খুনীরা যেখানেই থাক ।। ফিরিয়ে আনা হবে- বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে এনে রায় কার্যকর করা হবে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
দলকে সুসংগঠিত ও শক্তিশালী করে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে জনগণের কাতারে গিয়ে কাজ করার জন্য তৃণমূল নেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশ অভিশাপমুক্ত হয়েছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'ইতিহাস যে কাউকে মা করে না বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় কার্যকরের মাধ্যমে তা আবারও প্রমাণিত হলো। আর এ রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশ অভিশাপমুক্ত হলো। দেশ যেহেতু অভিশাপমুক্ত হয়েছে, তাই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে অসুবিধা হবে না। বিদেশে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করে তিনি বলেন, "পৃথিবীটা বিশাল, আবার ছোটও। খুনীরা পালিয়ে যাবে কোথায়? পালিয়ে থাকা খুনীরা যেখানেই থাকুক, ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করা হবে ইনশালস্নাহ।"সারাদেশ থেকে আগত প্রায় ১০ হাজার তৃণমূল নেতাকে নিয়ে আয়োজিত বর্ধিত সভায় উদ্বোধনী বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী জাতীয় চার নেতা, যুদ্ধাপরাধী, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, বিডিআর হত্যাযজ্ঞসহ সকল হত্যাকা-ের বিচারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর না হলে আমাকে আফসোস নিয়েই মরতে হতো। জাতি আজ অভিশাপমুক্ত হয়েছে। এখন একে একে প্রতিটি হত্যাকা-ের বিচার করা হবে। বেঁচে থাকতে এ মাটিতে কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না। বাংলাদেশের মাটিতে কোন সন্ত্রাসী-জঙ্গীবাদের জায়গা হবে না।
আমৃতু্য শাসক নয়, জনগণের সেবক হয়ে ন্যায় ও সত্যের পথে থেকে বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকারকে সফল করার ল্যে সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের আহ্বানের পাশাপাশি সুবিধাবাদীদের বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, সংগঠন শক্তিশালী না হলে সরকারের সফলতা আসে না। তাই সর্বাগ্রে তৃণমূল থেকে দলকে শক্তিশালী করতে হবে, ভোগবিলাস নয়, বঙ্গবন্ধুর মতো ত্যাগের মনোভাব নিয়ে জনগণের পাশে গিয়ে কাজ করম্নন। তৃণমূল নেতাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রীর শেরেবাংলা নগরস্থ সরকারী বাসভবন গণভবন চত্বরে আয়োজিত এ বর্ধিত সভাকে ঘিরে সারাদেশ থেকে আগত তৃণমূল নেতাদের পদচারণায় মুখরিত ছিল গোটা দিন। সর্বসত্মরের নেতাদের এ মিলনমেলায় প্রধানমন্ত্রী নিজের সদস্যপদ নবায়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের দেশব্যাপী সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী সাংগঠনিক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের এক বছরের সফলতা, বিরোধী দলের মিথ্যা অপপ্রচার, নানা ষড়যন্ত্র-চক্রানত্ম, দলকে সাংগঠনিকভাবে ঢেলে সাজাতে বিভিন্ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন তৃণমূল নেতাদের সামনে।
