বাংলাদেশে তিক্ত প্রচারণা শেষ by শুভজিত বাগচি
বৃহস্পতিবার
ছিল বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রচারণার শেষ দিন। এদিন দেশে
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ তাদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ওপরই মূলত ফোকাস করেছে।
অন্যদিকে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ‘সুশাসন’ আইন শৃংখলা
পরিস্থিতির ওপর জোর দিয়েছে।
এদিন ঢাকা শহরে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের যুব সমর্থকদের দীর্ঘ র্যালি। তাতে লাউডস্পিকারে বাজছিল ‘ভোট ফর নৌকা’। এটি দলটির নির্বাচনী প্রতীক। অন্যদিকে ঢাকার রাজপথে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন অনুপস্থিত। তারা দাবি করছেন, ক্ষমতাসীন দল থেকে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়েছে।
তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচন হচ্ছে ২৯৯ আসনে। এর ফল পাওয়া যেতে পারে ৩১শে ডিসেম্বর।
এক ডজনেরও বেশি দলের সমন্বয়ে মহাজোট নিয়ে নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই মহাজোটে রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। তবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি তার দল প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রার্থী তিনি প্রত্যাহার করতে পারেন। আওয়ামী লীগ ২৬০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, এর মধ্যে ৪৯ জন নতুন প্রার্থী।
বিরোধী জোট
অন্যদিকের পরিস্থিতি সম্ভবত অনেক বেশি জটিল। ২০ দলেরও বেশি দলকে নিয়ে একটি বৃহৎ জোট গঠন করেছে বিরোধীরা। এর নাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মূলে রয়েছে বিএনপি। তারা ২৫৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় নি দলটি। এতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু দ্য হিন্দুকে বলেছেন, আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। কোনোভাবেই আমরা নির্বাচন থেকে সরে যাবো না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন এক সময় আওয়ামী লীগের বড় মাপের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের সংবিধান রচয়িতা পার্লামেন্টারি কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে দেখা হয় ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে। লেখক ও সঙ্গীতজ্ঞ অরুপ রাহী বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ নয় বিএনপি। তবে এখন তা আর কাজ করে না। ভারতের অনেক মিডিয়া এ বিষয়ে ভ্রান্ত নীতি অবলম্বন করে। আরও যুক্তি দেয়া হয় যে, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে জড়িত নয় বিএনপি এ কথা আর ধোপে টেকে না, যখন দেখা যায় তারা নির্বাচনে নিজেদের প্রতীক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর একজন অফিস বেয়ারারকে। ঢাকায় বিএনপির একজন কর্মকর্তা দ্য হিন্দুকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও বিএনপি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে জড়িত নয়। এমনকি ভারত বিরোধী কোনো রকম অবস্থানকেও উৎসাহিত করে না।
ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট
ওই নেতা বলেন, যদি কোনো দল বাংলাদেশে ভারত বিরোধী প্রচারণা চালায়, তাহলে তারা শতকরা ৩০ ভাগের বেশি ভোট পাবেই, যেহেতু ভারতপন্থিদের চেয়ে এখানে ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট বেশি শক্তিশালী। তবে আমরা এমন প্রচারণা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যদিও ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েই যায়।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলেরই আলাদা আলাদ নির্বাচনী প্রচারণার ধরণ রয়েছে। আওয়ামী লীগ ফোকাস করেছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সরকারের অর্জনের ওপর। তাদের দলীয় মেনিফেস্টোতে বলা হয়েছে, এখন বাংলাদেশ আর্থিকভাবে শক্তিশালী। ছোটখাট ঘটনা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পারে না।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে বাংলাদেশ ‘নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশের’ কাতার থেকে ‘উন্নয়নশীল দেশের’ কাতারে এগিয়ে গেছে। দলীয় মেনিফেস্টোতে বলা হয়েছে, অর্থনীতি উন্নীত হয়েছে টেকসই অবস্থায়। এখানে মাথা পিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫১ ডলারে।
আগামী ৫ বছরে শতকরা ১০ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। ১২ বছরে দারিদ্র্য শতকরা ৪১ ভাগ থেকে কমিয়ে ২১ ভাগে নামিয়ে আনার কাজ অব্যাহত রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ও পরিবহন নেটওয়ার্ক থেকে বিদ্যুত ও গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত অনেক মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যদি তারা ক্ষমতায় ফেরে তাহলে আরও প্রকল্প শুরু হবে। গ্রামকে আধুনিকায়ন করা হবে। কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক উন্নত করা হবে। ডিজিটাল কর্মকান্ডের উন্নয়ন ঘটানো হবে। ধর্ম ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আরও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে মিডিয়ার স্বাধীনতা সুরক্ষা করতে আইনের বিষয়ে।
অন্যদিকে বিএনপি তার ১২ দফা সম্বলিত মেনিফেস্টোতে সুশাসনকে ফোকাস করেছে। তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পরিবর্তে জাতীয় ঐক্যের প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। এ ছাড়া বিচারকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলেছে।
(শুভজিত বাগচি ভারতীয় সাংবাদিক। তার এ লেখাটি দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত হয়েছে)
