কোচ দর্দভিচকে হাসিয়ে মাঠ ছাড়লেন আমিনুলরা- বাংলাদেশ ৩-০ নেপাল by মিথুন আশরাফ
প্রথম দিনটি হতাশাতেই কেটেছে। তবে দ্বিতীয় দিন একেবারে ঘুরে দঁ্াড়িয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিটি ইভেন্টেই নিজেদের সামর্থ্যের সেরাটাই দেখানোর চেষ্টা করে স্বাগতিকরা। ফুটবলেও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। জিতেই মাঠ ছাড়ে।
নেপালকে ৩-০ গোলে হারিয়ে কোচ দর্দভিচকে হাসায় শিষ্য আমিনুল, এনামুল, এমিলি, মামুন, মিশুরা। ম্যাচের শুরম্নতেই নেপালের জালে বল জড়ায়। শেষও হয় গোল দিয়েই। তবে ম্যাচে ছন্নছাড়া ফুটবলই উপহার দেয় আমিনুলরা। প্রথমার্ধে আধিপত্য বিসত্মার করলেও দ্বিতীয়ার্ধে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। নেপাল সেই সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেনি। শেষ পঁাঁচ মিনিটে আবার ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় বাংলাদেশ। পর পর দুই গোলও পায়। মামুন উল ইসলাম, আতিকুর রহমান মিশু ও মিঠুন চৌধুরীর গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে স্বাগতিকরা।ম্যাচের ৭মিনিট যেতেই গোল পেয়ে যায় বাংলাদেশ। মামুন উল ইসলাম গোল করেন। বাঁ প্রানত্ম থেকে ডি-বক্স লাইনে দাঁড়ানো মামুন বল পান। বলটি সরাসরি প্রতিপরে জালে জড়ান ম্যাচ জয়ের নায়ক মামুন। শটটি এত জোরে নিয়েছেন যে, গোলরক বিকাশ মাল্য কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই বল জালে জড়ায়। এর ১০ মিনিট পর আরেকটি সুযোগ হারায় বাংলাদেশ। এবার মামুনের দেয়া পাসে গোল ব্যবধান বাড়ানোর চেষ্টা বৃথা যায় এমিলির। ১৭ মিনিটে মামুনের কাছ থেকে ডি-বক্সের ভেতরে পাস পান এমিলি। কিন্তু জোরালো শট নিতে ব্যর্থ হন। পায়ের ছোঁয়ায় বল গোলরকের হাতে পড়তেই তা মাঠের বাইরে পাঠান ।
এর পর বাংলাদেশ নয়, আক্রমণ শানায় নেপাল। প্রথমার্ধে ২৫ মিনিটে সুযোগ পেয়েছিল নেপাল। কিন্তু কাজে লাগাতে পারেনি। অনিল গুরম্নঙ্গের ক্রস থেকে যোগেশ শ্রেষ্ঠা পায়ের আলতো ছোঁয়া লাগাতে পারলেই গোল হয়ে যেত। কিন্তু হয়নি। বেঁচে যায় বাংলাদেশ। সমতা ফেরানোর সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় নেপাল। প্রথমার্ধে আর কোন আক্রমণের দেখা মেলেনি। দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ ছন্নছাড়া ফুটবল খেলে। পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে খেলতে পারেনি। নেপালও এ সুযোগে কয়েকটি আক্রমণ শানায়। বাংলাদেশও পালস্না দিয়ে চলে। কিন্তু আর কোন গোলেরই দেখা মেলেনি। অবশ্য শেষ বাঁশি বাজার আগে একটি সুযোগ পেয়েছিল নেপাল। জুমানু রায় সরাসরি শট নিলেও বারের উপর দিয়েই বল চলে যায়। নেপাল সুযোগ হারালেও অতিরিক্ত সময়ে বাংলাদেশ পেছনে থাকেনি। সুযোগ পেয়েই পর পর দুই গোল দিয়ে বসে। মামুনের কর্নার থেকে বল পেয়ে মাথার ছোঁয়ায় মিশু ও গোলরককে একা পেয়ে পায়ের ছোঁয়ায় মিঠুন গোল করে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন।