সকাল সোয়া ১১টা গণভবনে বর্ধিত সভার আগে ধানম-ির দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র অনুমোদন দেয়া হয়। এদিকে সকাল ৯টা থেকেই গণভবনে তৃণমূল নেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। দীর্ঘদিন পর প্রধানমন্ত্রীর ডাক পেয়ে তৃণমূল নেতাদের মধ্যে ছিল আনন্দ-উচ্ছ্বাস। বর্ধিত সভাকে কেন্দ্র করে গণভবনকে সাজানো হয় দৃষ্টিনন্দন করে। কড়া নিরাপত্তায় গণভবনে ঢুকেই প্রবেশপথে বসানো সাতটি বিভাগের প্যান্ডেল থেকে স্ব স্ব বিভাগের জেলা-উপজেলা ও জাতীয় কমিটির নেতারা তাঁদের পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে মূলমঞ্চে প্রবেশ করেন। দীর্ঘদিন পর দেখা হওয়ায় তৃণমূল নেতারা একে অপরকে ধরে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রায় ১০ হাজার প্রতিনিধির ধারণৰমতাসম্পন্ন বিশাল প্যান্ডেলের বিশাল ব্যানারে বড় বড় অৰরে লেখা ছিল_ 'দিন বদলের সংগ্রামে এগিয়ে চলুন।' পৌনে ১১টায় প্রধানমন্ত্রী গণভবনে প্রবেশ করে প্রথমেই জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এরপর সকল কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে মূলমঞ্চে আরোহণ করে সভাপতির আসন গ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। জরম্নরী অবস্থার সময় অনুষ্ঠিত দলের সর্বশেষ বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনা কারাগারে থাকায় সভাপতির আসনটি শূন্য রেখেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল। শনিবার সেই শূন্য আসনটি পূর্ণ করেন শেখ হাসিনা।
বিগত সময়ে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয়, জাতীয় এবং জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বর্ধিত সভা হলেও শনিবার ছিল ব্যতিক্রম। উপদেষ্টাম-লী, মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরম্ন করে উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের পর্যনত্ম বর্ধিত সভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরের এ ঐতিহাসিক অর্জনে আমি দেশের সকল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আনন্দ-বেদনা ভাগাভাগি করতে চাই। সভার শুরম্নতেই 'এদেশ ধন্য, জাতি ধন্য- জাতির পিতার জন্য', 'পূর্ব দিগনত্মে সূর্য উঠেছে, রক্তলাল, রক্তলাল, রক্তলাল' এ দু'টি গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ও আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরামের শিল্পীরা। এরপর বিভিন্ন ধমর্ীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ শেষে শোক প্রসত্মাব উপস্থাপন করেন দলের দফতর সম্পাদক ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান। শোক প্রসত্মাব পালনে সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর হওয়ায় শোকরানা মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা খলিলুর রহমান। এরপর স্বাগত বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দু'পর্বে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক নূহ-উল-আলম লেনিন ও উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।
উদ্বোধনী বক্তৃতার শুরম্নতেই বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকরে স্বসত্মি প্রকাশ করতে গিয়ে বার বার আবেগাপস্নুত হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মর্মস্পশর্ী বক্তৃতায় শেখ হাসিনা বলেন, রায় কার্যকরের পর শানত্মি পেয়েছি। আমার আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে। এর মাধ্যমে জাতি অভিশাপমুক্ত হয়েছে। এটা দেখে যেতে না পারলে আফসোস থেকে যেত। এখন ইনশালস্নাহ দেশকে আরও এগিয়ে নেয়া যাবে। বাকি খুনীদের ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করাটা অসম্ভব হবে না। অন্যায়কারী, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের বিরম্নদ্ধে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, এ মাটিতে কোন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব না, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসীদের স্থান হবে না। আমরা এ দেশকে দৰিণ এশিয়ার মধ্যে শানত্মির দেশে পরিণত করতে চাই। কেননা শানত্মি ছাড়া অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব নয়।