এদিন ঢাকা শহরে দেখা গেছে আওয়ামী লীগের যুব সমর্থকদের দীর্ঘ র্যালি। তাতে লাউডস্পিকারে বাজছিল ‘ভোট ফর নৌকা’। এটি দলটির নির্বাচনী প্রতীক। অন্যদিকে ঢাকার রাজপথে বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন অনুপস্থিত। তারা দাবি করছেন, ক্ষমতাসীন দল থেকে তাদেরকে হুমকি দেয়া হয়েছে।
তবে এ অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ৩০শে ডিসেম্বর নির্বাচন হচ্ছে ২৯৯ আসনে। এর ফল পাওয়া যেতে পারে ৩১শে ডিসেম্বর।
এক ডজনেরও বেশি দলের সমন্বয়ে মহাজোট নিয়ে নির্বাচনী লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এই মহাজোটে রয়েছে সাবেক প্রেসিডেন্ট হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি। তবে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি তার দল প্রার্থী দিয়েছে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক প্রার্থী তিনি প্রত্যাহার করতে পারেন। আওয়ামী লীগ ২৬০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, এর মধ্যে ৪৯ জন নতুন প্রার্থী।
বিরোধী জোট
অন্যদিকের পরিস্থিতি সম্ভবত অনেক বেশি জটিল। ২০ দলেরও বেশি দলকে নিয়ে একটি বৃহৎ জোট গঠন করেছে বিরোধীরা। এর নাম জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এর মূলে রয়েছে বিএনপি। তারা ২৫৮ আসনে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয় নি দলটি। এতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসে। বিএনপির সিনিয়র এক নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু দ্য হিন্দুকে বলেছেন, আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, এবার নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো। কোনোভাবেই আমরা নির্বাচন থেকে সরে যাবো না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন এক সময় আওয়ামী লীগের বড় মাপের নেতা ছিলেন। স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশের সংবিধান রচয়িতা পার্লামেন্টারি কমিটির সভাপতি ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে দেখা হয় ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে। লেখক ও সঙ্গীতজ্ঞ অরুপ রাহী বলেন, ধর্মনিরপেক্ষ নয় বিএনপি। তবে এখন তা আর কাজ করে না। ভারতের অনেক মিডিয়া এ বিষয়ে ভ্রান্ত নীতি অবলম্বন করে। আরও যুক্তি দেয়া হয় যে, ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতিতে জড়িত নয় বিএনপি এ কথা আর ধোপে টেকে না, যখন দেখা যায় তারা নির্বাচনে নিজেদের প্রতীক দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীর একজন অফিস বেয়ারারকে। ঢাকায় বিএনপির একজন কর্মকর্তা দ্য হিন্দুকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলেও বিএনপি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিতে জড়িত নয়। এমনকি ভারত বিরোধী কোনো রকম অবস্থানকেও উৎসাহিত করে না।
ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট
ওই নেতা বলেন, যদি কোনো দল বাংলাদেশে ভারত বিরোধী প্রচারণা চালায়, তাহলে তারা শতকরা ৩০ ভাগের বেশি ভোট পাবেই, যেহেতু ভারতপন্থিদের চেয়ে এখানে ভারত বিরোধী সেন্টিমেন্ট বেশি শক্তিশালী। তবে আমরা এমন প্রচারণা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যদিও ভারত আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়েই যায়।
বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলেরই আলাদা আলাদ নির্বাচনী প্রচারণার ধরণ রয়েছে। আওয়ামী লীগ ফোকাস করেছে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সরকারের অর্জনের ওপর। তাদের দলীয় মেনিফেস্টোতে বলা হয়েছে, এখন বাংলাদেশ আর্থিকভাবে শক্তিশালী। ছোটখাট ঘটনা বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে পারে না।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে বাংলাদেশ ‘নিন্ম মধ্যম আয়ের দেশের’ কাতার থেকে ‘উন্নয়নশীল দেশের’ কাতারে এগিয়ে গেছে। দলীয় মেনিফেস্টোতে বলা হয়েছে, অর্থনীতি উন্নীত হয়েছে টেকসই অবস্থায়। এখানে মাথা পিছু আয় ২০০৬ সালের ৫৪৩ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭৫১ ডলারে।
আগামী ৫ বছরে শতকরা ১০ ভাগ প্রবৃদ্ধি অর্জনের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। ১২ বছরে দারিদ্র্য শতকরা ৪১ ভাগ থেকে কমিয়ে ২১ ভাগে নামিয়ে আনার কাজ অব্যাহত রয়েছে। সড়ক যোগাযোগ ও পরিবহন নেটওয়ার্ক থেকে বিদ্যুত ও গভীর সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত অনেক মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। দলটি প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, যদি তারা ক্ষমতায় ফেরে তাহলে আরও প্রকল্প শুরু হবে। গ্রামকে আধুনিকায়ন করা হবে। কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক উন্নত করা হবে। ডিজিটাল কর্মকান্ডের উন্নয়ন ঘটানো হবে। ধর্ম ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। আরও প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে মিডিয়ার স্বাধীনতা সুরক্ষা করতে আইনের বিষয়ে।
অন্যদিকে বিএনপি তার ১২ দফা সম্বলিত মেনিফেস্টোতে সুশাসনকে ফোকাস করেছে। তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার পরিবর্তে জাতীয় ঐক্যের প্রত্যয় ঘোষণা করেছে। প্রতিশ্রুতি দিয়েছে আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার। এ ছাড়া বিচারকদের নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মিডিয়ার স্বাধীনতা নিশ্চিত করার কথা বলেছে।
(শুভজিত বাগচি ভারতীয় সাংবাদিক। তার এ লেখাটি দ্য হিন্দুতে প্রকাশিত হয়েছে)
No comments