বাংলাদেশের কোচ হওয়ার পর এ ম্যাচটিই ছিল দর্দভিচের প্রথম ম্যাচ। শিষ্যরা জয় এনে দিয়েছে দর্দভিচকে। শুধু জয়ই নয়, ৩-০ গোলের বড় ব্যবধানে জয় পায় বাংলাদেশ। এর আগে ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ এতবড় জয় পেয়েছিল নেপালের বিরম্নদ্ধে। ৫-০ গোলে জিতেছিল। এবার দ্বিতীয় সবের্াচ্চ গোলে জয় পায় বাংলাদেশ। জয়ের সংখ্যাও বাড়িয়ে নেয়। সর্বমোট ১৬ বারের দেখায় ১১ বারই জেতে বাংলাদেশ। সর্বশেষ ৭ ম্যাচে টানা জয় পায় বাংলাদেশ।
১৯৮২ সাল থেকে শুরম্ন। সেই থেকে এ দু'দল পরস্পরের মুখোমুখি হয় ১৬ বার। বাংলাদেশ জিতে ১১ বার। আর নেপাল জিতে ৪বার। একটি ম্যাচ ড্র হয়। ১৯৮৪ সালে প্রথমবার পরস্পরের বিরম্নদ্ধে ম্যাচটিই ১-১ গোলে ড্র হয়। এর পর টানা দু'টি ম্যাচ জিতে বাংলাদেশ। ১৯৮৩ ও পরের বছর যথাক্রমে ১-০ ও ৫-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে লাল-সবুজ জার্সিধারী ফুটবলাররা। ১৯৮৪ সালে আরেকটি ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র হওয়ার পর পেনাল্টিতে ৪-২ ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। ১৯৮৬ সালে এ দু'দলের মধ্যে দু'টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। দু'টির ব্যবধান ছিল ১-০। একবার বাংলাদেশ, আরেকবার নেপাল হাসিমুখ নিয়ে মাঠ ত্যাগ করে। পরের বছরও একই ব্যবধানে জিতে নেপাল। এর পর এ দু'দলের মধ্যে চার বছর কোন ফুটবল ম্যাচ হয়নি। চার বছর পর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ আবার জেতে। ২-০ গোলে। ১৯৯৩ সালে পাল্টা জবাব দেয় নেপাল। সেবার তারা জেতে ০-১ গোলে। এর পর নেপালের শুধুই হারের ইতিহাস রচনা হয়েছে। বাংলাদেশকে একবারও দমাতে পারেনি নেপালী ফুটবলাররা। টানা ছয় ম্যাচ জিতে নেয় বাংলাদেশ। ১৯৯৫ সালে দুইবার যথাক্রমে ২-০ ও ২-১ গোলে। ১৯৯৯ সালেও দুইবার জয় পায় বাংলাদেশ। ২-১ ও ১-০ গোলে। ২০০৩ সালে ১-০ গোলে ও সর্বশেষ ২০০৫ সালে ২-০ গোলে জয় পায় বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ স্কোয়াড : আমিনুল হক (গোলরক), নাসির, ওয়ালী ফয়সাল, মিন্টু শেখ, রেজাউল করিম, মিশু, ইউসুফ, মামুন, জাহিদ (এনামুল), এমিলি, শাকিল।
নেপাল স্কোয়াড: বিকাশ মালস্না (গোলরক), সাগর থাপা, রোহিত, বিরাজ, রবিন, নিরঞ্জন মাল্য, নিরঞ্জন খাদগা, যোগেশ, বোলা (চেতান), অনিল ও জুমানু রয়।
প্রথম স্বর্ণ ভারতের, সাইকিংয়ে
গেমসের দ্বিতীয় দিনে এবারের আসরের প্রথম স্বর্ণ পদক জয় করে ভারত। খুলনায় অনুষ্ঠিত সাইকিংয়ে ৩০ কিমি রোড-রেসে স্বর্ণ জয় করে ভারত। রৌপ্য পাকিসত্মান ও ব্রোঞ্জ পায় শ্রীলঙ্কা। এই একটি ইভেন্টেই শনিবার পদকের লড়াই হয়। এছাড়া এদিনে অনুষ্ঠিত অন্যান্য ইভেন্টের মধ্যে হকিতে বাংলাদেশের সূচনাটা ভালই হয় শ্রীলঙ্কাকে ৩-১ গোলে হারিয়ে। অন্যদিকে, ব্যাডমিন্টনে পুরম্নষ ও মহিলা দুই বিভাগেই জয় পায় বাংলাদেশের খেলোয়াড়রা। এদিন খবরের শিরোনাম হয় ৮ জাতির এসএ গেমসের সবচেয়ে পরিণত দল ভারত হকিতে ২১-০ গোলে নেপালকে হারিয়ে। এসএ গেমসের ইতিহাসে এত বেশি গোলের ব্যবধানে জয়-পরাজয়ের রেকর্ড এই প্রথম। এছাড়া, ফুটবলে জয় পায় মালদ্বীপ ১-০ গোলে ভুটানকে হারিয়ে। স্কোয়াশে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ভারত এবং পাকিসত্মান বাংলাদেশকে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। প্রতিযোগিতার তৃতীয় দিনে আজ অনুষ্ঠিত হবে পুরম্নষ ও মহিলা ফুটবল, হকি, ব্যাডমিন্টন, বাস্কেটবল, টি২০ ক্রিকেট, সাইকিং, কাবাডি, স্কোয়াশ এবং ভারোত্তোলন।
আবেগআপস্নুত কোচ,আমিনুলের
ভাবনায় পরের ম্যাচ
বিশেষ প্রতিনিধি ২৩ ডিসিপিস্ননে ১৭ স্বর্ণের প্রত্যাশা থাকলেও বাঙালীর প্রাণের খেলা ফুটবলের সাফল্যে উন্মুখ বাংলাদেশ। শেষ পর্যনত্ম দর্দভিচের দল কোথায় গিয়ে থামবে, কাঙ্ৰিত ল্যে পেঁৗছতে পারবে কিনা, তা বলে দেবে সময়। তবে বেশিরভাগ সময় যা হয় না, এবার তাই হয়েছে। অনেকদিন পর কোন আসরে শুরম্ন ভাল হয়েছে। আমিনুল বাহিনী ৩_০ গোলের পরিষ্কার ব্যবধানে হারিয়েছে নেপালকে। দলের এ সাফল্যে রিতিমতো উদ্বেলিত কোচ জোরান দর্দভিচ। এ সার্বিয়ানের কথা, প্রথম ম্যাচ সব সময়ই কঠিন। এখানেও কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হয়েছে। আমি খুশি, ছেলেরা জানপ্রাণ লড়ে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরম্নদ্ধে সেই প্রথম ম্যাচ জিতেছে। জাতীয় দলের দায়িত্ব নেয়া এ নতুন কোচ বেশ ভালই বুঝেছেন, প্রিয় দলের সঙ্গে দেশবাসীর সম্পৃক্ততা এবং আবেগ, ভালবাসাও জড়িত। তাই তাঁর মুখ থেকে বেরিয়ে এসেছে, শুধু ১১ খেলোয়াড়ই নয়, এ জয়ে গ্যালারিতে থাকা সমর্থক- অনুরাগীও খুশি। সবাই প্রিয় দলের সাফল্য দেখতেই উন্মুখ ছিল। আমি শঙ্কিত না থাকলেও কিছুটা চিনত্মিত ছিলাম। কি জানি! প্রথম ম্যাচ, কি হয় ? কিন্তু ছেলেরা সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে খেলে তার ইতিবাচক সমাধান দিয়েছে। আমি সামগ্রীক পারফরমেন্সে খুশি। অন্যদিকে অধিনায়ক আমিনুল এতটা আবেগ তাড়িত নন। তাঁর কথা, স্কোরলাইনে খুশি হলেও টিম পারফরমেন্সে আমি তৃপ্ত নই। কিছু কিছু জায়গায় দুর্বলতা রয়ে গেছে। সেটা সময়ের প্রবাহতায় ভাল হবে_ এ বিশ্বাস ও আস্থা আছে আমার। ম্যাচ পিছু চিনত্মা করা বাংলাদেশ অধিনায়কের কথা, আমরা ম্যাচ টু ম্যাচ ভাবছি। ল্য-রিকল্পনাও সেভাবেই আঁটছি। এখন থেকেই ভুটানের সঙ্গে দ্বিতীয় ম্যাচের কথা ভাবছি। এ ম্যাচের ভুলত্রম্নটি কাটিয়ে যতটা সম্ভব গোছানো ফুটবল উপহারের চিনত্মাই করছি।
No comments