তৃণমূল নেতাদের সাহসী ও বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণেই আওয়ামী লীগ মহাবিজয় নিয়ে আজ ৰমতায় এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার রায় কার্যকর সম্ভব হয়েছে স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাকে বার বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবারই মহান রব্বুল আল আমীন আমাকে প্রাণে বাঁচিয়েছেন। তিনি বলেন, আমার কেবলই মনে হয়েছে, আলস্নাহ হয়ত আওয়ামী লীগকে মতায় এনে এবং তাকে দিয়েই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করাবেন বলে তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। তাই শত শোককে শক্তিতে পরিণত করে আমরা বিচার শেষ করার কাজে এগিয়ে গেছি। তৃণমূল নেতাকমর্ীরা পাশে না থাকলে তা সম্ভব হতো না।
রাজনৈতিক প্রধান প্রতিপৰ বিএনপি-জামায়াত জোটের নাম উলেস্নখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু যে খুনীচক্র ও মদদদাতারা হত্যা করেছে, তাদের চক্রানত্ম থেমে নেই। যড়যন্ত্র চলতেই থাকবে। কেননা ষড়যন্ত্র, হত্যা-কু্য-ষড়যন্ত্রের মধ্যেই তাদের জন্ম। এসব সারাদেশে বলে বেরিয়েছিল আওয়ামী লীগ আগামী এক শ' বছরেও ৰমতায় আসতে পারবে না, ৩০ আসনও পাবে না। এমনকি আমি নাকি বিরোধীদলীয় নেত্রীও হতে পারব না। কিন্তু ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে দুনর্ীতিবাজ-ষড়যন্ত্রকারীদের জবাব দিয়েছে। ওই নির্বাচনে তারাই ২৯টির বেশি আসন পায়নি। প্রধানমন্ত্রী ৰমতায় আসার পর দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি হ্রাস, বিনামূল্যে ছাত্রদের মধ্যে বই বিতরণসহ সরকারের এক বছরের সাফল্যের কথা তুলে ধরে বলেন, ইনশালস্নাহ জনগণকে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি পূরণ করা হবে। জনগণ যে আস্থা-বিশ্বাস আমাদের ওপর রেখেছে সেই মর্যাদা রাখব।
সরকারের বিরম্নদ্ধে গত এক বছরে নানা চক্রানত্ম-ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের এ এক বছরে নানা ষড়যন্ত্র চলেছে। সরকারকে উৎখাত করার জন্য বিডিআর বিদ্রোহ ঘটানো হয়েছে। ওই বিদ্রোহে নিহত ৫৭ সেনা কর্মকর্তার মধ্যে ৩০ জনই আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য, যারা জঙ্গীবাদের বিরম্নদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের নাম উলেস্নখ না করে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ঠিক আগের দিন সকালে সে তাঁর মাকে বার বার টেলিফোন করে ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে সরে যেতে বলেছিল। যিনি (খালেদা জিয়া) দুপুর ১২-১টার আগে ঘুম থেকে ওঠেন না, তিনিই ছেলের ফোন পেয়ে বিডিআর বিদ্রোহের আগমুহূর্তে সকাল ৭-৮টার মধ্যে কেন ক্যান্টনমেন্টের বাসা থেকে বের হয়ে গেলেন? এরপর তিন দিন পর্যনত্ম তিনি কেন ক্যান্টনমেন্টের বাসায় ফিরলেন না? এ তিন দিন তিনি কী করেছেন? এসবের রহস্যও উদ্ঘাটন করা উচিত। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, সশস্ত্রবাহিনী করা ছবিযুক্ত নিভর্ুল ভোটার তালিকা করেছে। এতে বিএনপি-জামায়াত জোটের আমলে করা ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার বাদ পড়েছে। ওই ভুয়া ভোটারের বিরম্নদ্ধে আমাদের গড়ে তোলা আন্দোলন-সংগ্রাম দমাতে বিডিআর সদস্যদের মাঠে নামাতে চাইলেও তারা রাজি হননি। তাই নির্বাচনের প্রতিশোধ নিতেই কী বিডিআর হত্যাযজ্ঞ ঘটানো হলো?
বিরোধী দলের 'অপপ্রচারের' বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন এবং সত্য বিষয়গুলো তাদের সামনে তুলে ধরার জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বিরোধী দল মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী নয়। লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছে। তাদের হাতে অগাধ টাকা থাকায় তারা অপপ্রচার চালাবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এ অপপ্রচারে জনগণ যাতে বিভ্রানত্ম না হন, তার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঠিক তথ্য ও সরকারের সাফল্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে।
ভারত সফর সম্পর্কে বিরোধী দলের অপ্রপচারের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, পড়শীদের সঙ্গে ঝগড়াঝাটি করে কোন সুফল পাওয়া যায় না। আমরা তাই পড়শীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে যে কোন সমস্যার সমাধান করতে চাই। এর মাধ্যমে দণি এশিয়ায় শানত্মি প্রতিষ্ঠা করতে চাই। কিন্তু এটাও বিরোধী দলের অপছন্দ। তিনি বলেন, গণতন্ত্র ধ্বংসের অপচেষ্টা চলছে। বাংলাদেশের মানুষ অতীতে যেভাবে রক্ত দিয়ে গণতন্ত্রের অধিকার আদায় করেছে; ভবিষ্যতেও কোন শক্তি যাতে গণতান্ত্রিক অধিকার ধ্বংস করতে না পারে সেজন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে।
সভায় নিজের সদস্যপদ নবায়নের মাধ্যমে দলের সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন অভিযানের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল নেতাদের সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সংগঠন শক্তিশালী না হলে সরকার সফল হয় না। তাই নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান সফল করতে হবে। তবে সদস্য সংগ্রহের েেত্র নীতি-আদর্শের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তিনি বলেন, ৰমতার সুবিধা নিতে অনেকেই ভোল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগে নাম লেখাতে চাইবে। কিছু লোক আছে, যারা পার্লামেন্ট গবর্নমেন্ট পার্টি হিসেবে পরিচিত। সরকার বদলালে ব্যানার পাল্টায়। সব সময় তারা গবর্নমেন্ট পর্াির্টতে থাকতে চায়। আওয়ামী লীগ উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে পুরনো বিশাল দল, সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী। তাই এ ধরনের ব্যানার পাল্টানো লোকদের আওয়ামী লীগে দরকার নেই।
সদস্য সংগ্রহের েেত্র নবীন ও তরম্নণ প্রজন্মকে অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ অনেক পুরনো দল। তাই দলের প্রবীণদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা এবং নবীনের শক্তি ও উদ্যমের সমম্বয় ঘটিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়া হবে। দলে নারী সদস্য বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিগত আন্দোলন-সংগ্রামে নারীদেরও বিরাট ভূমিকা ছিল। এ সংক্রানত্ম নির্বাচনী বিধিবিধানও অনুসরণের আহ্বান জানান তিনি তৃণমূল নেতাদের।
নিজের কারাজীবনের কথা উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আমাকে রাজনীতি ও দুনিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা চলেছে। দলের সেই দুঃসময়ে স্ত্রী হারানোর শোক ও বেদনায় কাতর বয়োবৃদ্ধ জিলস্নুর রহমান দলের হাল ধরে সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জরম্নরী অবস্থার সরকারের রক্তচু উপো করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের সহযোগিতা ও বলিষ্ঠ ভূমিকার কারণেই আমার কারামুক্তি, নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং বিজয় লাভ সম্ভব হয়েছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল নেতাকমর্ীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ ও নিজের জন্য দোয়া কামনা করেন। তিনি বলেন, ওই সময় অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভা ছিল দলের জন্য টার্নিং পয়েন্ট। দলীয় প্রধানের মুক্তির দাবি অর্জন করেই নির্বাচন ও বিজয়ী হয়ে মতায় যাওয়া_ ওই সভার প্রতিটি ওয়াদা এক এক করে পূরণ হয়েছে।
শেখ হাসিনা আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, দলের নেতাকর্মীরা শত অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেও কখনও আদর্শ বিচু্যত হয় না। যখনই দলের দুঃসময় এসেছে, তখনই তারা সঠিক সিদ্ধানত্ম ও সাংগঠনিকভাবে দলকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দুঃখী মানুষের কল্যাণ ও দেশের উন্নয়নে আত্মনিয়োগ করার জন্য নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী তাদেরও জাতির পিতার মতো ত্যাগ ও দৃঢ়তা নিয়ে দুঃখী মানুষের জন্য কাজ করে যেতে হবে। এখন তাদের সামনে গুরম্নদায়িত্ব দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা করা। ইনশালস্নাহ তা অবশ্যই আমরা করব।
No comments