে!
অতিসত্বর দেশের কৃষি, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ দায়িত্ব হওয়া উচিত এ দেশের উৎপাদিত ফসলের অপচয় রোধে কৃষিপণ্যের রপ্তানি নিশ্চিত করা। উৎপাদন বেশি হলে রপ্তানির ব্যবস্থা গ্রহণ করেই উৎপাদককে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। আর রপ্তানি বা সংরক্ষণ ও সুসংহত বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে কৃষককে ন্যায্য মূল্য দিতে না পারলে সেসব ফসল চাষে নিরুৎসাহিত করতে হবে। লোকসানের ভার সব সময় কৃষকের ঘাড়ে চাপানো বন্ধ করতে হবে চিরতরে।
রানা ভিক্ষু: লেখক ও উন্নয়নকর্মী; পিএইচডি গবেষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
কৃষিনির্ভর উত্তরবঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে আলু চাষের ইতিহাস খুব বেশি দীর্ঘ নয়। নব্বইয়ের দশকে ধানের হাইব্রিড প্যাটেন্ট হিসেবে ইরি চাষ যখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে, তখন থেকে তামাকের বিকল্প হিসেবে আলুকে বাণিজ্যিক ফসল হিসেবে গ্রহণ করেন বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের কৃষকেরা। তার আগে আলু উৎপাদিত হতো মৌসুমি সবজি হিসেবে। আলু যেহেতু পরিবারেই সংরক্ষণযোগ্য একটি সবজি, সেহেতু সারা বছরে অন্যান্য সবজির পরিপূরক হিসেবে কিছু জমিতে আলু চাষ করতেন জোতদার গোছের বড় কৃষকেরা। বড় কৃষকদের কৃষির মূল ক্ষেত্র ছিল তামাক। ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদেরও নির্ভরতা ছিল তামাকে। ধীরে ধীরে রংপুরে তামাকের খ্যাতি হ্রাসে আলুর বাণিজ্যিক উৎপাদনই কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। যা একই সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্য ও খাদ্যনিরাপত্তার পক্ষেও সহায়ক হয়েছে। কিন্তু নীতিনির্ধারক মহলের উদাসীনতার সুযোগে কৃষিপণ্যের বাজারব্যবস্থা দিনে দিনে চলে যাচ্ছে কৃষকের বিপক্ষে। সর্বনাশের দেয়ালে পিঠ ঠেকতে চলেছে উত্তরবঙ্গসহ সারা দেশের আলুচাষি কৃষকদের। চলতি বছর মুন্সিগঞ্জের আলুচাষিদেরও একই পরিণতির কথা শোনা যাচ্ছে।
উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলক বেশি হওয়ার কারণে আলু চাষ করতে গিয়ে উত্তরবঙ্গের কৃষকেরা নিজের তহবিল তো শেষ করেছেনই, আলু চাষকে কেন্দ্র করে ঋণও করেছে। দারিদ্র্য বিমোচনের নামে ঋণ দিয়েছে এনজিও, কৃষি ব্যাংক এবং স্থানীয় সুদখোর মহাজনেরা। এনজিও এবং ব্যাংক থেকে ঋণ পেয়েছেন মূলত বড় কৃষকেরা। ছোট কৃষকেরা দ্বারস্থ হয়েছেন সুদখোর মহাজনের, আলু তোলার সঙ্গে সঙ্গে যাদের টাকা সুদ ও আসলে আলু দিয়ে পরিশোধ করতে হয়। ফলে ফসল ওঠার সময় দাম থাকার কারণে স্বাভাবিক বাজার দামের থেকে বেশি পরিমাণ আলু চলে যায় মহাজনদের গোলায়। তারা কোল্ডস্টোরেজে আলু মজুদ করে এবং পরে কৃষকদের ঘরের আলু শেষ হয়ে গেলে উচ্চ দামে বাজারে আলু ছাড়ে। পরিস্থিতির শিকার কৃষক তখন নিজের উৎপাদিত আলু বিক্রির থেকে বেশি দামে কিনে খেতে বাধ্য হয়।
এ ছাড়া আরও অনেক কারণে সিংহভাগ আলুচাষি হিমাগারে আলু রাখতে পারেন না। কারণ বড় ব্যবসায়ীরা প্রায় সব হিমাগার আগাম বুকিং দিয়ে ফেলে। সাধারণত যেসব কৃষক সরাসরি আলু চাষের সঙ্গে জড়িত থাকে, চাষাবাদে সব অর্থ ব্যয় করার কারণে তাদের হাতে উদ্বৃত্ত কোনো অর্থ থাকে না। বাধ্য হয়েই তাঁরা ঋণদাতাদের চাপ দূর করতে এবং পচনরোধে স্বল্প মূল্যেই আলু বিক্রি করতে বাধ্য হন। কেউ যদি বা অধিক মূল্যে হিমাগারে আলু রাখেন, ভাড়া বাবদ তাঁদের মূল্য এত বেশি ধার্য করা হয় যে পরে আলু বিক্রি করে হিমাগারের খরচই ওঠে না। আর এসব কারণেই আলু চাষে উত্তরবঙ্গের কৃষকদের সাফল্য দেশবাসীর খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার ভয় কাটিয়ে উঠতে সহায়ক হলেও আলু চাষের সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁরা ভুগছেন চরম নিরাপত্তাহীনতায়। রিসার্চ ইনিশিয়েটিভস বাংলাদেশ (রিব) পরিচালিত একটি গবেষণার তথ্যে জানা যায়, সুস্থতার জন্য দৈনিক ২২০০ কিলোক্যালোরি প্রয়োজন হলেও রংপুর বিভাগের মানুষের মাথাপিছু দৈনিক খাদ্যগ্রহণের পরিমাণ ১৩০০ কিলোক্যালোরির কম। এ অঞ্চলের গ্রামীণ জনপদে যাঁদের যাতায়াত আছে, কোনো পরিসংখ্যান ছাড়াই তাঁরা স্বীকার করবেন যে এ অঞ্চলের মানুষের ক্যালোরি গ্রহণের পরিমাণ দিনে দিনে কমছে। যার অন্যতম অংশ হলো এ অঞ্চলের কৃষক।
শুধু আলুই নয়, ন্যায্য বাজার ব্যবস্থাপনার অভাবে উত্তরবঙ্গের কৃষকের উৎপাদিত প্রায় সব ফসলই কৃষকের পরিবর্তে ব্যবসায়ীদের সম্পদ বাড়িয়ে চলেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ কর্তৃক পরিচালিত এক গবেষণায় দেখানো হয়েছে, রংপুরের আট জেলার মোট জনসংখ্যার ৩৭.৪৪ ভাগই প্রান্তিক চাষি। যাঁরা নিজেরা ক্ষেতে পরিশ্রম করে ফসল ফলায় কিন্তু বাধ্যতামূলক কম মূল্যে তাঁদের ফসল আগাম বিক্রি করার ফলে ফসল উৎপাদনের মুনাফা চলে যায় মহাজন বা জোটবদ্ধ মধ্যস্বত্বভোগীদের পকেটে। বলা বাহুল্য, এ অবস্থা প্রায় সারা দেশের কৃষকের।
উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার কৃষকের বিদ্যুৎ-চাহিদা পূরণ, সার-বীজ-কীটনাশকে ভর্তুকি প্রদান, কৃষি কার্ড প্রদান প্রভৃতির মাধ্যমে এ দেশের উৎপাদন বাড়ানোর নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বিষয়টি কেন উপেক্ষা করা হচ্ছে—শুধু কৃষকবান্ধব বাজার ব্যবস্থাপনা গড়ে না ওঠায় প্রতিবছর পচে যাচ্ছে টমেটো, মুলা, কলা, কপি, দেশীয় ফলসহ নানা কৃষিপণ্য। যেগুলোর সঙ্গে মিশে আছে এ দেশের কৃষকের শ্রম, ঘাম ও বাঁচার স্বপ্ন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের মধ্যেই সরকার ২৫ হাজার টন আতপ চাল আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যার প্রতি টন আমদানিতে খরচ পড়বে ৩৯৫ ডলার অর্থাৎ আতপ চাল আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ৬৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। অথচ উদ্বৃত্ত আলু, টমেটো, কলা, মুলা এসব রপ্তানির বিষয়টি সরকার আমলেই নিচ্ছে না। তাহলে কি প্রমাণিত হয় না যে সরকারের এসব উদ্যোগ মূলত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রয়োজনে কৃষিপণ্য আমদানি করে ভোক্তাসাধারণের চাহিদা পূরণের নাম করে ব্যবসায়ীদের পুঁজি বৃদ্ধি করার জন্যই? প্রতিনিয়ত যার চরম মূল্য দিতে হচ্ছে শুধু এ দেশের কৃষককে?
ননা আলু চাষ করে কৃষক যখন ক্ষতিগ্রস্ত, ঋণগ্রস্ত, ঋণ পরিশোধের ভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পালানোর উপক্রম; তখন আমাদের বিএডিসি গর্ব ভরে বলছে, তাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে, আগামী বছরের জন্য তারা আরও ১৭ হাজার লাখ মেট্রিক টন অতিরিক্ত বীজ সংরক্ষণ করবে!
অতিসত্বর দেশের কৃষি, বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি বিশেষ দায়িত্ব হওয়া উচিত এ দেশের উৎপাদিত ফসলের অপচয় রোধে কৃষিপণ্যের রপ্তানি নিশ্চিত করা। উৎপাদন বেশি হলে রপ্তানির ব্যবস্থা গ্রহণ করেই উৎপাদককে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। আর রপ্তানি বা সংরক্ষণ ও সুসংহত বাজার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করে কৃষককে ন্যায্য মূল্য দিতে না পারলে সেসব ফসল চাষে নিরুৎসাহিত করতে হবে। লোকসানের ভার সব সময় কৃষকের ঘাড়ে চাপানো বন্ধ করতে হবে চিরতরে।
রানা ভিক্ষু: লেখক ও উন্নয়নকর্মী; পিএইচডি গবেষক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments